পুনে: মহারাষ্ট্র প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর অধিদপ্তর জানিয়েছে, বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় মনোনীত হওয়া কোঙ্কণ উপকূলের প্রাগৈতিহাসিক ভূচিত্রকর্ম (Geoglyphs) হয়তো ২৪ হাজার বছরের পুরোনো। এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম শিলাচিত্র শিল্পের অন্যতম উদাহরণ হতে পারে। এর আগে এসব ভূচিত্রকর্মের বয়স প্রায় ১০ হাজার বছর ধরা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি কোলশি গুহার খননকাজ ও স্তরগত প্রমাণে ধারণা মিলেছে, এগুলোর সূচনা আরও অনেক আগে, প্রায় ২৪ হাজার বছর আগে। কর্মকর্তারা জানান, কোলশি গুহায় প্রায় ৩৮ হাজার বছরের পুরোনো সাংস্কৃতিক স্তরও পাওয়া গেছে।
ভূচিত্রকর্মের প্রাচীনতা
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, নিরাপদ হিসাবের জন্য এই ভূচিত্রকর্মগুলোকে ২৪ হাজার বছরের পুরোনো বলে বিশ্ব ঐতিহ্য মনোনয়নে উল্লেখ করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, এগুলো ঐতিহাসিক সময়কাল পর্যন্ত টিকে ছিল।
গবেষণায় নতুন উদ্যোগ
সংস্কৃতি মন্ত্রী অশীষ শেলার ৪.৫ কোটি টাকার ‘জিওগ্লিফ ডেস্ক’ অনুমোদন করেছেন। এর মাধ্যমে গবেষণা এবং ডকুমেন্টারি তৈরি করা হবে, যা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক বা ডিসকভারি চ্যানেলে প্রচারের পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রচেষ্টা মহারাষ্ট্রের ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য মনোনয়নকে আরও জোরদার করবে।
আন্তর্জাতিক তুলনা ও বৈশিষ্ট্য
অধিদপ্তরের দাখিলকৃত নথিতে কোঙ্কণ ভূচিত্রের তুলনা করা হয়েছে পেরুর নাজকা রেখা, চিলির আতাকামা জায়ান্ট এবং ক্যালিফোর্নিয়ার ব্লাইথ ইনটাগ্লিওস-এর সঙ্গে। যদিও মাপের দিক থেকে কোঙ্কণের খোদাইগুলো ছোট, তবে এগুলো অনেক সূক্ষ্মভাবে তৈরি। শক্ত ল্যাটেরাইট পাথরে পাথর ও ধাতব সরঞ্জাম দিয়ে খোদাই করা হয়েছে। মরুভূমির ভূচিত্রকর্মের তুলনায় কোঙ্কণের খোদাইগুলোতে গণ্ডার, জলহস্তীর মতো প্রাণীর চিত্র রয়েছে, যেগুলো বহু হাজার বছর আগে এই অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ সাইট
নথিতে নয়টি সাইটের উল্লেখ রয়েছে: মহারাষ্ট্রের কাশেলি, বারসু, জাম্ভারুন, উকশি, রুন্ধ্যে তালই, দেবাচে গোঠানে, দেবী হাসোল ও কুদোপি এবং গোয়ার ফাঁসাইমাল। এখানে কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য নথিভুক্ত করা হয়েছে।
- রত্নাগিরির কাছে দেবাচে গোঠানে একটি দাঁড়ানো মানুষের চিত্রের সঙ্গে অস্বাভাবিক চৌম্বকীয় বিচ্যুতি ধরা পড়েছে, যা বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য চিহ্নিত।
- বারসুতে দুটি বাঘের মাঝখানে এক ব্যক্তির খোদাই পাওয়া গেছে, যা হরপ্পা সভ্যতার সিলমোহরের নকশার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
- কাশেলির বিশাল হাতির খোদাইয়ের পাশে ক্ষুদ্র পাথরের অস্ত্র (Microliths) আবিষ্কার হয়েছে, যা প্রমাণ করে শেষ প্লাইস্টোসিন যুগে মানুষের উপস্থিতি ছিল।
- দেবী হাসোলে খোদাই করা একটি প্যানেল আজও আর্যাদুর্গা মন্দিরের আনুষ্ঠানিক আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়, যা আচারিক ধারাবাহিকতার ইঙ্গিত দেয়।
সংরক্ষণ ও মালিকানা
এই আটটি সাইট মহারাষ্ট্রে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে অবস্থিত। তাই এগুলোকে টিকিট-ভিত্তিক ঐতিহ্য সাইট হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। স্থানীয় মালিকরা সংরক্ষণের জন্য সম্মতি দিয়েছেন এবং সাইট ব্যবস্থাপনা ও প্রবেশমূল্য আদায়ের জন্য সমিতি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ইউনেস্কো মনোনয়নের অগ্রগতি
ইতিমধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পন্ন হয়েছে—প্রাথমিক মনোনয়ন জমা দেওয়া এবং প্রাথমিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ। এখন এএসআই (Archaeological Survey of India) নথি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রে পাঠাবে। লক্ষ্য রাখা হয়েছে ২০২৭-২৮ সালের মধ্যে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা।
আইনি সুরক্ষা ও সংরক্ষণ কার্যক্রম
মহারাষ্ট্র প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ আইন অনুযায়ী এসব সাইটকে সুরক্ষিত করা হচ্ছে। আটটি সাইটের মধ্যে পাঁচটি ইতিমধ্যে নোটিফাই হয়েছে, বাকিগুলোও বছরের শেষে সম্পন্ন হবে। সংরক্ষণকাজ শুরু হয়েছে — যার মধ্যে রয়েছে পাথরের বেড়া নির্মাণ, তথ্য বোর্ড স্থাপন ও দর্শনার্থীদের জন্য মৌলিক সুবিধা। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পরিচালক তেজস গারগে বলেন, ইউনেস্কো টিম যখন পরিদর্শনে আসবে, তখন তারা এই অগ্রগতি দেখতে পারবে।