০৩:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ভিয়েতনাম রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইন্টারভিশন গান প্রতিযোগিতায় বিজয়ী জাপানিদের দীর্ঘ জীবনের রহস্য কী, কেন সেখানে এত বেশি শতবর্ষী নারী? চীনের জলবায়ু প্রতিশ্রুতি হতাশাজনক, তবে সৌরশক্তিতে অবিশ্বাস্য অগ্রগতি দেশে আবারও স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রে নতুন এইচ-১বি ভিসা ফি পুরনো ভিসাধারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় আইফোন এয়ার থেকে শুরু করে পাওয়ারহাউস ১৭ প্রো ম্যাক্স: আপনার জন্য সঠিক আইফোনটি খুঁজে নিন রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: হবিগঞ্জ ভ্রমণের এক বিস্তৃত গাইড এইচ-১বি ভিসার ফি বাড়ানো: যুক্তরাষ্ট্রের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত, ভারতের জন্য সুযোগ কোঙ্কণ উপকূলের ভূচিত্রকর্ম ২৪ হাজার বছরের পুরোনো হতে পারে—প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাংলাদেশের চামড়া খাত: ১ বিলিয়ন রপ্তানি করতে হিমশিম খাচ্ছে

রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: হবিগঞ্জ ভ্রমণের এক বিস্তৃত গাইড

বাংলাদেশের ব্যস্ত নগরীর কোলাহল থেকে দূরে রয়েছে বেশ কিছু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, যেখানে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সংরক্ষিত হয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষিত হয় এবং বন্যপ্রাণী ও পরিযায়ী পাখিদের জন্য প্রাকৃতিক আবাসস্থল গড়ে ওঠে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হবিগঞ্জ জেলা এমনই একটি জায়গা, যা প্রাকৃতিক সবুজে সমৃদ্ধ। এখানে রয়েছে চা-বাগান, পাহাড়, বন আর বন্যপ্রাণী। ১৯৮২ সালে হবিগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ১৯৯৬ সালে সম্প্রসারিত হয়। এটি শুধু বিরল উদ্ভিদ ও প্রাণীর ভাণ্ডারই নয়, মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, বিশুদ্ধ বাতাস, জীববৈচিত্র্য ও শান্ত পরিবেশের জন্য দর্শনার্থী এবং স্থানীয়দের কাছে সমানভাবে আকর্ষণীয়। নিচে রেমা–কালেঙ্গা ভ্রমণের জন্য একটি বিস্তারিত নির্দেশিকা দেওয়া হলো।

অবস্থান
রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত। এটি ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত সংলগ্ন এবং মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের কাছাকাছি। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এই অভয়ারণ্যটি অবস্থিত। হবিগঞ্জ জেলার কালেঙ্গা ফরেস্ট রেঞ্জের কালেঙ্গা, রেমা, চানবাড়ি এবং রশিদপুর অংশ মিলিয়েই এর বিস্তৃতি।

গুরুত্ব
রেমা–কালেঙ্গা বাংলাদেশের একটি সুরক্ষিত বন ও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এটি শুষ্ক চিরসবুজ বনভূমি এবং সুন্দরবনের পর দেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বন। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল। ১,৭৯৫.৫৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ বনভূমি এখনো তুলনামূলক ভালো অবস্থায় টিকে আছে। তবে বন উজাড় ও অবৈধ কাঠ চুরির কারণে এটি হুমকির মুখে।

উদ্ভিদ
এখানে ৬৩৮ প্রজাতির গাছ, লতা ও উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—আওয়াল, সেগুন, কাকড়া, নেউর, হাড়গাছা, গান্ধারই, হরিতকী, বহেরা, জাম, ডুমুর, কাঁঠাল, চম্পা কাঁঠাল, কাও, কদম, রাতা, চিকরাশি, চাপালিশ, নিম ও বনমালা।

প্রাণী
বনে রয়েছে প্রায় ৭ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১৬৭ প্রজাতির পাখি। উল্লেখযোগ্য পাখির মধ্যে রয়েছে গ্রেটার র‌্যাকেট-টেইলড ড্রঙ্গো, পাহাড়ি ময়না, এশিয়ান পাইড হর্নবিল, জঙ্গলের মুরগি, ফিঙে, দোয়েল, শালিক, খুদে প্যাঁচা ও টুনটুনি। বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল একে গুরুত্বপূর্ণ পাখির এলাকা (আইবিএ) হিসেবে ঘোষণা করেছে।

এ ছাড়া এখানে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে বুনো শূকর, বানর, হনুমান, ক্যাপড লাঙ্গুর, খরগোশ, মায়া হরিণ, মাছধরা বাঘাড়, বন্য কুকুর ও শেয়াল। উল্লেখযোগ্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে হগ ব্যাজার, ভারতীয় চিতা, এশীয় গোল্ডেন ক্যাট, লেপার্ড ক্যাট, পশ্চিমা হুলুক গিবন, ক্যাপড লাঙ্গুর ও ফেয়ারের লাঙ্গুর। এখানে পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালি, বার্মিজ অজগর, সবুজ পিট ভাইপারসহ নানা প্রজাতির সাপ ও গিরগিটি পাওয়া যায়।

স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী ১৯৬০-এর দশকে এখানে বাঘ ও চিতাবাঘ ছিল প্রচুর। তবে ১৯৭১ সালের পর বাঘের অস্তিত্ব আর নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়নি। মাঝে মাঝে চিতাবাঘ দেখা গেলেও তা ভারতের পার্শ্ববর্তী বন থেকে আসা হতে পারে। স্থানীয়ভাবে বন্য কুকুর ১৯৯০-এর দশকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে এখানে শেয়াল ও ছোট বন্যবিড়াল প্রধান শিকারি প্রাণী।

কি দেখবেন
অভয়ারণ্যে প্রবেশ করলে চারপাশের সবুজে দর্শনার্থীরা বিমোহিত হয়ে পড়েন। এখানে তিনটি প্রাকৃতিক ট্রেইল রয়েছে—অর্ধঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও তিন ঘণ্টার হাঁটার পথ। প্রতিটি পথ ছবির মতো সাজানো। ভাগ্য ভালো থাকলে দর্শনার্থীরা নানা রকম পাখি ও প্রাণী দেখতে পারেন।

এখানে একটি উঁচু ওয়াচটাওয়ার রয়েছে, যা গাছের মাথার ওপরে উঠে গেছে। এখান থেকে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত বনভূমির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়। টাওয়ারের পাদদেশে রয়েছে একটি কৃত্রিম হ্রদ, যা এতটাই প্রাকৃতিক মনে হয় যে বিশ্বাস করা কঠিন এটি মানুষ তৈরি। মূলত পাখি ও বন্যপ্রাণীর পানির উৎস হিসেবে এটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এখানে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনধারা কাছ থেকে দেখার সুযোগও রয়েছে। রেমা–কালেঙ্গা বনে চারটি আদিবাসী সম্প্রদায় বাস করে। এর মধ্যে ত্রিপুরা গ্রামগুলো ছাড়াও সাঁওতাল, তেলেগু ও উরাং সম্প্রদায়ের বসতি রয়েছে।

সেরা ভ্রমণের সময়
রেমা–কালেঙ্গা বছরজুড়েই ভ্রমণ করা যায়। তবে বর্ষাকালে পথগুলো কাদায় পিচ্ছিল হয়ে যায়, ফলে হাঁটা বেশ কষ্টকর হয়।

কিভাবে যাবেন

শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে
ঢাকা থেকে রেমা–কালেঙ্গা যেতে চাইলে সিলেটগামী বাস বা ট্রেনে শায়েস্তাগঞ্জ নামতে হবে। বাস ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন রাত ১০টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়, ভাড়া ১২০ থেকে ৬৭৩ টাকা। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে অটোরিকশা বা বেবিট্যাক্সিতে কালেঙ্গা যাওয়া যায়, খরচ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

শ্রীমঙ্গল হয়ে
অন্য পথ হলো শ্রীমঙ্গল হয়ে কালেঙ্গা যাওয়া। ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলগামী বাস ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। কামরাঙ্গীরচর রেলস্টেশন থেকেও ট্রেন পাওয়া যায়। শ্রীমঙ্গল থেকে জিপে কালেঙ্গা যেতে খরচ ২,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা। এ পথে বনভ্রমণের অভিজ্ঞতা বেশি হলেও বর্ষায় জিপে যাওয়া কষ্টকর হতে পারে।

কোথায় থাকবেন
কালেঙ্গায় বন বিভাগের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে, তবে সেখানে থাকতে হলে সিলেটের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসারের অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া নিশর্গ তরফ হিল কটেজ জনপ্রিয় থাকার জায়গা। হবিগঞ্জ শহরের হোটেলগুলোতে ৮০০ থেকে ২,৫০০ টাকায় কক্ষ ভাড়া পাওয়া যায়। বিলাসবহুল অভিজ্ঞতার জন্য বাহুবল উপজেলার ফাইভ স্টার প্যালেস রিসোর্ট রয়েছে, যেখানে ভাড়া ৭,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা।

সতর্কতা
রেমা–কালেঙ্গা ঘুরতে গেলে অবশ্যই স্থানীয় গাইড নেওয়া উচিত। বর্ষাকালে এ বনে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ এড়িয়ে চলাই নিরাপদ ভ্রমণের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ।

ভিয়েতনাম রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইন্টারভিশন গান প্রতিযোগিতায় বিজয়ী

রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: হবিগঞ্জ ভ্রমণের এক বিস্তৃত গাইড

০১:০৬:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের ব্যস্ত নগরীর কোলাহল থেকে দূরে রয়েছে বেশ কিছু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, যেখানে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সংরক্ষিত হয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষিত হয় এবং বন্যপ্রাণী ও পরিযায়ী পাখিদের জন্য প্রাকৃতিক আবাসস্থল গড়ে ওঠে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হবিগঞ্জ জেলা এমনই একটি জায়গা, যা প্রাকৃতিক সবুজে সমৃদ্ধ। এখানে রয়েছে চা-বাগান, পাহাড়, বন আর বন্যপ্রাণী। ১৯৮২ সালে হবিগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ১৯৯৬ সালে সম্প্রসারিত হয়। এটি শুধু বিরল উদ্ভিদ ও প্রাণীর ভাণ্ডারই নয়, মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, বিশুদ্ধ বাতাস, জীববৈচিত্র্য ও শান্ত পরিবেশের জন্য দর্শনার্থী এবং স্থানীয়দের কাছে সমানভাবে আকর্ষণীয়। নিচে রেমা–কালেঙ্গা ভ্রমণের জন্য একটি বিস্তারিত নির্দেশিকা দেওয়া হলো।

অবস্থান
রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত। এটি ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত সংলগ্ন এবং মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের কাছাকাছি। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এই অভয়ারণ্যটি অবস্থিত। হবিগঞ্জ জেলার কালেঙ্গা ফরেস্ট রেঞ্জের কালেঙ্গা, রেমা, চানবাড়ি এবং রশিদপুর অংশ মিলিয়েই এর বিস্তৃতি।

গুরুত্ব
রেমা–কালেঙ্গা বাংলাদেশের একটি সুরক্ষিত বন ও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এটি শুষ্ক চিরসবুজ বনভূমি এবং সুন্দরবনের পর দেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বন। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল। ১,৭৯৫.৫৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ বনভূমি এখনো তুলনামূলক ভালো অবস্থায় টিকে আছে। তবে বন উজাড় ও অবৈধ কাঠ চুরির কারণে এটি হুমকির মুখে।

উদ্ভিদ
এখানে ৬৩৮ প্রজাতির গাছ, লতা ও উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—আওয়াল, সেগুন, কাকড়া, নেউর, হাড়গাছা, গান্ধারই, হরিতকী, বহেরা, জাম, ডুমুর, কাঁঠাল, চম্পা কাঁঠাল, কাও, কদম, রাতা, চিকরাশি, চাপালিশ, নিম ও বনমালা।

প্রাণী
বনে রয়েছে প্রায় ৭ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১৬৭ প্রজাতির পাখি। উল্লেখযোগ্য পাখির মধ্যে রয়েছে গ্রেটার র‌্যাকেট-টেইলড ড্রঙ্গো, পাহাড়ি ময়না, এশিয়ান পাইড হর্নবিল, জঙ্গলের মুরগি, ফিঙে, দোয়েল, শালিক, খুদে প্যাঁচা ও টুনটুনি। বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল একে গুরুত্বপূর্ণ পাখির এলাকা (আইবিএ) হিসেবে ঘোষণা করেছে।

এ ছাড়া এখানে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে বুনো শূকর, বানর, হনুমান, ক্যাপড লাঙ্গুর, খরগোশ, মায়া হরিণ, মাছধরা বাঘাড়, বন্য কুকুর ও শেয়াল। উল্লেখযোগ্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে হগ ব্যাজার, ভারতীয় চিতা, এশীয় গোল্ডেন ক্যাট, লেপার্ড ক্যাট, পশ্চিমা হুলুক গিবন, ক্যাপড লাঙ্গুর ও ফেয়ারের লাঙ্গুর। এখানে পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালি, বার্মিজ অজগর, সবুজ পিট ভাইপারসহ নানা প্রজাতির সাপ ও গিরগিটি পাওয়া যায়।

স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী ১৯৬০-এর দশকে এখানে বাঘ ও চিতাবাঘ ছিল প্রচুর। তবে ১৯৭১ সালের পর বাঘের অস্তিত্ব আর নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়নি। মাঝে মাঝে চিতাবাঘ দেখা গেলেও তা ভারতের পার্শ্ববর্তী বন থেকে আসা হতে পারে। স্থানীয়ভাবে বন্য কুকুর ১৯৯০-এর দশকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে এখানে শেয়াল ও ছোট বন্যবিড়াল প্রধান শিকারি প্রাণী।

কি দেখবেন
অভয়ারণ্যে প্রবেশ করলে চারপাশের সবুজে দর্শনার্থীরা বিমোহিত হয়ে পড়েন। এখানে তিনটি প্রাকৃতিক ট্রেইল রয়েছে—অর্ধঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও তিন ঘণ্টার হাঁটার পথ। প্রতিটি পথ ছবির মতো সাজানো। ভাগ্য ভালো থাকলে দর্শনার্থীরা নানা রকম পাখি ও প্রাণী দেখতে পারেন।

এখানে একটি উঁচু ওয়াচটাওয়ার রয়েছে, যা গাছের মাথার ওপরে উঠে গেছে। এখান থেকে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত বনভূমির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়। টাওয়ারের পাদদেশে রয়েছে একটি কৃত্রিম হ্রদ, যা এতটাই প্রাকৃতিক মনে হয় যে বিশ্বাস করা কঠিন এটি মানুষ তৈরি। মূলত পাখি ও বন্যপ্রাণীর পানির উৎস হিসেবে এটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এখানে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনধারা কাছ থেকে দেখার সুযোগও রয়েছে। রেমা–কালেঙ্গা বনে চারটি আদিবাসী সম্প্রদায় বাস করে। এর মধ্যে ত্রিপুরা গ্রামগুলো ছাড়াও সাঁওতাল, তেলেগু ও উরাং সম্প্রদায়ের বসতি রয়েছে।

সেরা ভ্রমণের সময়
রেমা–কালেঙ্গা বছরজুড়েই ভ্রমণ করা যায়। তবে বর্ষাকালে পথগুলো কাদায় পিচ্ছিল হয়ে যায়, ফলে হাঁটা বেশ কষ্টকর হয়।

কিভাবে যাবেন

শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে
ঢাকা থেকে রেমা–কালেঙ্গা যেতে চাইলে সিলেটগামী বাস বা ট্রেনে শায়েস্তাগঞ্জ নামতে হবে। বাস ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন রাত ১০টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়, ভাড়া ১২০ থেকে ৬৭৩ টাকা। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে অটোরিকশা বা বেবিট্যাক্সিতে কালেঙ্গা যাওয়া যায়, খরচ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

শ্রীমঙ্গল হয়ে
অন্য পথ হলো শ্রীমঙ্গল হয়ে কালেঙ্গা যাওয়া। ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলগামী বাস ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। কামরাঙ্গীরচর রেলস্টেশন থেকেও ট্রেন পাওয়া যায়। শ্রীমঙ্গল থেকে জিপে কালেঙ্গা যেতে খরচ ২,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা। এ পথে বনভ্রমণের অভিজ্ঞতা বেশি হলেও বর্ষায় জিপে যাওয়া কষ্টকর হতে পারে।

কোথায় থাকবেন
কালেঙ্গায় বন বিভাগের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে, তবে সেখানে থাকতে হলে সিলেটের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসারের অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া নিশর্গ তরফ হিল কটেজ জনপ্রিয় থাকার জায়গা। হবিগঞ্জ শহরের হোটেলগুলোতে ৮০০ থেকে ২,৫০০ টাকায় কক্ষ ভাড়া পাওয়া যায়। বিলাসবহুল অভিজ্ঞতার জন্য বাহুবল উপজেলার ফাইভ স্টার প্যালেস রিসোর্ট রয়েছে, যেখানে ভাড়া ৭,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা।

সতর্কতা
রেমা–কালেঙ্গা ঘুরতে গেলে অবশ্যই স্থানীয় গাইড নেওয়া উচিত। বর্ষাকালে এ বনে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ এড়িয়ে চলাই নিরাপদ ভ্রমণের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ।