১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের জনসংখ্যায় রাজসাহী জেলায় ৫,২১৯ নগর ও গ্রাম ছিল। দিনাজপুর জেলায় মহাদেবপুর থানার অন্তর্গত ৪৪৪ গ্রাম রাজসাহী জেলার নওগাঁ মহকুমার ভুক্ত হইয়াছে। বগুড়া জেলার অন্তর্গত কতকগুলি গ্রামও রাজসাহী জেলার নওগাঁ মহকুমার সামিল হইয়াছে। রাজসাহীতে ৫৬৬৩ নগর ও গ্রামেরও বেশি আছে। সকল নগর ও গ্রামের বিবরণ লেখা এই ক্ষুদ্র পুস্তকের উদ্দেশ্য নহে। প্রধান প্রধান নগর ও গ্রামের বিবরণই দেওয়া গেল।
নগর:রাজসাহী জেলায় দুইটি মাত্র নগর আছে, যাহাদের লোকসংখ্যা ৫ হাজারের বেশি। এই দুই নগর, রামপুরবোয়ালিয়া ও নাটোর। এই দুই নগরে মিউনিসিপাল নিয়ম প্রচলিত আছে।রামপুরবোয়ালিয়া-চারিশত কি পাঁচশত বৎসর পূর্বে বোয়ালিয়ার প্রায় চারি মাইল দক্ষিণভাগে মহানন্দা নামে একটি নদী ছিল। তাহার কিছু দূর দক্ষিণে পদ্মা নদী প্রবাহিত হইয়া সবদহের নিকট, পদ্মা ও মহানন্দা একত্রিত হইয়াছিল। কালে দুই নদী এক হইয়া পদ্মা নদী নাম ধারণ করে। বোয়ালিয়ার নিকট মহানন্দার নাম লুপ্ত হয়। বর্তমান বোয়ালিয়া নগর পদ্মা নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত। “বর্তমান বোয়ালিয়া নগরীতে ৭০ বৎসরের পূর্বে, দুই চারি ঘর রেশম ব্যবসায়ী ব্যতীত, কোন ভূম্যধিকারীর নিবাস চিহ্ন লক্ষিত হয় না। খ্রিস্টিয় ষোড়শ শতাব্দীতে ওলন্দাজেরা বোয়ালিয়াতে একটি কুঠি নির্মাণ দ্বারা, রাজসাহী অঞ্চলে রেশমের ব্যবসায় আরম্ভ করেন। পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই কুঠি ওলন্দাজদিগের নিকট ক্রয় করেন। সম্প্রতি তাহা ‘বড়কুঠি’ নামে ওয়াটসন কোম্পানির সম্পত্তি।”” নারদ নদীর মুখ বন্ধ হইয়া নাটোর অস্বাস্থ্যকর স্থান হইলে, ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে নাটোর হইতে রামপুরবোয়ালিয়াতে রাজসাহী জেলার সদর আফিস উঠিয়া আইসে। সেই হইতে বোয়ালিয়াতে জেলার সদর আফিসসমূহ আছে এবং নাটোর মহকুমা হইয়াছে। বোয়ালিয়া পূর্বে বাণিজ্যস্থান ভিন্ন কোন পুরাতন রাজবংশ বা বিশিষ্ট ভদ্রবংশীয়ের বাস ছিল না। নাটোর হইতে জেলার সদর আফিস বোয়ালিয়াতে উঠিয়া আসিবার পর হইতে স্থানের গৌরব ক্রমে বৃদ্ধি হইতে লাগিল। জেলা স্কুল স্থাপিত হওয়ার পর ঐ স্কুলে কলেজের চারিটি শ্রেণি প্রতিষ্ঠিত হইয়া উচ্চ শিক্ষার যথেষ্ট সুবিধা হইয়াছে। তাহিরপুরের স্টেটের সাহয্যে ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে একটি ‘সদাব্রত’ স্থাপিত হইয়া দৈনিক আহার, মাসিক দান ও পৌষমাসের সংক্রান্তির দিন বার্ষিক দান দিবার নিয়ম হইয়াছে; তদ্বারা দরিদ্রদিগের মহোপকার হইয়াছে। ধর্মরক্ষার্থ হিন্দুরা ‘ধর্মসভা’ এবং ব্রাহ্মেরা ‘ব্রাহ্মসভা’ স্থাপিত করিয়াছেন। দীন দরিদ্র রোগীদিগের চিকিৎসা জন্য দিঘাপতিয়া স্টেটের সাহায্যে ‘দাতব্য চিকিৎসালয়’ স্থাপিত হইয়াছে। এই নগরটির দৃশ্য অতি সুন্দর, কিন্তু সময় সময় পদ্মা নদীর দৌরাত্ম্যে নগরের সৌন্দর্য নষ্ট হইয়া যায়। নগরের লোকসংখ্যা ২২ হাজারেরও বেশি।