১০:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে কানাডা, তবে শর্ত রাখছে

অঙ্গীকার পূরণের শর্তে কূটনৈতিক অগ্রগতি

কানাডা শিগগিরই ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। তবে দেশটির নেতৃত্ব প্রতিশ্রুতি পূরণ না করা পর্যন্ত পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না বলে জানিয়েছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দ। তাঁর শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে হামাসের জিম্মিদের মুক্তি, অস্ত্র সমর্পণ, ভবিষ্যৎ প্রশাসন থেকে হামাসকে দূরে রাখা এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে গণতান্ত্রিক সংস্কার।

শুক্রবার মেক্সিকো সফরে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে উপস্থিত থেকে তিনি বলেন, একই দিনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন।

দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে কানাডার অবস্থান

আনন্দ বলেন, কানাডা সবসময় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের সমাধান হিসেবে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে সমর্থন করেছে। গাজার পরিস্থিতির কারণে এখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তাঁর ভাষায়, ‘‘এখন স্বীকৃতি দেওয়া ছাড়া উপায় নেই, কারণ দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কার্যকারিতা দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।’’

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক চাপ

বর্তমানে ইসরায়েল গাজা সিটিতে বড় আকারের সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। যুদ্ধ পরিচালনার ধরন নিয়ে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়লেও কানাডা অন্যান্য কয়েকটি দেশের মতো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে, যা ইসরায়েলকে ক্ষুব্ধ করেছে।

স্বীকৃতি ও স্বাভাবিকীকরণের পার্থক্য

আনন্দ ব্যাখ্যা করে বলেন, স্বীকৃতি ও সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ আলাদা বিষয়। ‘‘স্বীকৃতি হয় বা হয় না—এটি দ্বি-মাত্রিক। কিন্তু স্বাভাবিকীকরণ একটি প্রক্রিয়া। এতে দূতাবাস খোলা, কনস্যুলেট খোলা, নাগরিক বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।’’

তিনি আরও জানান, স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণভাবে কানাডার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। ‘‘আমরা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে গভীর আলোচনা করছি। তবে সিদ্ধান্ত আমাদের নিজেদের, এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমরা সেই পদক্ষেপ নেব না।’’

প্রধানমন্ত্রী কার্নির বার্তা

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দেবেন মার্ক কার্নি এবং সেখানে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করবেন। তবে এই পদক্ষেপ ‘‘মূল সংস্কার বাস্তবায়নের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করবে এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে নেওয়া হবে।’’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি অবনতির কারণে কার্নি ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষের দুর্ভোগ বন্ধ, হামাসের হাতে আটক সব জিম্মির তাৎক্ষণিক মুক্তি এবং ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেবেন।

যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। এরপর থেকে প্রায় দুই বছরের লড়াইয়ে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাবে ইসরায়েলি হামলায় ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং অধিকাংশ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। এলাকাটি এখন দুর্ভিক্ষ ও অনাহারে জর্জরিত।

ইসরায়েল বলছে, ক্ষুধার মাত্রা অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে এবং হামাস আত্মসমর্পণ করে অস্ত্র ছেড়ে দিলে ও জিম্মিদের মুক্তি দিলে যুদ্ধ সঙ্গে সঙ্গে শেষ হতে পারে। অন্যদিকে হামাস বলছে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা অস্ত্র রাখবে না। একাধিক মধ্যস্থতার চেষ্টা এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে কানাডা, তবে শর্ত রাখছে

০৭:০৪:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অঙ্গীকার পূরণের শর্তে কূটনৈতিক অগ্রগতি

কানাডা শিগগিরই ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। তবে দেশটির নেতৃত্ব প্রতিশ্রুতি পূরণ না করা পর্যন্ত পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না বলে জানিয়েছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দ। তাঁর শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে হামাসের জিম্মিদের মুক্তি, অস্ত্র সমর্পণ, ভবিষ্যৎ প্রশাসন থেকে হামাসকে দূরে রাখা এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে গণতান্ত্রিক সংস্কার।

শুক্রবার মেক্সিকো সফরে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে উপস্থিত থেকে তিনি বলেন, একই দিনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন।

দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে কানাডার অবস্থান

আনন্দ বলেন, কানাডা সবসময় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের সমাধান হিসেবে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে সমর্থন করেছে। গাজার পরিস্থিতির কারণে এখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তাঁর ভাষায়, ‘‘এখন স্বীকৃতি দেওয়া ছাড়া উপায় নেই, কারণ দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কার্যকারিতা দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।’’

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক চাপ

বর্তমানে ইসরায়েল গাজা সিটিতে বড় আকারের সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। যুদ্ধ পরিচালনার ধরন নিয়ে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়লেও কানাডা অন্যান্য কয়েকটি দেশের মতো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে, যা ইসরায়েলকে ক্ষুব্ধ করেছে।

স্বীকৃতি ও স্বাভাবিকীকরণের পার্থক্য

আনন্দ ব্যাখ্যা করে বলেন, স্বীকৃতি ও সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ আলাদা বিষয়। ‘‘স্বীকৃতি হয় বা হয় না—এটি দ্বি-মাত্রিক। কিন্তু স্বাভাবিকীকরণ একটি প্রক্রিয়া। এতে দূতাবাস খোলা, কনস্যুলেট খোলা, নাগরিক বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।’’

তিনি আরও জানান, স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণভাবে কানাডার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। ‘‘আমরা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে গভীর আলোচনা করছি। তবে সিদ্ধান্ত আমাদের নিজেদের, এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমরা সেই পদক্ষেপ নেব না।’’

প্রধানমন্ত্রী কার্নির বার্তা

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দেবেন মার্ক কার্নি এবং সেখানে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করবেন। তবে এই পদক্ষেপ ‘‘মূল সংস্কার বাস্তবায়নের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করবে এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে নেওয়া হবে।’’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি অবনতির কারণে কার্নি ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষের দুর্ভোগ বন্ধ, হামাসের হাতে আটক সব জিম্মির তাৎক্ষণিক মুক্তি এবং ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেবেন।

যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। এরপর থেকে প্রায় দুই বছরের লড়াইয়ে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাবে ইসরায়েলি হামলায় ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং অধিকাংশ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। এলাকাটি এখন দুর্ভিক্ষ ও অনাহারে জর্জরিত।

ইসরায়েল বলছে, ক্ষুধার মাত্রা অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে এবং হামাস আত্মসমর্পণ করে অস্ত্র ছেড়ে দিলে ও জিম্মিদের মুক্তি দিলে যুদ্ধ সঙ্গে সঙ্গে শেষ হতে পারে। অন্যদিকে হামাস বলছে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা অস্ত্র রাখবে না। একাধিক মধ্যস্থতার চেষ্টা এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে।