১১:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি: সম্ভাবনা ও শঙ্কা

বাংলাদেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার মান এখনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে রয়েছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে মানসম্মত পাঠ্যক্রম, দক্ষ শিক্ষক সংকট, গবেষণা সুযোগের অভাব এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতা শিক্ষার গুণগত মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং ও গবেষণা প্রতিবেদনগুলোতেও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাধারণত নিম্নস্তরে স্থান দেওয়া হয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামের উদ্যোগ

এই প্রেক্ষাপটে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ। কারণ দীর্ঘদিন ধরে দেশে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ সীমিত ছিল এবং বেশিরভাগ গবেষককে বিদেশে যেতে হতো।

ইতিবাচক দিক

গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি: দেশে গবেষণামুখী শিক্ষা বাড়বে এবং শিক্ষার্থীরা বিদেশে না গিয়েও পিএইচডি করার সুযোগ পাবেন।
মানবসম্পদ উন্নয়ন: নিজস্ব গবেষক, অধ্যাপক ও বিশেষজ্ঞ তৈরি করা সহজ হবে।
বিদেশ নির্ভরতা কমানো: অনেকেই বিদেশে গিয়ে আর দেশে ফেরেন না। স্থানীয়ভাবে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু হলে মেধা ধরে রাখা সহজ হবে।
অর্থনৈতিক সাশ্রয়: বিদেশে পড়াশোনার তুলনায় দেশে পড়াশোনার খরচ কম, ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীরা সুযোগ পেতে পারেন।

নেতিবাচক দিক

তদারকির মান প্রশ্নবিদ্ধ: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগে থেকেই মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় পিএইচডি প্রোগ্রামের মান কতটা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাবে তা নিয়ে শঙ্কা আছে।
অভিজ্ঞ গাইডের অভাব: পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য দক্ষ সুপারভাইজার বা গাইড প্রয়োজন, কিন্তু দেশে এই সংখ্যা খুবই সীমিত।
বাণিজ্যিকীকরণের ঝুঁকি: পিএইচডিকে যদি ব্যবসার অংশে রূপ দেওয়া হয়, তাহলে ডিগ্রির মান কমে যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির সংকট: এসব ডিগ্রি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা ক্ষেত্রে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সে বিষয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশে মানসম্মত গবেষণা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে শুধু প্রোগ্রাম চালু করলেই চলবে না; মান নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালা, পর্যাপ্ত গবেষণা তহবিল, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ জরুরি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোগ ইতিবাচক হলেও সরকার ও শিক্ষা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি করতে হবে।

বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ একইসঙ্গে সম্ভাবনাময় এবং চ্যালেঞ্জপূর্ণ। এটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা গেলে দেশের গবেষণা খাত সমৃদ্ধ হবে। তবে মান নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিশ্চিত না হলে শিক্ষাব্যবস্থা আরও বিতর্কিত হয়ে উঠতে পারে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি: সম্ভাবনা ও শঙ্কা

০৯:০০:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার মান এখনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে রয়েছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে মানসম্মত পাঠ্যক্রম, দক্ষ শিক্ষক সংকট, গবেষণা সুযোগের অভাব এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতা শিক্ষার গুণগত মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং ও গবেষণা প্রতিবেদনগুলোতেও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাধারণত নিম্নস্তরে স্থান দেওয়া হয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামের উদ্যোগ

এই প্রেক্ষাপটে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ। কারণ দীর্ঘদিন ধরে দেশে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ সীমিত ছিল এবং বেশিরভাগ গবেষককে বিদেশে যেতে হতো।

ইতিবাচক দিক

গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি: দেশে গবেষণামুখী শিক্ষা বাড়বে এবং শিক্ষার্থীরা বিদেশে না গিয়েও পিএইচডি করার সুযোগ পাবেন।
মানবসম্পদ উন্নয়ন: নিজস্ব গবেষক, অধ্যাপক ও বিশেষজ্ঞ তৈরি করা সহজ হবে।
বিদেশ নির্ভরতা কমানো: অনেকেই বিদেশে গিয়ে আর দেশে ফেরেন না। স্থানীয়ভাবে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু হলে মেধা ধরে রাখা সহজ হবে।
অর্থনৈতিক সাশ্রয়: বিদেশে পড়াশোনার তুলনায় দেশে পড়াশোনার খরচ কম, ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীরা সুযোগ পেতে পারেন।

নেতিবাচক দিক

তদারকির মান প্রশ্নবিদ্ধ: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগে থেকেই মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় পিএইচডি প্রোগ্রামের মান কতটা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাবে তা নিয়ে শঙ্কা আছে।
অভিজ্ঞ গাইডের অভাব: পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য দক্ষ সুপারভাইজার বা গাইড প্রয়োজন, কিন্তু দেশে এই সংখ্যা খুবই সীমিত।
বাণিজ্যিকীকরণের ঝুঁকি: পিএইচডিকে যদি ব্যবসার অংশে রূপ দেওয়া হয়, তাহলে ডিগ্রির মান কমে যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির সংকট: এসব ডিগ্রি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা ক্ষেত্রে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সে বিষয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশে মানসম্মত গবেষণা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে শুধু প্রোগ্রাম চালু করলেই চলবে না; মান নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালা, পর্যাপ্ত গবেষণা তহবিল, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ জরুরি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোগ ইতিবাচক হলেও সরকার ও শিক্ষা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি করতে হবে।

বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ একইসঙ্গে সম্ভাবনাময় এবং চ্যালেঞ্জপূর্ণ। এটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা গেলে দেশের গবেষণা খাত সমৃদ্ধ হবে। তবে মান নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিশ্চিত না হলে শিক্ষাব্যবস্থা আরও বিতর্কিত হয়ে উঠতে পারে।