নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত
যুক্তরাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রিজিট ফিলিপসন জানিয়েছেন, দুই-সন্তান ভাতা সীমা “বিদ্বেষমূলক” এবং এটি শিশুদের কষ্টে ফেলেছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, এই নীতি বাতিলের বিষয়টি এখন “আলোচনার টেবিলে” রয়েছে। এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ডাউনিং স্ট্রিট শিগগিরই এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বর্তমান নীতি অনুযায়ী, কোনো পরিবার দুই সন্তানের বেশি সন্তান থাকলে তারা অতিরিক্ত সন্তানদের জন্য শিশুভাতা বা ইউনিভার্সাল ক্রেডিট পায় না। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আগে থেকেই জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে এলে তিনি সীমা তুলে দেওয়ার পক্ষে। আগামী ২৬ নভেম্বর বাজেটে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে আশা করছেন শিশুদারিদ্র্য-বিরোধী কর্মীরা।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পৃক্ততা
ফিলিপসন বলেছেন, বিষয়টি তার কাছে “গভীরভাবে ব্যক্তিগত” কারণ তিনি নিজেই দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন। ইংল্যান্ডের টাইনে-অ্যান্ড-ওয়্যারে তার শৈশব কেটেছে স্যাঁতসেঁতে ঘরে, যেখানে উপরের তলায় হিটিং ছিল না। এক শীতকালে প্রতিবেশী তার জন্য কোট কেনার টাকা গোপনে দিয়ে গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “আমি রাজনীতিতে এসেছি শিশুদের দারিদ্র্য থেকে উত্তোলনের জন্য। প্রতিদিন ভাবি কীভাবে এই স্রোত ঘুরিয়ে দেওয়া যায়। দুই-সন্তান সীমা সরানোসহ সবকিছু আলোচনার টেবিলে আছে। আমি চাই এই লড়াই আমাদের সরকারের অবিচ্ছেদ্য নৈতিক দায়িত্ব হোক।”
কনজারভেটিভদের সমালোচনা
ফিলিপসন কনজারভেটিভ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “তারা যে দুই-সন্তান সীমা এনেছিল, সেটি ছিল শিশুদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আঘাত। কোনো লেবার সরকার কখনোই এমন নীতি চালু করত না।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এই সীমার কারণে ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডে প্রায় ১৭ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নীতি বাতিল করতে বছরে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন পাউন্ড খরচ হবে।
রাজনৈতিক সমর্থন ও বিকল্প প্রস্তাব
ফিলিপসন বর্তমানে সরকারের শিশুদারিদ্র্য-টাস্কফোর্সের সহ-সভাপতি। এ টাস্কফোর্সের নতুন কৌশল প্রকাশিত হবে শিগগিরই, যেখানে সীমার ভবিষ্যৎ নিয়ে সুপারিশ আসতে পারে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন একে “নিষ্ঠুর” নীতি বলে অভিহিত করে জুয়া শিল্পে কর বাড়িয়ে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে এটি বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী রেচেল রিভসও বলেছেন, এ প্রস্তাব বিবেচনায় রয়েছে এবং শরতে জুয়া শিল্পের কর পর্যালোচনা করা হবে।
এছাড়া রুথ কার্টিস, যিনি ট্রেজারির সাবেক কর্মকর্তা এবং বর্তমানে রেজোলিউশন ফাউন্ডেশনের প্রধান, তিনি বলছেন সীমা সরালে শিশুদারিদ্র্যের হার কমানো সম্ভব। তার মতে, বর্তমান অবস্থায় সংসদের মেয়াদ শেষে শিশুদারিদ্র্য রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছাবে।
নেতৃত্ব নির্বাচনে অবস্থান
ডেপুটি লিডার নির্বাচনী প্রচারণায় ফিলিপসন পাঁচজন আঞ্চলিক মেয়রের সমর্থন পেয়েছেন, পাশাপাশি ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মাইনওয়ার্কার্স এবং কিছু বড় ট্রেড ইউনিয়নের সমর্থনও যোগ হয়েছে।
অন্যদিকে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী লুসি পাওয়েলও বলছেন, এই সীমা বিলুপ্তির প্রতিশ্রুতি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা উচিত। তিনি এটিকে শিশুদারিদ্র্য মোকাবিলায় সবচেয়ে বড় নীতি বলে উল্লেখ করেছেন।
শিশুবিষয়ক সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া
সেভ দ্য চিলড্রেন ইউকের এক পরিচালক বলেছেন, “শিশুদারিদ্র্য টাস্কফোর্সের সহ-সভাপতির এই অবস্থান পরিবর্তন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সীমা বাতিল করা হলো দারিদ্র্য কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়।”
নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সম্ভাবনা
সংসদীয় পর্যায়ে ফিলিপসন ১৭৫ জন এমপির সমর্থন পেয়ে এগিয়ে আছেন, আর পাওয়েলের সমর্থন ১১৭ জনের। তবে সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, সাধারণ সদস্যদের মধ্যে পাওয়েল ৪৭% সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আছেন, যেখানে ফিলিপসনের সমর্থন ৩০%।
প্রার্থী নির্বাচনে এখন স্থানীয় শাখা ও অঙ্গসংগঠনগুলোর সমর্থন প্রয়োজন। এ মাসেই লেবার পার্টির সম্মেলনে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। ৮ অক্টোবর ভোট শুরু হয়ে ২৩ অক্টোবর শেষ হবে, আর ২৫ অক্টোবর ঘোষণা হবে ফলাফল।