সিডনির বন্ডি সৈকতে ইহুদি উৎসবের সমাবেশে রক্তাক্ত হামলায় শোক নেমে এসেছে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে। রবিবার সন্ধ্যায় জনসমুদ্রে গুলি চালিয়ে বাবা ও ছেলের হামলায় অন্তত পনেরো জন নিহত হন। আহত হন বেয়াল্লিশ জন। নিহতদের মধ্যে ছিল দশ বছরের এক শিশু, নাৎসি নির্যাতন থেকে বেঁচে ফেরা এক প্রবীণ ও স্থানীয় এক ধর্মীয় নেতা। হানুক্কা উপলক্ষে সৈকতে জড়ো হওয়া মানুষের আনন্দ মুহূর্তে আতঙ্কে বদলে যায়।
শোক ও আতঙ্কের রাত
সন্ধ্যার উৎসবের ভিড় যখন সৈকতে জমছিল, তখন ওপরের বোর্ডওয়াক থেকে নির্বিচারে গুলি চালানো শুরু হয়। পর্যটন এলাকাটি মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে অনেকে আতশবাজি ভেবেছিলেন। জন্মদিন উদযাপন করতে আসা এক নারী জানান, নিরাপদে ফিরতে পারাটাই তখন সবার কাছে অলৌকিক মনে হয়েছে।
সরকারের জরুরি সিদ্ধান্ত
ঘটনার পরদিন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ রাজ্য ও অঞ্চলের নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠকে সারা দেশে অস্ত্র আইন আরও শক্ত করার বিষয়ে একমত হন নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, আগ্নেয়াস্ত্র মালিকদের পটভূমি যাচাই আরও কঠোর করা, অস্ট্রেলীয় নাগরিক নন এমনদের লাইসেন্স সীমিত করা এবং বৈধ অস্ত্রের ধরন কমানোর বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে।
নব্বই ছয়ের পর আবার প্রশ্ন
অস্ট্রেলিয়ায় গণহত্যা মূলক গুলিবর্ষণ বিরল হয়ে উঠেছিল উনিশশো ছিয়ানব্বই এর পোর্ট আর্থারের ঘটনার পর। তখন পঁয়ত্রিশ জন নিহত হওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক সংস্কার হয়। অস্ত্র কিনে নেওয়ার কর্মসূচি, জাতীয় নিবন্ধন এবং আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের ওপর কড়াকড়ি বিশ্বে আদর্শ হিসেবে পরিচিতি পায়। তবু সাম্প্রতিক হামলা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে, হামলাকারীরা কীভাবে অস্ত্র পেল।

উগ্রবাদ ও লক্ষ্যবস্তু
পুলিশ জানিয়েছে, হামলার পেছনের প্রেরণা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি ইহুদি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে চালানো ঘৃণা জনিত সন্ত্রাস। সরকারি সম্প্রচার মাধ্যমের খবরে হামলাকারীদের উগ্রবাদী যোগাযোগের সম্ভাবনার কথাও এসেছে। প্রধানমন্ত্রী একে নির্মমতা, ইহুদি বিদ্বেষ এবং দেশের মাটিতে সন্ত্রাস বলে আখ্যা দেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্বনেতারা ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে ইহুদি বিদ্বেষী হামলা বলে নিন্দা করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদি বিরোধী হামলার আশঙ্কা বেড়েছে বলে সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ ছিল, এই ঘটনা সেই ভয়কে আরও বাড়াল।
অভিযান ও বর্তমান অবস্থা
পুলিশ অভিযানে পঞ্চাশ বছর বয়সী বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। চব্বিশ বছর বয়সী ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















