কেরালার বহুল আলোচিত ২০১৭ সালের যৌন নির্যাতন মামলায় অভিনেতা দিলীপের খালাসের পর অবশেষে নীরবতা ভাঙলেন ভুক্তভোগী অভিনেত্রী ভাভনা মেনন। দীর্ঘ আবেগঘন বক্তব্যে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, এই রায় তাঁর কাছে কোনো বিস্ময় নয়। বরং বহু আগেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, এই দেশে আইনের সামনে সবাই সমান নয়।
আইনের সামনে বৈষম্যের বেদনাবোধ
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত দীর্ঘ লেখায় ভাভনা বলেন, বছরের পর বছর মানসিক যন্ত্রণা, চোখের জল আর লড়াইয়ের পর তিনি এক কঠিন সত্য মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁর ভাষায়, আইনের চোখে সব নাগরিকের সমান আচরণ পাওয়ার যে প্রত্যাশা, বাস্তবে তা সব সময় সত্য হয় না। তিনি আক্ষেপ করেন, মামলার পুরো সময়জুড়েই তাঁর মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হয়নি।

রায় নিয়ে আগাম আশঙ্কা
ভাভনা জানান, অভিযুক্তদের একজন হিসেবে যাঁকে মামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলা হচ্ছিল, তাঁর মুক্তি পাওয়া তাঁকে অবাক করেনি। ২০২০ সাল থেকেই মামলার গতিপ্রকৃতি নিয়ে তাঁর সন্দেহ তৈরি হয়। এমনকি প্রসিকিউশন পক্ষও একপর্যায়ে মামলার পরিচালনায় পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিল বলে তিনি দাবি করেন। একই বিচারকের অধীনে মামলা চালানোর বিষয়ে তাঁর আপত্তি বারবার খারিজ হওয়ায় হতাশা আরও বেড়েছে।
মেমোরি কার্ড ও প্রসিকিউশন নিয়ে অভিযোগ
বিচার চলাকালে আদালতের হেফাজতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ মেমোরি কার্ড অবৈধভাবে একাধিকবার খোলা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন ভাভনা। তাঁর দাবি, এই বিষয়টি তদন্তের জন্য একাধিক আবেদন জানালেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি মামলার দুই সরকারি কৌঁসুলির পদত্যাগের কথাও তুলে ধরেন তিনি। তাঁদের কাছ থেকেই তিনি নাকি শুনেছেন, এই আদালত থেকে ন্যায়বিচারের আশা না করাই ভালো।

ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রতিবাদ
অভিনেত্রী স্পষ্ট করে বলেন, অভিযুক্ত নম্বর এক তাঁর ব্যক্তিগত চালক ছিলেন—এমন দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই ব্যক্তি তাঁর কর্মচারী ছিলেন না, এমনকি ঘনিষ্ঠ পরিচিতও নন। একটি ছবির কাজের সূত্রে এক-দুবার মাত্র তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল বলে জানান তিনি। এই ধরনের ভুয়া গল্প তাঁর যন্ত্রণাকে আরও গভীর করেছে বলে উল্লেখ করেন ভাভনা।
আংশিক স্বস্তি, কিন্তু পূর্ণ নয়
যদিও মামলায় ছয় অভিযুক্তের দোষী সাব্যস্ত হয়ে দীর্ঘ সাজা হওয়াকে তিনি একটুখানি আলো হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, এতদিন ধরে যাঁরা তাঁর কষ্টকে মিথ্যা বা সাজানো গল্প বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, এই সাজা তাঁদের জবাব। তবু মূল অভিযুক্তের খালাস তাঁকে সম্পূর্ণ স্বস্তি দেয়নি।

অবিরাম বিতর্কের কেন্দ্রে রায়
এই রায় কেরালার সমাজে আবারও তীব্র বিতর্ক উসকে দিয়েছে। শাস্তির যথার্থতা, প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা এবং ক্ষমতা ও প্রভাবের মুখে বিচারব্যবস্থার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আদালতের বাইরেও এই মামলার প্রভাব দীর্ঘদিন প্রতিধ্বনিত হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















