ঘন ধোঁয়া ও কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে ভারতের রাজধানী দিল্লি ও বিস্তীর্ণ উত্তর ভারত। শীতের শুরুতেই বিষাক্ত বাতাস জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। দৃশ্যমানতা হঠাৎ কমে যাওয়ায় বাতাস ও রেল যোগাযোগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বাতিল ও বিলম্বিত হয়েছে বহু উড়ান, সময়সূচি ভেঙে পড়েছে ট্রেন চলাচলেরও।
জরুরি দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও উচ্চ সতর্কতা
গতকাল দিল্লি ও আশপাশের অঞ্চলে বায়ুদূষণ পৌঁছেছে বিপজ্জনক মাত্রায়। বাতাসের মান সূচক দিনের বেশির ভাগ সময় চারশ পঞ্চাশের আশপাশে অবস্থান করে, যা চলতি শীত মৌসুমে সর্বোচ্চের মধ্যে একটি। পরিস্থিতির অবনতি ঘটতেই কর্তৃপক্ষ গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যানের চতুর্থ ধাপ কার্যকর করে। এর আওতায় নির্মাণকাজ বন্ধ, ডিজেল জেনারেটর ব্যবহারে কড়াকড়ি, পানির ছিটা দিয়ে ধুলো নিয়ন্ত্রণ এবং শিশু ও বয়স্কদের ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

আকাশ ও রেলপথে চরম ভোগান্তি
ঘন কুয়াশা ও ধোঁয়ায় দৃশ্যমানতা ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে যাওয়ায় দিল্লি বিমানবন্দরে একের পর এক ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বিত হয়। বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় যাত্রীদের আগেভাগে ফ্লাইট তথ্য যাচাই করার আহ্বান জানায়। বিমান সংস্থাগুলো জানায়, দৃশ্যমানতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় সূচিতে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। একই সঙ্গে উত্তর ভারতের বিভিন্ন রুটে পঞ্চাশের বেশি ট্রেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেরিতে চলেছে ।
হাসপাতাল ও আদালতে বাড়তি সতর্কতা
দূষণের তীব্রতায় দিল্লির হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট, চোখে জ্বালা ও হাঁপানির রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় দিল্লি হাইকোর্ট আইনজীবী ও মামলার পক্ষগুলোকে অনলাইনে বা সমন্বিত শুনানিতে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দেয়। সুপ্রিম কোর্টও একই ধরনের নির্দেশনা দেয়, বিচার ব্যবস্থার কর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় রেখে।

দীর্ঘমেয়াদি সংকট নিয়ে উদ্বেগ
পরিবেশবিদরা বলছেন, সাময়িক নিষেধাজ্ঞা এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধান নয়। দিল্লির বাতাস সারা বছরই দূষিত থাকে, শীতে তা আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, দূষিত বাতাসে দীর্ঘদিন বসবাসের ফলে ভারতে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক অকাল মৃত্যু ঘটে। অথচ এই মৃত্যুর পূর্ণ হিসাব রাখার ব্যবস্থাও এখনো গড়ে ওঠেনি।
উত্তর ভারতের অন্য শহরগুলোর চিত্র
দিল্লির পাশাপাশি রাজস্থানসহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকায়ও কুয়াশা ও দূষণের প্রভাব পড়েছে। কোথাও তাপমাত্রা হঠাৎ কমে গেছে, কোথাও বাতাসের মান মাঝারি থেকে খারাপ পর্যায়ে নেমে এসেছে। তবে সবচেয়ে গুরুতর পরিস্থিতি এখনো দিল্লিতেই, যেখানে বাসিন্দারা দ্রুত কার্যকর হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন।

শীত এলেই উত্তর ভারতের এই দূষণ সংকট যেন নিয়মিত বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। ধোঁয়া, কুয়াশা ও নিম্ন দৃশ্যমানতার এই চক্র থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে না পারলে জনস্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন আরও বড় ঝুঁকিতে পড়বে।


সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















