গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাস্তবতায় নতুন করে আঘাত হেনেছে প্রবল ঝড় ও টানা বৃষ্টি। ভারী বৃষ্টিতে নড়বড়ে হয়ে পড়া ভবন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা স্বজনদের দেহ উদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছে উদ্ধারকারীরা। আবহাওয়ার প্রতিকূলতা আর যন্ত্রপাতির ঘাটতিতে কাজ আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
বৃষ্টিতে ভাঙছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ভবন
গাজার বিভিন্ন এলাকায় সোমবার কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, টানা বৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। শুক্রবার ঝড়ের মধ্যেই দুটি ভবন ভেঙে পড়ে অন্তত বারো জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সঙ্গে প্লাবিত হয়েছে অস্থায়ী তাবু, বহু পরিবার আবারও আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। শীত ও ভেজা পরিবেশে অসুস্থতা এবং ঠান্ডাজনিত মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়েছে।

ধ্বংসস্তূপের নিচে স্বজন, অসহায় অপেক্ষা
গাজা শহরের রিমাল এলাকায় একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপে সালেম পরিবারের সদস্যদের খোঁজে তল্লাশি চালায় ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স। এক স্বজনের কণ্ঠে ভেঙে পড়া আর্তনাদ পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে। ধ্বংসস্তূপের নিচে ছেলের হাত দেখা গেলেও তাকে বের করে আনা যাচ্ছে না। উদ্ধার কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে বৃষ্টি ও কাদা। শুক্রবার ধসে পড়া একটি ছয়তলা ভবনে পনেরো বছরের এক ছেলে ও আঠারো বছরের এক কন্যাসহ পরিবারের একাধিক সদস্য প্রাণ হারান।
অস্থায়ী তাবুতে জীবন, ঝড়েই শেষ ভরসা
অনেকে আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে থাকতে বাধ্য ছিলেন। বিকল্প আশ্রয় না পেয়ে কেউ কেউ তাবুতে উঠলেও আগের ঝড়ে সেগুলোও প্লাবিত হয়। শুক্রবার প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বেরিয়ে ফিরে এসে ধ্বংসস্তূপ আর লাশ উদ্ধারের দৃশ্য দেখেন এক বাবা। তাঁর ভাষায়, সেই দৃশ্য আজীবনের ক্ষত।

যুদ্ধবিরতি হলেও ত্রাণের ঘাটতি
দীর্ঘ দুই বছরের সংঘাতের পর অক্টোবরে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় ঢুকছে খুব সামান্য ত্রাণ। প্রায় পুরো জনসংখ্যাই গৃহহীন। গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাবুর বদলে মোবাইল ঘর ও ক্যারাভ্যান পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর সতর্কতা, মানুষকে সুরক্ষা না দিলে শিশু ও নারীর মৃত্যু আরও বাড়বে।
জাতিসংঘের জরুরি আবেদন
সোমবার জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার প্রধান জানান, বিলম্ব ছাড়া গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। ঝড় ও শীতে মানুষ জমে মারা যাচ্ছে, পানিতে ভেজা ধ্বংসস্তূপ ভেঙে পড়ছে। তাঁর মতে, কয়েক মাস ধরে আটকে থাকা সরবরাহ ঢুকতে পারলে লাখ লাখ মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব। কর্মকর্তারা বলছেন, বাস্তুচ্যুত প্রায় পনেরো লাখ মানুষের জন্য অন্তত তিন লাখ নতুন তাবু জরুরি, বিদ্যমান আশ্রয়গুলো খুবই নাজুক।

হাজারো দেহ এখনও চাপা
গাজার কর্তৃপক্ষের হিসাবে, যুদ্ধে বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো প্রায় নয় হাজার দেহ রয়ে গেছে। পর্যাপ্ত ভারী যন্ত্র না থাকায় উদ্ধার কাজ ধীরগতির। সোমবারই ডিসেম্বরের এক বোমা হামলায় ধ্বংস হওয়া বহুতল ভবন থেকে প্রায় বিশ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ষাট জন আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে ধারণা।
ত্রাণ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
গাজার কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পর্যাপ্ত ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। ত্রাণ সংস্থাগুলোর অভিযোগ, জরুরি সামগ্রী আটকে রাখা হচ্ছে। ইসরায়েল দাবি করছে, তারা দায়িত্ব পালন করছে এবং ত্রাণ বিতরণে অদক্ষতা ও চুরির অভিযোগ তুলছে, যা হামাস অস্বীকার করেছে।


সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















