০৮:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
মৃত্যুভয়ে নির্বাচন ছাড়লেন বিএনপি প্রার্থী গাজায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী নিয়ে দোহায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হাদির সুস্থতার সম্ভাবনা এখনো অনিশ্চিত, এখন ফ্যাক্টর সময় মস্কোতে নির্বাসিত আসাদ: বিলাসের আড়ালে নিঃসঙ্গ জীবন, রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ভাঙল নীরবতা, ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্নে ভাভনা মেনন অস্ট্রেলিয়ার নায়ক, সিরিয়ার গর্ব আহমেদ ঝড়বৃষ্টিতে ধ্বংসস্তূপে চাপা গাজা, লাশ উদ্ধারেই যুদ্ধের মতো লড়াই একটি ভাঙা বাড়ি: আজকের বিজয় দিবস মিলানে সৌদি ঐতিহ্যের উজ্জ্বল উপস্থিতি, বিশ্বদরবারে সংস্কৃতির শক্ত বার্তা দূষিত ধোঁয়ায় ঢাকা দিল্লি, উত্তর ভারতে ভেঙে পড়ল দৃশ্যমানতা

ঝড়বৃষ্টিতে ধ্বংসস্তূপে চাপা গাজা, লাশ উদ্ধারেই যুদ্ধের মতো লড়াই

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাস্তবতায় নতুন করে আঘাত হেনেছে প্রবল ঝড় ও টানা বৃষ্টি। ভারী বৃষ্টিতে নড়বড়ে হয়ে পড়া ভবন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা স্বজনদের দেহ উদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছে উদ্ধারকারীরা। আবহাওয়ার প্রতিকূলতা আর যন্ত্রপাতির ঘাটতিতে কাজ আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।

বৃষ্টিতে ভাঙছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ভবন

গাজার বিভিন্ন এলাকায় সোমবার কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, টানা বৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। শুক্রবার ঝড়ের মধ্যেই দুটি ভবন ভেঙে পড়ে অন্তত বারো জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সঙ্গে প্লাবিত হয়েছে অস্থায়ী তাবু, বহু পরিবার আবারও আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। শীত ও ভেজা পরিবেশে অসুস্থতা এবং ঠান্ডাজনিত মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়েছে।

General view of a residential building damaged during the war, in Gaza City

ধ্বংসস্তূপের নিচে স্বজন, অসহায় অপেক্ষা

গাজা শহরের রিমাল এলাকায় একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপে সালেম পরিবারের সদস্যদের খোঁজে তল্লাশি চালায় ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স। এক স্বজনের কণ্ঠে ভেঙে পড়া আর্তনাদ পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে। ধ্বংসস্তূপের নিচে ছেলের হাত দেখা গেলেও তাকে বের করে আনা যাচ্ছে না। উদ্ধার কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে বৃষ্টি ও কাদা। শুক্রবার ধসে পড়া একটি ছয়তলা ভবনে পনেরো বছরের এক ছেলে ও আঠারো বছরের এক কন্যাসহ পরিবারের একাধিক সদস্য প্রাণ হারান।

অস্থায়ী তাবুতে জীবন, ঝড়েই শেষ ভরসা

অনেকে আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে থাকতে বাধ্য ছিলেন। বিকল্প আশ্রয় না পেয়ে কেউ কেউ তাবুতে উঠলেও আগের ঝড়ে সেগুলোও প্লাবিত হয়। শুক্রবার প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বেরিয়ে ফিরে এসে ধ্বংসস্তূপ আর লাশ উদ্ধারের দৃশ্য দেখেন এক বাবা। তাঁর ভাষায়, সেই দৃশ্য আজীবনের ক্ষত।

Palestinian woman walks past residential buildings damaged and destroyed during the war, in Gaza City

যুদ্ধবিরতি হলেও ত্রাণের ঘাটতি

দীর্ঘ দুই বছরের সংঘাতের পর অক্টোবরে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় ঢুকছে খুব সামান্য ত্রাণ। প্রায় পুরো জনসংখ্যাই গৃহহীন। গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাবুর বদলে মোবাইল ঘর ও ক্যারাভ্যান পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর সতর্কতা, মানুষকে সুরক্ষা না দিলে শিশু ও নারীর মৃত্যু আরও বাড়বে।

জাতিসংঘের জরুরি আবেদন

সোমবার জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার প্রধান জানান, বিলম্ব ছাড়া গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। ঝড় ও শীতে মানুষ জমে মারা যাচ্ছে, পানিতে ভেজা ধ্বংসস্তূপ ভেঙে পড়ছে। তাঁর মতে, কয়েক মাস ধরে আটকে থাকা সরবরাহ ঢুকতে পারলে লাখ লাখ মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব। কর্মকর্তারা বলছেন, বাস্তুচ্যুত প্রায় পনেরো লাখ মানুষের জন্য অন্তত তিন লাখ নতুন তাবু জরুরি, বিদ্যমান আশ্রয়গুলো খুবই নাজুক।

Palestinians stand inside a residential building damaged during the war, in Gaza City

হাজারো দেহ এখনও চাপা

গাজার কর্তৃপক্ষের হিসাবে, যুদ্ধে বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো প্রায় নয় হাজার দেহ রয়ে গেছে। পর্যাপ্ত ভারী যন্ত্র না থাকায় উদ্ধার কাজ ধীরগতির। সোমবারই ডিসেম্বরের এক বোমা হামলায় ধ্বংস হওয়া বহুতল ভবন থেকে প্রায় বিশ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ষাট জন আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে ধারণা।

ত্রাণ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

গাজার কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পর্যাপ্ত ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। ত্রাণ সংস্থাগুলোর অভিযোগ, জরুরি সামগ্রী আটকে রাখা হচ্ছে। ইসরায়েল দাবি করছে, তারা দায়িত্ব পালন করছে এবং ত্রাণ বিতরণে অদক্ষতা ও চুরির অভিযোগ তুলছে, যা হামাস অস্বীকার করেছে।

Palestinian man stands inside a residential building damaged during the war, in Gaza City

 

Palestinians stand inside a residential building damaged during the war, in Gaza City

জনপ্রিয় সংবাদ

মৃত্যুভয়ে নির্বাচন ছাড়লেন বিএনপি প্রার্থী

ঝড়বৃষ্টিতে ধ্বংসস্তূপে চাপা গাজা, লাশ উদ্ধারেই যুদ্ধের মতো লড়াই

০৫:৩৯:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাস্তবতায় নতুন করে আঘাত হেনেছে প্রবল ঝড় ও টানা বৃষ্টি। ভারী বৃষ্টিতে নড়বড়ে হয়ে পড়া ভবন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা স্বজনদের দেহ উদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছে উদ্ধারকারীরা। আবহাওয়ার প্রতিকূলতা আর যন্ত্রপাতির ঘাটতিতে কাজ আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।

বৃষ্টিতে ভাঙছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ভবন

গাজার বিভিন্ন এলাকায় সোমবার কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, টানা বৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। শুক্রবার ঝড়ের মধ্যেই দুটি ভবন ভেঙে পড়ে অন্তত বারো জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সঙ্গে প্লাবিত হয়েছে অস্থায়ী তাবু, বহু পরিবার আবারও আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। শীত ও ভেজা পরিবেশে অসুস্থতা এবং ঠান্ডাজনিত মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়েছে।

General view of a residential building damaged during the war, in Gaza City

ধ্বংসস্তূপের নিচে স্বজন, অসহায় অপেক্ষা

গাজা শহরের রিমাল এলাকায় একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপে সালেম পরিবারের সদস্যদের খোঁজে তল্লাশি চালায় ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স। এক স্বজনের কণ্ঠে ভেঙে পড়া আর্তনাদ পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে। ধ্বংসস্তূপের নিচে ছেলের হাত দেখা গেলেও তাকে বের করে আনা যাচ্ছে না। উদ্ধার কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে বৃষ্টি ও কাদা। শুক্রবার ধসে পড়া একটি ছয়তলা ভবনে পনেরো বছরের এক ছেলে ও আঠারো বছরের এক কন্যাসহ পরিবারের একাধিক সদস্য প্রাণ হারান।

অস্থায়ী তাবুতে জীবন, ঝড়েই শেষ ভরসা

অনেকে আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে থাকতে বাধ্য ছিলেন। বিকল্প আশ্রয় না পেয়ে কেউ কেউ তাবুতে উঠলেও আগের ঝড়ে সেগুলোও প্লাবিত হয়। শুক্রবার প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বেরিয়ে ফিরে এসে ধ্বংসস্তূপ আর লাশ উদ্ধারের দৃশ্য দেখেন এক বাবা। তাঁর ভাষায়, সেই দৃশ্য আজীবনের ক্ষত।

Palestinian woman walks past residential buildings damaged and destroyed during the war, in Gaza City

যুদ্ধবিরতি হলেও ত্রাণের ঘাটতি

দীর্ঘ দুই বছরের সংঘাতের পর অক্টোবরে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় ঢুকছে খুব সামান্য ত্রাণ। প্রায় পুরো জনসংখ্যাই গৃহহীন। গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাবুর বদলে মোবাইল ঘর ও ক্যারাভ্যান পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর সতর্কতা, মানুষকে সুরক্ষা না দিলে শিশু ও নারীর মৃত্যু আরও বাড়বে।

জাতিসংঘের জরুরি আবেদন

সোমবার জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার প্রধান জানান, বিলম্ব ছাড়া গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। ঝড় ও শীতে মানুষ জমে মারা যাচ্ছে, পানিতে ভেজা ধ্বংসস্তূপ ভেঙে পড়ছে। তাঁর মতে, কয়েক মাস ধরে আটকে থাকা সরবরাহ ঢুকতে পারলে লাখ লাখ মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব। কর্মকর্তারা বলছেন, বাস্তুচ্যুত প্রায় পনেরো লাখ মানুষের জন্য অন্তত তিন লাখ নতুন তাবু জরুরি, বিদ্যমান আশ্রয়গুলো খুবই নাজুক।

Palestinians stand inside a residential building damaged during the war, in Gaza City

হাজারো দেহ এখনও চাপা

গাজার কর্তৃপক্ষের হিসাবে, যুদ্ধে বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো প্রায় নয় হাজার দেহ রয়ে গেছে। পর্যাপ্ত ভারী যন্ত্র না থাকায় উদ্ধার কাজ ধীরগতির। সোমবারই ডিসেম্বরের এক বোমা হামলায় ধ্বংস হওয়া বহুতল ভবন থেকে প্রায় বিশ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ষাট জন আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে ধারণা।

ত্রাণ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

গাজার কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পর্যাপ্ত ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। ত্রাণ সংস্থাগুলোর অভিযোগ, জরুরি সামগ্রী আটকে রাখা হচ্ছে। ইসরায়েল দাবি করছে, তারা দায়িত্ব পালন করছে এবং ত্রাণ বিতরণে অদক্ষতা ও চুরির অভিযোগ তুলছে, যা হামাস অস্বীকার করেছে।

Palestinian man stands inside a residential building damaged during the war, in Gaza City

 

Palestinians stand inside a residential building damaged during the war, in Gaza City