০৩:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অবরুদ্ধ সুদানের এল ফাশেরে মসজিদে ড্রোন হামলায় নিহত ৭৫ জন

ভয়াবহ ড্রোন হামলা

সুদানের উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল ফাশের শহরে এক ভয়াবহ ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ৭৫ জন নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, আরএসএফ (র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস) নামের আধাসামরিক বাহিনী শহরের একটি মসজিদে নামাজরত মানুষের ওপর এই হামলা চালায়।

হামলাটি শহরের আল-দারাজা এলাকায় ঘটে। এখানে দুর্ভিক্ষপীড়িত আবু শৌক শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে আসা মানুষজন আশ্রয় নিয়েছিল। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশ টেনে বের করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মরদেহ দেখা গেছে। আরএসএফ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।


এল ফাশেরের গুরুত্ব

২০২৩ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফ-এর গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এ বছরের মার্চে সেনারা রাজধানী খার্তুম দখল করার পর থেকে আরএসএফ দারফুরে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে মরিয়া হয়ে লড়ছে।

এল ফাশের বর্তমানে দারফুরে সেনাবাহিনীর হাতে থাকা শেষ রাজধানী। শহরটি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব জানিয়েছে, আরএসএফ শহর ঘিরে মাটির দেয়াল তৈরি করছে, যাতে মানুষ বের হতে না পারে।

স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, আরএসএফ বাহিনী আবু শৌক শিবির এবং জাতিসংঘ-আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রাক্তন শান্তিরক্ষী ঘাঁটির চারপাশে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমানে এই ঘাঁটি আরএসএফ বিরোধী যৌথ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।


বাড়তে থাকা হামলা ও হতাহত

গত কয়েক মাসে এল ফাশের ও আশপাশের শিবিরগুলোতে বারবার গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলা হয়েছে। শুধু গত মাসেই ১০ দিনের মধ্যে অন্তত ৮৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার জানিয়েছে, অনেক মৃত্যুই সম্ভবত সরাসরি হত্যা বা তাৎক্ষণিক মৃত্যুদণ্ডের মতো ছিল।

গত সপ্তাহেই আরএসএফ-এর গোলাবর্ষণে আরও ১৩ জন নিহত হন।

মানবাধিকার কমিশনের নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত অন্তত ৩,৩৮৪ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন, যার ৮০ শতাংশের বেশি দারফুর অঞ্চলের। অধিকাংশ মৃত্যু ঘটেছে জনবহুল এলাকায় আর্টিলারি হামলা ও আকাশ থেকে ড্রোন আক্রমণের কারণে। এল ফাশেরসহ জামজাম ও আবু শৌক শিবিরে আরএসএফ-এর আক্রমণেই এ হতাহতের বড় অংশ ঘটে।


মানবিক বিপর্যয় ও ভয়াবহ বাস্তবতা

জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এসব হত্যাযজ্ঞের কিছু অংশ জাতিগতভাবে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে।

এল ফাশের এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। ফলে হতাহতের সংখ্যা যাচাই বা মানবিক সহায়তা সমন্বয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এক আলোচনায় উত্তর দারফুরের শিল্পী ও শিক্ষক ফাতিমা বলেন, এল ফাশেরের সাধারণ মানুষ প্রতিদিন গোলাবর্ষণ, দ্রুত মৃত্যু, ধীর মৃত্যু, ক্ষুধা, রোগ, ভীতি প্রদর্শন ও অমানবিক আচরণের শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, “এটা এক প্রকৃত বিপর্যয়।”

জামজাম শিবিরের মুখপাত্র মোহাম্মদ দুদা জানিয়েছেন, মানুষ এখন কন্টেইনার মাটির নিচে পুঁতে তার ভেতর আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।


সম্ভাব্য জাতিগত হত্যাযজ্ঞের আশঙ্কা

আভাজ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন সতর্ক করেছে, যদি এল ফাশের আরএসএফ-এর দখলে পড়ে, তবে তারা জাতিগত হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারে। এর আগেও ২০২৩ সালে জেনিনা শহর এবং এ বছরের শুরুতে জামজাম দখলের পর এ ধরনের অভিযোগ উঠেছিল।

সুদানে চলমান এই গৃহযুদ্ধকে জাতিসংঘ ২১শ শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, অন্তত ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, এবং আরও কোটি কোটি মানুষ মানবিক সহায়তার অপেক্ষায় আছেন।

অবরুদ্ধ সুদানের এল ফাশেরে মসজিদে ড্রোন হামলায় নিহত ৭৫ জন

১২:১৪:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভয়াবহ ড্রোন হামলা

সুদানের উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল ফাশের শহরে এক ভয়াবহ ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ৭৫ জন নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, আরএসএফ (র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস) নামের আধাসামরিক বাহিনী শহরের একটি মসজিদে নামাজরত মানুষের ওপর এই হামলা চালায়।

হামলাটি শহরের আল-দারাজা এলাকায় ঘটে। এখানে দুর্ভিক্ষপীড়িত আবু শৌক শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে আসা মানুষজন আশ্রয় নিয়েছিল। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশ টেনে বের করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মরদেহ দেখা গেছে। আরএসএফ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।


এল ফাশেরের গুরুত্ব

২০২৩ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফ-এর গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এ বছরের মার্চে সেনারা রাজধানী খার্তুম দখল করার পর থেকে আরএসএফ দারফুরে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে মরিয়া হয়ে লড়ছে।

এল ফাশের বর্তমানে দারফুরে সেনাবাহিনীর হাতে থাকা শেষ রাজধানী। শহরটি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব জানিয়েছে, আরএসএফ শহর ঘিরে মাটির দেয়াল তৈরি করছে, যাতে মানুষ বের হতে না পারে।

স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, আরএসএফ বাহিনী আবু শৌক শিবির এবং জাতিসংঘ-আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রাক্তন শান্তিরক্ষী ঘাঁটির চারপাশে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমানে এই ঘাঁটি আরএসএফ বিরোধী যৌথ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।


বাড়তে থাকা হামলা ও হতাহত

গত কয়েক মাসে এল ফাশের ও আশপাশের শিবিরগুলোতে বারবার গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলা হয়েছে। শুধু গত মাসেই ১০ দিনের মধ্যে অন্তত ৮৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার জানিয়েছে, অনেক মৃত্যুই সম্ভবত সরাসরি হত্যা বা তাৎক্ষণিক মৃত্যুদণ্ডের মতো ছিল।

গত সপ্তাহেই আরএসএফ-এর গোলাবর্ষণে আরও ১৩ জন নিহত হন।

মানবাধিকার কমিশনের নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত অন্তত ৩,৩৮৪ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন, যার ৮০ শতাংশের বেশি দারফুর অঞ্চলের। অধিকাংশ মৃত্যু ঘটেছে জনবহুল এলাকায় আর্টিলারি হামলা ও আকাশ থেকে ড্রোন আক্রমণের কারণে। এল ফাশেরসহ জামজাম ও আবু শৌক শিবিরে আরএসএফ-এর আক্রমণেই এ হতাহতের বড় অংশ ঘটে।


মানবিক বিপর্যয় ও ভয়াবহ বাস্তবতা

জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এসব হত্যাযজ্ঞের কিছু অংশ জাতিগতভাবে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে।

এল ফাশের এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। ফলে হতাহতের সংখ্যা যাচাই বা মানবিক সহায়তা সমন্বয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এক আলোচনায় উত্তর দারফুরের শিল্পী ও শিক্ষক ফাতিমা বলেন, এল ফাশেরের সাধারণ মানুষ প্রতিদিন গোলাবর্ষণ, দ্রুত মৃত্যু, ধীর মৃত্যু, ক্ষুধা, রোগ, ভীতি প্রদর্শন ও অমানবিক আচরণের শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, “এটা এক প্রকৃত বিপর্যয়।”

জামজাম শিবিরের মুখপাত্র মোহাম্মদ দুদা জানিয়েছেন, মানুষ এখন কন্টেইনার মাটির নিচে পুঁতে তার ভেতর আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।


সম্ভাব্য জাতিগত হত্যাযজ্ঞের আশঙ্কা

আভাজ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন সতর্ক করেছে, যদি এল ফাশের আরএসএফ-এর দখলে পড়ে, তবে তারা জাতিগত হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারে। এর আগেও ২০২৩ সালে জেনিনা শহর এবং এ বছরের শুরুতে জামজাম দখলের পর এ ধরনের অভিযোগ উঠেছিল।

সুদানে চলমান এই গৃহযুদ্ধকে জাতিসংঘ ২১শ শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, অন্তত ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, এবং আরও কোটি কোটি মানুষ মানবিক সহায়তার অপেক্ষায় আছেন।