ভূমিকা
অক্টোপাসের নামেই লুকিয়ে আছে তার পরিচয়—আটটি বাহু। তবে এই বাহুগুলো শুধু শক্তির দিক থেকে নয়, গঠনগত দিক থেকেও বিশেষ। অনেকটাই হাতির শুঁড় বা মানুষের জিহ্বার মতো কাজ করে। বিজ্ঞানীরা একে বলেন “মাসকুলার হাইড্রোস্ট্যাট”—যেখানে মাংসপেশির দল নিজেদের ভেতরে টান আর শিথিলতার মাধ্যমে অসাধারণ শক্তি ও নানা রকম নড়াচড়া তৈরি করে।
অসীম গতিশীলতা
ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটির মেরিন সায়েন্স ল্যাবরেটরির গবেষক ড. চেলসি বেনিস জানান, এই বাহুগুলো প্রায় অসীম মাত্রায় বাঁকানো, ছোট করা, লম্বা করা, ঘোরানো বা মোচড় দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সম্প্রতি এক গবেষণায় তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা বন্য অক্টোপাসের ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করেছেন। দেখা গেছে, অক্টোপাস শিকার করা, পরিবেশ ঘুরে দেখা বা দ্রুত এদিক-সেদিক সরে যাওয়ার সময় কীভাবে তাদের বাহুগুলোকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে।
গবেষণার ধাপ
গবেষক দল ২৫টি বন্য অক্টোপাসের প্রত্যেকটির দুই ঘণ্টা ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা চারটি মৌলিক গতির ধরন চিহ্নিত করেছেন, যার ভিত্তিতে বাহুর ১২ ধরনের মৌলিক ব্যবহার ধরা পড়ে। এগুলোর সমন্বয় থেকে ১৫ ধরনের আচরণ তৈরি হয়।
সামনের ও পেছনের বাহুর ভিন্ন ব্যবহার
ফলাফলে দেখা গেছে, অক্টোপাসরা সামনের বাহু পেছনের চেয়ে বেশি ব্যবহার করে। সাধারণত সামনের বাহু দিয়ে তারা পরিবেশ পরীক্ষা করে, আর পেছনের বাহু ব্যবহার করে চলাফেরায়। তবে প্রতিটি বাহুই সমানভাবে সব ধরনের নড়াচড়া ও আচরণে সক্ষম।
ডানহাতি বা বামহাতি নয়
আগের কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল যে অক্টোপাসরা হয়তো ডান বা বাম বাহুতে বিশেষ ভরসা করে। কিন্তু এই গবেষণায় তেমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। প্রকৃতিতে অক্টোপাসরা সমানভাবে সব বাহু ব্যবহার করে।
বুদ্ধিমত্তা ও প্রতিরক্ষা কৌশল
অক্টোপাস শুধু বাহুর গতিশীলতার জন্য নয়, বুদ্ধিমত্তার কারণেও আলোচিত। তারা শিকার ধরতে কৌশল ব্যবহার করে, শত্রু এড়াতে রঙ বদলায় এবং কখনো কখনো কালি ছেড়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। গবেষকরা বলছেন, অক্টোপাসের বাহুগুলোতে এত বেশি স্নায়ু ছড়িয়ে আছে যে প্রতিটি বাহু প্রায় স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। এ কারণেই তাদের প্রতিক্রিয়া এত দ্রুত ও কার্যকর।
প্রকৃতিতে ভূমিকা
অক্টোপাস সমুদ্রের খাদ্যচক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা শিকারি হিসেবেও পরিচিত, আবার বড় শিকারিদের খাদ্যও বটে। তাদের বাহুর অনন্য ব্যবহার সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের জটিল ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
অক্টোপাসের বাহু শুধু শক্তির উৎস নয়, বরং প্রকৃতির এক অসাধারণ কৌশল। নমনীয়তা, স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়ার ক্ষমতা তাকে সমুদ্রের অন্যতম দক্ষ ও রহস্যময় প্রাণীতে পরিণত করেছে।