০৭:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি জাতিগোষ্ঠীর দীর্ঘ পথচলা হরিদোহাঃ বিল ও মেঘনার এক মিলন সেতু ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরাত-যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ: এইচ-১বি ভিসার ধাক্কা লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ৫ নিহত, নিহতদের মধ্যে মার্কিন নাগরিক থাকার দাবি নিয়ে বিতর্ক সিরিয়ায় আইএসআইএসের প্রত্যাবর্তন জিএসটি করছাড়ে উৎসব মৌসুমে ভারতীয় খরচ বাড়বে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির ঢেউ, দুই-রাষ্ট্র সমাধানে সমর্থন জোগাতে বিশ্ব সম্মেলন হোমনা-মেঘনা আসন বহাল রাখার দাবিতে হাইকোর্টের রুল ট্রাম্পের কঠোর ভিসা ফি-তে ধাক্কা খেল মার্কিন প্রযুক্তি শেয়ার রাশিয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কন্টিনজেন্ট এর অংশগ্রহণে যৌথ মহড়া “ওয়েস্ট-২০২৫” অনুষ্ঠিত

রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -২৬)

(১) নওগাঁ-১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে এই স্থানে একটি মহকুমা স্থাপিত হয়। যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। এই স্থান উত্তরবঙ্গ রেলওয়ের সুলতানপুর স্টেশন হইতে তিন মাইল দূরে। এস্থানের হাট অতি প্রসিদ্ধ। এবং একটি প্রসিদ্ধ বাণিজ্য স্থান। ইহা গাঁজার জন্য বিখ্যাত। এই নওগাঁ হইতে প্রায় সমুদয় ভারতবর্ষে গাঁজা রপ্তানি হয়। এখানে মিউনিসিপাল নিয়ম প্রচলিত হয় নাই। বিদ্যা শিক্ষার জন্য উচ্চশ্রেণির একটি ইংরেজি বিদ্যালয় এবং দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা জন্য একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপিত হইয়াছে। মহকুমা স্থাপিত হইবার পর হইতে স্থানের শ্রীবৃদ্ধি হইয়াছে। কালে ইহা একটি সুন্দর নগরে পরিণত হইবে, তাহার আর সন্দেহ নাই।

(২) বলিহার-ঐ স্থান বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণের একটি প্রধান সমাজ। কুলজ্ঞ গ্রন্থে ইহার নাম ‘কুড়মুড়ি’ বা ‘কুড়মৈল’ বলিয়া পরিচিত। আত্রাই নদী হইতে প্রায় আট মাইল দূর। এই গ্রামে বলিহার পরগণার রাজাদের বাড়ি। এই পরগণার এক অংশের জমিদার রঙ্গুর জেলার অন্তর্গত দিনহাটায় নিয়তকাল বাস করেন। রাজা কৃষ্ণেন্দ্র নারায়ণের সাহায্যে একটি মধ্যশ্রেণি ইংরেজ স্কুল স্থাপিত হইয়াছে।

(৩) দুবলহাটি-এ গ্রামটি বিলের মধ্যে; নওগাঁ হইতে ৫ মাইল দূর। এখানে বারবকপুর পরগণার রাজার বাস। রাজা হরনাথের সাহায্যে একটি মধ্যশ্রেণি ইংরেজি স্কুল’ স্থাপিত হইয়াছে।

(৪) মহাদেবপুর-আত্রাই নদীর তীরে; বলিহার হইতে ৫ কি ৬ মাইল দূর। রাঢ়ী শ্রেণি ব্রাহ্মণ জমিদারদিগের বাস।

(৫) মাঁদা-মাঁদার বিলের তীরে, আত্রাই নদী হইতে প্রায় ৬ মাইল দূর। এই স্থান রামনবমীর মেলার জন্য প্রসিদ্ধ। এই স্থানে মাঁদা পরগণার জমিদারদিগের কাছারি আছে।

(৬) তালন্দ-মাঁদার বিলের শেষ ভাগে দক্ষিণদিকে এবং তানোর থানার প্রায় ৪ মাইল উত্তরে। ধনী বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদারদিগের বাস। ইহাদের দ্বারা একটি মধ্যশ্রেণি স্কুল স্থাপিত হইয়াছে।

(৮) দিঘাপতিয়া-নাটোরের ২ মাইল উত্তর। এই গ্রামে দয়ারাম রায়ের বংশধর দিঘাপতিয়া রাজার বাস। জেলার মধ্যে এই রাজার জমিদারি সকলের অপেক্ষা বেশি। এই রাজার রাজত্ব রাজসাহী, বগুড়া, পাবনা, ফরিদপুর, মুরশিদাবাদ, যশোহর, হুগলি, হাবড়া প্রভৃতি জেলায় বিস্তৃত। রাজবাটির চারিদিকে ‘চৌকি’ বা পরিখা আছে, রাজবাটির সম্মুখেই দৈনিক বাজার হয়। স্কুল ও দাতব্য চিকিৎসালয়ের অভাব নাই।
(৯) লালুর আত্রাই নদীর তীরে। এই গ্রামে বারেন্দ্র শ্রেণি কাপ শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণের বাস। এ স্থানের বারইয়ারী কালীপূজা আদিও প্রসিদ্ধ। এ স্থানের চৌধুরীগণ চৌদ্দ চৌধুরীর একতর বংশীয় বলিয়া কথিত হয়। এই চৌধুরী জমিদারগণ আপাল’ সরস্বতীর বংশ সম্ভূত। আপাল কূলজ ছিলেন। ইহার কুলশাস্ত্রের অভিজ্ঞতাই ভূসম্পত্তি লাভের প্রধান কারণ।
(১০) জোয়াড়ি-বড়ল নদীর তীরে। এই গ্রামে কতকগুলি সদ্বংশজাত বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদারগণের বাস। বৈদিক ব্রাহ্মণগণেরও একটা প্রধান সমাজ।
(১১) কমল-বিল চলনের নিকট। রাজসাহী জেলায় এই গ্রামের ন্যায় বৃহৎ গ্রাম আর নাই। বহুতর কাঁশারী, কুমার ও জালিয়ার বাস। ইহা একটি বাণিজ্য স্থান। কলমের বারইয়ারী কালীপূজা অতি প্রসিদ্ধ। অতি পূর্বকালে এই গ্রামে প্রায় ৪০/৫০ ঘর ব্রাহ্মণ ছিলেন। প্রায় প্রত্যেক ঘরে সংস্কৃত চতুষ্পাঠী ছিল। অধ্যাপকগণের মধ্যে অনেকে কবি ছিলেন। সংস্কৃতের আলোচনা এত বেশি ছিল যে কলম দ্বিতীয় নবদ্বীপ বলিয়া খ্যাত ছিল। রাজসাহীর জজ আদালতের প্রধান উকিল বাবু ভুবনমোহন মৈত্র মহাশয়ের বৃদ্ধ প্রপিতামহ রাধানাথ একজন প্রসিদ্ধ পণ্ডিত ছিলেন। দিঘাপতিয়া রাজবংশের আদি পুরুষ দয়ারাম রায়ের আদি বাস এই কলম গ্রামে ছিল।
(১২) সিংড়া-নাগর নদী দুই দিক দিয়া গুড় নদীর সহিত একত্রিত হইয়াছে-একদিকে তেমুখের নিকট, অপর দিকে তাজপুর দিয়া সিংড়ার নিকট। সিংড়া এই নদীর সঙ্গম স্থান। এই স্থানে পুলিশ স্টেশন। রামপুর বোয়ালিয়া হইতে বগুড়া পর্যন্ত যে রাজপথ আছে, তাহার এক পার্শ্বে পুলিশ স্টেশন। সিংড়া একটি বাণিজ্য স্থান। শালকাষ্ঠ এই স্থানে বিক্রয় হয় এবং এস্থানের হাটও প্রসিদ্ধ।
(১৩) চৌগ্রাম-সিংড়া হইতে চারি মাইল উত্তর। এই গ্রামে চৌগ্রাম পরগণার জমিদারের বাস। মহারাণী ভবানী কৃত যে ‘জাঙ্গাল’ অর্থাৎ পথ ভবানীপুরের তীর্থস্থান পর্যন্ত নির্মিত হয়, তাহা চৌগ্রাম হইতে এক প্রহরের পথ হইবে।
(১৪) পতিসর নাগর নদীর তীরে। কালীগাঁও পরগণার জমিদারের সদর কাছারি। কলিকাতার ঠাকুর বাবুরা এই পরগণার জমিদার। এই পতিসরের অনতিদূরে ১০১টা পুষ্করিণী আছে। ইহা কথিত আছে যে মাতার উদ্ধার জন্য কোন ব্রাহ্মণ জমিদার এক দিবসে ১০১টা পুকুর খনন করেন। ইহার কোন কোনটিতে জল থাকে না। ১০১টা পুষ্করিণী এক দিবসে উৎসর্গ করাই সঙ্গত বলিয়া বোধ হয়।
(১৭) কাসিমপুর-যমুনা নদীর তীরে। এই গ্রামের চৌধুরীগণ চৌদ্দচৌধুরীর এক চৌধুরী বংশীয় বলিয়া পরিচিত। ইহারা বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণের মধ্যে প্রধান কাপ। মৃত কালী লাহিড়ির ভ্রাতুষ্পুত্র রায় গিরীশচন্দ্র লাহিড়ি বাহাদুরের বাসস্থান। এ বংশও কাপ প্রধান। উত্তরবঙ্গ রেলওয়ে রাণিগঞ্জ স্টেশন হইতে প্রায় ৩ মাইল দূর।
(১৮) আটগ্রাম-যমুনা নদীর তীরে। নিরাবিলপটির শ্রোত্রিয় ব্রাহ্মণের বাস। মহারাজা রামকৃষ্ণকে এই বংশ হইতে দত্তক গ্রহণ করা হয়।
(১৯) ভবানীপুর-এই গ্রামের নিকট আত্রাই ও যমুনা নদীর সঙ্গম স্থান। উত্তরবঙ্গ রেলওয়ে আত্রাই স্টেশন হইতে ৩ মাইল দুর। এই গ্রামে বঙ্গজ শ্রেণি কায়স্থ জমিদারগণের বাস। ইহারা শূরবংশীয় কায়স্থ। ইহারা ভুলুয়ার রাজা লক্ষণমাণিক্যের বংশধর বলিয়া পরিচয় দেন। রাজা লক্ষণমাণিক্য দ্বাদশ ভৌমিকের এক ভৌমিক।
(২০) পাঁচুপুর-গুড় নদীর তীরে। উত্তরবঙ্গ রেলওয়ে আত্রাই স্টেশন হইতে ২ মাইল দূর। এই গ্রামে অনেক ধনবান তিলির বাস। একটি বাণিজ্য স্থান। এই গ্রামে পুলিশ স্টেশন।
(২১) পাথাইল ঝাড়া-এই স্থানে আত্রাই নদী যমুনা হইতে বিভিন্ন হইয়া খাজুরা দিয়া প্রবাহিত। এই স্থানে কলিকাতা হাইকোর্টের প্রসিদ্ধ উকিল মৃত মোহিনীমোহন রায়ের আমরুল পরগণার সদর কাছারি ও ফরাসি একটি সাহেবের রেশম কুঠি আছে। ইহার অনতিদূরে আত্রাই রেলওয়ে স্টেশন এবং রেলী ব্রাদার্সের পাটের কারবার স্থান।
(২২) খাজুরা-আত্রাই নদীর তীরে কূলজ গ্রন্থে বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণের যে সকল সমাজ আছে, তন্মধ্যে ‘অর্জুরী’ অধুনা খাজুরা বলিয়া প্রসিদ্ধ। এই গ্রামে অনেক ধনবান কুলীন ব্রাহ্মণগণের বাস।
(২৩) ইসলামগাঁতি-গুড় নদীর তীরে। সদ্বংশজাত ব্রাহ্মণ জমিদারের বাস।
(২৪) গুড়নই বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণের একটি প্রসিদ্ধ সমাজ। এই গ্রাম গুড় নদীর তীরে অবস্থিত বলিয়া, গুড়নই নামে খ্যাত। এই গ্রামের মৈত্রেয় বংশীয়েরা সদ্বংশজাত ব্রাহ্মণ।
(২৫) বিশা-আত্রাই নদীর তীরে। বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণের একটি প্রসিদ্ধ সমাজ বলিয়া খ্যাত। কুলজ্ঞগ্রন্থে এ গ্রাম “বিশাখা” বলিয়া পরিচিত।
(২৬) ডাঙাপাড়া-আত্রাই নদীর তীরে। এই গ্রামের বারেন্দ্র কায়স্থ চৌধুরীগণ চৌদ্দ চৌধুরীর একতর বংশীয় বলিয়া পরিচয় দিয়া থাকেন। ইহাদের মধ্যে অনেকে সুশিক্ষিত।
(২৭) বান্দাইখাড়া-আত্রাই নদীর তীরে। একটি বাণিজ্য স্থান। নওগাঁও মহকুমা স্থাপিত হওয়ার সমসাময়িককালে বান্দাইখাড়া পুলিশ স্টেশন নওগাঁওতে উঠিয়া যায়।
(২৮) ক্ষেতর-গৌড়ে যাইবার সময় চৈতন্যদেব এইস্থানে অবস্থিতি করেন। তাহার স্মরণার্থ একটি মন্দির প্রস্তুত হয়, তাহাতেই গৌরাঙ্গের মূর্তি স্থাপিত আছে। প্রতি বৎসর একটি নরোত্তম ঠাকুরের মহোৎসব প্রসিদ্ধ। মেলা হয়। এই মেলায় বৈরাগীর সমাগমই বেশি। রামপুরবোয়ালিয়ার পশ্চিমে। এই স্থানে
(২৯) বাঘা-লালপুর (বিলমাড়িয়া) থানার অন্তর্গত। এই স্থানে একটি সুন্দর মসজিদ আছে। ঈদের সময় এই স্থানে মেলা হয়। এই মসজিদ রক্ষা জন্য এবং অন্যান্য ব্যয় জন্য বালকদের ধর্মশিক্ষা হয়। মোঘল সম্রাট সাহজাহান বহুতর নিষ্কর ভূমি দান করেন। উদ্বৃত্ত আয় হইতে মুসলমান
(৩১) পুঠিয়া-‘দক্ষিণে নারদ, পূর্বে মুসাখাঁ, উত্তরে হোজা, এই নদীত্রয়ের বেষ্টনের মধ্যে রাজসাহী জেলার প্রধান নগর রামপুর-বোয়ালিয়ার ৮ ক্রোশ পূর্বদিকে পুঠিয়া গ্রাম। বারেন্দ্র শ্রেণির প্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণ ভূম্যধিকারী বংশের বসতির জন্য পুঠিয়া বিখ্যাত। চতুর্দশ খ্রিস্টাব্দের শেষ অথবা পঞ্চদশ খ্রিস্টাব্দের প্রথমেই পুঁঠিয়া রাজধানীর গঠন হয়। এই গ্রামে, রাজধানীর সংস্রবে ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য এবং গোপ ইত্যাদি নবশাখের পুরুষানুক্রমিক বসতি আছে।”* রাজাদের কৃত অনেক দেবমন্দিরে ও দেবালয় স্থাপিত আছে এবং উচ্চশ্রেণি ইংরাজি স্কুলও আছে। এই গ্রামে অনেক শিক্ষিত লোকের বাস।
(৩২) গোদাগাড়ি-পদ্মানদীর তীরে। বর্গীর হেঙ্গামার সময় এই গ্রামে নবাব আলিবদ্দী বাস ভবন নির্মাণ করেন এবং এই গ্রামে ‘কেল্লা বারুইপাড়া’ নামে একটি দুর্গের ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়। ۱۴
(৩৩) সুলতানগঞ্জ-পদ্মা ও মহানন্দার সম্মিলন স্থান। নবাব আলিবন্দী এই গঞ্জ স্থাপিত করেন বলিয়া ইহার নাম ‘সুলতানগঞ্জ’ হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি জাতিগোষ্ঠীর দীর্ঘ পথচলা

রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -২৬)

০৪:৪৫:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

(১) নওগাঁ-১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে এই স্থানে একটি মহকুমা স্থাপিত হয়। যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। এই স্থান উত্তরবঙ্গ রেলওয়ের সুলতানপুর স্টেশন হইতে তিন মাইল দূরে। এস্থানের হাট অতি প্রসিদ্ধ। এবং একটি প্রসিদ্ধ বাণিজ্য স্থান। ইহা গাঁজার জন্য বিখ্যাত। এই নওগাঁ হইতে প্রায় সমুদয় ভারতবর্ষে গাঁজা রপ্তানি হয়। এখানে মিউনিসিপাল নিয়ম প্রচলিত হয় নাই। বিদ্যা শিক্ষার জন্য উচ্চশ্রেণির একটি ইংরেজি বিদ্যালয় এবং দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা জন্য একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপিত হইয়াছে। মহকুমা স্থাপিত হইবার পর হইতে স্থানের শ্রীবৃদ্ধি হইয়াছে। কালে ইহা একটি সুন্দর নগরে পরিণত হইবে, তাহার আর সন্দেহ নাই।

(২) বলিহার-ঐ স্থান বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণের একটি প্রধান সমাজ। কুলজ্ঞ গ্রন্থে ইহার নাম ‘কুড়মুড়ি’ বা ‘কুড়মৈল’ বলিয়া পরিচিত। আত্রাই নদী হইতে প্রায় আট মাইল দূর। এই গ্রামে বলিহার পরগণার রাজাদের বাড়ি। এই পরগণার এক অংশের জমিদার রঙ্গুর জেলার অন্তর্গত দিনহাটায় নিয়তকাল বাস করেন। রাজা কৃষ্ণেন্দ্র নারায়ণের সাহায্যে একটি মধ্যশ্রেণি ইংরেজ স্কুল স্থাপিত হইয়াছে।

(৩) দুবলহাটি-এ গ্রামটি বিলের মধ্যে; নওগাঁ হইতে ৫ মাইল দূর। এখানে বারবকপুর পরগণার রাজার বাস। রাজা হরনাথের সাহায্যে একটি মধ্যশ্রেণি ইংরেজি স্কুল’ স্থাপিত হইয়াছে।

(৪) মহাদেবপুর-আত্রাই নদীর তীরে; বলিহার হইতে ৫ কি ৬ মাইল দূর। রাঢ়ী শ্রেণি ব্রাহ্মণ জমিদারদিগের বাস।

(৫) মাঁদা-মাঁদার বিলের তীরে, আত্রাই নদী হইতে প্রায় ৬ মাইল দূর। এই স্থান রামনবমীর মেলার জন্য প্রসিদ্ধ। এই স্থানে মাঁদা পরগণার জমিদারদিগের কাছারি আছে।

(৬) তালন্দ-মাঁদার বিলের শেষ ভাগে দক্ষিণদিকে এবং তানোর থানার প্রায় ৪ মাইল উত্তরে। ধনী বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদারদিগের বাস। ইহাদের দ্বারা একটি মধ্যশ্রেণি স্কুল স্থাপিত হইয়াছে।

(৮) দিঘাপতিয়া-নাটোরের ২ মাইল উত্তর। এই গ্রামে দয়ারাম রায়ের বংশধর দিঘাপতিয়া রাজার বাস। জেলার মধ্যে এই রাজার জমিদারি সকলের অপেক্ষা বেশি। এই রাজার রাজত্ব রাজসাহী, বগুড়া, পাবনা, ফরিদপুর, মুরশিদাবাদ, যশোহর, হুগলি, হাবড়া প্রভৃতি জেলায় বিস্তৃত। রাজবাটির চারিদিকে ‘চৌকি’ বা পরিখা আছে, রাজবাটির সম্মুখেই দৈনিক বাজার হয়। স্কুল ও দাতব্য চিকিৎসালয়ের অভাব নাই।
(৯) লালুর আত্রাই নদীর তীরে। এই গ্রামে বারেন্দ্র শ্রেণি কাপ শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণের বাস। এ স্থানের বারইয়ারী কালীপূজা আদিও প্রসিদ্ধ। এ স্থানের চৌধুরীগণ চৌদ্দ চৌধুরীর একতর বংশীয় বলিয়া কথিত হয়। এই চৌধুরী জমিদারগণ আপাল’ সরস্বতীর বংশ সম্ভূত। আপাল কূলজ ছিলেন। ইহার কুলশাস্ত্রের অভিজ্ঞতাই ভূসম্পত্তি লাভের প্রধান কারণ।
(১০) জোয়াড়ি-বড়ল নদীর তীরে। এই গ্রামে কতকগুলি সদ্বংশজাত বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদারগণের বাস। বৈদিক ব্রাহ্মণগণেরও একটা প্রধান সমাজ।
(১১) কমল-বিল চলনের নিকট। রাজসাহী জেলায় এই গ্রামের ন্যায় বৃহৎ গ্রাম আর নাই। বহুতর কাঁশারী, কুমার ও জালিয়ার বাস। ইহা একটি বাণিজ্য স্থান। কলমের বারইয়ারী কালীপূজা অতি প্রসিদ্ধ। অতি পূর্বকালে এই গ্রামে প্রায় ৪০/৫০ ঘর ব্রাহ্মণ ছিলেন। প্রায় প্রত্যেক ঘরে সংস্কৃত চতুষ্পাঠী ছিল। অধ্যাপকগণের মধ্যে অনেকে কবি ছিলেন। সংস্কৃতের আলোচনা এত বেশি ছিল যে কলম দ্বিতীয় নবদ্বীপ বলিয়া খ্যাত ছিল। রাজসাহীর জজ আদালতের প্রধান উকিল বাবু ভুবনমোহন মৈত্র মহাশয়ের বৃদ্ধ প্রপিতামহ রাধানাথ একজন প্রসিদ্ধ পণ্ডিত ছিলেন। দিঘাপতিয়া রাজবংশের আদি পুরুষ দয়ারাম রায়ের আদি বাস এই কলম গ্রামে ছিল।
(১২) সিংড়া-নাগর নদী দুই দিক দিয়া গুড় নদীর সহিত একত্রিত হইয়াছে-একদিকে তেমুখের নিকট, অপর দিকে তাজপুর দিয়া সিংড়ার নিকট। সিংড়া এই নদীর সঙ্গম স্থান। এই স্থানে পুলিশ স্টেশন। রামপুর বোয়ালিয়া হইতে বগুড়া পর্যন্ত যে রাজপথ আছে, তাহার এক পার্শ্বে পুলিশ স্টেশন। সিংড়া একটি বাণিজ্য স্থান। শালকাষ্ঠ এই স্থানে বিক্রয় হয় এবং এস্থানের হাটও প্রসিদ্ধ।
(১৩) চৌগ্রাম-সিংড়া হইতে চারি মাইল উত্তর। এই গ্রামে চৌগ্রাম পরগণার জমিদারের বাস। মহারাণী ভবানী কৃত যে ‘জাঙ্গাল’ অর্থাৎ পথ ভবানীপুরের তীর্থস্থান পর্যন্ত নির্মিত হয়, তাহা চৌগ্রাম হইতে এক প্রহরের পথ হইবে।
(১৪) পতিসর নাগর নদীর তীরে। কালীগাঁও পরগণার জমিদারের সদর কাছারি। কলিকাতার ঠাকুর বাবুরা এই পরগণার জমিদার। এই পতিসরের অনতিদূরে ১০১টা পুষ্করিণী আছে। ইহা কথিত আছে যে মাতার উদ্ধার জন্য কোন ব্রাহ্মণ জমিদার এক দিবসে ১০১টা পুকুর খনন করেন। ইহার কোন কোনটিতে জল থাকে না। ১০১টা পুষ্করিণী এক দিবসে উৎসর্গ করাই সঙ্গত বলিয়া বোধ হয়।
(১৭) কাসিমপুর-যমুনা নদীর তীরে। এই গ্রামের চৌধুরীগণ চৌদ্দচৌধুরীর এক চৌধুরী বংশীয় বলিয়া পরিচিত। ইহারা বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণের মধ্যে প্রধান কাপ। মৃত কালী লাহিড়ির ভ্রাতুষ্পুত্র রায় গিরীশচন্দ্র লাহিড়ি বাহাদুরের বাসস্থান। এ বংশও কাপ প্রধান। উত্তরবঙ্গ রেলওয়ে রাণিগঞ্জ স্টেশন হইতে প্রায় ৩ মাইল দূর।
(১৮) আটগ্রাম-যমুনা নদীর তীরে। নিরাবিলপটির শ্রোত্রিয় ব্রাহ্মণের বাস। মহারাজা রামকৃষ্ণকে এই বংশ হইতে দত্তক গ্রহণ করা হয়।
(১৯) ভবানীপুর-এই গ্রামের নিকট আত্রাই ও যমুনা নদীর সঙ্গম স্থান। উত্তরবঙ্গ রেলওয়ে আত্রাই স্টেশন হইতে ৩ মাইল দুর। এই গ্রামে বঙ্গজ শ্রেণি কায়স্থ জমিদারগণের বাস। ইহারা শূরবংশীয় কায়স্থ। ইহারা ভুলুয়ার রাজা লক্ষণমাণিক্যের বংশধর বলিয়া পরিচয় দেন। রাজা লক্ষণমাণিক্য দ্বাদশ ভৌমিকের এক ভৌমিক।
(২০) পাঁচুপুর-গুড় নদীর তীরে। উত্তরবঙ্গ রেলওয়ে আত্রাই স্টেশন হইতে ২ মাইল দূর। এই গ্রামে অনেক ধনবান তিলির বাস। একটি বাণিজ্য স্থান। এই গ্রামে পুলিশ স্টেশন।
(২১) পাথাইল ঝাড়া-এই স্থানে আত্রাই নদী যমুনা হইতে বিভিন্ন হইয়া খাজুরা দিয়া প্রবাহিত। এই স্থানে কলিকাতা হাইকোর্টের প্রসিদ্ধ উকিল মৃত মোহিনীমোহন রায়ের আমরুল পরগণার সদর কাছারি ও ফরাসি একটি সাহেবের রেশম কুঠি আছে। ইহার অনতিদূরে আত্রাই রেলওয়ে স্টেশন এবং রেলী ব্রাদার্সের পাটের কারবার স্থান।
(২২) খাজুরা-আত্রাই নদীর তীরে কূলজ গ্রন্থে বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণের যে সকল সমাজ আছে, তন্মধ্যে ‘অর্জুরী’ অধুনা খাজুরা বলিয়া প্রসিদ্ধ। এই গ্রামে অনেক ধনবান কুলীন ব্রাহ্মণগণের বাস।
(২৩) ইসলামগাঁতি-গুড় নদীর তীরে। সদ্বংশজাত ব্রাহ্মণ জমিদারের বাস।
(২৪) গুড়নই বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণের একটি প্রসিদ্ধ সমাজ। এই গ্রাম গুড় নদীর তীরে অবস্থিত বলিয়া, গুড়নই নামে খ্যাত। এই গ্রামের মৈত্রেয় বংশীয়েরা সদ্বংশজাত ব্রাহ্মণ।
(২৫) বিশা-আত্রাই নদীর তীরে। বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণের একটি প্রসিদ্ধ সমাজ বলিয়া খ্যাত। কুলজ্ঞগ্রন্থে এ গ্রাম “বিশাখা” বলিয়া পরিচিত।
(২৬) ডাঙাপাড়া-আত্রাই নদীর তীরে। এই গ্রামের বারেন্দ্র কায়স্থ চৌধুরীগণ চৌদ্দ চৌধুরীর একতর বংশীয় বলিয়া পরিচয় দিয়া থাকেন। ইহাদের মধ্যে অনেকে সুশিক্ষিত।
(২৭) বান্দাইখাড়া-আত্রাই নদীর তীরে। একটি বাণিজ্য স্থান। নওগাঁও মহকুমা স্থাপিত হওয়ার সমসাময়িককালে বান্দাইখাড়া পুলিশ স্টেশন নওগাঁওতে উঠিয়া যায়।
(২৮) ক্ষেতর-গৌড়ে যাইবার সময় চৈতন্যদেব এইস্থানে অবস্থিতি করেন। তাহার স্মরণার্থ একটি মন্দির প্রস্তুত হয়, তাহাতেই গৌরাঙ্গের মূর্তি স্থাপিত আছে। প্রতি বৎসর একটি নরোত্তম ঠাকুরের মহোৎসব প্রসিদ্ধ। মেলা হয়। এই মেলায় বৈরাগীর সমাগমই বেশি। রামপুরবোয়ালিয়ার পশ্চিমে। এই স্থানে
(২৯) বাঘা-লালপুর (বিলমাড়িয়া) থানার অন্তর্গত। এই স্থানে একটি সুন্দর মসজিদ আছে। ঈদের সময় এই স্থানে মেলা হয়। এই মসজিদ রক্ষা জন্য এবং অন্যান্য ব্যয় জন্য বালকদের ধর্মশিক্ষা হয়। মোঘল সম্রাট সাহজাহান বহুতর নিষ্কর ভূমি দান করেন। উদ্বৃত্ত আয় হইতে মুসলমান
(৩১) পুঠিয়া-‘দক্ষিণে নারদ, পূর্বে মুসাখাঁ, উত্তরে হোজা, এই নদীত্রয়ের বেষ্টনের মধ্যে রাজসাহী জেলার প্রধান নগর রামপুর-বোয়ালিয়ার ৮ ক্রোশ পূর্বদিকে পুঠিয়া গ্রাম। বারেন্দ্র শ্রেণির প্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণ ভূম্যধিকারী বংশের বসতির জন্য পুঠিয়া বিখ্যাত। চতুর্দশ খ্রিস্টাব্দের শেষ অথবা পঞ্চদশ খ্রিস্টাব্দের প্রথমেই পুঁঠিয়া রাজধানীর গঠন হয়। এই গ্রামে, রাজধানীর সংস্রবে ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য এবং গোপ ইত্যাদি নবশাখের পুরুষানুক্রমিক বসতি আছে।”* রাজাদের কৃত অনেক দেবমন্দিরে ও দেবালয় স্থাপিত আছে এবং উচ্চশ্রেণি ইংরাজি স্কুলও আছে। এই গ্রামে অনেক শিক্ষিত লোকের বাস।
(৩২) গোদাগাড়ি-পদ্মানদীর তীরে। বর্গীর হেঙ্গামার সময় এই গ্রামে নবাব আলিবদ্দী বাস ভবন নির্মাণ করেন এবং এই গ্রামে ‘কেল্লা বারুইপাড়া’ নামে একটি দুর্গের ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়। ۱۴
(৩৩) সুলতানগঞ্জ-পদ্মা ও মহানন্দার সম্মিলন স্থান। নবাব আলিবন্দী এই গঞ্জ স্থাপিত করেন বলিয়া ইহার নাম ‘সুলতানগঞ্জ’ হয়।