ভুলে যাওয়া জীবনের স্বাভাবিক একটি অংশ হলেও সব ধরনের স্মৃতিভ্রংশ এক রকম নয়। পরিচিত নাম মনে না পড়া, ফোন কোথায় রেখেছেন ভুলে যাওয়া কিংবা হঠাৎ কোনো ঘরে ঢুকে গিয়ে কেন এসেছেন তা মনে করতে না পারা। এমন ঘটনা অনেকের মধ্যেই উদ্বেগ তৈরি করে। বিশেষ করে যদি এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটে। যদিও অনেক ক্ষেত্রে এটি সাধারণ বিষয়, কিছু ক্ষেত্রে স্মৃতিভ্রংশ হতে পারে গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত।
স্মৃতিভ্রংশ কী?
স্মৃতিভ্রংশ কোনো আলাদা রোগ নয় বরং এটি নানা কারণে দেখা দেওয়া একটি উপসর্গ। সাধারণভাবে এটি হলো তথ্য, ঘটনা, মানুষ বা অভিজ্ঞতা মনে করতে অসুবিধা। কখনো এটি ক্ষণস্থায়ীভাবে দেখা দেয়: যেমন চাবি কোথায় রেখেছেন মনে না পড়া। আবার কখনো এটি গুরুতর হয়ে উঠতে পারে, যেমন ব্যক্তিগত তথ্য বা জীবনের বড় কোনো ঘটনার স্মৃতি হারিয়ে যাওয়া। নতুন কিছু শেখার অসুবিধা, মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা কিংবা পরিচিত কাজ করতে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়াও স্মৃতিভ্রংশের অংশ হতে পারে।
কখন চিন্তার কারণ?
মাঝে মাঝে ভুলে যাওয়া সাধারণ বিষয়। তবে ঘন ঘন বা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা স্মৃতিভ্রংশের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া দরকার। যদি কেউ গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপয়েন্টমেন্ট ভুলতে শুরু করেন, পরিচিত জায়গায় পথ হারান বা দৈনন্দিন কাজ সামলাতে হিমশিম খান, তবে এটি সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। আবার সময় ও স্থান নিয়ে বিভ্রান্তি, কথোপকথন বুঝতে কষ্ট, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন কিংবা ব্যক্তিত্বে হঠাৎ পরিবর্তন দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। স্ট্রোক, মস্তিষ্কে আঘাত, বিষণ্নতা কিংবা স্নায়বিক রোগের মতো গুরুতর কারণও এর পেছনে থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে সমস্যা ধরা পড়লে চিকিৎসার ফলাফল ভালো হয়।
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায়
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন
গবেষণা বলছে, শরীরচর্চা শুধু শরীরের জন্য নয়, মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী। হাঁটা, সাঁতার, বা সাইকেল চালানো রক্তপ্রবাহ বাড়ায়, নতুন স্নায়ুকোষ তৈরি করে এবং মস্তিষ্কের সংযোগ শক্তিশালী করে।
সুষম খাবার খান
ফল, শাকসবজি, পূর্ণ শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের জন্য ভালো। বিশেষ করে ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা উচিত।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
অতিরিক্ত মানসিক চাপ কর্টিসল হরমোন বাড়ায়, যা মস্তিষ্কের স্মৃতি নিয়ন্ত্রণকারী অংশ হিপোক্যাম্পাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ধ্যান, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস ও বিশ্রাম এ ক্ষেত্রে সহায়ক।
মনোযোগী হোন
অনেক সময় মানুষ কিছু মনে রাখতে পারে না কারণ তখন তারা যথেষ্ট মনোযোগী ছিল না। মনোযোগ বাড়ালে তথ্য মস্তিষ্কে সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়।
পুনরাবৃত্তি কাজে লাগান
পড়াশোনা বা শেখার সময় তথ্যকে বারবার মনে করার বদলে নির্দিষ্ট বিরতিতে পুনরাবৃত্তি করা কার্যকর। যেমন শেখার পরপরই একবার, তারপর ১ মিনিট পর, ১০ মিনিট পর ও ৩০ মিনিট পর আবার মনে করা।
ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন
ভালো ঘুম ছাড়া স্মৃতিশক্তি স্থায়ী হয় না। প্রতিদিন নিয়মিত ৭–৮ ঘণ্টা মানসম্মত ঘুম স্মৃতিকে দৃঢ় করে।
মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জ দিন
নতুন ভাষা শেখা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, ধাঁধা সমাধান বা জটিল শখ চর্চা মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়।
সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকুন
বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, সামাজিক কার্যক্রমে যুক্ত থাকা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে এবং স্মৃতিশক্তি রক্ষা করে।
স্মৃতিভ্রংশ সবসময় অবশ্যম্ভাবী নয়। শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা, মানসিকভাবে সচেতন থাকা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ভালো সামাজিক সম্পর্ক স্মৃতি রক্ষা করতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ জীবনযাপন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত স্মৃতিশক্তিকে ভালো রাখার অন্যতম উপায়।