০৫:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
চীনের পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট খাতে আইপিও সহজ করল বেইজিং, স্পেস প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রকে টপকানোর বার্তা নতুন রেকর্ডে রুপা রাশিয়ার নতুন অর্থায়নে তুরস্কের পারমাণবিক স্বপ্নে গতি, আক্কুইউ প্রকল্পে এল ৯ বিলিয়ন ডলার মার্কিন আদালতের নির্দেশ মানার আহ্বান ভেনেজুয়েলানদের, এল সালভাদরের কারাগার থেকে ফেরত বন্দিদের আইনি লড়াই নাইজেরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় সহযোগিতা, একক মার্কিন সামরিক হুমকি এড়াল আবুজা চীনের নিষেধাজ্ঞার কড়া বার্তা, তাইওয়ান অস্ত্র বিক্রিতে মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থার ওপর চাপ রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কেঁপে উঠল কিয়েভ, সক্রিয় আকাশ প্রতিরক্ষা ট্রাম্পের সঙ্গে রোববার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে জেলেনস্কি, ভূমি ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতার ইঙ্গিত সন্ত্রাস দমনে অপ্রবেশ্য নিরাপত্তা বলয়, সংঘটিত অপরাধে সর্বমুখী আঘাতের ঘোষণা অমিত শাহের ইসরায়েলের ঐতিহাসিক স্বীকৃতি সোমালিল্যান্ডকে, আফ্রিকার শিংয়ে নতুন ভূরাজনৈতিক ঢেউ

সৌদি আরবে পাকিস্তান পেলো এক নির্ভরযোগ্য সহযোদ্ধা

প্রতিরক্ষা চুক্তির ঐতিহাসিক মাইলফলক

পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক মিউচুয়াল ডিফেন্স এগ্রিমেন্ট (এসএমডিএ) স্বাক্ষর দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলে দিল। প্রায় আট দশকের আস্থা, সহযোগিতা ও যৌথ মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই সম্পর্ক এখন আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা অঙ্গীকারের মাধ্যমে আরও সুদৃঢ় হলো।

চুক্তির মূল বক্তব্য হলো—এক দেশের ওপর আক্রমণকে অপর দেশের ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশ তাদের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করল।

ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের গভীরতা

পাকিস্তান-সৌদি সম্পর্ক সবসময় কূটনীতির সীমা ছাড়িয়ে গেছে। পাকিস্তানের কাছে সৌদি আরব ইসলামের দুই পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনার দেশ। আর সৌদি আরবের কাছে পাকিস্তান সবসময় এক বিশ্বস্ত বন্ধু ও সামরিক সহযোগী। শুধু নেতৃত্বই নয়, সাধারণ মানুষের হৃদয়েও এই ভালোবাসা গভীরভাবে প্রোথিত।

প্রতিরক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা

ষাটের দশক থেকেই পাকিস্তানি পেশাজীবীরা সৌদি প্রতিরক্ষা খাতে অবদান রাখছে। অপরদিকে, সংকটময় সময়ে সৌদি আরব জ্বালানি ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে পাকিস্তানকে। এবার এসএমডিএ এই দীর্ঘ সহযোগিতাকে আনুষ্ঠানিক কাঠামোয় রূপ দিল, যা ভবিষ্যতের দিকেও নজর রাখে।

প্রতিরক্ষামূলক, আক্রমণাত্মক নয়

চুক্তির লক্ষ্য আক্রমণ নয়, বরং প্রতিরোধ ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। এটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—ঐক্য ও সহযোগিতা আঞ্চলিক অস্থিরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

সময়োপযোগী উদ্যোগ

চুক্তির সময়টিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরব বর্তমানে ভিশন ২০৩০-এর মাধ্যমে অর্থনীতিকে বহুমুখী করছে এবং আঞ্চলিক নেতৃত্ব শক্তিশালী করছে। অপরদিকে পাকিস্তান অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মধ্যে সৌদি সমর্থনকে অত্যন্ত মূল্যবান মনে করছে। একসাথে দুই দেশ অঞ্চলজুড়ে স্থিতিশীলতার ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

তিন স্তম্ভের সম্পর্ক

এসএমডিএ শুধু প্রতিরক্ষা চুক্তি নয়, বরং বৃহত্তর পাকিস্তান-সৌদি সম্পর্কের একটি অংশ। সুপ্রিম কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিল এই সম্পর্ককে তিন স্তম্ভে পরিচালিত করছে—রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা।

প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় সহায়তা করে। পাশাপাশি, দুই দেশই অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়াতে আগ্রহী।

প্রবাসী পাকিস্তানিদের ভূমিকা

সৌদি আরবে কর্মরত লাখো পাকিস্তানি নাগরিক দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে। তাদের রেমিট্যান্স পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, আবার তাদের উপস্থিতি মানুষে-মানুষে সম্পর্ক জোরদার করেছে।

যৌথ ভবিষ্যতের পথে

এসএমডিএ শুধু একটি চুক্তি নয়; এটি শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান উভয়েই এই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

পারস্পরিক প্রতিরক্ষার অঙ্গীকারের মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যৌথ প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি বিনিময়ের মতো নতুন ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের সুযোগ তৈরি হলো।

মুসলিম বিশ্বের স্থিতিশীলতার প্রতীক

পাকিস্তানের জন্য এই চুক্তি তার কৌশলগত গুরুত্ব বাড়িয়েছে এবং মুসলিম বিশ্বে অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। আর সৌদি আরবের জন্য এটি নিশ্চিত করেছে এক বিশ্বস্ত ও সক্ষম সহযোগীকে পাশে পাওয়া।

এসএমডিএ আসলে ভ্রাতৃত্ব, আস্থা ও সংহতির প্রতীক। এটি প্রতিশ্রুতির দলিল—রক্ষার, অংশীদারিত্বের এবং অগ্রগতির। ইতিহাসের অভিজ্ঞতা বলছে, এই নতুন অধ্যায় ইসলামাবাদ ও রিয়াদের সম্পর্ককে আরও গভীর ও স্থায়ী করবে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনের পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট খাতে আইপিও সহজ করল বেইজিং, স্পেস প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রকে টপকানোর বার্তা

সৌদি আরবে পাকিস্তান পেলো এক নির্ভরযোগ্য সহযোদ্ধা

০৪:৩৮:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রতিরক্ষা চুক্তির ঐতিহাসিক মাইলফলক

পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক মিউচুয়াল ডিফেন্স এগ্রিমেন্ট (এসএমডিএ) স্বাক্ষর দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলে দিল। প্রায় আট দশকের আস্থা, সহযোগিতা ও যৌথ মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই সম্পর্ক এখন আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা অঙ্গীকারের মাধ্যমে আরও সুদৃঢ় হলো।

চুক্তির মূল বক্তব্য হলো—এক দেশের ওপর আক্রমণকে অপর দেশের ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশ তাদের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করল।

ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের গভীরতা

পাকিস্তান-সৌদি সম্পর্ক সবসময় কূটনীতির সীমা ছাড়িয়ে গেছে। পাকিস্তানের কাছে সৌদি আরব ইসলামের দুই পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনার দেশ। আর সৌদি আরবের কাছে পাকিস্তান সবসময় এক বিশ্বস্ত বন্ধু ও সামরিক সহযোগী। শুধু নেতৃত্বই নয়, সাধারণ মানুষের হৃদয়েও এই ভালোবাসা গভীরভাবে প্রোথিত।

প্রতিরক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা

ষাটের দশক থেকেই পাকিস্তানি পেশাজীবীরা সৌদি প্রতিরক্ষা খাতে অবদান রাখছে। অপরদিকে, সংকটময় সময়ে সৌদি আরব জ্বালানি ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে পাকিস্তানকে। এবার এসএমডিএ এই দীর্ঘ সহযোগিতাকে আনুষ্ঠানিক কাঠামোয় রূপ দিল, যা ভবিষ্যতের দিকেও নজর রাখে।

প্রতিরক্ষামূলক, আক্রমণাত্মক নয়

চুক্তির লক্ষ্য আক্রমণ নয়, বরং প্রতিরোধ ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। এটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—ঐক্য ও সহযোগিতা আঞ্চলিক অস্থিরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

সময়োপযোগী উদ্যোগ

চুক্তির সময়টিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরব বর্তমানে ভিশন ২০৩০-এর মাধ্যমে অর্থনীতিকে বহুমুখী করছে এবং আঞ্চলিক নেতৃত্ব শক্তিশালী করছে। অপরদিকে পাকিস্তান অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মধ্যে সৌদি সমর্থনকে অত্যন্ত মূল্যবান মনে করছে। একসাথে দুই দেশ অঞ্চলজুড়ে স্থিতিশীলতার ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

তিন স্তম্ভের সম্পর্ক

এসএমডিএ শুধু প্রতিরক্ষা চুক্তি নয়, বরং বৃহত্তর পাকিস্তান-সৌদি সম্পর্কের একটি অংশ। সুপ্রিম কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিল এই সম্পর্ককে তিন স্তম্ভে পরিচালিত করছে—রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা।

প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় সহায়তা করে। পাশাপাশি, দুই দেশই অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়াতে আগ্রহী।

প্রবাসী পাকিস্তানিদের ভূমিকা

সৌদি আরবে কর্মরত লাখো পাকিস্তানি নাগরিক দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে। তাদের রেমিট্যান্স পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, আবার তাদের উপস্থিতি মানুষে-মানুষে সম্পর্ক জোরদার করেছে।

যৌথ ভবিষ্যতের পথে

এসএমডিএ শুধু একটি চুক্তি নয়; এটি শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান উভয়েই এই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

পারস্পরিক প্রতিরক্ষার অঙ্গীকারের মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যৌথ প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি বিনিময়ের মতো নতুন ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের সুযোগ তৈরি হলো।

মুসলিম বিশ্বের স্থিতিশীলতার প্রতীক

পাকিস্তানের জন্য এই চুক্তি তার কৌশলগত গুরুত্ব বাড়িয়েছে এবং মুসলিম বিশ্বে অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। আর সৌদি আরবের জন্য এটি নিশ্চিত করেছে এক বিশ্বস্ত ও সক্ষম সহযোগীকে পাশে পাওয়া।

এসএমডিএ আসলে ভ্রাতৃত্ব, আস্থা ও সংহতির প্রতীক। এটি প্রতিশ্রুতির দলিল—রক্ষার, অংশীদারিত্বের এবং অগ্রগতির। ইতিহাসের অভিজ্ঞতা বলছে, এই নতুন অধ্যায় ইসলামাবাদ ও রিয়াদের সম্পর্ককে আরও গভীর ও স্থায়ী করবে।