০১:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পৃথিবীর সবচেয়ে সহনশীল জীবের সুপারপাওয়ার কাজে লাগানোর চেষ্টা

পৃথিবীতে এমন এক ক্ষুদ্র প্রাণী আছে যাকে পুড়িয়ে, জমিয়ে, বন্দুক দিয়ে গুলি ছুড়ে কিংবা মহাকাশে নিক্ষেপ করলেও সহজে মারা যায় না। বিজ্ঞানীদের মতে, এই আটপেয়ে অণুজীবটি হয়তো পৃথিবীর শেষ প্রাণী হিসেবে টিকে থাকবে— এমনকি সূর্যের মৃত্যুর সময়ও। এদের নাম টারডিগ্রেড, যাকে সাধারণভাবে বলা হয় ‘ওয়াটার বেয়ার’ বা ‘মস পিগলেট’।

টারডিগ্রেড দেখতে মাইক্রোস্কোপের নিচে একেবারেই ভিন্ন রকম। এদের মোটা অদ্ভুত মুখ, ধারালো নখর আর খঞ্জরের মতো দাঁত দেখে মনে হতে পারে যেন এটি ডক্টর হু সিরিজের কোনো ভিনগ্রহের দানব। অথচ আকারে এটি মাত্র ১ মিলিমিটারের মতো—একটি পিনের মাথার সমান।

বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই অদ্ভুত প্রাণীর ক্ষমতা মানুষের উপকারে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন— যেমন ক্যানসার চিকিৎসায় ক্ষতিকর রেডিয়েশন থেকে রোগীর শরীরকে সুরক্ষিত রাখা, অথবা দীর্ঘ মহাকাশ অভিযানে খাবার ও ওষুধ সংরক্ষণ করা।


সর্বত্র টিকে থাকার ক্ষমতা

এখন পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০ প্রজাতির টারডিগ্রেড চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো আর্থ্রোপডদের (যেমন পোকা-মাকড়, কাঁকড়া ইত্যাদি) ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হলেও প্রাণী জগতে এদের সঠিক অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়।

এরা সাধারণত স্যাঁতসেঁতে জায়গায় শ্যাওলা, লাইকেন বা পাতা ভরা পরিবেশে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। এমনকি আপনার বাড়ির বাগানেও টারডিগ্রেড থাকতে পারে। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো— এরা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে সক্ষম।

টারডিগ্রেডকে হিমালয়ের উঁচু পর্বতমালায়, সমুদ্রের তলদেশে, অ্যান্টার্কটিকার বরফে এবং জাপানের অম্লীয় উষ্ণ প্রস্রবণেও পাওয়া গেছে। ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো টারডিগ্রেডকে মহাকাশে পাঠানো হয়। স্যাটেলাইটটি যখন পৃথিবীতে ফিরে আসে, দেখা যায় অনেকগুলো টারডিগ্রেড বেঁচে আছে এবং মহাকাশে থাকা অবস্থায় কিছু স্ত্রী টারডিগ্রেড ডিমও পেড়েছে।

২০১৯ সালে ইসরায়েলের বেরেশিট নামের একটি চন্দ্র মিশনে টারডিগ্রেড পাঠানো হয়। যদিও মহাকাশযানটি চাঁদের পৃষ্ঠে গিয়ে ভেঙে পড়ে, বিজ্ঞানীরা মনে করেন কিছু টারডিগ্রেড হয়তো তখনও বেঁচে ছিল।


মৃত্যুর মতো ঘুম— টান স্টেট

টারডিগ্রেডদের সবচেয়ে বড় গোপন অস্ত্র হলো পানিশূন্যতায় বেঁচে থাকার ক্ষমতা। বেশিরভাগ প্রাণীর ক্ষেত্রে পানি ছাড়া জীবন অসম্ভব। কিন্তু টারডিগ্রেডরা যখন শুকিয়ে যেতে থাকে, তখন তারা তাদের মাথা ও আটটি পা গুটিয়ে নিয়ে একধরনের ‘টান স্টেট’-এ প্রবেশ করে, যা দেখতে মৃত্যুর মতো।

এই অবস্থায় তাদের দেহের বিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিকের মাত্র ০.০১% এ নেমে আসে। এভাবে তারা কয়েক দশক ধরে টিকে থাকতে পারে এবং কেবল পানি স্পর্শ করলেই আবার জীবিত হয়ে ওঠে।

১৯৪৮ সালে ইতালির প্রাণিবিজ্ঞানী টিনা ফ্রানচেস্কি ১২০ বছর ধরে মিউজিয়ামে রাখা শুকনো টারডিগ্রেডের উপর পানি ঢালেন। ফলাফল আশ্চর্যজনক— টারডিগ্রেডের সামনের একটি পা নড়াচড়া শুরু করে। যদিও পুরোপুরি জীবিত হয়নি, ১৯৯৫ সালে আবারও দেখা যায়, আট বছর ধরে শুকনো অবস্থায় থাকা কিছু টারডিগ্রেড পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।

২০১৭ সালে মার্কিন গবেষক থমাস বুথবি এবং তার দল লক্ষ্য করেন যে, টারডিগ্রেড শুকাতে শুরু করলে কিছু বিশেষ জিন সক্রিয় হয়ে অদ্ভুত প্রোটিন তৈরি করে। এগুলোর নাম টারডিগ্রেড-স্পেসিফিক ইন্ট্রিনসিকালি ডিসঅর্ডারড প্রোটিনস (TDPs)। এই প্রোটিনগুলো কোষের ভেতরে জালের মতো নেটওয়ার্ক তৈরি করে এবং সংবেদনশীল প্রোটিনগুলোকে রক্ষা করে।

২০২২ সালে জাপানি গবেষক তাকেকাজু কুনিয়েদা আবিষ্কার করেন, এই প্রোটিনগুলোর একটি বিশেষ শ্রেণি, CAHS প্রোটিন, শুকিয়ে গেলে জেলির মতো হয়ে কোষকে আঘাত থেকে রক্ষা করে।

উচ্চ তাপমাত্রা, বরফ আর বিকিরণেও অটল

টারডিগ্রেডরা শুকনো অবস্থায় ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপ সহ্য করতে পারে। কিন্তু পানিতে থাকলে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায়ও অনেক প্রজাতি মারা যায়। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এদের টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

অন্যদিকে, ২০১৬ সালে অ্যান্টার্কটিকার বরফে ৩০ বছর ধরে জমে থাকা দুটি টারডিগ্রেডকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়। এরা বরফে জমে থাকার সময় ক্রায়োবায়োসিস নামে পরিচিত একধরনের গভীর ঘুমে চলে যায়।

টারডিগ্রেডদের সবচেয়ে আশ্চর্য ক্ষমতার মধ্যে একটি হলো বিকিরণ প্রতিরোধ। ২০১৬ সালে কুনিয়েদা আবিষ্কার করেন ডিএসাপ (Dsup) নামক একটি প্রোটিন, যা ডিএনএ-কে আচ্ছাদন দিয়ে রক্ষা করে। এমনকি মানব কোষে এই প্রোটিন প্রয়োগ করলে সেগুলোও বিকিরণ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।

২০২৪ সালে ফরাসি একদল গবেষক টিডিআর১ (TDR1) নামে আরেকটি প্রোটিন আবিষ্কার করেন, যা ডিএনএ-কে রক্ষা করে এবং বিকিরণের ক্ষতি মেরামত করে।


মানুষের উপকারে টারডিগ্রেডের ক্ষমতা

টারডিগ্রেডের অদ্ভুত ক্ষমতা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

  • ক্যানসার চিকিৎসা:
    ক্যানসারের চিকিৎসায় রেডিয়েশন থেরাপি ব্যবহার করা হয়, যা ক্যানসার কোষের পাশাপাশি সুস্থ কোষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক ইঁদুরের শরীরে Dsup প্রোটিন তৈরি করিয়ে দেখেন, রেডিয়েশনে
  • ক্যানসার কোষ ধ্বংস হলেও আশপাশের সুস্থ কোষ অক্ষত থাকে।

  • ওষুধ সংরক্ষণ:
    হিমোফিলিয়া রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত মানব প্রোটিন ফ্যাক্টর VIII সাধারণত হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু যদি এটিকে TDP প্রোটিনের সঙ্গে মিশিয়ে রাখা হয়, তবে তা ঘরো তাপমাত্রাতেই দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব। এটি বিশেষ করে দুর্যোগ বা বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় কাজে লাগতে পারে।
  • মহাকাশে খাবার ও ওষুধ সুরক্ষা:
    নাসা চায় টারডিগ্রেডের কৌশল ব্যবহার করে মহাকাশ অভিযানে খাবার ও ওষুধকে রেডিয়েশন এবং শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে।

রহস্য এখনো অমীমাংসিত

প্রশ্ন হলো, টারডিগ্রেড কেন এমন সুপারপাওয়ার তৈরি করল?

ডেনমার্কের গবেষক নাদজা মবজার্গ বলেন, টারডিগ্রেডের চামড়া খুবই পাতলা এবং সহজে পানি হারায়। যখন শুকিয়ে যায়, বাতাসে ভেসে পৃথিবীর যেকোনো স্থানে চলে যেতে পারে। তাই হয়তো তাদের টিকে থাকার ক্ষমতা এত বিস্তৃতভাবে গড়ে উঠেছে।

তবে কেন তারা চরম তাপ, মহাশূন্যের বিকিরণ বা শূন্যের কাছাকাছি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে, সেটি এখনো রহস্যই রয়ে গেছে।

যদি বিজ্ঞানীরা এই রহস্য উদঘাটন করতে পারেন, তবে তা মানুষের জন্য যেমন আশীর্বাদ হবে— তেমনি টারডিগ্রেডদেরও রক্ষা করতে সাহায্য করবে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি থেকে।

পৃথিবীর সবচেয়ে সহনশীল জীবের সুপারপাওয়ার কাজে লাগানোর চেষ্টা

১০:০০:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পৃথিবীতে এমন এক ক্ষুদ্র প্রাণী আছে যাকে পুড়িয়ে, জমিয়ে, বন্দুক দিয়ে গুলি ছুড়ে কিংবা মহাকাশে নিক্ষেপ করলেও সহজে মারা যায় না। বিজ্ঞানীদের মতে, এই আটপেয়ে অণুজীবটি হয়তো পৃথিবীর শেষ প্রাণী হিসেবে টিকে থাকবে— এমনকি সূর্যের মৃত্যুর সময়ও। এদের নাম টারডিগ্রেড, যাকে সাধারণভাবে বলা হয় ‘ওয়াটার বেয়ার’ বা ‘মস পিগলেট’।

টারডিগ্রেড দেখতে মাইক্রোস্কোপের নিচে একেবারেই ভিন্ন রকম। এদের মোটা অদ্ভুত মুখ, ধারালো নখর আর খঞ্জরের মতো দাঁত দেখে মনে হতে পারে যেন এটি ডক্টর হু সিরিজের কোনো ভিনগ্রহের দানব। অথচ আকারে এটি মাত্র ১ মিলিমিটারের মতো—একটি পিনের মাথার সমান।

বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই অদ্ভুত প্রাণীর ক্ষমতা মানুষের উপকারে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন— যেমন ক্যানসার চিকিৎসায় ক্ষতিকর রেডিয়েশন থেকে রোগীর শরীরকে সুরক্ষিত রাখা, অথবা দীর্ঘ মহাকাশ অভিযানে খাবার ও ওষুধ সংরক্ষণ করা।


সর্বত্র টিকে থাকার ক্ষমতা

এখন পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০ প্রজাতির টারডিগ্রেড চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো আর্থ্রোপডদের (যেমন পোকা-মাকড়, কাঁকড়া ইত্যাদি) ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হলেও প্রাণী জগতে এদের সঠিক অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়।

এরা সাধারণত স্যাঁতসেঁতে জায়গায় শ্যাওলা, লাইকেন বা পাতা ভরা পরিবেশে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। এমনকি আপনার বাড়ির বাগানেও টারডিগ্রেড থাকতে পারে। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো— এরা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে সক্ষম।

টারডিগ্রেডকে হিমালয়ের উঁচু পর্বতমালায়, সমুদ্রের তলদেশে, অ্যান্টার্কটিকার বরফে এবং জাপানের অম্লীয় উষ্ণ প্রস্রবণেও পাওয়া গেছে। ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো টারডিগ্রেডকে মহাকাশে পাঠানো হয়। স্যাটেলাইটটি যখন পৃথিবীতে ফিরে আসে, দেখা যায় অনেকগুলো টারডিগ্রেড বেঁচে আছে এবং মহাকাশে থাকা অবস্থায় কিছু স্ত্রী টারডিগ্রেড ডিমও পেড়েছে।

২০১৯ সালে ইসরায়েলের বেরেশিট নামের একটি চন্দ্র মিশনে টারডিগ্রেড পাঠানো হয়। যদিও মহাকাশযানটি চাঁদের পৃষ্ঠে গিয়ে ভেঙে পড়ে, বিজ্ঞানীরা মনে করেন কিছু টারডিগ্রেড হয়তো তখনও বেঁচে ছিল।


মৃত্যুর মতো ঘুম— টান স্টেট

টারডিগ্রেডদের সবচেয়ে বড় গোপন অস্ত্র হলো পানিশূন্যতায় বেঁচে থাকার ক্ষমতা। বেশিরভাগ প্রাণীর ক্ষেত্রে পানি ছাড়া জীবন অসম্ভব। কিন্তু টারডিগ্রেডরা যখন শুকিয়ে যেতে থাকে, তখন তারা তাদের মাথা ও আটটি পা গুটিয়ে নিয়ে একধরনের ‘টান স্টেট’-এ প্রবেশ করে, যা দেখতে মৃত্যুর মতো।

এই অবস্থায় তাদের দেহের বিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিকের মাত্র ০.০১% এ নেমে আসে। এভাবে তারা কয়েক দশক ধরে টিকে থাকতে পারে এবং কেবল পানি স্পর্শ করলেই আবার জীবিত হয়ে ওঠে।

১৯৪৮ সালে ইতালির প্রাণিবিজ্ঞানী টিনা ফ্রানচেস্কি ১২০ বছর ধরে মিউজিয়ামে রাখা শুকনো টারডিগ্রেডের উপর পানি ঢালেন। ফলাফল আশ্চর্যজনক— টারডিগ্রেডের সামনের একটি পা নড়াচড়া শুরু করে। যদিও পুরোপুরি জীবিত হয়নি, ১৯৯৫ সালে আবারও দেখা যায়, আট বছর ধরে শুকনো অবস্থায় থাকা কিছু টারডিগ্রেড পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।

২০১৭ সালে মার্কিন গবেষক থমাস বুথবি এবং তার দল লক্ষ্য করেন যে, টারডিগ্রেড শুকাতে শুরু করলে কিছু বিশেষ জিন সক্রিয় হয়ে অদ্ভুত প্রোটিন তৈরি করে। এগুলোর নাম টারডিগ্রেড-স্পেসিফিক ইন্ট্রিনসিকালি ডিসঅর্ডারড প্রোটিনস (TDPs)। এই প্রোটিনগুলো কোষের ভেতরে জালের মতো নেটওয়ার্ক তৈরি করে এবং সংবেদনশীল প্রোটিনগুলোকে রক্ষা করে।

২০২২ সালে জাপানি গবেষক তাকেকাজু কুনিয়েদা আবিষ্কার করেন, এই প্রোটিনগুলোর একটি বিশেষ শ্রেণি, CAHS প্রোটিন, শুকিয়ে গেলে জেলির মতো হয়ে কোষকে আঘাত থেকে রক্ষা করে।

উচ্চ তাপমাত্রা, বরফ আর বিকিরণেও অটল

টারডিগ্রেডরা শুকনো অবস্থায় ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপ সহ্য করতে পারে। কিন্তু পানিতে থাকলে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায়ও অনেক প্রজাতি মারা যায়। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এদের টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

অন্যদিকে, ২০১৬ সালে অ্যান্টার্কটিকার বরফে ৩০ বছর ধরে জমে থাকা দুটি টারডিগ্রেডকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়। এরা বরফে জমে থাকার সময় ক্রায়োবায়োসিস নামে পরিচিত একধরনের গভীর ঘুমে চলে যায়।

টারডিগ্রেডদের সবচেয়ে আশ্চর্য ক্ষমতার মধ্যে একটি হলো বিকিরণ প্রতিরোধ। ২০১৬ সালে কুনিয়েদা আবিষ্কার করেন ডিএসাপ (Dsup) নামক একটি প্রোটিন, যা ডিএনএ-কে আচ্ছাদন দিয়ে রক্ষা করে। এমনকি মানব কোষে এই প্রোটিন প্রয়োগ করলে সেগুলোও বিকিরণ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।

২০২৪ সালে ফরাসি একদল গবেষক টিডিআর১ (TDR1) নামে আরেকটি প্রোটিন আবিষ্কার করেন, যা ডিএনএ-কে রক্ষা করে এবং বিকিরণের ক্ষতি মেরামত করে।


মানুষের উপকারে টারডিগ্রেডের ক্ষমতা

টারডিগ্রেডের অদ্ভুত ক্ষমতা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

  • ক্যানসার চিকিৎসা:
    ক্যানসারের চিকিৎসায় রেডিয়েশন থেরাপি ব্যবহার করা হয়, যা ক্যানসার কোষের পাশাপাশি সুস্থ কোষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক ইঁদুরের শরীরে Dsup প্রোটিন তৈরি করিয়ে দেখেন, রেডিয়েশনে
  • ক্যানসার কোষ ধ্বংস হলেও আশপাশের সুস্থ কোষ অক্ষত থাকে।

  • ওষুধ সংরক্ষণ:
    হিমোফিলিয়া রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত মানব প্রোটিন ফ্যাক্টর VIII সাধারণত হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু যদি এটিকে TDP প্রোটিনের সঙ্গে মিশিয়ে রাখা হয়, তবে তা ঘরো তাপমাত্রাতেই দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব। এটি বিশেষ করে দুর্যোগ বা বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় কাজে লাগতে পারে।
  • মহাকাশে খাবার ও ওষুধ সুরক্ষা:
    নাসা চায় টারডিগ্রেডের কৌশল ব্যবহার করে মহাকাশ অভিযানে খাবার ও ওষুধকে রেডিয়েশন এবং শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে।

রহস্য এখনো অমীমাংসিত

প্রশ্ন হলো, টারডিগ্রেড কেন এমন সুপারপাওয়ার তৈরি করল?

ডেনমার্কের গবেষক নাদজা মবজার্গ বলেন, টারডিগ্রেডের চামড়া খুবই পাতলা এবং সহজে পানি হারায়। যখন শুকিয়ে যায়, বাতাসে ভেসে পৃথিবীর যেকোনো স্থানে চলে যেতে পারে। তাই হয়তো তাদের টিকে থাকার ক্ষমতা এত বিস্তৃতভাবে গড়ে উঠেছে।

তবে কেন তারা চরম তাপ, মহাশূন্যের বিকিরণ বা শূন্যের কাছাকাছি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে, সেটি এখনো রহস্যই রয়ে গেছে।

যদি বিজ্ঞানীরা এই রহস্য উদঘাটন করতে পারেন, তবে তা মানুষের জন্য যেমন আশীর্বাদ হবে— তেমনি টারডিগ্রেডদেরও রক্ষা করতে সাহায্য করবে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি থেকে।