০৯:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পাকিস্তানে সংসদে সেনা আদালতের রায়ে আপিলের অধিকার যুক্ত করার আহ্বান

ন্যায়বিচারের ঘাটতি ও সংসদের ভূমিকা

ইসলামাবাদে বিচারপতি আমিনউদ্দিন খান বলেছেন, পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্ট (১৯৫২)–এ বিচার প্রক্রিয়ার কিছু সুরক্ষা থাকলেও, বেসামরিক আদালতে স্বাধীনভাবে আপিল করার অধিকার না থাকায় এটি সংবিধান অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ নয়।
তিনি ৬৮ পৃষ্ঠার রায়ে ব্যাখ্যা করেন, ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবরের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া ৩৮টি আপিলের ওপর ৭ মে দেওয়া সংক্ষিপ্ত রায়ের যৌক্তিকতা। এ ঘাটতি পূরণে সংসদকে আইন প্রণয়নের নির্দেশ দেন তিনি এবং ৪৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে আহ্বান জানান।

উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ

বিচারপতি খান উল্লেখ করেন, আদালতের রায়ে বলা হয়েছে সংসদ এমন আইন সংশোধন করবে যাতে সামরিক আদালতে দণ্ডিত বেসামরিকরা হাইকোর্টে আপিল করতে পারে। তার মতে, ন্যায়বিচারের মূল শর্ত হলো নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ বিচারকক্ষ, যা আর্মি অ্যাক্টের বিদ্যমান কাঠামোতে আংশিকভাবে রয়েছে। তবে আপিলের সুযোগ না থাকায় এটি অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।

৭ মে রায়

গত ৭ মে সাত সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ৫-২ ভোটে পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্টের মূল ধারাগুলো পুনর্বহাল করে। এতে ২০২৩ সালের ৯ মে সেনা স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ মামলায় জড়িত বেসামরিকদের দণ্ড বৈধ বলে ধরে নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবরের রায় বাতিল হয় এবং আর্মি অ্যাক্টের ২(১)(ডি)(i) ও (ii) ধারা এবং ৫৯(৪) ধারা পুনরায় কার্যকর করা হয়।

রিডিং ডাউন’ পদ্ধতির বিরোধিতা

বিচারপতি খান বলেন, ২৩ অক্টোবরের রায়ে যে ‘রিডিং ডাউন’ ব্যাখ্যা ব্যবহার করা হয়েছে তা সঠিক নয়। এই নীতি সাধারণত অস্পষ্ট আইনকে সাংবিধানিকভাবে বৈধ রাখতে সংকীর্ণভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সংবিধানের স্পষ্ট ধারায় নতুন শর্ত যোগ করার ক্ষমতা আদালতের নেই।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আদালতের কাজ হলো সংবিধান ব্যাখ্যা করা, নতুন আইন তৈরি করা নয়।

সংবিধানের ধারা ৮(৩)(এ)

বিচারপতি খান ব্যাখ্যা করেন, ধারা ৮(৩)(এ) একটি স্বতন্ত্র সাংবিধানিক ধারা, যা সেনাবাহিনীর জন্য প্রণীত শৃঙ্খলাবিষয়ক আইনকে মৌলিক অধিকার থেকে অব্যাহতি দেয়। এটি সংবিধান রচয়িতাদের সচেতন সিদ্ধান্ত।
তিনি আরও বলেন, ধারা ৮(৫) জরুরি অবস্থায় অধিকার স্থগিতকরণের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা স্থায়ীভাবে কার্যকর ৮(৩)(এ)–এর বিধানকে অগ্রাহ্য করতে পারে না।

সেনা আদালত ও ক্ষমতার বিভাজন

বিচারপতি খান বলেন, বেসামরিকদের বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করলেও সেনা আদালত ক্ষমতার বিভাজন নীতি ভঙ্গ করে না। সংবিধানের ১৭৫(৩)–এর সঙ্গেও এটি সাংঘর্ষিক নয়। সংবিধান সেনাবাহিনীকে পাকিস্তান রক্ষায় ও বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় আলাদা আইনি প্রক্রিয়া অনুমোদন করেছে।

বিচারপতি মাজারের মন্তব্য

একইসঙ্গে বিচারপতি মুহাম্মদ আলী মাজার তাঁর মন্তব্যে বলেন, আর্মি অ্যাক্টের আওতায় বেসামরিকদের বিচার নতুন কিছু নয়। ধারা ২(ডি)(i) ও (ii)–এর অধীনে নির্দিষ্ট অপরাধে বেসামরিকদের বিচার বহু দশক ধরে চলে আসছে। সংসদ ও সুপ্রিম কোর্টও তা নীরবে মেনে নিয়েছে।
তিনি মনে করিয়ে দেন, এতদিন এই ধারাগুলো নিয়ে কোনো আপত্তি ওঠেনি বা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু ২০২৩ সালের ৯ মে ঘটনার পর যখন ব্যাপকভাবে বেসামরিকদের বিচার শুরু হয়, তখনই এ নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়।
তাঁর প্রশ্ন, আইন নিজেই কি ত্রুটিপূর্ণ, নাকি রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে হঠাৎ করে বিচারব্যবস্থা নতুন দৃষ্টিতে বিষয়টি মূল্যায়ন করছে?

পাকিস্তানে সংসদে সেনা আদালতের রায়ে আপিলের অধিকার যুক্ত করার আহ্বান

০৫:১১:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ন্যায়বিচারের ঘাটতি ও সংসদের ভূমিকা

ইসলামাবাদে বিচারপতি আমিনউদ্দিন খান বলেছেন, পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্ট (১৯৫২)–এ বিচার প্রক্রিয়ার কিছু সুরক্ষা থাকলেও, বেসামরিক আদালতে স্বাধীনভাবে আপিল করার অধিকার না থাকায় এটি সংবিধান অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ নয়।
তিনি ৬৮ পৃষ্ঠার রায়ে ব্যাখ্যা করেন, ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবরের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া ৩৮টি আপিলের ওপর ৭ মে দেওয়া সংক্ষিপ্ত রায়ের যৌক্তিকতা। এ ঘাটতি পূরণে সংসদকে আইন প্রণয়নের নির্দেশ দেন তিনি এবং ৪৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে আহ্বান জানান।

উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ

বিচারপতি খান উল্লেখ করেন, আদালতের রায়ে বলা হয়েছে সংসদ এমন আইন সংশোধন করবে যাতে সামরিক আদালতে দণ্ডিত বেসামরিকরা হাইকোর্টে আপিল করতে পারে। তার মতে, ন্যায়বিচারের মূল শর্ত হলো নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ বিচারকক্ষ, যা আর্মি অ্যাক্টের বিদ্যমান কাঠামোতে আংশিকভাবে রয়েছে। তবে আপিলের সুযোগ না থাকায় এটি অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।

৭ মে রায়

গত ৭ মে সাত সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ৫-২ ভোটে পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্টের মূল ধারাগুলো পুনর্বহাল করে। এতে ২০২৩ সালের ৯ মে সেনা স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ মামলায় জড়িত বেসামরিকদের দণ্ড বৈধ বলে ধরে নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবরের রায় বাতিল হয় এবং আর্মি অ্যাক্টের ২(১)(ডি)(i) ও (ii) ধারা এবং ৫৯(৪) ধারা পুনরায় কার্যকর করা হয়।

রিডিং ডাউন’ পদ্ধতির বিরোধিতা

বিচারপতি খান বলেন, ২৩ অক্টোবরের রায়ে যে ‘রিডিং ডাউন’ ব্যাখ্যা ব্যবহার করা হয়েছে তা সঠিক নয়। এই নীতি সাধারণত অস্পষ্ট আইনকে সাংবিধানিকভাবে বৈধ রাখতে সংকীর্ণভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সংবিধানের স্পষ্ট ধারায় নতুন শর্ত যোগ করার ক্ষমতা আদালতের নেই।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আদালতের কাজ হলো সংবিধান ব্যাখ্যা করা, নতুন আইন তৈরি করা নয়।

সংবিধানের ধারা ৮(৩)(এ)

বিচারপতি খান ব্যাখ্যা করেন, ধারা ৮(৩)(এ) একটি স্বতন্ত্র সাংবিধানিক ধারা, যা সেনাবাহিনীর জন্য প্রণীত শৃঙ্খলাবিষয়ক আইনকে মৌলিক অধিকার থেকে অব্যাহতি দেয়। এটি সংবিধান রচয়িতাদের সচেতন সিদ্ধান্ত।
তিনি আরও বলেন, ধারা ৮(৫) জরুরি অবস্থায় অধিকার স্থগিতকরণের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা স্থায়ীভাবে কার্যকর ৮(৩)(এ)–এর বিধানকে অগ্রাহ্য করতে পারে না।

সেনা আদালত ও ক্ষমতার বিভাজন

বিচারপতি খান বলেন, বেসামরিকদের বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করলেও সেনা আদালত ক্ষমতার বিভাজন নীতি ভঙ্গ করে না। সংবিধানের ১৭৫(৩)–এর সঙ্গেও এটি সাংঘর্ষিক নয়। সংবিধান সেনাবাহিনীকে পাকিস্তান রক্ষায় ও বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় আলাদা আইনি প্রক্রিয়া অনুমোদন করেছে।

বিচারপতি মাজারের মন্তব্য

একইসঙ্গে বিচারপতি মুহাম্মদ আলী মাজার তাঁর মন্তব্যে বলেন, আর্মি অ্যাক্টের আওতায় বেসামরিকদের বিচার নতুন কিছু নয়। ধারা ২(ডি)(i) ও (ii)–এর অধীনে নির্দিষ্ট অপরাধে বেসামরিকদের বিচার বহু দশক ধরে চলে আসছে। সংসদ ও সুপ্রিম কোর্টও তা নীরবে মেনে নিয়েছে।
তিনি মনে করিয়ে দেন, এতদিন এই ধারাগুলো নিয়ে কোনো আপত্তি ওঠেনি বা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু ২০২৩ সালের ৯ মে ঘটনার পর যখন ব্যাপকভাবে বেসামরিকদের বিচার শুরু হয়, তখনই এ নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়।
তাঁর প্রশ্ন, আইন নিজেই কি ত্রুটিপূর্ণ, নাকি রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে হঠাৎ করে বিচারব্যবস্থা নতুন দৃষ্টিতে বিষয়টি মূল্যায়ন করছে?