০৫:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

হেয়ার’: বিতর্কিত এক মিউজিক্যাল কীভাবে ব্রিটেনে সেন্সরশিপ এড়াল

১৯৬০-এর দশকে যখন মঞ্চে স্বাধীনতার নতুন বাতাস বইছিল, তখনই জন্ম নিলো মিউজিক্যাল হেয়ার। গান, নাচ, নগ্নতা ও সরাসরি রাজনৈতিক বার্তার কারণে এটি ব্রিটিশ সেন্সরশিপের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু নানা ঐতিহাসিক পরিবর্তনের কারণে শেষ পর্যন্ত এ নাটকটি মুক্তভাবে মঞ্চস্থ হয়, যা ব্রিটিশ থিয়েটারের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে।

শকিং গানের বিষয়বস্তু

‘হেয়ার’-এর কিছু গান ছিল যুগান্তকারী, আবার কিছু গান সেন্সরের চোখে ছিল ভয়ঙ্কর আপত্তিকর। উদাহরণস্বরূপ—

  • ‘সডোমি’ গানে খোলাখুলি যৌনাচার ও সম্পর্কের উল্লেখ আছে।
  • ‘হাশিশ’ গানে নেশাজাতীয় দ্রব্যের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়।
  • ‘ব্ল্যাক বয়েজ’ ও ‘হোয়াইট বয়েজ’ আন্তঃজাতিগত সম্পর্ক নিয়ে দুষ্টুমি-ভরা প্রকাশ্য উদযাপন।

অন্যদিকে, ‘অ্যাকুয়ারিয়াস’ ও ‘লেট দ্য সান শাইন ইন’-এর মতো গানগুলোতে ৬০-এর দশকের ফ্লাওয়ার-পাওয়ার বা শান্তি-ভালোবাসার স্লোগান ছিল। এই মিশ্রণে নাটকটি যেমন অনুপ্রেরণা দিয়েছিল, তেমনি বিদ্রোহও উসকে দিয়েছিল।

লর্ড চেম্বারলেইনের ক্ষমতা

ব্রিটেনে থিয়েটার সেন্সরশিপের ইতিহাস শুরু ১৭৩৭ সালে, যখন প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ওয়ালপোল তার রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র রুখতে ‘থিয়েটার লাইসেন্সিং অ্যাক্ট’ পাশ করান। এরপর থেকে লর্ড চেম্বারলেইনের অফিস নাটকের স্ক্রিপ্ট পড়ে অনুমোদন দিত এবং মঞ্চে গিয়ে তা পর্যালোচনা করত।

ফলস্বরূপ, বহু গুরুত্বপূর্ণ নাটকই বাধাগ্রস্ত হয়।

  • ১৯৩০-এর দশকে হিটলারকে ব্যঙ্গ করা নাটক নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, যাতে নাৎসি জার্মানি ক্ষুব্ধ না হয়।
  • ১৯৫০-এর দশকে ‘অ্যাংরি ইয়ং মেন’ নাট্যকার জন অসবোর্নদের কাজ লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট থিয়েটারে নিয়মিত সেন্সরের কবলে পড়ে।
  • ১৯৬০-এর দশকে নাট্যকার জো অর্টন ও এডওয়ার্ড বন্ডের বিতর্কিত কাজ মঞ্চস্থ করার জন্য রয়্যাল কোর্ট নানা ফাঁকফোকর খুঁজতে থাকে।

রয়্যাল কোর্টের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর উইলিয়াম গ্যাসকিল ১৯৬৮ সালে বিবিসিকে বলেছিলেন, “অনেক বছর ধরে আমরা নাটকের লেখকের আসল ভাষায় কাজ করতে পারিনি। সামান্য ও বিরক্তিকর কেটে দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে শক্তিশালী সংলাপের জায়গায়।”

পরিবর্তনের সময়

১৯৬০-এর দশকের মুক্তচিন্তার ঢেউ আর রাজনৈতিক চাপ অবশেষে সেন্সরশিপ ভাঙার পথে নিয়ে আসে। কয়েক বছরের বিতর্ক, প্রতিবাদ ও সংসদীয় আলোচনার পর ‘থিয়েটারস অ্যাক্ট’ পাস হয়। এর মাধ্যমে লর্ড চেম্বারলেইনের সেন্সরশিপ যুগের অবসান ঘটে।

বিবিসি সে সময় বলেছিল: “মঞ্চ এখন নতুন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। দর্শকরা প্রবেশ করছে স্বাধীনতার এক নতুন যুগে। অল্প দিনের মধ্যেই নাট্যকাররা দেখাবেন, কতটা মুক্তভাবে তারা সৃষ্টিশীল হতে পারেন।”

সমাপ্তি

‘হেয়ার’ কেবল একটি মিউজিক্যাল নয়; এটি ছিল সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রতীক। সেন্সরশিপের বাধা ভেঙে নাটকটি ব্রিটেনে এক নতুন স্বাধীন যুগের সূচনা করে, যা আজও থিয়েটারের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক।

হেয়ার’: বিতর্কিত এক মিউজিক্যাল কীভাবে ব্রিটেনে সেন্সরশিপ এড়াল

০১:২৫:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

১৯৬০-এর দশকে যখন মঞ্চে স্বাধীনতার নতুন বাতাস বইছিল, তখনই জন্ম নিলো মিউজিক্যাল হেয়ার। গান, নাচ, নগ্নতা ও সরাসরি রাজনৈতিক বার্তার কারণে এটি ব্রিটিশ সেন্সরশিপের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু নানা ঐতিহাসিক পরিবর্তনের কারণে শেষ পর্যন্ত এ নাটকটি মুক্তভাবে মঞ্চস্থ হয়, যা ব্রিটিশ থিয়েটারের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে।

শকিং গানের বিষয়বস্তু

‘হেয়ার’-এর কিছু গান ছিল যুগান্তকারী, আবার কিছু গান সেন্সরের চোখে ছিল ভয়ঙ্কর আপত্তিকর। উদাহরণস্বরূপ—

  • ‘সডোমি’ গানে খোলাখুলি যৌনাচার ও সম্পর্কের উল্লেখ আছে।
  • ‘হাশিশ’ গানে নেশাজাতীয় দ্রব্যের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়।
  • ‘ব্ল্যাক বয়েজ’ ও ‘হোয়াইট বয়েজ’ আন্তঃজাতিগত সম্পর্ক নিয়ে দুষ্টুমি-ভরা প্রকাশ্য উদযাপন।

অন্যদিকে, ‘অ্যাকুয়ারিয়াস’ ও ‘লেট দ্য সান শাইন ইন’-এর মতো গানগুলোতে ৬০-এর দশকের ফ্লাওয়ার-পাওয়ার বা শান্তি-ভালোবাসার স্লোগান ছিল। এই মিশ্রণে নাটকটি যেমন অনুপ্রেরণা দিয়েছিল, তেমনি বিদ্রোহও উসকে দিয়েছিল।

লর্ড চেম্বারলেইনের ক্ষমতা

ব্রিটেনে থিয়েটার সেন্সরশিপের ইতিহাস শুরু ১৭৩৭ সালে, যখন প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ওয়ালপোল তার রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র রুখতে ‘থিয়েটার লাইসেন্সিং অ্যাক্ট’ পাশ করান। এরপর থেকে লর্ড চেম্বারলেইনের অফিস নাটকের স্ক্রিপ্ট পড়ে অনুমোদন দিত এবং মঞ্চে গিয়ে তা পর্যালোচনা করত।

ফলস্বরূপ, বহু গুরুত্বপূর্ণ নাটকই বাধাগ্রস্ত হয়।

  • ১৯৩০-এর দশকে হিটলারকে ব্যঙ্গ করা নাটক নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, যাতে নাৎসি জার্মানি ক্ষুব্ধ না হয়।
  • ১৯৫০-এর দশকে ‘অ্যাংরি ইয়ং মেন’ নাট্যকার জন অসবোর্নদের কাজ লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট থিয়েটারে নিয়মিত সেন্সরের কবলে পড়ে।
  • ১৯৬০-এর দশকে নাট্যকার জো অর্টন ও এডওয়ার্ড বন্ডের বিতর্কিত কাজ মঞ্চস্থ করার জন্য রয়্যাল কোর্ট নানা ফাঁকফোকর খুঁজতে থাকে।

রয়্যাল কোর্টের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর উইলিয়াম গ্যাসকিল ১৯৬৮ সালে বিবিসিকে বলেছিলেন, “অনেক বছর ধরে আমরা নাটকের লেখকের আসল ভাষায় কাজ করতে পারিনি। সামান্য ও বিরক্তিকর কেটে দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে শক্তিশালী সংলাপের জায়গায়।”

পরিবর্তনের সময়

১৯৬০-এর দশকের মুক্তচিন্তার ঢেউ আর রাজনৈতিক চাপ অবশেষে সেন্সরশিপ ভাঙার পথে নিয়ে আসে। কয়েক বছরের বিতর্ক, প্রতিবাদ ও সংসদীয় আলোচনার পর ‘থিয়েটারস অ্যাক্ট’ পাস হয়। এর মাধ্যমে লর্ড চেম্বারলেইনের সেন্সরশিপ যুগের অবসান ঘটে।

বিবিসি সে সময় বলেছিল: “মঞ্চ এখন নতুন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। দর্শকরা প্রবেশ করছে স্বাধীনতার এক নতুন যুগে। অল্প দিনের মধ্যেই নাট্যকাররা দেখাবেন, কতটা মুক্তভাবে তারা সৃষ্টিশীল হতে পারেন।”

সমাপ্তি

‘হেয়ার’ কেবল একটি মিউজিক্যাল নয়; এটি ছিল সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রতীক। সেন্সরশিপের বাধা ভেঙে নাটকটি ব্রিটেনে এক নতুন স্বাধীন যুগের সূচনা করে, যা আজও থিয়েটারের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক।