০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মানসিক স্বাস্থ্য ও হয়রানি: এক ছাত্রী জীবনের লড়াই

কলেজ জীবনের অন্যতম বড় প্রত্যাশা হলো জ্ঞান অর্জন, বন্ধুত্ব, আর স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ। কিন্তু অনেক সময়ই কিছু অসহিষ্ণু ও মৌলবাদী মানসিকতার মানুষ সেই পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের লক্ষ্যবস্তু হয়—কারও পোশাক, কারও কণ্ঠস্বর, কারও স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এর ফলে যে মানসিক চাপ তৈরি হয়, তা অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় রূপ নেয়। এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো এক কলেজছাত্রীর অভিজ্ঞতা, যিনি এক মৌলবাদী শিক্ষকের ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে ভুগছেন।

অভিজ্ঞতার শুরু
রুমা (ছদ্মনাম) একটি নামকরা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় শিক্ষক ও সহপাঠীদের মধ্যে তার পরিচিতি ছিল ইতিবাচক। কিন্তু একদিন ক্লাস চলাকালীন একজন শিক্ষক বারবার তার পোশাক ও আচার-আচরণ নিয়ে মন্তব্য করতে শুরু করেন। প্রথমে রুমা ভেবেছিল এগুলো হয়তো ব্যক্তিগত মতামত, কিন্তু ধীরে ধীরে মন্তব্যগুলো পরিণত হলো বিদ্রূপ ও মানসিক চাপে।

“তুমি কেন আধুনিক পোশাক পরো?”— “তোমার হাসি খুব জোরে শোনা যায়, মেয়েদের এমন হওয়া উচিত নয়”—এমন মন্তব্য নিয়মিত হতে থাকে। কখনো সবার সামনে, কখনো ব্যক্তিগত আলাপে তিনি রুমাকে ছোট করার চেষ্টা করতেন।

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব
ধীরে ধীরে রুমার মনে আতঙ্ক তৈরি হয়। ক্লাসে যাওয়া তার জন্য কষ্টকর হয়ে ওঠে। পড়াশোনায় মনোযোগ হারায়, রাতে ঘুম ভেঙে যেত বারবার। পরিবারকেও সে সবকিছু খুলে বলতে পারত না। ভিতরে ভিতরে তার আত্মবিশ্বাস ভেঙে পড়তে থাকে।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এ ধরনের মৌলবাদী হয়রানি মেয়েদের মনে গভীর মানসিক ক্ষত তৈরি করে। এটি কেবল ভয় বা লজ্জার বিষয় নয়, বরং আত্মসম্মান ভেঙে দেওয়া, মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় ঠেলে দেওয়ার এক ধরনের সহিংসতা।

সামাজিক নীরবতা
রুমার মতো অনেক শিক্ষার্থী এ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেও কথা বলতে ভয় পায়। কারণ, সমাজে অনেক সময় মেয়ে শিক্ষার্থীকেই দোষারোপ করা হয়— “তুমি নিশ্চয়ই কিছু করেছিলে”— “এমন পোশাক পরে গেলে এটাই হবে”— এই ধরনের মন্তব্য ভুক্তভোগীদের আরও একা করে দেয়। ফলে সমস্যা চেপে রাখা হয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষত আরও গভীর করে তোলে।

প্রতিরোধ ও সচেতনতা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নীতিমালা: প্রতিটি কলেজে যৌন হয়রানি ও মানসিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযোগ কেন্দ্র থাকা জরুরি।
মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা: ভুক্তভোগীদের জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান করা উচিত।
শিক্ষক-প্রশিক্ষণ: শিক্ষকদের মধ্যে লিঙ্গসমতা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ জরুরি, যাতে তারা পরিবেশকে নিরাপদ রাখতে ভূমিকা রাখতে পারেন।
ছাত্রীদের কণ্ঠস্বর: ভুক্তভোগীরা একা নন—তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা প্রয়োজন।

রুমার গল্প একটি বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি, যা প্রতিদিন অসংখ্য মেয়ে শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত মুক্ত চিন্তার জায়গা, কিন্তু সেখানে যদি মৌলবাদী ইভ টিজিং ও মানসিক সহিংসতা বেড়ে ওঠে, তবে মেয়েদের সম্ভাবনা থেমে যায়। এখনই জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে প্রতিটি মেয়ে শিক্ষার্থী ভয় নয়, আত্মবিশ্বাস নিয়েই ক্লাসরুমে প্রবেশ করতে পারে।

 

মানসিক স্বাস্থ্য ও হয়রানি: এক ছাত্রী জীবনের লড়াই

১০:৪২:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কলেজ জীবনের অন্যতম বড় প্রত্যাশা হলো জ্ঞান অর্জন, বন্ধুত্ব, আর স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ। কিন্তু অনেক সময়ই কিছু অসহিষ্ণু ও মৌলবাদী মানসিকতার মানুষ সেই পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের লক্ষ্যবস্তু হয়—কারও পোশাক, কারও কণ্ঠস্বর, কারও স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এর ফলে যে মানসিক চাপ তৈরি হয়, তা অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় রূপ নেয়। এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো এক কলেজছাত্রীর অভিজ্ঞতা, যিনি এক মৌলবাদী শিক্ষকের ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে ভুগছেন।

অভিজ্ঞতার শুরু
রুমা (ছদ্মনাম) একটি নামকরা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় শিক্ষক ও সহপাঠীদের মধ্যে তার পরিচিতি ছিল ইতিবাচক। কিন্তু একদিন ক্লাস চলাকালীন একজন শিক্ষক বারবার তার পোশাক ও আচার-আচরণ নিয়ে মন্তব্য করতে শুরু করেন। প্রথমে রুমা ভেবেছিল এগুলো হয়তো ব্যক্তিগত মতামত, কিন্তু ধীরে ধীরে মন্তব্যগুলো পরিণত হলো বিদ্রূপ ও মানসিক চাপে।

“তুমি কেন আধুনিক পোশাক পরো?”— “তোমার হাসি খুব জোরে শোনা যায়, মেয়েদের এমন হওয়া উচিত নয়”—এমন মন্তব্য নিয়মিত হতে থাকে। কখনো সবার সামনে, কখনো ব্যক্তিগত আলাপে তিনি রুমাকে ছোট করার চেষ্টা করতেন।

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব
ধীরে ধীরে রুমার মনে আতঙ্ক তৈরি হয়। ক্লাসে যাওয়া তার জন্য কষ্টকর হয়ে ওঠে। পড়াশোনায় মনোযোগ হারায়, রাতে ঘুম ভেঙে যেত বারবার। পরিবারকেও সে সবকিছু খুলে বলতে পারত না। ভিতরে ভিতরে তার আত্মবিশ্বাস ভেঙে পড়তে থাকে।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এ ধরনের মৌলবাদী হয়রানি মেয়েদের মনে গভীর মানসিক ক্ষত তৈরি করে। এটি কেবল ভয় বা লজ্জার বিষয় নয়, বরং আত্মসম্মান ভেঙে দেওয়া, মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় ঠেলে দেওয়ার এক ধরনের সহিংসতা।

সামাজিক নীরবতা
রুমার মতো অনেক শিক্ষার্থী এ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেও কথা বলতে ভয় পায়। কারণ, সমাজে অনেক সময় মেয়ে শিক্ষার্থীকেই দোষারোপ করা হয়— “তুমি নিশ্চয়ই কিছু করেছিলে”— “এমন পোশাক পরে গেলে এটাই হবে”— এই ধরনের মন্তব্য ভুক্তভোগীদের আরও একা করে দেয়। ফলে সমস্যা চেপে রাখা হয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষত আরও গভীর করে তোলে।

প্রতিরোধ ও সচেতনতা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নীতিমালা: প্রতিটি কলেজে যৌন হয়রানি ও মানসিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযোগ কেন্দ্র থাকা জরুরি।
মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা: ভুক্তভোগীদের জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান করা উচিত।
শিক্ষক-প্রশিক্ষণ: শিক্ষকদের মধ্যে লিঙ্গসমতা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ জরুরি, যাতে তারা পরিবেশকে নিরাপদ রাখতে ভূমিকা রাখতে পারেন।
ছাত্রীদের কণ্ঠস্বর: ভুক্তভোগীরা একা নন—তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা প্রয়োজন।

রুমার গল্প একটি বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি, যা প্রতিদিন অসংখ্য মেয়ে শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত মুক্ত চিন্তার জায়গা, কিন্তু সেখানে যদি মৌলবাদী ইভ টিজিং ও মানসিক সহিংসতা বেড়ে ওঠে, তবে মেয়েদের সম্ভাবনা থেমে যায়। এখনই জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে প্রতিটি মেয়ে শিক্ষার্থী ভয় নয়, আত্মবিশ্বাস নিয়েই ক্লাসরুমে প্রবেশ করতে পারে।