০৭:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ, শুল্ক সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিলেন রুবিও

আমেরিকার শুল্ক নীতিতে অগ্রগতি

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, রাশিয়ান তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক সমাধানের পথে রয়েছে। মঙ্গলবার এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা আবারও তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। রাশিয়ান তেল ক্রয়ের বিষয়েই এই শুল্ক। অনেক অগ্রগতি হয়েছে।”

তবে তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোকে মস্কোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই পদক্ষেপে ভারতের ওপরও চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রুবিও।

জাতিসংঘে জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে রুবিও প্রথমবারের মতো ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করেন। জুলাই মাসে ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হওয়ার পর এটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎ। রুবিও জোর দিয়ে বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আমেরিকার জন্য “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

সোমবারের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ নিয়ে আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও এবং জয়শঙ্কর সম্মত হয়েছেন যে, মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তুলতে আমেরিকা ও ভারত একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে, যার মধ্যে কোয়াডের সহযোগিতাও অন্তর্ভুক্ত।”

ভিসা ফি ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা

এই কূটনৈতিক তৎপরতা এসেছে এমন সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এইচ-১বি ভিসার আবেদনে ১ লাখ ডলারের ফি ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতীয় পেশাজীবীরা, যারা মোট অনুমোদিত ভিসার ৭০ শতাংশের বেশি পান।

যদিও ভিসা ফি বাড়ানো হয়েছে, গত দুই সপ্তাহে দুই দেশের সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। জয়শঙ্কর আলাদাভাবে ট্রাম্প মনোনীত মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রার্থী সার্জিও গরের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন, যা সম্পর্কের গুরুত্বকে আরও সামনে এনেছে।

বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি

একই সময়ে, ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল নিউইয়র্কে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এটি চলতি বছরে তাদের তৃতীয় সাক্ষাৎ, এর আগে মার্চ ও মে মাসে আলোচনা হয়েছিল। সর্বশেষ বৈঠকটি ১৬ সেপ্টেম্বর দিল্লি সফর করা মার্কিন প্রতিনিধিদের আলোচনার ভিত্তিতেই এগিয়েছে।

ভারতের প্রধান অগ্রাধিকার ও যুক্তরাষ্ট্রের দাবি

ভারতের কাছে এখন সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হলো ৫০ শতাংশ শুল্কের বোঝা কমানো। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ভারতীয় বাজারে তাদের পণ্যের আরও বড় প্রবেশাধিকার। ভারত এই শুল্ককে “অযৌক্তিক ও অন্যায্য” বলে অভিহিত করেছে।

বর্তমান শুল্ক কাঠামোতে রয়েছে ট্রাম্প আমলের ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং ভারতের রাশিয়ান জ্বালানি কেনার কারণে বাড়তি ২৫ শতাংশ জরিমানা।

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনার ইতিহাস

ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু করে। মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে পাঁচ দফা নিবিড় আলোচনাও হয়। তবে, মার্কিন কৃষিপণ্য বাজারে প্রবেশ, শুল্ক পারস্পরিকতা এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কিছু অমীমাংসিত মামলা এই আলোচনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

আগস্টে পরিকল্পিত মার্কিন প্রতিনিধি দল দিল্লি সফর বাতিল করায় আলোচনা হঠাৎ থেমে যায়। তবে সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে ইতিবাচক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিনিময়ের পর সম্পর্ক আবারও নতুন মাত্রা পেতে শুরু করে।

ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ, শুল্ক সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিলেন রুবিও

০৩:৪০:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আমেরিকার শুল্ক নীতিতে অগ্রগতি

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, রাশিয়ান তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক সমাধানের পথে রয়েছে। মঙ্গলবার এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা আবারও তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। রাশিয়ান তেল ক্রয়ের বিষয়েই এই শুল্ক। অনেক অগ্রগতি হয়েছে।”

তবে তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোকে মস্কোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই পদক্ষেপে ভারতের ওপরও চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রুবিও।

জাতিসংঘে জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে রুবিও প্রথমবারের মতো ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করেন। জুলাই মাসে ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হওয়ার পর এটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎ। রুবিও জোর দিয়ে বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আমেরিকার জন্য “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

সোমবারের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ নিয়ে আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও এবং জয়শঙ্কর সম্মত হয়েছেন যে, মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তুলতে আমেরিকা ও ভারত একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে, যার মধ্যে কোয়াডের সহযোগিতাও অন্তর্ভুক্ত।”

ভিসা ফি ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা

এই কূটনৈতিক তৎপরতা এসেছে এমন সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এইচ-১বি ভিসার আবেদনে ১ লাখ ডলারের ফি ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতীয় পেশাজীবীরা, যারা মোট অনুমোদিত ভিসার ৭০ শতাংশের বেশি পান।

যদিও ভিসা ফি বাড়ানো হয়েছে, গত দুই সপ্তাহে দুই দেশের সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। জয়শঙ্কর আলাদাভাবে ট্রাম্প মনোনীত মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রার্থী সার্জিও গরের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন, যা সম্পর্কের গুরুত্বকে আরও সামনে এনেছে।

বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি

একই সময়ে, ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল নিউইয়র্কে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এটি চলতি বছরে তাদের তৃতীয় সাক্ষাৎ, এর আগে মার্চ ও মে মাসে আলোচনা হয়েছিল। সর্বশেষ বৈঠকটি ১৬ সেপ্টেম্বর দিল্লি সফর করা মার্কিন প্রতিনিধিদের আলোচনার ভিত্তিতেই এগিয়েছে।

ভারতের প্রধান অগ্রাধিকার ও যুক্তরাষ্ট্রের দাবি

ভারতের কাছে এখন সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হলো ৫০ শতাংশ শুল্কের বোঝা কমানো। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ভারতীয় বাজারে তাদের পণ্যের আরও বড় প্রবেশাধিকার। ভারত এই শুল্ককে “অযৌক্তিক ও অন্যায্য” বলে অভিহিত করেছে।

বর্তমান শুল্ক কাঠামোতে রয়েছে ট্রাম্প আমলের ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং ভারতের রাশিয়ান জ্বালানি কেনার কারণে বাড়তি ২৫ শতাংশ জরিমানা।

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনার ইতিহাস

ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু করে। মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে পাঁচ দফা নিবিড় আলোচনাও হয়। তবে, মার্কিন কৃষিপণ্য বাজারে প্রবেশ, শুল্ক পারস্পরিকতা এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কিছু অমীমাংসিত মামলা এই আলোচনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

আগস্টে পরিকল্পিত মার্কিন প্রতিনিধি দল দিল্লি সফর বাতিল করায় আলোচনা হঠাৎ থেমে যায়। তবে সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে ইতিবাচক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিনিময়ের পর সম্পর্ক আবারও নতুন মাত্রা পেতে শুরু করে।