বাংলাদেশের সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং সাংবাদিক সুরক্ষা সংস্থা কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস। তাদের অভিযোগ, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
গ্রেপ্তার ও অভিযোগের পটভূমি
গত ১৫ ডিসেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার হন সাংবাদিক আনিস আলমগীর। অভিযোগে বলা হয়, তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। পরে ঢাকার একটি মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান।
আদালতে শুনানির সময় আনিস আলমগীর নিজেকে পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তুলে ধরে বলেন, তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে ক্ষমতাসীনদের প্রশ্ন করেন এবং গত দুই দশক ধরে এভাবেই কাজ করে আসছেন। তার ভাষায়, কারও কাছে নত হওয়া তার পেশার অংশ নয়।
অ্যামনেস্টির উদ্বেগ ও বক্তব্য
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, এই গ্রেপ্তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া গবেষক রেহাব মাহামুরের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারকে আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং অবিলম্বে আনিস আলমগীরকে মুক্তি দিতে হবে।

তিনি বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দলের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে মনে করা ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করার একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পরিবর্তে সন্ত্রাসবিরোধী আইন অপব্যবহার করা হচ্ছে, যা অনভিপ্রেত।
আইন সংশোধন ও তার প্রয়োগ
চলতি বছরের মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। এরপর থেকে এই আইন ব্যবহার করে একাধিক ব্যক্তি ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অ্যামনেস্টি সতর্ক করে বলেছে, নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
সিপিজের প্রতিক্রিয়া
কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টসও এই গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিককে আটক করা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।
সিপিজের এশিয়া-প্যাসিফিক কর্মসূচির সমন্বয়কারী কুনাল মজুমদার বলেন, গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করে সাংবাদিককে আটক করা অন্তর্বর্তী সরকারের গণতান্ত্রিক অঙ্গীকার নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করে। তিনি অবিলম্বে আনিস আলমগীরের মুক্তি ও সমালোচনামূলক মত প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা বন্ধের আহ্বান জানান।

আনিস আলমগীরের সাংবাদিকতা জীবন
সিপিজ জানায়, আনিস আলমগীর একজন অভিজ্ঞ যুদ্ধসংবাদদাতা। তিনি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় সরাসরি মাঠপর্যায়ে কাজ করেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে প্রিন্ট ও সম্প্রচার সাংবাদিকতায় সক্রিয়। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি জাতীয় রাজনীতি, নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নিয়মিত বিশ্লেষণ ও মতামত দিচ্ছিলেন।
নির্বাচন সামনে রেখে উদ্বেগ
বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন নির্ধারিত রয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। সিপিজ সতর্ক করেছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে আনিস আলমগীরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও বড় অঙ্কের জরিমানার ঝুঁকি রয়েছে।
একই সঙ্গে সংস্থাটি জানিয়েছে, দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। শুধু ফেব্রুয়ারিতেই অন্তত সতেরোটি হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















