মানসম্মত বীজ আলুর উৎপাদন, সংরক্ষণ ও কৃষকপর্যায়ে বিতরণ জোরদার করতে নেওয়া সরকারি প্রকল্পটির ব্যয় বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সর্বশেষ সংশোধনে প্রকল্পটির মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, যা প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত ছিল ৬৮৮ কোটি ২১ লাখ টাকা।
দ্বিতীয় দফা সংশোধনে বাড়ল সময় ও অর্থ
‘মানসম্মত বীজ আলুর উৎপাদন, সংরক্ষণ ও কৃষকপর্যায়ে বিতরণ শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক এই প্রকল্পটি দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধন করা হয়েছে। ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকল্পের মেয়াদও আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পের পৃষ্ঠপোষক এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন।
প্রথম সংশোধনে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল ৭২৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তবে বাস্তবায়নে ধারাবাহিক দেরি, নির্মাণকাজ দীর্ঘায়িত হওয়া, অতিরিক্ত অবকাঠামোর প্রয়োজন এবং পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে ব্যয় অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অর্থায়নের কাঠামো
সংশোধিত ব্যয়ের বড় অংশ সরকার থেকে আসবে। তুলনামূলকভাবে ছোট একটি অংশ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে।

মেয়াদ বাড়ার পেছনের কারণ
প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে, যা প্রথমে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। পরে তা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন করা হয় এবং সর্বশেষ তা ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, সময় বাড়ার ফলে কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ, যান্ত্রিকীকরণ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, খামারপর্যায়ে বীজ উৎপাদন এবং পরিবহন খাতে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
নতুন কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত
সর্বশেষ সংশোধনের অন্যতম প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষকদের মধ্যে ৬০ হাজার টন বীজ আলু বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের বিদ্যমান ও চলমান কোল্ড স্টোরেজগুলো থেকে সর্বোচ্চ প্রায় ৫৩ হাজার টন সংরক্ষণ সক্ষমতা পাওয়া যাবে।
এই ঘাটতি পূরণে চারটি নতুন কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের পরিধি ও লক্ষ্য
এই প্রকল্পটি দেশের আটটি বিভাগের নির্বাচিত জেলা ও উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য হলো রোগমুক্ত ও উচ্চমানের বীজ আলুর প্রাপ্যতা বাড়ানো, আধুনিক সংরক্ষণ সক্ষমতা সম্প্রসারণ এবং প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনের মাধ্যমে কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়ন
ব্যয় বেড়ে গেলেও পরিকল্পনা কমিশন সংশোধিত প্রকল্পটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি প্রায় ৮৮ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি প্রায় ৯৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
কমিশনের মতে, প্রকল্পটি সফলভাবে শেষ হলে আলু উৎপাদন বাড়বে, আধুনিক ও টেকসই সংরক্ষণ ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

অবকাঠামো সম্পন্নে সময় বাড়ানোর প্রয়োজন
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে নতুন কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ, পুরোনো স্থাপনা সংস্কার এবং নির্বাচিত সংরক্ষণাগারে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থার সংযোজন সঠিকভাবে সম্পন্ন করতেই মেয়াদ বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। সময় না বাড়ালে সম্প্রসারিত বিনিয়োগের কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া কঠিন হতো।
আর্থসামাজিক সুফল ও আলু উৎপাদনের চিত্র
এই প্রকল্পের মাধ্যমে বীজের মান উন্নয়ন, ফলন স্থিতিশীলতা, গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং কৃষকদের উন্নত আলু জাতের প্রাপ্যতা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে আলু সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত সবজি এবং খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম প্রধান উপাদান। চলতি বছরে দেশে আলু উৎপাদন রেকর্ড ১ কোটি ১২ লাখ মেট্রিক টনে পৌঁছেছে, যা জাতীয় চাহিদার চেয়ে প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন বেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে আলু চাষের জমির পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়ে ৪ লাখ ৯২ হাজার হেক্টরে দাঁড়িয়েছে এবং মোট উৎপাদন ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে আগের বছরের ১ কোটি ৬ লাখ টন থেকে আরও ওপরে উঠেছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















