বাংলাদেশে জননিরাপত্তার অবনতি এবং বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও গবেষকেরা। বুধবার এক সংলাপে তাঁরা বলেন, নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষার বিষয়টি কোনো একক রাজনৈতিক শক্তির ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না। এ জন্য জাতীয় ঐক্য, রাজনৈতিক জবাবদিহি এবং কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার অপরিহার্য।
সংলাপের প্রেক্ষাপট
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘নিরাপত্তা ও অধিকার: আমরা কী চাই, কী পাচ্ছি’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার। তাঁরা মনে করেন, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী না করলে এবং আইনের শাসন কার্যকর না হলে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
জনমতের চিত্র
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি ক্যাথরিন সিসিল জানান, গত ৫ থেকে ৩০ নভেম্বর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, সহিংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত কোনো দল বা প্রার্থীকে ভোট দিতে রাজি নন ৯২ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় অর্ধেক মানুষ মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলো সহিংসতা কমাতে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হচ্ছে। জরিপটি ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনার আগেই সম্পন্ন হয়েছিল।
সহিংসতার প্রভাব ও আইনের শাসন
অন্যান্য বক্তারা রাজনৈতিক সহিংসতার মানবিক প্রভাব, দুর্বল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নিরপেক্ষ শাসনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। গণঅধিকার পরিষদের ফারুক হাসান বলেন, টানা ২৪ বছরের রাজনৈতিক সহিংসতা জননিরাপত্তা ও আইনের শাসনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

রাজনৈতিক ঐক্যের আহ্বান
এনসিপির মনিরা শারমিন বলেন, কেবল নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতির বাইরে গিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা জরুরি। বিএনপির এবিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, নিরীহ নাগরিকদের সুরক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহি ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
নারী নিরাপত্তা ও মানবাধিকার
বিশেষজ্ঞরা জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সমস্যার দিকটিও তুলে ধরেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সালমা আক্তার বলেন, সহিংসতার আশঙ্কা নারীদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় পরিসরেই ভীত করে তোলে। মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, শুধু নির্বাচনের সময় নয়, সব সময় মানবাধিকার বিষয়ে ধারাবাহিক মনোযোগ থাকা প্রয়োজন।
উপসংহার
বক্তারা একমত হন যে, জননিরাপত্তা রক্ষা করতে হলে জাতীয় ঐক্য, দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং রাষ্ট্রের সক্রিয় সহায়তা অপরিহার্য। নাগরিকরা যেন ভয়মুক্ত পরিবেশে বসবাস করতে পারেন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটিই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য।
এই সংলাপটি বি-স্পেস প্রকল্পের আওতায়, এফসিডিওর সহায়তায় এবং যমুনা টেলিভিশনের সহযোগিতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজন করে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















