০৪:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
ঝিনাইদহে ঘন কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস দুর্ঘটনা নিহত এক, আহত তিন রাজধানীর ১০ স্থানে একযোগে মিছিল, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ৮ আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি ছয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার ট্রাম্পের জন্য বলরুম বানাতে ভাঙা হচ্ছে হোয়াইট হাউজের ইস্ট উইং শরীর হঠাৎ অবশ হয়ে যাওয়া রোগ জিবিএস, লক্ষণ আর চিকিৎসা কী শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুন লাগার পর ২৭ ঘণ্টায় যা যা ঘটেছিল সন্তান লালনপালনে আসল বিষয় হারিয়ে ফেলছে ‘প্যারেন্টিং’ ট্রেন্ড এক পরিবারের তিন প্রজন্ম ও এক টয়োটা করোলার জীবনযাত্রা উৎপাদন থেকে কৃষি—কানাডার শিল্পখাতে ডিজিটাল রূপান্তরের ঢেউ টয়লেটে স্মার্টফোন ব্যবহার বাড়াচ্ছে হেমোরয়েডের ঝুঁকি

ডায়াল-এ-পোয়েম আবার ফিরছে বিশ্বজুড়ে

শিল্প ও প্রযুক্তির এক অভিনব প্রকল্প

ডায়াল-এ-পোয়েম নামের ব্যতিক্রমী শিল্প প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ১৯৬৯ সালে শিল্পী ও কবি জন জিওর্নোর উদ্যোগে। প্রথমে নিউইয়র্কের আর্কিটেকচারাল লীগ ভবনে ছয়টি টেলিফোন ও টেপ রেকর্ডার ব্যবহার করে চালু হয় এটি। কেউ সেই নম্বরে কল করলে এলোমেলোভাবে কোনো কবিতা, গান বা বক্তৃতার রেকর্ড শুনতে পেত। প্রতিদিনই টেপ পরিবর্তন করা হতো, যাতে বৈচিত্র্য বজায় থাকে। জন অ্যাশবেরি, উইলিয়াম এস. বুরোজ, অ্যান ওয়াল্ডম্যান, লরি অ্যান্ডারসন, প্যাটি স্মিথসহ বহু খ্যাতিমান লেখক ও শিল্পী এতে কণ্ঠ দিয়েছেন।

জনপ্রিয়তার ঢেউ

শুরুর এক সপ্তাহেই প্রায় ৭০ হাজার কল আসে এবং ব্যস্ত সিগন্যাল ধরা পড়ে আড়াই লাখবার। বাড়তি চাপ সামলাতে নতুন লাইন যোগ করা হয়েছিল। ১৯৭০ সালে নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টে প্রদর্শিত হওয়ার পর প্রকল্পটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি পায়। যদিও ১৯৭১ সালের পর এটি স্থায়ী সেবা হিসেবে বন্ধ হয়ে যায়, তবে পরবর্তী সময়ে প্রদর্শনীর সাথে সীমিত আকারে আবার চালু করা হয়েছিল।

নতুন রূপে আন্তর্জাতিক যাত্রা

২০২৫ সালে ডায়াল-এ-পোয়েম আবার বৈশ্বিকভাবে ফিরে আসছে। ফ্রান্স, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, ইতালি, হংকং, সুইজারল্যান্ড ও ব্রাজিলে স্থানীয় ফোন নম্বর দিয়ে চালু হচ্ছে এটি। একই সঙ্গে নতুন ওয়েবসাইটও চালু হয়েছে। ওয়েবসাইটে শুধু একটি কালো ফোন হ্যান্ডসেটের আইকনে ক্লিক করলেই শোনা যাবে কবিতা। এলোমেলো নির্বাচনই এর মূল আকর্ষণ, যাকে আয়োজকরা বলছেন “ম্যাজিক র‍্যান্ডমনেস।”

ব্রাজিলে কবিতার আবির্ভাব

ব্রাজিলের সংগ্রাহক পেদ্রো বারবোসা এই প্রকল্পকে দেশে নিয়ে এসেছেন। তিনি কোলেসাও মোরায়েস-বারবোসা গ্যালারিতে বিশেষ প্রদর্শনী আয়োজন করেছেন। এখানে ৬০ জন কবির ১৮১টি রেকর্ডিং সংরক্ষিত হয়েছে, যেগুলোর মূল বিষয়বস্তু ইরোটিসিজম। পর্তুগিজ ছাড়াও কিছু কবিতা রয়েছে ব্রাজিলের আদিবাসী ভাষায়। প্রদর্শনীর প্রথম তিন মাস বিনা মূল্যে নম্বরে কল করার সুযোগে ৫০ হাজারের বেশি কল এসেছিল।

হংকং ও সুইজারল্যান্ডে পরিকল্পনা

হংকংয়ের বিখ্যাত শিল্প জাদুঘর এম+ আগামী এপ্রিলে ‘ডায়াল-এ-পোয়েম হংকং’ চালু করতে যাচ্ছে। ক্যান্টনিজ, ম্যান্ডারিন ও ইংরেজি ভাষায় প্রাথমিক রেকর্ড থাকবে, ভবিষ্যতে ফিলিপাইনের টাগালগ ভাষাও যুক্ত হতে পারে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভার আধুনিক শিল্প জাদুঘর (ম্যামকো) দেশের চারটি সরকারি ভাষা—ফরাসি, জার্মান, ইতালীয় ও রোমানশে—কবিতা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। জাদুঘরটি নির্মাণকাজের কারণে আপাতত বাইরে বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী করছে। ফোন ভাস্কর্যগুলো দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঘুরে বেড়াবে, যাতে সাধারণ মানুষও এই অভিজ্ঞতা নিতে পারে।

কণ্ঠের প্রতিকৃতি

ডায়াল-এ-পোয়েম শুধুমাত্র কবিতার প্রকল্প নয়; এটি একটি দেশের কণ্ঠ ও বৈচিত্র্যের প্রতিকৃতি। হোক তা ব্রাজিলের আমাজনের জঙ্গলে থাকা কোনো মানুষ কিংবা সুইজারল্যান্ডের পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা—একটি ফোন কলেই তারা কবিতার সাথে যুক্ত হতে পারবে। আয়োজনকারীরা মনে করেন, এই উদ্যোগ মানুষের কাছে কবিতা ও শিল্পকে নতুনভাবে পৌঁছে দিচ্ছে।

উত্তরাধিকার ও ধারাবাহিকতা

জন জিওর্নো জীবদ্দশায় তাঁর কবিতা ও শিল্পকর্মে যে পরীক্ষামূলক ধারা শুরু করেছিলেন, আজ তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টের কিউরেটর স্টুয়ার্ট কোমারের ভাষায়, “এটি সময়ের এক অনন্য কাজ, যা কবিতা ও জাদুঘরকে মানুষের জীবনের সাথে নতুনভাবে যুক্ত করেছে।”

ডায়াল-এ-পোয়েম আবারও প্রমাণ করছে, প্রযুক্তি আর শিল্পের মেলবন্ধনে কবিতা কখনোই অচল হয়ে যায় না; বরং নতুন আঙ্গিকে তা আরও বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঝিনাইদহে ঘন কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস দুর্ঘটনা নিহত এক, আহত তিন

ডায়াল-এ-পোয়েম আবার ফিরছে বিশ্বজুড়ে

০৫:০০:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিল্প ও প্রযুক্তির এক অভিনব প্রকল্প

ডায়াল-এ-পোয়েম নামের ব্যতিক্রমী শিল্প প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ১৯৬৯ সালে শিল্পী ও কবি জন জিওর্নোর উদ্যোগে। প্রথমে নিউইয়র্কের আর্কিটেকচারাল লীগ ভবনে ছয়টি টেলিফোন ও টেপ রেকর্ডার ব্যবহার করে চালু হয় এটি। কেউ সেই নম্বরে কল করলে এলোমেলোভাবে কোনো কবিতা, গান বা বক্তৃতার রেকর্ড শুনতে পেত। প্রতিদিনই টেপ পরিবর্তন করা হতো, যাতে বৈচিত্র্য বজায় থাকে। জন অ্যাশবেরি, উইলিয়াম এস. বুরোজ, অ্যান ওয়াল্ডম্যান, লরি অ্যান্ডারসন, প্যাটি স্মিথসহ বহু খ্যাতিমান লেখক ও শিল্পী এতে কণ্ঠ দিয়েছেন।

জনপ্রিয়তার ঢেউ

শুরুর এক সপ্তাহেই প্রায় ৭০ হাজার কল আসে এবং ব্যস্ত সিগন্যাল ধরা পড়ে আড়াই লাখবার। বাড়তি চাপ সামলাতে নতুন লাইন যোগ করা হয়েছিল। ১৯৭০ সালে নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টে প্রদর্শিত হওয়ার পর প্রকল্পটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি পায়। যদিও ১৯৭১ সালের পর এটি স্থায়ী সেবা হিসেবে বন্ধ হয়ে যায়, তবে পরবর্তী সময়ে প্রদর্শনীর সাথে সীমিত আকারে আবার চালু করা হয়েছিল।

নতুন রূপে আন্তর্জাতিক যাত্রা

২০২৫ সালে ডায়াল-এ-পোয়েম আবার বৈশ্বিকভাবে ফিরে আসছে। ফ্রান্স, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, ইতালি, হংকং, সুইজারল্যান্ড ও ব্রাজিলে স্থানীয় ফোন নম্বর দিয়ে চালু হচ্ছে এটি। একই সঙ্গে নতুন ওয়েবসাইটও চালু হয়েছে। ওয়েবসাইটে শুধু একটি কালো ফোন হ্যান্ডসেটের আইকনে ক্লিক করলেই শোনা যাবে কবিতা। এলোমেলো নির্বাচনই এর মূল আকর্ষণ, যাকে আয়োজকরা বলছেন “ম্যাজিক র‍্যান্ডমনেস।”

ব্রাজিলে কবিতার আবির্ভাব

ব্রাজিলের সংগ্রাহক পেদ্রো বারবোসা এই প্রকল্পকে দেশে নিয়ে এসেছেন। তিনি কোলেসাও মোরায়েস-বারবোসা গ্যালারিতে বিশেষ প্রদর্শনী আয়োজন করেছেন। এখানে ৬০ জন কবির ১৮১টি রেকর্ডিং সংরক্ষিত হয়েছে, যেগুলোর মূল বিষয়বস্তু ইরোটিসিজম। পর্তুগিজ ছাড়াও কিছু কবিতা রয়েছে ব্রাজিলের আদিবাসী ভাষায়। প্রদর্শনীর প্রথম তিন মাস বিনা মূল্যে নম্বরে কল করার সুযোগে ৫০ হাজারের বেশি কল এসেছিল।

হংকং ও সুইজারল্যান্ডে পরিকল্পনা

হংকংয়ের বিখ্যাত শিল্প জাদুঘর এম+ আগামী এপ্রিলে ‘ডায়াল-এ-পোয়েম হংকং’ চালু করতে যাচ্ছে। ক্যান্টনিজ, ম্যান্ডারিন ও ইংরেজি ভাষায় প্রাথমিক রেকর্ড থাকবে, ভবিষ্যতে ফিলিপাইনের টাগালগ ভাষাও যুক্ত হতে পারে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভার আধুনিক শিল্প জাদুঘর (ম্যামকো) দেশের চারটি সরকারি ভাষা—ফরাসি, জার্মান, ইতালীয় ও রোমানশে—কবিতা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। জাদুঘরটি নির্মাণকাজের কারণে আপাতত বাইরে বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী করছে। ফোন ভাস্কর্যগুলো দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঘুরে বেড়াবে, যাতে সাধারণ মানুষও এই অভিজ্ঞতা নিতে পারে।

কণ্ঠের প্রতিকৃতি

ডায়াল-এ-পোয়েম শুধুমাত্র কবিতার প্রকল্প নয়; এটি একটি দেশের কণ্ঠ ও বৈচিত্র্যের প্রতিকৃতি। হোক তা ব্রাজিলের আমাজনের জঙ্গলে থাকা কোনো মানুষ কিংবা সুইজারল্যান্ডের পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা—একটি ফোন কলেই তারা কবিতার সাথে যুক্ত হতে পারবে। আয়োজনকারীরা মনে করেন, এই উদ্যোগ মানুষের কাছে কবিতা ও শিল্পকে নতুনভাবে পৌঁছে দিচ্ছে।

উত্তরাধিকার ও ধারাবাহিকতা

জন জিওর্নো জীবদ্দশায় তাঁর কবিতা ও শিল্পকর্মে যে পরীক্ষামূলক ধারা শুরু করেছিলেন, আজ তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টের কিউরেটর স্টুয়ার্ট কোমারের ভাষায়, “এটি সময়ের এক অনন্য কাজ, যা কবিতা ও জাদুঘরকে মানুষের জীবনের সাথে নতুনভাবে যুক্ত করেছে।”

ডায়াল-এ-পোয়েম আবারও প্রমাণ করছে, প্রযুক্তি আর শিল্পের মেলবন্ধনে কবিতা কখনোই অচল হয়ে যায় না; বরং নতুন আঙ্গিকে তা আরও বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।