০১:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সহযোগিতায় নতুন দিগন্ত মার্ক উড আশ্বাস দিলেন, অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়ার কটাক্ষ সত্ত্বেও আত্মবিশ্বাসী ইংল্যান্ড দল তাপ থেরাপিতে রক্তচাপ কমানোর আশার আলো: নতুন গবেষণায় চমকপ্রদ ফলাফল জাকার্তার মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: আতঙ্কে শহর, আহত ৫৫ জন গাজায় বর্জ্য সংকট: দূষণে ডুবে স্বাস্থ্য বিপর্যয় তানজানিয়ায় রক্তে রাঙানো দমন-পীড়ন: এক ভয়াবহ নতুন বাস্তবতা ভারতের অদ্ভুত স্থিতিশীলতা একক জীবন: বৈশ্বিক এককতা বৃদ্ধির কারণ এবং প্রভাব স্ট্র্যাটেজিক অজ্ঞতা: ডোনাল্ড ট্রাম্পের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভ্রান্তি মানসিক স্বাস্থ্য: আমেরিকার মডেল মোবাইল সংকট সেবার উত্থান ও পতন

পাঁচ রহস্যময় স্থান, যা অনুপ্রেরণা দিয়েছে ড্যান ব্রাউনকে

 প্রাগ: নতুন উপন্যাসের প্রেক্ষাপট

‘দ্য সিক্রেট অব সিক্রেটস’ হলো ড্যান ব্রাউনের ষষ্ঠ উপন্যাস, যেখানে হার্ভার্ডের সিম্বোলজি অধ্যাপক রবার্ট ল্যাংডন প্রধান চরিত্র। এবার গল্পের প্রেক্ষাপট প্রাগ শহর। ব্রাউন বলেছেন, “প্রাগ ল্যাংডনের জন্য একেবারে উপযুক্ত। এখানে আঁকাবাঁকা পাথুরে গলি, শত শত মিনার, প্রাচীন গির্জা আর রহস্যময় সমাধি আছে।”

স্ট. ভিটাস ক্যাথেড্রালের দরজার সাতটি তালা, যার প্রতিটি আলাদা ব্যক্তির হাতে থাকা চাবি দিয়ে খোলা যায়, লেখককে বিশেষভাবে মুগ্ধ করেছে। ব্রাউনের মতে, “সাত তালার দরজা—এর চেয়ে ল্যাংডনের উপযোগী আর কী হতে পারে?”

 প্রাগের রহস্যময় ঐতিহ্য

ব্রাউন প্রথম প্রাগে গিয়েছিলেন আশির দশকের শুরুতে, তখন শহরটি আয়রন কার্টেনের অন্তরালে। নতুন উপন্যাসের গবেষণার সময় তিনি প্রাগ বহুবার ঘুরেছেন। উপন্যাসে শুধু বিখ্যাত প্রাগ ক্যাসল বা ওল্ড টাউন স্কয়ার নয়, এমনকি কম পরিচিত স্থাপনাও উঠে এসেছে—যেমন ফ্রাঙ্ক গেহরির নকশা করা “ড্যান্সিং হাউস” বা চার্চ অব আওয়ার লেডি ভিক্টোরিয়াস, যেখানে মোমে মোড়া শিশু যিশুর মূর্তিকে বছরে নানা সাজে সাজানো হয়।

এছাড়া বইতে প্রাগের অতিপ্রাকৃত কাহিনীগুলোও এসেছে—ইহুদি লোককথার গোলেম, অথবা সম্রাট রুডলফ দ্বিতীয়ের দরবার, যেখানে চার শতাব্দী আগে জ্যোতির্বিদ আর রসায়নবিদরা জড়ো হতেন। ব্রাউন বলেন, “সেই সময় থেকেই প্রাগ ইউরোপের মিস্টিক রাজধানী।”

Dan Brown's 5 Favorite Places in Prague - The New York Times

লেখকের অনুপ্রেরণা পাওয়া পাঁচ স্থান

 ব্ল্যাক অ্যাঞ্জেলস বার

ওল্ড টাউন স্কয়ারের কাছে হোটেল ইউ প্রিন্সের নিচে গথিক সেলার ঘরে গড়ে ওঠা এই বার প্রাগের অন্যতম রহস্যময় জায়গা। এখানে পাওয়া যায় বিশেষ ককটেল ‘ব্ল্যাক অ্যাঞ্জেলস মেডিসিন’, যেখানে ভদকা, লিলেট ব্ল্যাঙ্ক, পিচ বিটারস ও বিখ্যাত বেচেরোভকা মিশ্রিত থাকে। ব্রাউন বলেন, “মনে হয় যেন আরেক জগতে ঢুকে গেছেন—গুহার মতো পরিবেশে পিয়ানো বাজতে বাজতে আপনি হাতে নিয়েছেন অভিনব ককটেল।”

 দ্য ড্রিপস্টোন ওয়াল

ওয়ালেনস্টেইন গার্ডেনের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ৩৫ ফুট উঁচু কালচে ধূসর প্রাচীর, যেটিকে ব্রাউন বলেছেন “গলিত শিলার পাহাড়ি দেয়াল।” ১৭ শতকের এই প্রাচীরে মুখাবয়বের মতো নকশা দেখা যায়। কারো কারো মতে এগুলো ইচ্ছাকৃত, আবার কিছু নিছক ভ্রম।

ফোলিমানকা বম্ব শেল্টার

ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় নির্মিত এই পারমাণবিক আশ্রয়কেন্দ্র প্রায় ১,৩০০ মানুষ ধরে রাখতে পারত। প্রাগের প্রাচীন শহরের দক্ষিণে পার্কের নিচে এর অবস্থান। ব্রাউন বলেন, “এখানে ঢুকলে মনে হয় যেন পারমাণবিক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেক কিছু এখনো অক্ষত আছে।” মাসে একবার সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য খোলা হয়।

Dan Brown's 5 Favorite Places in Prague - The New York Times

বারোক লাইব্রেরি (ক্লেমেনটিনাম)

১৬ শতকে প্রতিষ্ঠিত এই গ্রন্থাগার জেসুইটদের কেন্দ্র ছিল। এখানে মোজার্ট সংগীত পরিবেশন করেছেন, আইনস্টাইন পড়িয়েছেন। ভেতরে আছে ২০ হাজার প্রাচীন পুঁথি, বিশেষ করে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের বই। ব্রাউন বলেন, “এটা পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর কক্ষ। পুরনো গ্লোবের সংগ্রহ আর গোপন পথগুলো উপন্যাসের জন্য আদর্শ।”

পেত্রিন টাওয়ার

১৮৯১ সালে নির্মিত এই টাওয়ার প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের আদলে তৈরি। সবুজ পার্কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ১৯২ ফুট উঁচু টাওয়ার থেকে পুরো প্রাগ শহর দেখা যায়। ব্রাউন বলেন, “আমি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে ভয় পাচ্ছিলাম, শেষ পর্যন্ত ছোট্ট এলিভেটরে করে উঠলাম। কিন্তু শীর্ষে পৌঁছে দৃশ্য ছিল অসাধারণ।”

‘দ্য সিক্রেট অব সিক্রেটস’-এ ড্যান ব্রাউন প্রাগকে শুধু প্রেক্ষাপট নয়, চরিত্র হিসেবেও উপস্থাপন করেছেন। রহস্য, ইতিহাস আর শিল্পের মিশ্রণে সাজানো শহরের প্রতিটি কোণায় তিনি খুঁজে পেয়েছেন গল্পের উপাদান। তার ভাষায়, “আমি চেয়েছি পাঠকরা যেন ল্যাংডনের চোখ দিয়ে প্রাগকে দেখতে পান।”

জনপ্রিয় সংবাদ

সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সহযোগিতায় নতুন দিগন্ত

পাঁচ রহস্যময় স্থান, যা অনুপ্রেরণা দিয়েছে ড্যান ব্রাউনকে

০৬:০০:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 প্রাগ: নতুন উপন্যাসের প্রেক্ষাপট

‘দ্য সিক্রেট অব সিক্রেটস’ হলো ড্যান ব্রাউনের ষষ্ঠ উপন্যাস, যেখানে হার্ভার্ডের সিম্বোলজি অধ্যাপক রবার্ট ল্যাংডন প্রধান চরিত্র। এবার গল্পের প্রেক্ষাপট প্রাগ শহর। ব্রাউন বলেছেন, “প্রাগ ল্যাংডনের জন্য একেবারে উপযুক্ত। এখানে আঁকাবাঁকা পাথুরে গলি, শত শত মিনার, প্রাচীন গির্জা আর রহস্যময় সমাধি আছে।”

স্ট. ভিটাস ক্যাথেড্রালের দরজার সাতটি তালা, যার প্রতিটি আলাদা ব্যক্তির হাতে থাকা চাবি দিয়ে খোলা যায়, লেখককে বিশেষভাবে মুগ্ধ করেছে। ব্রাউনের মতে, “সাত তালার দরজা—এর চেয়ে ল্যাংডনের উপযোগী আর কী হতে পারে?”

 প্রাগের রহস্যময় ঐতিহ্য

ব্রাউন প্রথম প্রাগে গিয়েছিলেন আশির দশকের শুরুতে, তখন শহরটি আয়রন কার্টেনের অন্তরালে। নতুন উপন্যাসের গবেষণার সময় তিনি প্রাগ বহুবার ঘুরেছেন। উপন্যাসে শুধু বিখ্যাত প্রাগ ক্যাসল বা ওল্ড টাউন স্কয়ার নয়, এমনকি কম পরিচিত স্থাপনাও উঠে এসেছে—যেমন ফ্রাঙ্ক গেহরির নকশা করা “ড্যান্সিং হাউস” বা চার্চ অব আওয়ার লেডি ভিক্টোরিয়াস, যেখানে মোমে মোড়া শিশু যিশুর মূর্তিকে বছরে নানা সাজে সাজানো হয়।

এছাড়া বইতে প্রাগের অতিপ্রাকৃত কাহিনীগুলোও এসেছে—ইহুদি লোককথার গোলেম, অথবা সম্রাট রুডলফ দ্বিতীয়ের দরবার, যেখানে চার শতাব্দী আগে জ্যোতির্বিদ আর রসায়নবিদরা জড়ো হতেন। ব্রাউন বলেন, “সেই সময় থেকেই প্রাগ ইউরোপের মিস্টিক রাজধানী।”

Dan Brown's 5 Favorite Places in Prague - The New York Times

লেখকের অনুপ্রেরণা পাওয়া পাঁচ স্থান

 ব্ল্যাক অ্যাঞ্জেলস বার

ওল্ড টাউন স্কয়ারের কাছে হোটেল ইউ প্রিন্সের নিচে গথিক সেলার ঘরে গড়ে ওঠা এই বার প্রাগের অন্যতম রহস্যময় জায়গা। এখানে পাওয়া যায় বিশেষ ককটেল ‘ব্ল্যাক অ্যাঞ্জেলস মেডিসিন’, যেখানে ভদকা, লিলেট ব্ল্যাঙ্ক, পিচ বিটারস ও বিখ্যাত বেচেরোভকা মিশ্রিত থাকে। ব্রাউন বলেন, “মনে হয় যেন আরেক জগতে ঢুকে গেছেন—গুহার মতো পরিবেশে পিয়ানো বাজতে বাজতে আপনি হাতে নিয়েছেন অভিনব ককটেল।”

 দ্য ড্রিপস্টোন ওয়াল

ওয়ালেনস্টেইন গার্ডেনের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ৩৫ ফুট উঁচু কালচে ধূসর প্রাচীর, যেটিকে ব্রাউন বলেছেন “গলিত শিলার পাহাড়ি দেয়াল।” ১৭ শতকের এই প্রাচীরে মুখাবয়বের মতো নকশা দেখা যায়। কারো কারো মতে এগুলো ইচ্ছাকৃত, আবার কিছু নিছক ভ্রম।

ফোলিমানকা বম্ব শেল্টার

ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় নির্মিত এই পারমাণবিক আশ্রয়কেন্দ্র প্রায় ১,৩০০ মানুষ ধরে রাখতে পারত। প্রাগের প্রাচীন শহরের দক্ষিণে পার্কের নিচে এর অবস্থান। ব্রাউন বলেন, “এখানে ঢুকলে মনে হয় যেন পারমাণবিক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেক কিছু এখনো অক্ষত আছে।” মাসে একবার সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য খোলা হয়।

Dan Brown's 5 Favorite Places in Prague - The New York Times

বারোক লাইব্রেরি (ক্লেমেনটিনাম)

১৬ শতকে প্রতিষ্ঠিত এই গ্রন্থাগার জেসুইটদের কেন্দ্র ছিল। এখানে মোজার্ট সংগীত পরিবেশন করেছেন, আইনস্টাইন পড়িয়েছেন। ভেতরে আছে ২০ হাজার প্রাচীন পুঁথি, বিশেষ করে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের বই। ব্রাউন বলেন, “এটা পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর কক্ষ। পুরনো গ্লোবের সংগ্রহ আর গোপন পথগুলো উপন্যাসের জন্য আদর্শ।”

পেত্রিন টাওয়ার

১৮৯১ সালে নির্মিত এই টাওয়ার প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের আদলে তৈরি। সবুজ পার্কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ১৯২ ফুট উঁচু টাওয়ার থেকে পুরো প্রাগ শহর দেখা যায়। ব্রাউন বলেন, “আমি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে ভয় পাচ্ছিলাম, শেষ পর্যন্ত ছোট্ট এলিভেটরে করে উঠলাম। কিন্তু শীর্ষে পৌঁছে দৃশ্য ছিল অসাধারণ।”

‘দ্য সিক্রেট অব সিক্রেটস’-এ ড্যান ব্রাউন প্রাগকে শুধু প্রেক্ষাপট নয়, চরিত্র হিসেবেও উপস্থাপন করেছেন। রহস্য, ইতিহাস আর শিল্পের মিশ্রণে সাজানো শহরের প্রতিটি কোণায় তিনি খুঁজে পেয়েছেন গল্পের উপাদান। তার ভাষায়, “আমি চেয়েছি পাঠকরা যেন ল্যাংডনের চোখ দিয়ে প্রাগকে দেখতে পান।”