০৪:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
ঝিনাইদহে ঘন কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস দুর্ঘটনা নিহত এক, আহত তিন রাজধানীর ১০ স্থানে একযোগে মিছিল, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ৮ আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি ছয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার ট্রাম্পের জন্য বলরুম বানাতে ভাঙা হচ্ছে হোয়াইট হাউজের ইস্ট উইং শরীর হঠাৎ অবশ হয়ে যাওয়া রোগ জিবিএস, লক্ষণ আর চিকিৎসা কী শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুন লাগার পর ২৭ ঘণ্টায় যা যা ঘটেছিল সন্তান লালনপালনে আসল বিষয় হারিয়ে ফেলছে ‘প্যারেন্টিং’ ট্রেন্ড এক পরিবারের তিন প্রজন্ম ও এক টয়োটা করোলার জীবনযাত্রা উৎপাদন থেকে কৃষি—কানাডার শিল্পখাতে ডিজিটাল রূপান্তরের ঢেউ টয়লেটে স্মার্টফোন ব্যবহার বাড়াচ্ছে হেমোরয়েডের ঝুঁকি

ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি: বৈদেশিক সহায়তার তহবিল পুনর্বিন্যাসের পরিকল্পনা

বৈদেশিক সহায়তার নতুন দিক: বিনিয়োগ, কৌশলগত অবকাঠামো ও অভিবাসন ইস্যুতে অগ্রাধিকার

নতুন পরিকল্পনার সারসংক্ষেপ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ১.৮ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তা তহবিলকে নতুনভাবে ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে গ্রিনল্যান্ডে বিনিয়োগ, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং লাতিন আমেরিকার তথাকথিত ‘মার্কসবাদী আমেরিকাবিরোধী শাসনব্যবস্থা’ মোকাবিলার মতো খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

একটি কংগ্রেসে পাঠানো নথিতে বলা হয়েছে, “মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বৈদেশিক সহায়তার অর্থ এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে যুক্তরাষ্ট্র আরও নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ হয়।”


কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই তহবিল স্থানান্তর

এই তহবিল পুনর্বিন্যাস কংগ্রেস কর্তৃক পূর্বে অনুমোদিত বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে কেটে নেওয়া হবে। ওয়াশিংটন পোস্ট প্রথমে এই পরিকল্পনার খবর প্রকাশ করে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, বৈদেশিক সহায়তা অবশ্যই প্রশাসনের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

তিনি আরও জানান, “যুক্তরাষ্ট্র সাহায্যের চেয়ে বাণিজ্যকে, নির্ভরশীলতার চেয়ে সুযোগকে এবং অনুদানের চেয়ে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেবে।”


দীর্ঘদিনের নীতির পরিবর্তন

ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার পর থেকেই বৈদেশিক সহায়তার কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য, চিকিৎসা ও অর্থনৈতিক সহায়তাকে মার্কিন কূটনৈতিক শক্তির একটি ‘সফট পাওয়ার’ অংশ হিসেবে দেখা হলেও, ট্রাম্প প্রশাসন সেই ধারা থেকে সরে আসছে।

১২ সেপ্টেম্বর তারিখের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন এই ১.৮ বিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্ব শক্তিশালী করার জন্য ব্যয় করা হবে। এর আওতায় থাকবে খনিজ সরবরাহের বৈচিত্র্যকরণ, কৌশলগত অবকাঠামোতে বিনিয়োগ, চীনের প্রভাব মোকাবিলা এবং অভিবাসন সংকট সমাধান।


ইউরোপ ও গ্রিনল্যান্ডে বিনিয়োগ

নথি অনুসারে, ইউরোপ-সংক্রান্ত কার্যক্রমে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে। এর মধ্যে ইউক্রেনের জ্বালানি ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ খাত, এবং গ্রিনল্যান্ডে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে ব্যয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

গ্রিনল্যান্ড, যা ডেনমার্কের অধীনে একটি স্বশাসিত অঞ্চল, তেল, গ্যাস এবং উচ্চ প্রযুক্তি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজে সমৃদ্ধ। ট্রাম্প বহুবার গ্রিনল্যান্ডের ওপর মার্কিন প্রভাব বাড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।


লাতিন আমেরিকা ও অভিবাসন ইস্যু

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম গোলার্ধে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ, চীনের খনিজ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে প্রভাব মোকাবিলা এবং ভেনেজুয়েলা, কিউবা ও নিকারাগুয়ার মতো ‘মার্কসবাদী শাসনব্যবস্থা’ মোকাবিলার জন্য।


ইউএসএআইডি ভেঙে ফেলা

এই বছরের শুরু থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) কার্যত ভেঙে দিয়েছে। বিলিয়ন ডলারের সহায়তা হিমায়িত বা কেটে দেওয়া হয়েছে। ফলে হাজার হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন এবং খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা বিতরণ ব্যাহত হয়েছে। এর প্রভাবে বৈশ্বিক মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।


বিরোধীদের সমালোচনা

সিনেটের ফরেন রিলেশনস কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট জিন শেহীন বলেছেন, এই পরিকল্পনা সংবিধান অনুযায়ী কংগ্রেসের অর্থ ব্যয়ের ক্ষমতাকে দুর্বল করছে।

তিনি বলেন, “গ্রিনল্যান্ডে রাজনৈতিকভাবে চালিত প্রকল্পে অর্থ ঢালা বা আফ্রিকার দেশগুলোকে অভিবাসন ইস্যুতে চাপ দিতে সহায়তাকে ব্যবহার করা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে বেমানান এবং জনগণের করের অপব্যবহার।”

অন্যদিকে কমিটির রিপাবলিকান চেয়ারম্যান জিম রিশ কার্যালয় কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।


পররাষ্ট্র দপ্তরের দৃষ্টিভঙ্গি

গত জুলাইয়ে ইউএসএআইডি আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে নেওয়া হয়। সিনেটর মার্কো রুবিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আর দাতব্যভিত্তিক মডেলে কাজ করবে না। বরং টেকসই প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দেশগুলোকে ক্ষমতায়িত করা হবে।

প্রসঙ্গত, বৈদেশিক সহায়তা সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটের মাত্র ১%-এর মতো অংশ দখল করেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঝিনাইদহে ঘন কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস দুর্ঘটনা নিহত এক, আহত তিন

ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি: বৈদেশিক সহায়তার তহবিল পুনর্বিন্যাসের পরিকল্পনা

০১:৫৪:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বৈদেশিক সহায়তার নতুন দিক: বিনিয়োগ, কৌশলগত অবকাঠামো ও অভিবাসন ইস্যুতে অগ্রাধিকার

নতুন পরিকল্পনার সারসংক্ষেপ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ১.৮ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তা তহবিলকে নতুনভাবে ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে গ্রিনল্যান্ডে বিনিয়োগ, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং লাতিন আমেরিকার তথাকথিত ‘মার্কসবাদী আমেরিকাবিরোধী শাসনব্যবস্থা’ মোকাবিলার মতো খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

একটি কংগ্রেসে পাঠানো নথিতে বলা হয়েছে, “মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বৈদেশিক সহায়তার অর্থ এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে যুক্তরাষ্ট্র আরও নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ হয়।”


কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই তহবিল স্থানান্তর

এই তহবিল পুনর্বিন্যাস কংগ্রেস কর্তৃক পূর্বে অনুমোদিত বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে কেটে নেওয়া হবে। ওয়াশিংটন পোস্ট প্রথমে এই পরিকল্পনার খবর প্রকাশ করে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, বৈদেশিক সহায়তা অবশ্যই প্রশাসনের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

তিনি আরও জানান, “যুক্তরাষ্ট্র সাহায্যের চেয়ে বাণিজ্যকে, নির্ভরশীলতার চেয়ে সুযোগকে এবং অনুদানের চেয়ে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেবে।”


দীর্ঘদিনের নীতির পরিবর্তন

ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার পর থেকেই বৈদেশিক সহায়তার কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য, চিকিৎসা ও অর্থনৈতিক সহায়তাকে মার্কিন কূটনৈতিক শক্তির একটি ‘সফট পাওয়ার’ অংশ হিসেবে দেখা হলেও, ট্রাম্প প্রশাসন সেই ধারা থেকে সরে আসছে।

১২ সেপ্টেম্বর তারিখের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন এই ১.৮ বিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্ব শক্তিশালী করার জন্য ব্যয় করা হবে। এর আওতায় থাকবে খনিজ সরবরাহের বৈচিত্র্যকরণ, কৌশলগত অবকাঠামোতে বিনিয়োগ, চীনের প্রভাব মোকাবিলা এবং অভিবাসন সংকট সমাধান।


ইউরোপ ও গ্রিনল্যান্ডে বিনিয়োগ

নথি অনুসারে, ইউরোপ-সংক্রান্ত কার্যক্রমে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে। এর মধ্যে ইউক্রেনের জ্বালানি ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ খাত, এবং গ্রিনল্যান্ডে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে ব্যয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

গ্রিনল্যান্ড, যা ডেনমার্কের অধীনে একটি স্বশাসিত অঞ্চল, তেল, গ্যাস এবং উচ্চ প্রযুক্তি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজে সমৃদ্ধ। ট্রাম্প বহুবার গ্রিনল্যান্ডের ওপর মার্কিন প্রভাব বাড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।


লাতিন আমেরিকা ও অভিবাসন ইস্যু

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম গোলার্ধে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ, চীনের খনিজ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে প্রভাব মোকাবিলা এবং ভেনেজুয়েলা, কিউবা ও নিকারাগুয়ার মতো ‘মার্কসবাদী শাসনব্যবস্থা’ মোকাবিলার জন্য।


ইউএসএআইডি ভেঙে ফেলা

এই বছরের শুরু থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) কার্যত ভেঙে দিয়েছে। বিলিয়ন ডলারের সহায়তা হিমায়িত বা কেটে দেওয়া হয়েছে। ফলে হাজার হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন এবং খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা বিতরণ ব্যাহত হয়েছে। এর প্রভাবে বৈশ্বিক মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।


বিরোধীদের সমালোচনা

সিনেটের ফরেন রিলেশনস কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট জিন শেহীন বলেছেন, এই পরিকল্পনা সংবিধান অনুযায়ী কংগ্রেসের অর্থ ব্যয়ের ক্ষমতাকে দুর্বল করছে।

তিনি বলেন, “গ্রিনল্যান্ডে রাজনৈতিকভাবে চালিত প্রকল্পে অর্থ ঢালা বা আফ্রিকার দেশগুলোকে অভিবাসন ইস্যুতে চাপ দিতে সহায়তাকে ব্যবহার করা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে বেমানান এবং জনগণের করের অপব্যবহার।”

অন্যদিকে কমিটির রিপাবলিকান চেয়ারম্যান জিম রিশ কার্যালয় কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।


পররাষ্ট্র দপ্তরের দৃষ্টিভঙ্গি

গত জুলাইয়ে ইউএসএআইডি আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে নেওয়া হয়। সিনেটর মার্কো রুবিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আর দাতব্যভিত্তিক মডেলে কাজ করবে না। বরং টেকসই প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দেশগুলোকে ক্ষমতায়িত করা হবে।

প্রসঙ্গত, বৈদেশিক সহায়তা সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটের মাত্র ১%-এর মতো অংশ দখল করেছে।