ব্যবসা ও ঘরবাড়ি বিপর্যস্ত
আফগানিস্তানের কান্দাহার থেকে বাদাখশান—বিভিন্ন প্রদেশের নারী উদ্যোক্তারা তাঁদের ক্ষুদ্র ব্যবসা চালাচ্ছেন সূক্ষ্ম সূচিকর্ম, পোশাক আর হস্তশিল্প দিয়ে। কিন্তু ফাইবার অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
তালেবান কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, বলখ, কুন্দুজ, বাদাখশান, তাকহার ও বাগলান প্রদেশে ফাইবার অপটিক্যাল সেবা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, এ পদক্ষেপ “অশ্লীল কার্যকলাপ” প্রতিরোধের জন্য। তবে কান্দাহার, হেরাত ও পারভান প্রদেশের বাসিন্দারাও বিঘ্নের কথা জানিয়েছেন, যদিও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়নি।
ইন্টারনেট ব্যয়ের চাপ তিনগুণ
হায়াত হ্যান্ডিক্রাফটসের উদ্যোক্তা সাবরিন্না হায়াত জানান, তাঁর দলের নয়জন নারী কর্মী এখন ফাইবার ছাড়াই মোবাইল ডেটায় ব্যবসা চালাচ্ছেন। এতে খরচ তিনগুণ বেড়েছে। আগে দেশ-বিদেশ থেকে অর্ডার আসত নিয়মিত। এখন প্রতিনিয়ত মোবাইল ডেটা প্যাক কিনতে হচ্ছে, যা খুবই ব্যয়বহুল।
বলখ প্রদেশের গভর্নরের মুখপাত্র হাজি যায়েদ বলেছেন, “ফাইবার অপটিক্যাল কেবল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অশ্লীলতা ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশের ভেতরে বিকল্প সমাধান তৈরি করা হবে।” কুন্দুজ প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষও একইরকম বিবৃতি দিয়েছে। তবে কাবুলের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।
নারীদের কাজ ও শিক্ষা হুমকির মুখে
কুন্দুজের দৌরানি নামে এক নারী উদ্যোক্তা জানান, তাঁর সেলাই কারখানায় বিধবা ও অসহায় নারীরা কাজ করতেন। অনলাইন সংযোগ ছাড়া বিক্রি ও অর্ডার বন্ধ হয়ে গেছে। দৌরানি বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে আমাকে দেশ ছাড়তে হবে।”
শিক্ষার্থীদের জন্যও পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মেয়েরা, যারা মাধ্যমিক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারে না, অনলাইন ক্লাসই ছিল তাঁদের ভরসা। দৌরানির মেয়ে অনলাইনে ইংরেজি ক্লাস করত, সেটিও এখন বন্ধ হয়ে গেছে।
মানবাধিকারকর্মীদের অভিযোগ
ডিজিটাল অধিকারকর্মীদের মতে, তালেবান এ নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে শুধু নৈতিকতার নামে নয়, বরং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে। কাবুলভিত্তিক অধ্যাপক ওবায়দুল্লাহ বাহির বলেন, “তালেবান বারবার নৈতিকতার অজুহাত দিয়ে নারীদের শিক্ষা ও অধিকার সীমিত করেছে। সংস্কারের প্রতিশ্রুতিও পরে কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। এটা আধুনিকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। তাঁরা আসলে সেই কঠোর শাসনের চিত্রই প্রমাণ করছেন, যা নিয়ে আগে থেকেই তাঁদের সমালোচনা হয়েছে।”
নারীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
তবে এসব বিতর্ক নারীদের দৈনন্দিন সংগ্রামের তুলনায় অনেক দূরের বিষয়। দৌরানি বলেন, “এই সেলাই কাজের মাধ্যমে আমি সংসারে খাবার জোগাড় করতাম। ইন্টারনেট ছাড়া সেটাও হয়তো আর সম্ভব হবে না।”