০২:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
শরীর হঠাৎ অবশ হয়ে যাওয়া রোগ জিবিএস, লক্ষণ আর চিকিৎসা কী শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুন লাগার পর ২৭ ঘণ্টায় যা যা ঘটেছিল সন্তান লালনপালনে আসল বিষয় হারিয়ে ফেলছে ‘প্যারেন্টিং’ ট্রেন্ড এক পরিবারের তিন প্রজন্ম ও এক টয়োটা করোলার জীবনযাত্রা উৎপাদন থেকে কৃষি—কানাডার শিল্পখাতে ডিজিটাল রূপান্তরের ঢেউ টয়লেটে স্মার্টফোন ব্যবহার বাড়াচ্ছে হেমোরয়েডের ঝুঁকি ৭৪ বছর বয়সে মারা গেলেন ব্যান্ডের মূল সদস্য ও ‘স্পেসম্যান’ হিসেবে পরিচিত এই সংগীত তারকা প্রতিদিনের ভুল বালিশে লুকিয়ে থাকা ঘাড় ও মেরুদণ্ডের বিপদ ,স্নায়ুর ক্ষতি তুফান এরহুরমান নির্বাচিত উত্তর সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট হামলা-প্রতিহামলার পর ইসরায়েল ও হামাসকে ফের আলোচনার টেবিলে আনতে ওয়াশিংটনের উদ্যোগ

ভারত-ইইউর লক্ষ্য: ট্রাম্পের শুল্ক ঝড়ের মাঝেও বছরশেষে বাণিজ্য চুক্তি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ধারাবাহিক শুল্ক আরোপে বৈশ্বিক বাণিজ্য অস্থিরতার মধ্যে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আবারও আলোচনার টেবিলে বসছে। উভয় পক্ষের লক্ষ্য হলো চলতি বছরের মধ্যেই একটি পরস্পর-সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করা। তবে বিশ্লেষকরা এই সময়সীমাকে “অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী ও রাজনৈতিকভাবে জটিল” বলে মনে করছেন।

আসন্ন বৈঠক

ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অক্টোবরের ৬ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ব্রাসেলসে চুক্তি নিয়ে ১৪তম দফার বৈঠক হবে। সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে “উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি” হয়েছিল বলে তিনি জানান। ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েনের ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে এই বছরের শেষ নাগাদ আলোচনার সমাপ্তির লক্ষ্য ঠিক হয়েছিল।

দীর্ঘ আলোচনার ইতিহাস

২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভারত-ইইউর মধ্যে বহু দফা আলোচনা হলেও নানা জটিলতায় তা বন্ধ হয়ে যায়। ইউরোপ চেয়েছিল ভারত যেন গাড়ি, মদ্যপ পানীয় ও দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর শুল্ক কমায়, অন্যদিকে ভারত চাইছিল দক্ষ কর্মীদের জন্য ভিসা বৃদ্ধি। ২০২২ সালে এক দশক পর আলোচনাটি আবার শুরু হয়।

মার্কিন চাপ

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ান তেল কেনার কারণে ২৫% জরিমানা। এর পাশাপাশি নতুন এইচ-১বি ভিসার ওপর ১ লাখ ডলার ফি বসানো হয়েছে, যা মূলত ভারতের প্রযুক্তি খাতের কর্মীদের জন্য বড় ধাক্কা। এতে দিল্লি-ওয়াশিংটনের সম্পর্ক আরও চাপে পড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব মনে করেন, ভারত-ইইউ আলোচনা “অর্ধেক পথ পেরিয়েছে,” তবে বছরশেষে চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তার মতে, বড় চ্যালেঞ্জ হলো ইউরোপের “কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম” (সিবিএএম), যা ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এর আওতায় ইউরোপে প্রবেশ করা সিমেন্ট, সার, অ্যালুমিনিয়াম, লোহা ও ইস্পাতের মতো পণ্যে কার্বন কর বসবে।

ভিভেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের গবেষক প্রেরণা গান্ধী মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সীমাবদ্ধ নীতির কারণে ইউরোপ ভারতের জন্য “শুল্কের ধাক্কা সামলানোর আসল ভরসা” হয়ে উঠছে। তার মতে, ইউরোপের সঙ্গে চুক্তি হলে ভারত শাস্তিমূলক করের পরিবর্তে সুবিধাজনক প্রবেশাধিকার পেতে পারে।

দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ

ইইউ কমিশনার মার্কোস সেফচোভিচের বক্তব্য অনুযায়ী, ইউরোপ ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৪ সালে উভয়ের মধ্যে ১২০ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের বাণিজ্য হয়েছে। ইউরোপের ৬ হাজারেরও বেশি কোম্পানি ভারতে কার্যক্রম চালাচ্ছে, যা প্রায় ২০ লাখ মানুষকে সরাসরি এবং আরও ৬০ লাখকে পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান দিচ্ছে।

ভারত চায় শ্রমনির্ভর খাত যেমন টেক্সটাইল ও গয়নায় শুল্ক কমাতে। অন্যদিকে ইউরোপ চাইছে গাড়ি ও ওয়াইনের মতো খাতে শুল্ক ছাড়। ফলে উভয় পক্ষের স্বার্থ মেলাতে সময় লাগছে।

বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও অর্থনৈতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও ভারত-ইইউ উভয়েই দ্রুত চুক্তি চায়। ট্রাম্পের শুল্কনীতির ধাক্কা সামলাতে ভারতের জন্য ইউরোপীয় বাজার এখন একটি কৌশলগত বিকল্প হয়ে উঠছে। তবে সময়সীমা মেনে চুক্তি চূড়ান্ত হবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত।

জনপ্রিয় সংবাদ

শরীর হঠাৎ অবশ হয়ে যাওয়া রোগ জিবিএস, লক্ষণ আর চিকিৎসা কী

ভারত-ইইউর লক্ষ্য: ট্রাম্পের শুল্ক ঝড়ের মাঝেও বছরশেষে বাণিজ্য চুক্তি

০২:২০:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ধারাবাহিক শুল্ক আরোপে বৈশ্বিক বাণিজ্য অস্থিরতার মধ্যে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আবারও আলোচনার টেবিলে বসছে। উভয় পক্ষের লক্ষ্য হলো চলতি বছরের মধ্যেই একটি পরস্পর-সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করা। তবে বিশ্লেষকরা এই সময়সীমাকে “অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী ও রাজনৈতিকভাবে জটিল” বলে মনে করছেন।

আসন্ন বৈঠক

ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অক্টোবরের ৬ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ব্রাসেলসে চুক্তি নিয়ে ১৪তম দফার বৈঠক হবে। সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে “উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি” হয়েছিল বলে তিনি জানান। ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েনের ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে এই বছরের শেষ নাগাদ আলোচনার সমাপ্তির লক্ষ্য ঠিক হয়েছিল।

দীর্ঘ আলোচনার ইতিহাস

২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভারত-ইইউর মধ্যে বহু দফা আলোচনা হলেও নানা জটিলতায় তা বন্ধ হয়ে যায়। ইউরোপ চেয়েছিল ভারত যেন গাড়ি, মদ্যপ পানীয় ও দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর শুল্ক কমায়, অন্যদিকে ভারত চাইছিল দক্ষ কর্মীদের জন্য ভিসা বৃদ্ধি। ২০২২ সালে এক দশক পর আলোচনাটি আবার শুরু হয়।

মার্কিন চাপ

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ান তেল কেনার কারণে ২৫% জরিমানা। এর পাশাপাশি নতুন এইচ-১বি ভিসার ওপর ১ লাখ ডলার ফি বসানো হয়েছে, যা মূলত ভারতের প্রযুক্তি খাতের কর্মীদের জন্য বড় ধাক্কা। এতে দিল্লি-ওয়াশিংটনের সম্পর্ক আরও চাপে পড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব মনে করেন, ভারত-ইইউ আলোচনা “অর্ধেক পথ পেরিয়েছে,” তবে বছরশেষে চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তার মতে, বড় চ্যালেঞ্জ হলো ইউরোপের “কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম” (সিবিএএম), যা ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এর আওতায় ইউরোপে প্রবেশ করা সিমেন্ট, সার, অ্যালুমিনিয়াম, লোহা ও ইস্পাতের মতো পণ্যে কার্বন কর বসবে।

ভিভেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের গবেষক প্রেরণা গান্ধী মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সীমাবদ্ধ নীতির কারণে ইউরোপ ভারতের জন্য “শুল্কের ধাক্কা সামলানোর আসল ভরসা” হয়ে উঠছে। তার মতে, ইউরোপের সঙ্গে চুক্তি হলে ভারত শাস্তিমূলক করের পরিবর্তে সুবিধাজনক প্রবেশাধিকার পেতে পারে।

দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ

ইইউ কমিশনার মার্কোস সেফচোভিচের বক্তব্য অনুযায়ী, ইউরোপ ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৪ সালে উভয়ের মধ্যে ১২০ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের বাণিজ্য হয়েছে। ইউরোপের ৬ হাজারেরও বেশি কোম্পানি ভারতে কার্যক্রম চালাচ্ছে, যা প্রায় ২০ লাখ মানুষকে সরাসরি এবং আরও ৬০ লাখকে পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান দিচ্ছে।

ভারত চায় শ্রমনির্ভর খাত যেমন টেক্সটাইল ও গয়নায় শুল্ক কমাতে। অন্যদিকে ইউরোপ চাইছে গাড়ি ও ওয়াইনের মতো খাতে শুল্ক ছাড়। ফলে উভয় পক্ষের স্বার্থ মেলাতে সময় লাগছে।

বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও অর্থনৈতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও ভারত-ইইউ উভয়েই দ্রুত চুক্তি চায়। ট্রাম্পের শুল্কনীতির ধাক্কা সামলাতে ভারতের জন্য ইউরোপীয় বাজার এখন একটি কৌশলগত বিকল্প হয়ে উঠছে। তবে সময়সীমা মেনে চুক্তি চূড়ান্ত হবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত।