টোকিওর ভেনাস সুমো উৎসবে মার্কিন উপস্থিতি
গত সপ্তাহান্তে টোকিওতে শরৎকালীন বাশো চলাকালীন সময়ে, শহরের পশ্চিমে তাচিকাওয়ার তাচিহি অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বের অন্যতম বড় ও বহুমুখী নারী সুমো প্রতিযোগিতা—ভেনাস সুমো উৎসব। এ আয়োজনের অন্তর্ভুক্ত ছিল দ্বিতীয় জাতীয় হাইস্কুল চ্যাম্পিয়নশিপ, দ্বাদশ জাতীয় কলেজিয়েট সুমো চ্যাম্পিয়নশিপ এবং শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আলাদা প্রতিযোগিতা।
এবারের বিশেষ আকর্ষণ ছিল “কুইন অব সুমো” প্রতিযোগিতা, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ও হাইস্কুলের শীর্ষ বিজয়ীরা অংশ নেন। সেখানে যোগ দেন সাম্প্রতিক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্যপদক জেতা মার্কিন দলের তারকা কুস্তিগীর কেলিয়ান বল। দু’বছর আগে এখানেই ইতিহাস গড়েছিলেন তিনি—প্রথম মার্কিন নারী দলকে বিশ্ব আসরে পদক এনে দিয়ে। এরপর ২০২৪ সালে তারা আবারও ব্রোঞ্জ জেতে, আর চলতি বছর থাইল্যান্ডে রৌপ্যপদক অর্জন করে।
কেলিয়ান বলের অভিজ্ঞতা
আন্তর্জাতিক স্তরে একাধিক পদকজয়ী বলের জন্য ভেনাস সুমো উৎসব ছিল আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, “জাপানে নারীদের সুমো সত্যিই বিকশিত হচ্ছে। এখানে ৫ বছর বয়সী শিশু থেকে শুরু করে মায়েরা পর্যন্ত অংশ নিচ্ছে—এটা অন্য কোথাও দেখা যায় না।”
বল মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রেও সুমো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। “সুমো এখন আমেরিকায় দ্রুত বাড়ছে। নতুন ক্রীড়াবিদরা যোগ দিচ্ছে, প্রতিযোগিতা বাড়ছে। যত বেশি প্রতিযোগিতা হবে, ততই আমাদের ভেতরে শক্তি তৈরি হবে, যা বিশ্বমঞ্চে সাফল্যের পথ খুলে দেবে।”
যুক্তরাষ্ট্রে সুমোর বিস্তার
বল জানান, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ৪০টির বেশি ক্লাব রয়েছে এবং জাতীয় প্রতিযোগিতা এত বড় হয়ে উঠেছে যে এখন দুটি দোহ্যোতে (রিং) একসঙ্গে খেলা চালাতে হয়। গত চার-পাঁচ বছরে সুমো যেন বিস্ফোরণের মতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এর ফলে অন্যান্য খেলাধুলা থেকে অভিজ্ঞ অ্যাথলেটরাও যুক্ত হচ্ছেন। যেমন, অ্যাশলি স্মলউড—যিনি মুয়াই থাই থেকে এসেছেন—সাম্প্রতিক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ইউক্রেনের কিংবদন্তি ইভানা বেরেজভস্কাকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ফাইনালে তুলেছিলেন।
ঐতিহাসিক আপসেট ও নতুন দৃষ্টান্ত
স্মলউডের সেই জয় ছিল অবিশ্বাস্য। তার লেগ পিক কৌশল সামাজিক মাধ্যমে সর্বাধিক শেয়ার হওয়া অপেশাদার সুমো ম্যাচগুলোর একটি হয়ে গেছে। বল বলেন, “সে আসলে এই কৌশল আমাকে দুই বছর আগে ব্যবহার করেছিল। তাই যখন জানলাম তার প্রতিদ্বন্দ্বী ইভানা, তখনই আমরা পরিকল্পনা করি এই কৌশল আবার কাজে লাগানো যেতে পারে।”
জয়ের পর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পুরো মার্কিন দল উল্লাসে লাফিয়ে ওঠে। বলের ভাষায়, “সুমোতে আমরা সবসময় সংযমী থাকতে শিখি। কিন্তু ওই মুহূর্তটা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দের।”
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও লক্ষ্য
যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় দেশে সুমো জনপ্রিয় করা সহজ নয়। তবে কেলিয়ান বলসহ অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা মনে করেন, তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করাই এখন প্রধান লক্ষ্য। অনেকে এখনও মুখে মুখেই এ খেলার খবর পায় কিংবা মার্শাল আর্টস ক্লাবের প্রদর্শনীতে দেখে।
বল আশা করছেন, জুডো, রেসলিং বা অন্যান্য যুদ্ধক্রীড়া থেকে আসা খেলোয়াড়দের যোগদানে সুমোর প্রসার আরও দ্রুত হবে। সামনে আজারবাইজানে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ নিয়ে তিনি অনিশ্চিত হলেও তার একটাই লক্ষ্য—“আমি চাই সুমো বেড়ে উঠুক। সেটা হোক আড়ালে থেকে কিংবা পদক জিতে। সুমোকে বড় করাই আমার কাছে আসল।”