নতুন শুল্ক ও প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আরোপিত শুল্ককে আরও বিস্তৃত করেছে। এবার এই শুল্ক প্রযোজ্য হচ্ছে প্রায় ৭২০ ধরনের ডেরিভেটিভ পণ্যের ক্ষেত্রে—যার মধ্যে রয়েছে নির্মাণ যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে চামচ, কাঁটা, ছুরির মতো টেবিলওয়্যার। ফলে জাপানের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান নতুন করে চাপের মুখে পড়েছে।
জটিল হিসাব ও বাড়তি বোঝা
ডেরিভেটিভ পণ্যে শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া জটিল। কোনো পণ্যে ইস্পাত বা অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হলে সেই অংশের ক্রয়মূল্যের ওপর ৫০% শুল্ক ধার্য করা হয়। অন্য অংশের ওপর পড়ে ‘রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ’। উদাহরণস্বরূপ, জাপানি নির্মাণ যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে এ হার ১৫%।
সম্প্রসারণের ধারা
প্রথম ধাপে মার্চ মাসে প্রায় ২৮০ ধরনের পণ্যে শুল্ক চালু হয়। জুনে যোগ হয় ক্যানজাত বিয়ার ও বড় গৃহস্থালী সামগ্রী। আগস্টে আরও ৪২০টির বেশি পণ্য যুক্ত হয়—এর মধ্যে নির্মাণ যন্ত্র, লনমোয়ার, মেশিন টুলস এবং খাবার খাওয়ার সরঞ্জামও ছিল।
মার্কিন বাণিজ্য দফতর বছরে তিনবার নতুন আবেদন গ্রহণ করে। আগস্টে যুক্ত হওয়া ৪২০টির বেশি পণ্য মে মাসের আবেদনের ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত হয়েছে। আগামী আবেদনের শেষ সময়সীমা সোমবার।
জাপানি কোম্পানির প্রতিক্রিয়া
এই শুল্কের কারণে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ বেড়ে যাচ্ছে। মাকিনো মিলিং মেশিন জানিয়েছে, তাদের মেশিনিং সেন্টার যুক্ত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। লনমোয়ার রপ্তানিকারক ইয়ামাবিকো বলছে, তারা আসলে এখনো জানে না কতটা ক্ষতির মুখে পড়বে, কারণ শুল্কের হিসাব কীভাবে হবে তা স্পষ্ট নয়।
এক বল বেয়ারিং প্রস্তুতকারক জানিয়েছে, কোন কোন যন্ত্রাংশে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের শুল্ক পড়বে তা পরিষ্কার না হলে খরচ সামলানো কঠিন হবে।
উদ্দেশ্য ও কৌশল পরিবর্তন
প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনে শুল্কের লক্ষ্য ছিল কোম্পানিগুলোকে ফাঁকি রোধ করা। যেমন ইস্পাতকে স্ক্রু বানিয়ে রপ্তানি করলে সরাসরি শুল্ক এড়ানো যেত। তবে দ্বিতীয় প্রশাসনে দেখা যাচ্ছে, শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শিল্পকে রক্ষার হাতিয়ার হয়ে উঠছে। কারণ এখন পণ্য যুক্ত করা হচ্ছে মার্কিন শিল্পসংগঠনগুলোর অনুরোধে।
জাপানের পদক্ষেপ
জাপান কনস্ট্রাকশন ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি টোকিও সরকারকে চিঠি দিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনার অনুরোধ করেছে, যাতে নির্মাণ যন্ত্রপাতিকে শুল্কের বাইরে রাখা হয়।
জাপানি কোম্পানিগুলো ২০২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৮০০ বিলিয়ন ইয়েনের বেশি নির্মাণ ও খনির যন্ত্রপাতি রপ্তানি করেছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের মোট রপ্তানির ৪%। কিন্তু আগস্টে এসব রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ২৬% কমে গেছে।
স্থানীয় শিল্পের উদ্বেগ
নিগাতার সুবামে সানজো এলাকা, যেটি টেবিলওয়্যার উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত, সেখানে শকওয়েভ ছড়িয়ে পড়েছে। ইয়ামাজাকি কিনজোকু কোগিওর ২০-৩০% বিক্রি যুক্তরাষ্ট্রে হয়। কোম্পানিটি আশঙ্কা করছে, দাম বাড়ালে ভোক্তারা হয়তো কেনাকাটা কমিয়ে দেবে।
কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট শুজি ইয়ামাজাকি বলেছেন, “যদি ভোক্তারা দাম বাড়ানো মেনে না নেয়, তাহলে ট্রাম্পের মেয়াদকালে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি স্থগিত রাখার বিষয়টি ভাবতে হবে।”
অন্য এক কাঁটাচামচ নির্মাতা আসাহি উদ্বেগ জানিয়েছে যে তাদের অর্ডারও কমে যেতে পারে।
ছোট প্রতিষ্ঠানের চ্যালেঞ্জ
ছোট ও মাঝারি কোম্পানিগুলো প্রায়ই সঠিক তথ্যের অভাবে সমস্যায় পড়ছে। এ কারণে স্থানীয় ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো আগামী মাসে টোকিওর অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে।
ভবিষ্যৎ ঝুঁকি
জুলাইয়ে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র ১৫% রিসিপ্রোকাল ট্যারিফে একমত হয়েছিল, কিন্তু ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের শুল্ক সেই কাঠামো পাল্টে দিয়েছে। এখনো নতুন নতুন পণ্য যুক্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
মেটি মন্ত্রী ইয়োজি মুতো ১৯ সেপ্টেম্বর বলেছেন, “আমরা শিল্পগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে এর প্রভাব নির্ধারণের চেষ্টা করব।”
নতুন খাতের দিকে নজর
যেসব পণ্যে ইস্পাত বা অ্যালুমিনিয়াম নেই, তারাও নিরাপদ নয়। ট্রাম্প প্রশাসন সেক্টরভিত্তিক শুল্কের কথা ভাবছে, যেমন সেমিকন্ডাক্টর বা কাঠ। কাঠে শুল্ক বসানো হলে টেবিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাঠজাত পণ্যই শুল্কের আওতায় পড়তে পারে।
সম্প্রতি প্রশাসন মেশিন টুলস, শিল্প রোবট ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে সেক্টরভিত্তিক শুল্ক বা আমদানি সীমা প্রয়োজন কি না, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। শিল্পগুলো এখন শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় আছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।
আইনি প্রশ্ন
রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ সাংবিধানিক কি না, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আদালতে মামলা চলছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো বাতিল হলেও প্রশাসন সেক্টরভিত্তিক শুল্ক বাড়িয়ে ডেরিভেটিভ পণ্যের তালিকা বিস্তৃত করতে পারবে।
এই জটিল পরিস্থিতি জাপানি শিল্পকে বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। ক্রমবর্ধমান শুল্ক তাদের রপ্তানি, কৌশল এবং টিকে থাকার সক্ষমতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।