১১:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

নীল জে ও সবুজ জে-এর মিলনে জন্ম নিলো বিস্ময়কর পাখি

গবেষণায় নতুন আবিষ্কার

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে প্রথমবারের মতো নীল জে (blue jay) ও সবুজ জে (green jay) মিলনের ফলে এক বিরল প্রজাতির সংকর পাখি জন্ম নিয়েছে। এটি বন্যপ্রাণীর জগতে আগে কখনো দেখা যায়নি। গবেষকরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও আবাসভূমির বিস্তারের কারণে এই দুই প্রজাতির পাখি একই এলাকায় এসে মিলিত হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ব্রায়ান স্টোকস জানান, এই ঘটনাটি সম্ভবত প্রথম যেখানে দুটি ভিন্ন প্রজাতির কশেরুকা প্রাণী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিস্তৃত এলাকায় মিলিত হয়ে নতুন প্রজাতির জন্ম দিয়েছে। সবুজ জে সাধারণত মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, মেক্সিকো এবং দক্ষিণ টেক্সাসের কিছু অংশে পাওয়া যায়। কিন্তু ২০০০ সাল থেকে এই পাখি শত শত কিলোমিটার উত্তরে, রিও গ্র্যান্ড থেকে সান অ্যান্টোনিও পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।

পাখি পর্যবেক্ষকদের নজরে

স্থানীয় পাখিপ্রেমীরা দ্রুতই এ পরিবর্তন লক্ষ্য করেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি শেয়ার করতে শুরু করেন। গবেষক টিমোথি কিট ২০১৮ সাল থেকে এ বিস্তৃতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, সবুজ জে মাঠে খুব সহজেই আলাদা করে চেনা যায়।

The mystery bird was observed following a flock of blue jays, making similar calls. But it also produced the clicks and rattling vocalizations of a green jay.

অস্বাভাবিক পাখির খোঁজ

২০২৩ সালের মে মাসে স্টোকস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘টেক্সবার্ডস’ নামের ফেসবুক গ্রুপে এক নারীর পোস্টে এক অদ্ভুত দেখতে জে-এর ছবি পান। ছবিটি দেখে তিনি ও কিট দ্রুত সেখানে যান এবং পাখিটিকে ধরার চেষ্টা করেন। কয়েকবার চেষ্টার পর তারা পাখিটিকে ধরে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন।

সংকর পাখির বৈশিষ্ট্য

পরীক্ষায় দেখা যায়, পাখিটি নীল জে ও সবুজ জে উভয়ের বৈশিষ্ট্য বহন করছে। এর পিঠ ও লেজে নীল রঙের পালক এবং ডানাতে সাদা দাগ ছিল, যা নীল জে-এর মতো। তবে মাথায় নীল জে-এর মতো কাঁটা মুকুট ছিল না। চোখের ওপর সবুজ জে-এর মতো বিশেষ দাগ ছিল। এ পাখি নীল জে-এর সঙ্গে চলাফেরা করলেও সবুজ জে-এর মতো শব্দও করছিল।

জেনেটিক বিশ্লেষণের ফলাফল

ডিএনএ বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া যায়, এটি একটি পুরুষ নীল জে ও স্ত্রী সবুজ জে-এর মিলনে জন্ম নেয়া সন্তান। গবেষকরা জানান, এর আগে শুধু ১৯৬০-এর দশকে বন্দিদশায় এমন একটি সংকর পাখির জন্ম হয়েছিল, যার নমুনা এখনও টেক্সাসের এক জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

 

Climate change results in rare hybrid bird between green jay and blue jay: Study - ABC News

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

বাফালো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক গ্যাভিন এম. লেইটন বলেন, সাধারণত সংকর জন্ম ভুল পরিচয়ের কারণে ঘটে, যখন ভিন্ন প্রজাতির পাখি একে অপরকে ভুল করে মিলন করে। কিন্তু নীল জে ও সবুজ জে এত ভিন্ন চেহারার হওয়ায় এমনটা হওয়ার কথা নয়। তিনি একে ‘জীববিজ্ঞানের অপ্রত্যাশিত বাঁক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

জলবায়ু পরিবর্তন ও আবাসভূমির পরিবর্তন

গবেষকরা মনে করছেন, টেক্সাসে রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সবুজ জে উত্তরের দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। অন্যদিকে, নীল জে পশ্চিম দিকে বিস্তার লাভ করছে, সম্ভবত শহরতলির বাড়িঘর আর বারান্দার খাবার সরবরাহের কারণে। সান অ্যান্টোনিও এলাকায় এ দুটি প্রজাতির পরিসর মিলে গেছে এবং সেখানেই সংকর পাখির জন্ম ঘটেছে।

ভবিষ্যতের প্রশ্ন

গবেষক কিট বলেন, লক্ষ লক্ষ বছর আলাদা থাকার পর এই প্রজাতিগুলো এখন মুখোমুখি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের আবাসভূমি পরিবর্তন এর প্রধান কারণ। ভবিষ্যতে তারা কীভাবে সহাবস্থান করবে, একসঙ্গে থাকবে নাকি প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে—তা সময়ই বলে দেবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার গানের জগতে ফিরে আসা: ‘লাস্ট ক্রিসমাস’ ডেসি ভার্সন নিয়ে নেটিজেনদের কটাক্ষ

নীল জে ও সবুজ জে-এর মিলনে জন্ম নিলো বিস্ময়কর পাখি

০৪:০০:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

গবেষণায় নতুন আবিষ্কার

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে প্রথমবারের মতো নীল জে (blue jay) ও সবুজ জে (green jay) মিলনের ফলে এক বিরল প্রজাতির সংকর পাখি জন্ম নিয়েছে। এটি বন্যপ্রাণীর জগতে আগে কখনো দেখা যায়নি। গবেষকরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও আবাসভূমির বিস্তারের কারণে এই দুই প্রজাতির পাখি একই এলাকায় এসে মিলিত হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ব্রায়ান স্টোকস জানান, এই ঘটনাটি সম্ভবত প্রথম যেখানে দুটি ভিন্ন প্রজাতির কশেরুকা প্রাণী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিস্তৃত এলাকায় মিলিত হয়ে নতুন প্রজাতির জন্ম দিয়েছে। সবুজ জে সাধারণত মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, মেক্সিকো এবং দক্ষিণ টেক্সাসের কিছু অংশে পাওয়া যায়। কিন্তু ২০০০ সাল থেকে এই পাখি শত শত কিলোমিটার উত্তরে, রিও গ্র্যান্ড থেকে সান অ্যান্টোনিও পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।

পাখি পর্যবেক্ষকদের নজরে

স্থানীয় পাখিপ্রেমীরা দ্রুতই এ পরিবর্তন লক্ষ্য করেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি শেয়ার করতে শুরু করেন। গবেষক টিমোথি কিট ২০১৮ সাল থেকে এ বিস্তৃতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, সবুজ জে মাঠে খুব সহজেই আলাদা করে চেনা যায়।

The mystery bird was observed following a flock of blue jays, making similar calls. But it also produced the clicks and rattling vocalizations of a green jay.

অস্বাভাবিক পাখির খোঁজ

২০২৩ সালের মে মাসে স্টোকস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘টেক্সবার্ডস’ নামের ফেসবুক গ্রুপে এক নারীর পোস্টে এক অদ্ভুত দেখতে জে-এর ছবি পান। ছবিটি দেখে তিনি ও কিট দ্রুত সেখানে যান এবং পাখিটিকে ধরার চেষ্টা করেন। কয়েকবার চেষ্টার পর তারা পাখিটিকে ধরে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন।

সংকর পাখির বৈশিষ্ট্য

পরীক্ষায় দেখা যায়, পাখিটি নীল জে ও সবুজ জে উভয়ের বৈশিষ্ট্য বহন করছে। এর পিঠ ও লেজে নীল রঙের পালক এবং ডানাতে সাদা দাগ ছিল, যা নীল জে-এর মতো। তবে মাথায় নীল জে-এর মতো কাঁটা মুকুট ছিল না। চোখের ওপর সবুজ জে-এর মতো বিশেষ দাগ ছিল। এ পাখি নীল জে-এর সঙ্গে চলাফেরা করলেও সবুজ জে-এর মতো শব্দও করছিল।

জেনেটিক বিশ্লেষণের ফলাফল

ডিএনএ বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া যায়, এটি একটি পুরুষ নীল জে ও স্ত্রী সবুজ জে-এর মিলনে জন্ম নেয়া সন্তান। গবেষকরা জানান, এর আগে শুধু ১৯৬০-এর দশকে বন্দিদশায় এমন একটি সংকর পাখির জন্ম হয়েছিল, যার নমুনা এখনও টেক্সাসের এক জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

 

Climate change results in rare hybrid bird between green jay and blue jay: Study - ABC News

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

বাফালো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক গ্যাভিন এম. লেইটন বলেন, সাধারণত সংকর জন্ম ভুল পরিচয়ের কারণে ঘটে, যখন ভিন্ন প্রজাতির পাখি একে অপরকে ভুল করে মিলন করে। কিন্তু নীল জে ও সবুজ জে এত ভিন্ন চেহারার হওয়ায় এমনটা হওয়ার কথা নয়। তিনি একে ‘জীববিজ্ঞানের অপ্রত্যাশিত বাঁক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

জলবায়ু পরিবর্তন ও আবাসভূমির পরিবর্তন

গবেষকরা মনে করছেন, টেক্সাসে রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সবুজ জে উত্তরের দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। অন্যদিকে, নীল জে পশ্চিম দিকে বিস্তার লাভ করছে, সম্ভবত শহরতলির বাড়িঘর আর বারান্দার খাবার সরবরাহের কারণে। সান অ্যান্টোনিও এলাকায় এ দুটি প্রজাতির পরিসর মিলে গেছে এবং সেখানেই সংকর পাখির জন্ম ঘটেছে।

ভবিষ্যতের প্রশ্ন

গবেষক কিট বলেন, লক্ষ লক্ষ বছর আলাদা থাকার পর এই প্রজাতিগুলো এখন মুখোমুখি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের আবাসভূমি পরিবর্তন এর প্রধান কারণ। ভবিষ্যতে তারা কীভাবে সহাবস্থান করবে, একসঙ্গে থাকবে নাকি প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে—তা সময়ই বলে দেবে।