ডেটা সেন্টারের উত্থান ও বিনিয়োগের ঢল
আমেরিকার টেক্সাসের অ্যাবিলিন শহরে ওপেনএআই, সফটব্যাংক ও ওরাকলের যৌথ প্রকল্প ‘স্টারগেট’-এর নির্মাণ চলছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালাতে যে বিপুল ডেটা সেন্টারের প্রয়োজন, সেখানে ইতিমধ্যেই ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হচ্ছে। ওয়াল স্ট্রিট ঘনিষ্ঠভাবে লক্ষ্য করছে এই খাতকে, কারণ এটি প্রযুক্তি বাজারের স্বাস্থ্য যাচাইয়ের সূচক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এআই বাজারের প্রভাবে শেয়ারবাজারে বড় উত্থান-পতনও দেখা যাচ্ছে। গত মাসে এনভিডিয়া জানিয়েছিল, তাদের সামগ্রিক আয় শক্তিশালী হলেও ডেটা সেন্টারে সরঞ্জাম বিক্রি বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি, ফলে শেয়ারের দাম ৩ শতাংশ কমে যায়। বিপরীতে, এই মাসে ওরাকলের শেয়ারের দাম ৪৩ শতাংশ বেড়ে যায় — যা গত ৩০ বছরে সর্বোচ্চ একদিনের উল্লম্ফন। কারণ ওপেনএআই ঘোষণা দিয়েছিল যে তারা ওরাকল থেকে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের কম্পিউটিং ক্ষমতা কিনবে।
ডেটা সেন্টার চাহিদা ও সম্ভাব্য বুদবুদ
ম্যাককিন্সির এক গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ডেটা সেন্টারের চাহিদা ২০৩০ সালের মধ্যে তিনগুণ হতে পারে। এটি পূরণ করতে প্রায় ৭ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। ওপেনএআই, সফটব্যাংক ও ওরাকল ইতিমধ্যে ২০২৯ সালের মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা জানিয়েছে। মেটা ও অ্যালফাবেটও (গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান) বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে।
তবে প্রশ্ন উঠছে, এত বিনিয়োগ আসলেই কতটা লাভজনক হবে। আলিবাবা গ্রুপের চেয়ারম্যান জো সাই সতর্ক করে বলেছেন, “আমি কোনো ধরনের বুদবুদের সূচনা দেখতে পাচ্ছি।”
ঋণ নির্ভরতা ও ঝুঁকি
নতুন ডেটা সেন্টার প্রকল্পে অর্থ জোগাড় করতে এখন গঠিত অর্থায়ন (structured finance) ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসেই এই খাতে ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি বন্ড ইস্যু হয়েছে। মেটা, উদাহরণস্বরূপ, পিমকোর সহায়তায় ২৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বন্ড ইস্যু করেছে।
কিন্তু এতে বড় ধরনের ঋণ ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। মুডির বিশেষজ্ঞ জন মেদিনা বলেন, “ভাড়ার মেয়াদ শেষ হলে ঋণ কীভাবে শোধ হবে, সেটাই এখন মূল প্রশ্ন। প্রযুক্তি বাজার তখন কেমন থাকবে, তার নিশ্চয়তা নেই।”
প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও খরচের চ্যালেঞ্জ
এআই যত বাড়ছে, ততই কম্পিউটিং শক্তির প্রয়োজন বাড়ছে — তবে চীনের ডিপসিক (DeepSeek) নামের কোম্পানি দেখিয়েছে, কম শক্তি ব্যবহার করেও নির্ভরযোগ্য এআই আউটপুট পাওয়া সম্ভব। যদি প্রযুক্তি আরও দক্ষ হয়ে ওঠে, তবে ডেটা সেন্টারের চাহিদা কমতে পারে, আর এতে বিনিয়োগের মুনাফা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠবে।
মাইক্রোসফট মার্চে ১ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়। ইউবিএস জানায়, তাদের প্রায় ১৭৫ বিলিয়ন ডলারের লিজ-জনিত দায় থাকায় এটি অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতির ঝুঁকি হয়ে উঠেছিল। বিনিয়োগকারী হ্যারিস কাপারম্যানও সতর্ক করে বলেছেন, ডেটা সেন্টার দ্রুত পুরোনো হয়ে যায় এবং অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এত বেশি যে লাভ পাওয়া কঠিন।
স্থানীয় অর্থনীতি ও পরিবেশগত চাপ
শুধু সিলিকন ভ্যালিই নয়, মার্কিন অঙ্গরাজ্যগুলিও কর ছাড় দিয়ে ডেটা সেন্টার আকৃষ্ট করছে। অন্তত ১০টি রাজ্য বছরে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি কর রাজস্ব হারিয়েছে। তবে আসল প্রভাব অনেক সময় প্রকাশ করা হয় না।
একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও পানির ওপর বিরাট চাপ পড়ছে। ফিনিক্সে আগামী কয়েক বছরে ডেটা সেন্টারের বিদ্যুৎ ব্যবহার ৫০০ শতাংশ বাড়তে পারে। ভার্জিনিয়ায় ডিমান্ড মেটাতে ৪০ গিগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে। একটি ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ডেটা সেন্টার প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ লিটার পানি ব্যবহার করে, যা ৬,৫০০ পরিবারের পানির চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। ফলে আশেপাশের এলাকায় পানির সংকট আরও বাড়ছে।