চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পার্বত্য নগরী চোংকিংকে এখন অনেকেই বাস্তবের সাইবারপাঙ্ক শহর বলে আখ্যা দিচ্ছেন। অদ্ভুত স্থাপত্যশৈলী, নীয়ন আলোয় সাজানো আকাশরেখা এবং আধুনিক ও প্রাচীনের সংঘাত—সব মিলিয়ে এই শহর পর্যটকদের চোখে ধাঁধা লাগানো দৃশ্য উপহার দিচ্ছে।
বিজ্ঞানকল্প কাহিনির মতো এক শহর
চোংকিংয়ের বিশেষ আকর্ষণ হলো এর অস্বাভাবিক স্থাপত্য। কোনো উঁচু ভবনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ট্রেনলাইন, আর কোনো চত্বর আসলে পাহাড়ের কিনারায় ২২ তলা ওপরে থাকা একটি ভবনের ছাদ। রাতে চারপাশ নীয়ন আলোয় ঝলমল করলে দৃশ্যটি যেন সরাসরি “ব্লেড রানার” চলচ্চিত্র থেকে উঠে এসেছে।
এই দৃশ্য দেখতেই যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে বেভ ও জন মার্টিনের মতো পর্যটকরা আসছেন। ৬২ বছর বয়সী বেভ বলেন, “এটি চোখের জন্য এক ভোজসভার মতো ছিল।”
ইতিহাস থেকে জনপ্রিয়তায়
দীর্ঘদিন চোংকিং মূলত ইতিহাসপ্রেমীদের কাছে পরিচিত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে এটি ছিল চীনা জাতীয়তাবাদীদের রাজধানী। এছাড়া এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর একটি, যেখানে প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষের বসবাস।

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলো এর চেহারা পাল্টে দেয়। অদ্ভুত স্থাপত্য আর অপ্রচলিত নগরচিত্র দ্রুত দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করে।
পর্যটনের উত্থান
২০২৪ সালে চোংকিং-এ রাত কাটানো পর্যটকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ কোটি, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বিদেশি দর্শনার্থীর সংখ্যা রেকর্ড ছুঁয়েছে, যদিও মোট সংখ্যা মাত্র ৩ লাখ ৩০ হাজার—তাই এখনো একে ‘লুকানো রত্ন’ বলার সুযোগ আছে।
তবে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট খুবই কম, ফলে বেশিরভাগ পর্যটককে বেইজিং, সাংহাই বা অন্য কোনো শহর ঘুরে যেতে হয়।
সামাজিক মাধ্যমে পরিচিতি
চোংকিং-এর জনপ্রিয়তা বাড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছে সামাজিক মাধ্যম। যেমন স্থানীয় বাসিন্দা রায়ান চেন, যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের নকল করে শহরের বিখ্যাত মশলাদার হটপট খাওয়ার ভিডিও বানিয়ে ভাইরাল হয়েছেন। আবার ট্যুর গাইড জ্যাকসন লু একটি ভিডিওতে ২০ তলা উঁচু সেতুতে ঘুরপাক খাওয়া বাসযাত্রার দৃশ্য তুলে ধরেন, যা টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে ৫ কোটি ৬০ লাখ বার দেখা হয়েছে।

লু বলেন, বেশিরভাগ সুউচ্চ ভবন তাঁর জীবদ্দশাতেই তৈরি হয়েছে, তবে শহরের বিশেষত্ব হলো এই নতুন ভবনগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে আছে ১৯৮০-এর দশকের পুরনো অ্যাপার্টমেন্ট ভবন, যেগুলোতে এখনো লোহার খাঁচায় কাপড় শুকানো হয়। তাঁর স্বপ্ন — চোংকিং যেন কোনো টম ক্রুজের অ্যাকশন ছবির পটভূমি হয়।
বিদেশিদের অভিজ্ঞতা
যুক্তরাজ্যের গবেষক ফেলিক্স ডোনাল্ডসন ভ্রমণ ভিসা নিয়ে চোংকিং এসে একটি নৌবিহারে অংশ নেন। তিনি জানান, এখন চীন ঘোরা আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়েছে। অনুবাদ ও ডিজিটাল পেমেন্ট অ্যাপ বিদেশিদের জন্য বড় সহায়ক। একমাত্র অসুবিধা ছিল স্কোয়াট-টয়লেট।
ফ্লোরিডার দম্পতি মার্টিনরা তাদের ভ্রমণের ভিডিও ইউটিউবে প্রকাশ করেন, যেখানে দেখা যায় নীয়ন আলোয় সাজানো খাবারের রাস্তা এবং ইয়াংজি নদীর ওপর দিয়ে চলা আকাশ ট্রাম। বেভের মন্তব্য, “চোংকিং ছিল এক অজানা কিন্তু চমকপ্রদ শহর, যেখানে অবশ্যই ভ্রমণ করা উচিত।”
পুরনো-নতুনের সংঘাতেই আসল রূপ
চোংকিং আসলে এক অনন্য সংমিশ্রণ। সুউচ্চ আধুনিক ভবনের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে পুরনো অ্যাপার্টমেন্ট, আর পাহাড় ও নদী বেষ্টিত এই নগরীর রূপ বদলে যাচ্ছে দিন দিন। ভবিষ্যতের শহরের আবহে বাস্তবের চোংকিং এখন সারা বিশ্বের পর্যটকদের কৌতূহলের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















