ঘটনাস্থল ও উদ্ধার অভিযান
কক্সবাজারের টেকনাফে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে বন্দি রাখা নারী-শিশুসহ ২১ জনকে উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের যৌথ দল।
বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের করাচিপাড়া গভীর এলাকা থেকে তাদের মুক্ত করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উদ্ধার হওয়া অধিকাংশই ছিলেন দিনমজুর পরিবারের সদস্য। কাজের সন্ধানে তারা রাজধানী বা বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এই সুযোগে পাচারকারীরা তাদের প্রলোভনে ফেলে বন্দি করে রাখে।
অভিযানের পটভূমি
কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কমান্ডার সিয়াম উল হক জানিয়েছেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
বুধবার রাত ১১টার দিকে যৌথ বাহিনী পাচারকারীদের গোপন আস্তানায় হানা দেয় এবং সেখান থেকে নারী ও শিশুসহ ২১ জনকে উদ্ধার করে।

পাচারকারীদের পালিয়ে যাওয়া
অভিযানের সময় যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারকারীরা পালিয়ে যায়। ফলে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, পাচারকারীদের গ্রেফতারে নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পূর্বের ঘটনা ও পাচারকারীদের ফাঁদ
টেকনাফ ও উখিয়া উপকূল দীর্ঘদিন ধরেই মানবপাচারকারীদের সক্রিয় এলাকাগুলোর একটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিকবার নারী, শিশু ও তরুণ-তরুণীদের মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে আটকে রাখার ঘটনা ঘটেছে।
- কয়েক মাস আগে একইভাবে ১৫ জনকে একটি ট্রলারঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেখান থেকেও উদ্ধার করেছিল কোস্ট গার্ড।
- গত বছর কক্সবাজার শহর থেকে ১০ তরুণীকে কাজের সুযোগের নামে প্রলুব্ধ করে টেকনাফ উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়।
পাচারকারীরা সাধারণত দরিদ্র পরিবারকে লক্ষ্য করে থাকে। তারা বিদেশে উচ্চ আয়ের চাকরির লোভ দেখায় এবং শুরুতে স্বল্প টাকার অগ্রিম নিয়ে ভুক্তভোগীদের টেকনাফ বা মহেশখালী এলাকার গোপন আস্তানায় আটকে রাখে। এরপর সুযোগমতো নৌপথে তাদের সমুদ্রপথে পাঠানোর চেষ্টা করে। এ সময় ভুক্তভোগীরা মানসিক ও শারীরিকভাবে হয়রানির শিকার হন।

ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা
উদ্ধার হওয়া এক তরুণ জানায়, তাকে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। পরে কয়েকজন দালালের মাধ্যমে টেকনাফে আনা হয়। গোপন আস্তানায় কয়েকদিন ধরে না খাইয়ে রাখা হয় এবং বিদেশ পাঠানোর নাম করে ভয় দেখানো হয়।
অন্যদিকে উদ্ধার হওয়া এক নারী বলেন, সন্তানকে নিয়ে মালয়েশিয়ায় যাবেন—এমন স্বপ্ন দেখিয়েছিল পাচারকারীরা। কিন্তু বাস্তবে তারা অন্ধকার ঘরে বন্দি থেকে সারাদিন ভয়ে কেঁপে কেঁপে ছিলেন।
তাদের সঙ্গে থাকা শিশুরাও আতঙ্কে কেঁদে ওঠে, কিন্তু পাচারকারীরা ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখত।
ভুক্তভোগীদের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা পরিবারের কাছে যোগাযোগ করতে পারেননি। কেউ কেউ ভেবেছিলেন, হয়তো আর কখনো বেঁচে ফিরতে পারবেন না।
উদ্দেশ্য ও হুমকি
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া ২১ জনকেও নৌপথে মালয়েশিয়া পাচারের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। অপহরণকারীরা তাদের গোপন আস্তানায় আটকে রেখেছিল, যা মানবপাচারের একটি বড় চক্রের ইঙ্গিত দেয়।

ভবিষ্যৎ ব্যবস্থা
এই অভিযানে ২১ জন মানুষ মুক্ত হলেও পাচারকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, মানবপাচার প্রতিরোধে তাদের অভিযান চলমান থাকবে। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন পাচারকারীদের নতুন কৌশল শনাক্ত করা যায় এবং আগেভাগে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















