কারণ ও চলমান প্রবণতা
গত ১২ মাসে সুইজারল্যান্ডের হিমবাহগুলোতে বরফের মোট ভলিউম থেকে প্রায় ৩% ক্ষয় হয়েছে—এ তথ্য দিয়েছে জিএলএমওএস ও সুইস ক্রাইওস্ফিয়ার কমিশন। বিশেষ করে গত শীতে অস্বাভাবিক কম তুষারপাত এবং জুন মাসের তীব্র তাপপ্রবাহ ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করেছে। ২০১৫ সালের পর থেকে প্রায় এক-চতুর্থাংশ বরফ উধাও—এটাই বড় সংকেত যে গলন এখন দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা, এককালীন ব্যতিক্রম নয়। নিচু উচ্চতা—অর্থাৎ ৩,০০০ মিটারের নিচে—হিমবাহগুলো দ্রুত পাতলা হচ্ছে; উষ্ণ বাতাসের সঙ্গে ‘রেইন-অন-স্নো’ ঘটনার ফলে বরফের উপরিভাগের প্রতিরক্ষামূলক স্তর ধুয়ে যাচ্ছে। গবেষকেরা রোন হিমবাহে পরিমাপ করে দেখেছেন, কিছু স্টেশনে গড় পুরুত্ব এক বছরে প্রায় ১.৫ মিটার কমেছে, যা স্থানভেদে আরও বেশি হতে পারে। ছোট ও বিচ্ছিন্ন হিমবাহগুলোর সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে; অনেকগুলো কার্যত বিলীন। এমনকি চলতি বছরে ক্ষয় ২০২২ বা ২০২৩ সালের রেকর্ড-ভাঙা মাত্রায় না পৌঁছালেও ধারাবাহিক ‘নেগেটিভ ব্যালেন্স’ সুইস আল্পসের বরফভিত্তিক জলসংরক্ষণ সক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এতে আগের মতো শীতের তুষার বসন্ত-গ্রীষ্ম জুড়ে ধীরে ধীরে গলে যে ‘স্বাভাবিক’ জোগান দিত, তা আর স্থিতিশীল থাকছে না। ফলে নদীর প্রবাহ আগেভাগে চূড়ায় উঠছে, পরে শুষ্ক মৌসুমে কমে যাচ্ছে; দীর্ঘমেয়াদে এটি কৃষি ও শিল্প—দুই ক্ষেত্রেই চাপ বাড়াচ্ছে। জলবায়ু উষ্ণায়ন থেমে গেলেও, ক্রাইওস্ফিয়ারের প্রতিক্রিয়া বিলম্বিত হয়; তাই ক্ষয় কয়েক বছর চলতেই পারে—এ সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জলসম্পদ, বিদ্যুৎ, পর্যটন ও নীতিগত করণীয়
হিমবাহ-নির্ভর নদীপথে পানি ব্যবস্থাপনা এখন নতুন সমীকরণে পড়েছে। আগাম গলন ও দেরিতে শুষ্কতার ফলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর রিজার্ভয়ার অপারেশন—কখন টারবাইন চালু-বন্ধ হবে—তা পুনরায় ক্যালিব্রেট করতে হবে। রাইন ও পো অববাহিকায় শিল্পক্ষেত্রে রিভার-কুলিংয়ের জন্য নির্ভরযোগ্য প্রবাহ না পেলে উৎপাদন খরচ বাড়তে পারে। পাহাড়ি উপকাঠামো—সড়ক, সেতু, টানেল—পারমাফ্রস্ট দুর্বলতায় নতুন ঝুঁকির মুখে; পাথরধস ও ভূমিধসের সম্ভাবনা বাড়ছে, যেগুলো পর্যটন ও ট্রেকিং রুটকে বারবার পুনর্নিধারণে বাধ্য করছে। গ্রীষ্মকালীন স্কি এলাকাগুলো ছোট হচ্ছে; বহু রিসোর্ট বিকল্প মৌসুমী আকর্ষণ—হাইকিং, সাইক্লিং, হ্রদ পর্যটন—জোরদার করছে। নীতিগতভাবে এখনই কিছু পদক্ষেপ জরুরি: উচ্চঝুঁকির ঢালে সুরক্ষা ও স্ট্যাবিলাইজেশন, পরিবহন করিডোরে রক-ফল নেট ও সতর্কতা সেন্সর বসানো, খরা বছরে আন্তঃবেসিন জল-বণ্টনের নিয়ম হালনাগাদ, এবং বন্যা-ধাক্কা শোষণকারী ইকোসিস্টেম—উপত্যকার জলাভূমি, বাফার-ফরেস্ট—রক্ষা করা। শহরাঞ্চলে গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় ‘কুল রুফ’ ও জলাধার-সংরক্ষণও প্রাসঙ্গিক, কারণ উজানের অনিশ্চয়তা নিম্নভাগের পানিসেবায় রেশ টানে। গবেষকেরা বলছেন, নির্গমন দ্রুত কমানোই মূল, তবে অভিযোজনের জানালাও দ্রুত বন্ধ হচ্ছে—আজকের বিনিয়োগ কালকের ক্ষতি কমাতে পারে। আल्पস বহুদিন ধরেই বিশ্ব পর্বতাঞ্চলের বারোমিটার; এখানে যা দেখা যাচ্ছে, ককেশাস থেকে আন্দেজ—অন্য অঞ্চলগুলোও সময়ের ব্যবধানে একই ধাঁচে তা অনুভব করবে। তাই বিজ্ঞান, স্থানীয় জ্ঞান ও বাস্তব অর্থনীতির সমন্বয়ে নতুন ‘জল-ব্লুপ্রিন্ট’ বানানোই সামনে সবচেয়ে বড় কাজ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















