মেটার নতুন এআই গ্লাসেস উন্মোচন
ক্যালিফোর্নিয়ার বার্লিংগেমে মেটা তাদের প্রথম এআই গ্লাসেস ‘মেটা রে-বেন ডিসপ্লে’ বাজারে আনে। ৭৯৯ ডলারের এই ডিভাইস কিনতে দোকানের বাইরে ভিড় জমে। যদিও ১৭ সেপ্টেম্বর মেটা কনেক্ট অনুষ্ঠানে সিইও মার্ক জাকারবার্গের লাইভ ডেমো ব্যর্থ হয়েছিল, তবুও ক্রেতাদের আগ্রহ কমেনি।
এই চশমায় ছোট স্বচ্ছ ডিসপ্লে রয়েছে, যেখানে মেসেজ ও ম্যাপ দেখা যায়। হাতের হালকা নড়াচড়ায় মেসেজ লেখা বা কল ধরা যায়। ব্যবহারকারীরা মেটার এআই অ্যাসিস্ট্যান্টের সঙ্গেও সরাসরি কথা বলতে পারেন। তবে ডিভাইসটি নিয়ন্ত্রণে এখনও কিছু জটিলতা রয়ে গেছে।
প্রযুক্তি জগতে নতুন প্রতিযোগিতা
বিশ্লেষকদের মতে, এআই গ্লাসেস হতে পারে পরবর্তী “স্মার্টফোন”, যা ব্যক্তিগত এআই এজেন্ট ব্যবহারের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। বর্তমানে স্মার্টফোনে এআই ফিচার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। উদাহরণস্বরূপ, আইফোন ১৬ এআই ফিচার দিয়ে হতাশ করেছে, আর আইফোন ১৭-এও এআইকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের সিনিয়র বিশ্লেষক ফ্লোরা ট্যাং বলেন, এআই গ্লাসেস আরও স্বাভাবিক ইন্টারফেস তৈরি করে। এটি রিয়েল-টাইম অনুবাদ, বস্তু শনাক্তকরণ ও দ্রুত সহায়তা দিতে সক্ষম, যেখানে ফোন সীমিত থাকে টাচ বা ভয়েস কমান্ডে।
মার্কিন ও চীনা টেক জায়ান্টদের দৌড়
ওমডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী ৫.১ মিলিয়ন এআই গ্লাসেস বিক্রি হবে। যদিও এটি এখনও স্মার্টফোন বিক্রির তুলনায় অতি সামান্য, মেটা ইতিমধ্যে ৩০ লাখ রে-বেন এআই গ্লাস বিক্রি করেছে।
অন্যদিকে, অ্যাপল নিজস্ব এআই গ্লাস তৈরি করছে। ওপেনএআই এআই হার্ডওয়্যারের দিকে এগোচ্ছে। গুগল-স্যামসাং যৌথভাবে এআই গ্লাস আনতে যাচ্ছে। চীনে আলিবাবা, বাইটড্যান্স ও টেনসেন্টও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
চীনা কোম্পানি রোকিড ইতিমধ্যে ৩ লাখ এআই গ্লাস বিক্রি করেছে এবং সরকারি সহায়তায় এটিকে জাতীয় প্রযুক্তি কৌশলের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করছে। রোকিডের গ্লাস আলিবাবার কিউওয়েন মডেল দ্বারা চালিত।
ইকোসিস্টেম দখলের লড়াই
বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিযোগিতা শুধু ডিভাইস বিক্রির জন্য নয়, বরং সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যার ইকোসিস্টেম নিয়ন্ত্রণের জন্য। আলিবাবার মতো প্রতিষ্ঠান চায় মানুষ তাদের এআই মডেল ব্যবহার করুক, যাতে পুরো ইকোসিস্টেমে ব্যবহারকারীরা যুক্ত থাকে।
টেকন্যালাইসিস রিসার্চের প্রধান বিশ্লেষক বব ও’ডনেল বলেন, “গুগল ও মেটার মতো যারা নিজেদের ভাষা মডেল তৈরি করেছে, তারা বড় সুবিধায় আছে। অ্যাপলকেও এখন এআই মডেলের দিকে জোর দিতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন: কে এগিয়ে?
চীন বিশাল দেশীয় বাজার, সাশ্রয়ী উৎপাদন খরচ ও শক্তিশালী হার্ডওয়্যার সাপ্লাই চেইনের কারণে এগিয়ে থাকতে পারে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো গবেষণা ও উন্নয়নে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে সক্ষম এবং তাদের ব্র্যান্ড বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী।
ও’ডনেলের মতে, বৈশ্বিক বাজারে চীনা কোম্পানির দুর্বলতা হলো ইংরেজি ভাষার এআই মডেল। তবে রোকিড দাবি করেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯৯ ডলারে গ্লোব্যাল ভার্সন আনবে, যেখানে ব্যবহারকারীরা আলিবাবা বা জিপিটি মডেল বেছে নিতে পারবেন।
সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিকট ভবিষ্যতে এআই গ্লাস স্মার্টফোনকে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। কম্পিউটিং ক্ষমতা, ব্যাটারি সীমাবদ্ধতা ও তাপ নিয়ন্ত্রণ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। রোকিডের লিয়াং গুয়ান বলেন, “সবাই আয়রন ম্যানের জারভিস চায়, কিন্তু একটা চশমা এখনো এতটা সক্ষম নয়।”
মেটার ব্যর্থ লাইভ ডেমো প্রমাণ করে, এআই গ্লাস ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেতে এখনও কয়েক বছর সময় লাগবে।
এআই গ্লাসেস নিঃসন্দেহে প্রযুক্তি দুনিয়ার পরবর্তী বড় প্রতিযোগিতা হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের টেক জায়ান্টরা এটিকে নতুন যুদ্ধক্ষেত্র বানাতে চলেছে। তবে কোন দেশ ও কোম্পানি এগিয়ে থাকবে, তা নির্ভর করবে তাদের এআই মডেলের দক্ষতা ও বিশ্ববাজারে অভিযোজন ক্ষমতার ওপর।