১১:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

শেষ দিনের কলকাতা: আনন্দে বেদনার বিজয়া

উৎসবের সমাপ্তি, অপেক্ষার শুরু

কলকাতার দুর্গাপুজো বাঙালির কাছে শুধুমাত্র ধর্মীয় পূজা নয়, বরং এটি এক মহাসাংস্কৃতিক উৎসব। পাঁচদিন ধরে শহরের প্রতিটি অলিগলি আলো, রঙ, গান, কবিতা, খাবার আর মিলনমেলার এক বিশাল আয়োজনের সাক্ষী থাকে। কিন্তু যত বড় উৎসব, ততই তার শেষের দিন আনে এক অদ্ভুত বিষণ্নতা। বিজয়া দশমীর দিন কলকাতার বুকে আনন্দ আর বেদনা পাশাপাশি হাঁটে— একদিকে পূজোর মহোৎসবের সাফল্য, অন্যদিকে বিদায়ের অশ্রু।

সকাল: হালকা বিষণ্নতার আবহ

দশমীর সকাল কলকাতায় আসে অন্য দিনের তুলনায় ভিন্ন এক আবহ নিয়ে। নবমীর রাতভর আড্ডা, ঢাকের সুর আর ভিড়ের কোলাহল শেষে সকালবেলায় মণ্ডপগুলো কিছুটা শান্ত। ঠাকুরের সামনে দাঁড়িয়ে অনেকেই করেন শেষ প্রণাম। ভক্তদের চোখে-মুখে ঝরে পড়ে এক ধরনের আবেগ— “মা আবার কবে আসবেন?”

একজন গড়িয়াহাটের বাসিন্দা বলছিলেন, “আমরা প্রতি বছরই পাড়ার ঠাকুর দেখতে আসি। কিন্তু দশমীর সকালে যখন মাকে দেখি, মনে হয় মা যেন বিদায়ের বার্তা দিচ্ছেন।”

সিঁদুর খেলা: রঙে রঙে বিদায়ের বার্তা

দশমীর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো সিঁদুর খেলা। মণ্ডপে মণ্ডপে মহিলারা সাদা-লালপাড় শাড়ি পরে এসে প্রথমে দেবীকে সিঁদুর নিবেদন করেন। তারপর শুরু হয় একে অপরকে সিঁদুর মাখানোর খেলা।

Sindoor Khela 2023: Traditions of the Celebrated Bengali Ritual

কালীঘাট থেকে শোভাবাজার, বাগবাজার থেকে দেশপ্রিয় পার্ক— সর্বত্র একই দৃশ্য। নারীরা হাসিমুখে একে অপরের কপালে, গালে সিঁদুর দেন, শুভেচ্ছা জানান। এর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে দাম্পত্য জীবনের মঙ্গলকামনা, সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ আর একে অপরের প্রতি শুভ বার্তা।

একজন মহিলা ভক্ত বলছিলেন, “এই সিঁদুর মানে শুধু রঙ নয়, এটা আমাদের আশীর্বাদ, সুখ আর আগামী বছরের জন্য শুভ কামনা।”

দুপুর: শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

দুপুর গড়াতেই শহরের রাস্তায় শুরু হয় ভিড় জমা। বড় বড় পুজো কমিটিগুলো ট্রাকে সাজিয়ে প্রতিমা নিয়ে বেরোয় শোভাযাত্রায়। সঙ্গে থাকে ঢাকের বাজনা, ধুনুচি নাচ আর পাড়ার ছেলেমেয়েদের উচ্ছ্বাস।

এদিন কলকাতার রাস্তা যেন এক বিশাল উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চে পরিণত হয়। প্রতিটি মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে দর্শকের ভিড়। অনেকে বলেন, এই শোভাযাত্রা শুধু প্রতিমা বিসর্জন নয়, বরং বাঙালির সমবেত আনন্দের এক মহাযাত্রা।

ঢাকের শেষ তালে আবেগের বিস্ফোরণ

কলকাতার পুজো মানেই ঢাক। আর দশমীর দিন সেই ঢাকের তালে তালে মিশে থাকে অশ্রু। শোভাযাত্রার সঙ্গে বাজতে থাকে করুণ সুর, যেখানে আনন্দ ও বেদনা মিশে যায়।

Durga Puja In Rural Bengal: Puja by chhou artists in Andal

একজন তরুণ ঢাকী বলছিলেন, “আমরা সারা বছর এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করি। ঢাক বাজাই আনন্দের জন্যও, আবার বিদায়ের জন্যও। দশমীর বাজনায় চোখ ভিজে আসে।”

গঙ্গার ঘাটে বিদায়: নদীর বুকে শেষ মিলন

কলকাতার বাবুঘাট, প্রিন্সেপ ঘাট, নিমতলা— প্রতিটি ঘাটে জমে ওঠে বিসর্জনের ভিড়। ট্রাকে আসা প্রতিমাগুলো নামানো হয় গঙ্গার জলে। গঙ্গার ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যায় দেবীর প্রতিমা, আর ভিড়ের মধ্যে শোনা যায়— “আশ্চর্য মা গো! বিদায় মা গো! আবার আসিবে বছর পর।”

একজন প্রবীণ ভক্তের চোখে জল দেখা গেল। তিনি বললেন, “আমার বয়স ৭০। ছোটবেলা থেকে প্রতিমা বিসর্জন দেখে আসছি। তবু প্রতিবারই মনে হয়, এই বিদায় সহ্য করা কঠিন।”

বিজয়ার প্রীতি-আলিঙ্গন

বিসর্জনের পর শুরু হয় বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়। কলকাতার অলিগলিতে মানুষ একে অপরের বাড়ি গিয়ে মিষ্টি খাওয়ান, ছোটরা প্রণাম করে, বড়রা আশীর্বাদ দেন। ‘শুভ বিজয়া’ শব্দটি যেন নতুন বছরের প্রতিশ্রুতি হয়ে ওঠে।

অনেক পরিবারে এদিন বিশেষ খাবারের আয়োজন হয়। সন্দেশ, নাড়ু, নিমকি আর বিভিন্ন মিষ্টি দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন চলে। বিজয়া মানে শুধু বিদায় নয়, বরং নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তোলা, ভ্রাতৃত্ববোধকে আরও গভীর করা।

দশমীতে বিষাদের সুর, ফের প্রতীক্ষার প্রহর গোণার পালা শুরুর মাঝেই রাজ্যবাসীকে বিজয়া দশমী শুভেচ্ছা মমতা-মোদীর

সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বিজয়ার ছাপ

বাংলা সাহিত্যেও বিজয়া দশমীর প্রভাব গভীর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন— “এ বিজয়ার দিনে সকল পাপ মোচন হোক, সকল অকল্যাণ দূর হোক।” শারদোৎসব নিয়ে জীবনানন্দ দাশ থেকে সুকান্ত ভট্টাচার্য পর্যন্ত বহু কবি লিখেছেন আবেগঘন কবিতা।

অনেকে বলেন, কলকাতার দুর্গাপুজো না দেখলে বাঙালির আবেগ বোঝা যায় না। আর বিজয়ার দিন সেই আবেগের চূড়ান্ত প্রকাশ।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ঊনবিংশ শতকে জমিদার বাড়িগুলোতে দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়েছিল বড় আকারে। শোভাবাজার রাজবাড়ি, শোভাবাজারের নবকৃষ্ণ দেব, আর রানি রাসমণির বাড়ির পুজো সেই সময় থেকেই খ্যাত। ব্রিটিশ আমলে এই পূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল না, সামাজিক যোগাযোগেরও অন্যতম মাধ্যম ছিল।

আজও সেই ঐতিহ্যের রেশ বজায় রেখেই কলকাতার পুজো দাঁড়িয়ে আছে। তবে বড় কমিটিগুলোর ঝলকানি, আলো, থিম আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আজকের পুজোকে আরও বর্ণময় করেছে।

সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে

Significance of Dhunuchi Dance in Durga Puja | Why Do Bengalis Perform Dhunuchi Dance During Durga Puja dgtl - Anandabazar

সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, দুর্গাপুজো বাঙালির এক অনন্য সামাজিক বন্ধন। বিজয়া দশমীর দিন সেই বন্ধন আরও স্পষ্ট হয়। বিদায়ের বেদনা সবার চোখে জল আনে, কিন্তু একইসঙ্গে মানুষকে নতুন করে একত্রিত করে।

একজন সমাজবিজ্ঞানী মন্তব্য করেছেন, “দশমীর দিন বাঙালি একদিকে কাঁদে, অন্যদিকে হাসে। এই দ্বৈত আবেগই দুর্গাপুজোকে অনন্য করে তোলে।”

আগামী বছরের অপেক্ষায়

শেষ দিনের কলকাতা তাই এক অনন্য অভিজ্ঞতা। ঢাকের শেষ তালে বিদায়ের সুর, গঙ্গার বুকে প্রতিমার ভাসান, সিঁদুর খেলার উচ্ছ্বাস, আর বিজয়ার প্রীতি-আলিঙ্গন— সব মিলিয়ে শহর ডুবে যায় আবেগের সমুদ্রে।

কিন্তু বিদায় মানে শেষ নয়। কলকাতা আবার অপেক্ষা করে আগামী বছরের জন্য। কারণ, মা দুর্গা প্রতি বছরই আসেন নতুন করে, নতুন রঙে, নতুন আবেগে। আর বাঙালি অপেক্ষা করে সেই অমোঘ মিলনের দিনের জন্য।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার গানের জগতে ফিরে আসা: ‘লাস্ট ক্রিসমাস’ ডেসি ভার্সন নিয়ে নেটিজেনদের কটাক্ষ

শেষ দিনের কলকাতা: আনন্দে বেদনার বিজয়া

০৬:৪৭:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

উৎসবের সমাপ্তি, অপেক্ষার শুরু

কলকাতার দুর্গাপুজো বাঙালির কাছে শুধুমাত্র ধর্মীয় পূজা নয়, বরং এটি এক মহাসাংস্কৃতিক উৎসব। পাঁচদিন ধরে শহরের প্রতিটি অলিগলি আলো, রঙ, গান, কবিতা, খাবার আর মিলনমেলার এক বিশাল আয়োজনের সাক্ষী থাকে। কিন্তু যত বড় উৎসব, ততই তার শেষের দিন আনে এক অদ্ভুত বিষণ্নতা। বিজয়া দশমীর দিন কলকাতার বুকে আনন্দ আর বেদনা পাশাপাশি হাঁটে— একদিকে পূজোর মহোৎসবের সাফল্য, অন্যদিকে বিদায়ের অশ্রু।

সকাল: হালকা বিষণ্নতার আবহ

দশমীর সকাল কলকাতায় আসে অন্য দিনের তুলনায় ভিন্ন এক আবহ নিয়ে। নবমীর রাতভর আড্ডা, ঢাকের সুর আর ভিড়ের কোলাহল শেষে সকালবেলায় মণ্ডপগুলো কিছুটা শান্ত। ঠাকুরের সামনে দাঁড়িয়ে অনেকেই করেন শেষ প্রণাম। ভক্তদের চোখে-মুখে ঝরে পড়ে এক ধরনের আবেগ— “মা আবার কবে আসবেন?”

একজন গড়িয়াহাটের বাসিন্দা বলছিলেন, “আমরা প্রতি বছরই পাড়ার ঠাকুর দেখতে আসি। কিন্তু দশমীর সকালে যখন মাকে দেখি, মনে হয় মা যেন বিদায়ের বার্তা দিচ্ছেন।”

সিঁদুর খেলা: রঙে রঙে বিদায়ের বার্তা

দশমীর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো সিঁদুর খেলা। মণ্ডপে মণ্ডপে মহিলারা সাদা-লালপাড় শাড়ি পরে এসে প্রথমে দেবীকে সিঁদুর নিবেদন করেন। তারপর শুরু হয় একে অপরকে সিঁদুর মাখানোর খেলা।

Sindoor Khela 2023: Traditions of the Celebrated Bengali Ritual

কালীঘাট থেকে শোভাবাজার, বাগবাজার থেকে দেশপ্রিয় পার্ক— সর্বত্র একই দৃশ্য। নারীরা হাসিমুখে একে অপরের কপালে, গালে সিঁদুর দেন, শুভেচ্ছা জানান। এর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে দাম্পত্য জীবনের মঙ্গলকামনা, সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ আর একে অপরের প্রতি শুভ বার্তা।

একজন মহিলা ভক্ত বলছিলেন, “এই সিঁদুর মানে শুধু রঙ নয়, এটা আমাদের আশীর্বাদ, সুখ আর আগামী বছরের জন্য শুভ কামনা।”

দুপুর: শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

দুপুর গড়াতেই শহরের রাস্তায় শুরু হয় ভিড় জমা। বড় বড় পুজো কমিটিগুলো ট্রাকে সাজিয়ে প্রতিমা নিয়ে বেরোয় শোভাযাত্রায়। সঙ্গে থাকে ঢাকের বাজনা, ধুনুচি নাচ আর পাড়ার ছেলেমেয়েদের উচ্ছ্বাস।

এদিন কলকাতার রাস্তা যেন এক বিশাল উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চে পরিণত হয়। প্রতিটি মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে দর্শকের ভিড়। অনেকে বলেন, এই শোভাযাত্রা শুধু প্রতিমা বিসর্জন নয়, বরং বাঙালির সমবেত আনন্দের এক মহাযাত্রা।

ঢাকের শেষ তালে আবেগের বিস্ফোরণ

কলকাতার পুজো মানেই ঢাক। আর দশমীর দিন সেই ঢাকের তালে তালে মিশে থাকে অশ্রু। শোভাযাত্রার সঙ্গে বাজতে থাকে করুণ সুর, যেখানে আনন্দ ও বেদনা মিশে যায়।

Durga Puja In Rural Bengal: Puja by chhou artists in Andal

একজন তরুণ ঢাকী বলছিলেন, “আমরা সারা বছর এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করি। ঢাক বাজাই আনন্দের জন্যও, আবার বিদায়ের জন্যও। দশমীর বাজনায় চোখ ভিজে আসে।”

গঙ্গার ঘাটে বিদায়: নদীর বুকে শেষ মিলন

কলকাতার বাবুঘাট, প্রিন্সেপ ঘাট, নিমতলা— প্রতিটি ঘাটে জমে ওঠে বিসর্জনের ভিড়। ট্রাকে আসা প্রতিমাগুলো নামানো হয় গঙ্গার জলে। গঙ্গার ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যায় দেবীর প্রতিমা, আর ভিড়ের মধ্যে শোনা যায়— “আশ্চর্য মা গো! বিদায় মা গো! আবার আসিবে বছর পর।”

একজন প্রবীণ ভক্তের চোখে জল দেখা গেল। তিনি বললেন, “আমার বয়স ৭০। ছোটবেলা থেকে প্রতিমা বিসর্জন দেখে আসছি। তবু প্রতিবারই মনে হয়, এই বিদায় সহ্য করা কঠিন।”

বিজয়ার প্রীতি-আলিঙ্গন

বিসর্জনের পর শুরু হয় বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়। কলকাতার অলিগলিতে মানুষ একে অপরের বাড়ি গিয়ে মিষ্টি খাওয়ান, ছোটরা প্রণাম করে, বড়রা আশীর্বাদ দেন। ‘শুভ বিজয়া’ শব্দটি যেন নতুন বছরের প্রতিশ্রুতি হয়ে ওঠে।

অনেক পরিবারে এদিন বিশেষ খাবারের আয়োজন হয়। সন্দেশ, নাড়ু, নিমকি আর বিভিন্ন মিষ্টি দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন চলে। বিজয়া মানে শুধু বিদায় নয়, বরং নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তোলা, ভ্রাতৃত্ববোধকে আরও গভীর করা।

দশমীতে বিষাদের সুর, ফের প্রতীক্ষার প্রহর গোণার পালা শুরুর মাঝেই রাজ্যবাসীকে বিজয়া দশমী শুভেচ্ছা মমতা-মোদীর

সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বিজয়ার ছাপ

বাংলা সাহিত্যেও বিজয়া দশমীর প্রভাব গভীর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন— “এ বিজয়ার দিনে সকল পাপ মোচন হোক, সকল অকল্যাণ দূর হোক।” শারদোৎসব নিয়ে জীবনানন্দ দাশ থেকে সুকান্ত ভট্টাচার্য পর্যন্ত বহু কবি লিখেছেন আবেগঘন কবিতা।

অনেকে বলেন, কলকাতার দুর্গাপুজো না দেখলে বাঙালির আবেগ বোঝা যায় না। আর বিজয়ার দিন সেই আবেগের চূড়ান্ত প্রকাশ।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ঊনবিংশ শতকে জমিদার বাড়িগুলোতে দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়েছিল বড় আকারে। শোভাবাজার রাজবাড়ি, শোভাবাজারের নবকৃষ্ণ দেব, আর রানি রাসমণির বাড়ির পুজো সেই সময় থেকেই খ্যাত। ব্রিটিশ আমলে এই পূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল না, সামাজিক যোগাযোগেরও অন্যতম মাধ্যম ছিল।

আজও সেই ঐতিহ্যের রেশ বজায় রেখেই কলকাতার পুজো দাঁড়িয়ে আছে। তবে বড় কমিটিগুলোর ঝলকানি, আলো, থিম আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আজকের পুজোকে আরও বর্ণময় করেছে।

সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে

Significance of Dhunuchi Dance in Durga Puja | Why Do Bengalis Perform Dhunuchi Dance During Durga Puja dgtl - Anandabazar

সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, দুর্গাপুজো বাঙালির এক অনন্য সামাজিক বন্ধন। বিজয়া দশমীর দিন সেই বন্ধন আরও স্পষ্ট হয়। বিদায়ের বেদনা সবার চোখে জল আনে, কিন্তু একইসঙ্গে মানুষকে নতুন করে একত্রিত করে।

একজন সমাজবিজ্ঞানী মন্তব্য করেছেন, “দশমীর দিন বাঙালি একদিকে কাঁদে, অন্যদিকে হাসে। এই দ্বৈত আবেগই দুর্গাপুজোকে অনন্য করে তোলে।”

আগামী বছরের অপেক্ষায়

শেষ দিনের কলকাতা তাই এক অনন্য অভিজ্ঞতা। ঢাকের শেষ তালে বিদায়ের সুর, গঙ্গার বুকে প্রতিমার ভাসান, সিঁদুর খেলার উচ্ছ্বাস, আর বিজয়ার প্রীতি-আলিঙ্গন— সব মিলিয়ে শহর ডুবে যায় আবেগের সমুদ্রে।

কিন্তু বিদায় মানে শেষ নয়। কলকাতা আবার অপেক্ষা করে আগামী বছরের জন্য। কারণ, মা দুর্গা প্রতি বছরই আসেন নতুন করে, নতুন রঙে, নতুন আবেগে। আর বাঙালি অপেক্ষা করে সেই অমোঘ মিলনের দিনের জন্য।