০৫:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫
বাংলাদেশে গণতন্ত্র, নির্বাচন ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ফখরুল–গুইন লুইসের আলোচনা ঢাকায় সাবেক আওয়ামী লীগ এমপি বিএম মোজাম্মেল হক গ্রেপ্তার ইরান মহাকাশ প্রোগ্রামে নতুন পদক্ষেপ: শক্তি-ভিত্তিক উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুতি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬ জন মহিলার মৃত্যু: মুম্বাইয়ের ক্যাটারিং ইউনিটে প্রাণহানি নেতানিয়াহুর ভাষণে হামাস ও গাজা যুদ্ধের সমালোচনা সোনালী ঝলক এখন পুরনো হয়ে গেছে নিউক্লিয়ার শক্তি উৎপাদন: আর্কানসাসে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ লেহেদের ক্ষোভ: রাজ্যত্ব ও ষষ্ঠ তফসিলের দাবি মীরা সেতির সাহসী সিদ্ধান্ত মুদ্রানীতি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ভারতের কেন্দ্রিয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নেই বলে জানালেন সে দেশের গর্ভনর

বিশ্বজুড়ে এআই ব্যবহারে আস্থার উত্থান, কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ঘাটতি

এআই মূলধারায়, কিন্তু দায়িত্বশীল ব্যবহারে প্রশ্ন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আর পরীক্ষামূলক প্রকল্পে সীমাবদ্ধ নয়। এটি ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে কথোপকথন সহকারী পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর প্রশ্ন করছে না এআই ব্যবহার করা উচিত কি না, বরং কীভাবে এটিকে দায়িত্বশীল ও কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যায়—সেটিই বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

এর ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এসেছে: এআই-কে আসলেই নির্ভরযোগ্য মনে করা যায় কি? মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এই বিতর্ককে আরও জটিল করেছে। জেনারেটিভ এআই দ্রুত মূলধারায় জায়গা করে নিয়েছে, অথচ এর ঝুঁকি রয়েছে পক্ষপাত, ভুল তথ্য (হ্যালুসিনেশন), আর স্বচ্ছতার সীমাবদ্ধতা।


জেনারেটিভ এআই-তে সর্বাধিক আস্থা

নতুন এক আন্তর্জাতিক গবেষণা (IDC-র The Data and AI Impact Report: The Trust Imperative) দেখিয়েছে, প্রায় অর্ধেক (৪৮%) ব্যবসা ও প্রযুক্তি নেতারা সম্পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন জেনারেটিভ এআই টুলের প্রতি, যেমন ChatGPT। তুলনায় ঐতিহ্যবাহী এআই মডেল যেমন মেশিন লার্নিং—যার নির্ভরযোগ্যতা ও ব্যাখ্যাযোগ্যতার ইতিহাস দীর্ঘ—সেটিতে পূর্ণ আস্থা মাত্র ১৮% মানুষের।

এছাড়া, ৩৩% অংশগ্রহণকারী এজেন্টিক এআই-কে পুরোপুরি বিশ্বাস করেন, আর ২৬% কোয়ান্টাম এআই-এর ওপর আস্থা রাখেন, যদিও প্রযুক্তিটি এখনও প্রাথমিক ধাপে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সিদ্ধান্তগ্রহণকারী জানিয়েছেন, তারা ইতিমধ্যেই কোয়ান্টাম এআই সম্পর্কে পরিচিত, যা এর দ্রুত প্রসারের ইঙ্গিত।

আইডিসি-র গবেষক ক্যাথি ল্যাঞ্জের ভাষায়: ‘মানবসদৃশ ইন্টারঅ্যাকশন থাকা প্রযুক্তিই বেশি আস্থা অর্জন করছে, নির্ভুলতা যতই সীমিত হোক না কেন। প্রশ্ন হচ্ছে—জেনারেটিভ এআই বিশ্বাসযোগ্য বটে, কিন্তু এটি কি সত্যিই নির্ভরযোগ্য?’


আস্থা অনেক, কিন্তু নিরাপত্তায় বিনিয়োগ কম

জরিপে অংশ নেওয়া ২,৩৭৫ জন নেতার মধ্যে দেখা গেছে বড় বৈপরীত্য। প্রায় ৭৮% প্রতিষ্ঠান বলেছে যে তারা এআই-কে সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করে। কিন্তু বাস্তবে মাত্র ৪০% প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা ও নৈতিক ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করেছে। আরও উদ্বেগজনক হলো—মাত্র ২% প্রতিষ্ঠান এআই গভর্নেন্সকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং ১০%-এরও কম প্রতিষ্ঠান দায়িত্বশীল এআই নীতিমালা তৈরি করছে।

প্রধান উদ্বেগগুলো হলো:

  • ডেটা গোপনীয়তা (৬২%)।
  • স্বচ্ছতা ও ব্যাখ্যাযোগ্যতা (৫৭%)।
  • নৈতিক ব্যবহার (৫৬%)।

দায়িত্বশীল এআই-এর ফলাফল

গবেষণা বলছে, যারা গভর্নেন্স, নৈতিক নীতি ও শক্তিশালী ডেটা কৌশলে বিনিয়োগ করছে, তারা এআই প্রকল্পে দ্বিগুণ বা তারও বেশি রিটার্ন পাচ্ছে। আসলে, বিশ্বাসযোগ্য এআই ব্যবহারে প্রতিষ্ঠানগুলো ৬০% বেশি সম্ভাবনায় বড় মুনাফা করছে। বিপরীতে, নিরাপত্তা ও নীতি অবহেলা করলে এআই ব্যবহারের কার্যকারিতা ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

তবে বাধাও আছে। প্রায় ৪৯% প্রতিষ্ঠান বলছে ভাঙা বা অপ্রস্তুত ক্লাউড ডেটা পরিবেশ কার্যকর এআই ব্যবহারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা হলো—দুর্বল ডেটা গভর্নেন্স (৪৪%), দক্ষ বিশেষজ্ঞের ঘাটতি (৪১%), প্রাসঙ্গিক ডেটা পাওয়া কঠিন (৫৮%)। ডেটার গোপনীয়তা (৪৯%) ও গুণগত মান (৪৬%) নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।


এআই আস্থার সঙ্কট: সামনে চ্যালেঞ্জ

এই গবেষণা স্পষ্ট করে দিয়েছে একটি দ্বন্দ্ব। জেনারেটিভ ও এজেন্টিক এআই-এর মতো নতুন প্রযুক্তিতে আস্থা দ্রুত বাড়ছে, অথচ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ পিছিয়ে আছে। এই বৈপরীত্য দীর্ঘমেয়াদে বিপদ ডেকে আনতে পারে।

এসএএস-এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ব্রায়ান হ্যারিস বলেন: ‘সমাজ, ব্যবসা ও কর্মীদের জন্য এআই-তে আস্থা অপরিহার্য। এজন্য এআই বাস্তবায়নের সফলতা বাড়াতে হবে, মানুষের সমালোচনামূলক দৃষ্টি রাখতে হবে, আর নেতৃত্বকে কর্মীদের ক্ষমতায়িত করতে হবে।’


 আস্থা ও নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য জরুরি

গবেষণা দেখাচ্ছে, দায়িত্বশীল চর্চা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যেই ভালো ফল পাচ্ছে। কিন্তু যারা নিরাপত্তা, নীতি ও দক্ষতায় বিনিয়োগ করছে না, তারা দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিতে পড়বে। বর্তমানে জেনারেটিভ এআই দৃশ্যমানতা ও ব্যবহারিক দিক থেকে ঐতিহ্যবাহী এআই-কে (৮১% বনাম ৬৬%) ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাই আগামী কয়েক বছর হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—যেখানে এআই-তে আস্থা ও বাস্তবিক নির্ভরযোগ্যতার মধ্যে ফারাক কমাতে হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশে গণতন্ত্র, নির্বাচন ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ফখরুল–গুইন লুইসের আলোচনা

বিশ্বজুড়ে এআই ব্যবহারে আস্থার উত্থান, কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ঘাটতি

০১:৩৮:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

এআই মূলধারায়, কিন্তু দায়িত্বশীল ব্যবহারে প্রশ্ন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আর পরীক্ষামূলক প্রকল্পে সীমাবদ্ধ নয়। এটি ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে কথোপকথন সহকারী পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর প্রশ্ন করছে না এআই ব্যবহার করা উচিত কি না, বরং কীভাবে এটিকে দায়িত্বশীল ও কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যায়—সেটিই বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

এর ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এসেছে: এআই-কে আসলেই নির্ভরযোগ্য মনে করা যায় কি? মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এই বিতর্ককে আরও জটিল করেছে। জেনারেটিভ এআই দ্রুত মূলধারায় জায়গা করে নিয়েছে, অথচ এর ঝুঁকি রয়েছে পক্ষপাত, ভুল তথ্য (হ্যালুসিনেশন), আর স্বচ্ছতার সীমাবদ্ধতা।


জেনারেটিভ এআই-তে সর্বাধিক আস্থা

নতুন এক আন্তর্জাতিক গবেষণা (IDC-র The Data and AI Impact Report: The Trust Imperative) দেখিয়েছে, প্রায় অর্ধেক (৪৮%) ব্যবসা ও প্রযুক্তি নেতারা সম্পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন জেনারেটিভ এআই টুলের প্রতি, যেমন ChatGPT। তুলনায় ঐতিহ্যবাহী এআই মডেল যেমন মেশিন লার্নিং—যার নির্ভরযোগ্যতা ও ব্যাখ্যাযোগ্যতার ইতিহাস দীর্ঘ—সেটিতে পূর্ণ আস্থা মাত্র ১৮% মানুষের।

এছাড়া, ৩৩% অংশগ্রহণকারী এজেন্টিক এআই-কে পুরোপুরি বিশ্বাস করেন, আর ২৬% কোয়ান্টাম এআই-এর ওপর আস্থা রাখেন, যদিও প্রযুক্তিটি এখনও প্রাথমিক ধাপে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সিদ্ধান্তগ্রহণকারী জানিয়েছেন, তারা ইতিমধ্যেই কোয়ান্টাম এআই সম্পর্কে পরিচিত, যা এর দ্রুত প্রসারের ইঙ্গিত।

আইডিসি-র গবেষক ক্যাথি ল্যাঞ্জের ভাষায়: ‘মানবসদৃশ ইন্টারঅ্যাকশন থাকা প্রযুক্তিই বেশি আস্থা অর্জন করছে, নির্ভুলতা যতই সীমিত হোক না কেন। প্রশ্ন হচ্ছে—জেনারেটিভ এআই বিশ্বাসযোগ্য বটে, কিন্তু এটি কি সত্যিই নির্ভরযোগ্য?’


আস্থা অনেক, কিন্তু নিরাপত্তায় বিনিয়োগ কম

জরিপে অংশ নেওয়া ২,৩৭৫ জন নেতার মধ্যে দেখা গেছে বড় বৈপরীত্য। প্রায় ৭৮% প্রতিষ্ঠান বলেছে যে তারা এআই-কে সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করে। কিন্তু বাস্তবে মাত্র ৪০% প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা ও নৈতিক ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করেছে। আরও উদ্বেগজনক হলো—মাত্র ২% প্রতিষ্ঠান এআই গভর্নেন্সকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং ১০%-এরও কম প্রতিষ্ঠান দায়িত্বশীল এআই নীতিমালা তৈরি করছে।

প্রধান উদ্বেগগুলো হলো:

  • ডেটা গোপনীয়তা (৬২%)।
  • স্বচ্ছতা ও ব্যাখ্যাযোগ্যতা (৫৭%)।
  • নৈতিক ব্যবহার (৫৬%)।

দায়িত্বশীল এআই-এর ফলাফল

গবেষণা বলছে, যারা গভর্নেন্স, নৈতিক নীতি ও শক্তিশালী ডেটা কৌশলে বিনিয়োগ করছে, তারা এআই প্রকল্পে দ্বিগুণ বা তারও বেশি রিটার্ন পাচ্ছে। আসলে, বিশ্বাসযোগ্য এআই ব্যবহারে প্রতিষ্ঠানগুলো ৬০% বেশি সম্ভাবনায় বড় মুনাফা করছে। বিপরীতে, নিরাপত্তা ও নীতি অবহেলা করলে এআই ব্যবহারের কার্যকারিতা ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

তবে বাধাও আছে। প্রায় ৪৯% প্রতিষ্ঠান বলছে ভাঙা বা অপ্রস্তুত ক্লাউড ডেটা পরিবেশ কার্যকর এআই ব্যবহারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা হলো—দুর্বল ডেটা গভর্নেন্স (৪৪%), দক্ষ বিশেষজ্ঞের ঘাটতি (৪১%), প্রাসঙ্গিক ডেটা পাওয়া কঠিন (৫৮%)। ডেটার গোপনীয়তা (৪৯%) ও গুণগত মান (৪৬%) নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।


এআই আস্থার সঙ্কট: সামনে চ্যালেঞ্জ

এই গবেষণা স্পষ্ট করে দিয়েছে একটি দ্বন্দ্ব। জেনারেটিভ ও এজেন্টিক এআই-এর মতো নতুন প্রযুক্তিতে আস্থা দ্রুত বাড়ছে, অথচ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ পিছিয়ে আছে। এই বৈপরীত্য দীর্ঘমেয়াদে বিপদ ডেকে আনতে পারে।

এসএএস-এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ব্রায়ান হ্যারিস বলেন: ‘সমাজ, ব্যবসা ও কর্মীদের জন্য এআই-তে আস্থা অপরিহার্য। এজন্য এআই বাস্তবায়নের সফলতা বাড়াতে হবে, মানুষের সমালোচনামূলক দৃষ্টি রাখতে হবে, আর নেতৃত্বকে কর্মীদের ক্ষমতায়িত করতে হবে।’


 আস্থা ও নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য জরুরি

গবেষণা দেখাচ্ছে, দায়িত্বশীল চর্চা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যেই ভালো ফল পাচ্ছে। কিন্তু যারা নিরাপত্তা, নীতি ও দক্ষতায় বিনিয়োগ করছে না, তারা দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিতে পড়বে। বর্তমানে জেনারেটিভ এআই দৃশ্যমানতা ও ব্যবহারিক দিক থেকে ঐতিহ্যবাহী এআই-কে (৮১% বনাম ৬৬%) ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাই আগামী কয়েক বছর হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—যেখানে এআই-তে আস্থা ও বাস্তবিক নির্ভরযোগ্যতার মধ্যে ফারাক কমাতে হবে।