সাম্প্রদায়িক উস্কানির নেপথ্যে ফ্যাসিস্টদের ভূমিকা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে অসুরের মুখে দাড়ি লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সহিংসতা উসকে দেওয়ার পেছনে ফ্যাসিস্টদের ইন্ধন ছিল।
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্টদের দোসররা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, যা ধর্মীয় সম্প্রীতি ধ্বংসের এক পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।”
রবিবার (৫ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পূজামণ্ডপের ঘটনায় একই চক্রান্ত
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল। একইভাবে দুর্গাপূজার সময় অসুরের মুখে দাড়ি লাগিয়ে ধর্মীয় উস্কানি দেওয়া হয়েছে— উভয় ঘটনাই একই চক্রের সমন্বিত ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্রের অংশ।
তিনি বলেন, “এই দুটি ঘটনার পেছনে যারা আছে, তাদের রাজনৈতিক ও আদর্শিক উদ্দেশ্য এক— সমাজে বিভক্তি সৃষ্টি ও বিশৃঙ্খলা ছড়ানো।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অসুর বানানোর ঘটনায় প্রতিবেশী দেশের ইঙ্গিত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা তথ্য পেয়েছি যে, ভারতের কিছু অঞ্চলে দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অসুরের রূপে প্রদর্শন করা হয়েছে। এটি একটি উস্কানিমূলক ও নিন্দনীয় কাজ।”
তিনি আরও যোগ করেন, “অসুরের মুখে দাড়ি লাগানোর ঘটনায়ও প্রতিবেশী দেশটির পরোক্ষ ভূমিকা ও প্রভাবের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।”
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও পূজা উদযাপন কমিটির সহযোগিতায় সরকার এসব চক্রান্ত নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান তিনি।
ষড়যন্ত্র ব্যর্থ, শান্তিপূর্ণ পূজা উদযাপন
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসররা ধর্মীয় উস্কানি ও সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। গতবারের মতো এবারও সারা দেশে শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে।”
৭৯৩টি মণ্ডপে দাড়িযুক্ত অসুর: তদন্ত চলছে
তিনি আরও জানান, দেশে ৭৯৩টি পূজামণ্ডপে অসুরের মুখে দাড়ি লাগানোর তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিটি ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার সঙ্গে যোগসূত্র?
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অপূর্ব পালের কোরআন অবমাননার ঘটনার সঙ্গে এই ষড়যন্ত্রের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন।”
পার্বত্য ধর্ষণ মামলা: প্রমাণের অভাব
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “পাহাড়ে যে ধর্ষণের অভিযোগে এত হৈচৈ হয়েছে, মেডিক্যাল রিপোর্টে কোনো ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘটনাটি দক্ষভাবে মোকাবিলা করেছে।”
তিনি আরও জানান, পাহাড়ে অবরোধ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
কোর কমিটির বৈঠকে আলোচিত অন্যান্য বিষয়
সভায় জাতীয় নির্বাচন, চাকসু ও রাকসু নির্বাচন, রোহিঙ্গা সংকট, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের অগ্রগতি, চুরি-ছিনতাই, মাদক ও চাঁদাবাজি দমনসহ নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে একটি সংগঠিত ফ্যাসিস্ট চক্র কাজ করছে, যারা প্রতিবেশী দেশের প্রভাবেও প্রভাবিত।
তবে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ, গোয়েন্দা নজরদারি ও সামাজিক সহযোগিতার ফলে এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে এবং দেশের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।