০৯:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-২৯) একটি নতুন কবিতা শোনার জন্যে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইউরোপ সফর: ইতালি ও সুইজারল্যান্ডে নতুন কূটনৈতিক গতি ডিফেন্স বাজেটের মাধ্যমে বিশ্ব সেবার তথ্য ভুল প্রচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অর্থায়নের প্রস্তাব চীনের পৃথিবীতে সর্ববৃহৎ ফ্লোটিং উইন্ড টারবাইন সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে  ঢাকার শেয়ারবাজারে সূচক পতন, চট্টগ্রামে উত্থান চীনা খনন কোম্পানির বিরুদ্ধে ৮০ বিলিয়ন ডলারের মামলা: জ্যাম্বিয়ার সরকারের জন্য কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব মালয়েশিয়ায় হুইস্কি পরিবেশনের ঘটনায় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পদত্যাগের দাবি বিটকয়েনের ১ লাখ ২৫ হাজার ডলারের উত্থান: আস্থার নতুন ইঙ্গিত

যুক্তরাজ্যে ডিম আমদানিতে নতুন বিতর্ক — ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের উত্থানে ক্ষুব্ধ ব্রিটিশ কৃষকরা

ডিম আমদানিতে নতুন ধারা

যুক্তরাজ্যে ডিম আমদানির ক্ষেত্রে ইউক্রেন ও পোল্যান্ড এখন শীর্ষ সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে পরিণত হয়েছে। এর ফলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে খাঁচাবন্দী মুরগির ডিম ‘পেছনের দরজা দিয়ে’ বাজারে প্রবেশ করছে, যা পশুকল্যাণের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

প্রাণী ও উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সংস্থার (Animal and Plant Health Agency) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে নেদারল্যান্ডস ছিল যুক্তরাজ্যের প্রধানতম ডিম সরবরাহকারী। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের অংশ বৃদ্ধি পেয়ে একত্রে ১ কোটি ৫০ লাখ কিলোগ্রামেরও বেশি হয়েছে। স্পেন, ইতালি ও পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকেও রপ্তানি বেড়েছে।

শুধু ইউক্রেন থেকেই এ বছরের জুলাই পর্যন্ত ৮ মিলিয়ন কিলোগ্রাম ডিম এসেছে, পোল্যান্ড থেকে প্রায় ৭ মিলিয়ন এবং স্পেন থেকে ৫ মিলিয়ন কিলোগ্রাম।

ছোট চালান, বড় প্রভাব

২০২৩ সালে যেখানে প্রায় ৩,৫০০ চালানে ডিম আমদানি হয়েছিল, ২০২৪ সালে তা বেড়ে ১০,০০০ ছাড়িয়ে যায়। মোট পরিমাণ কিছুটা কমলেও ছোট ছোট চালানের সংখ্যা বেড়েছে—বিশেষত সেই দেশগুলো থেকে যেখানে খাঁচাবন্দী মুরগি ব্যবস্থাই প্রচলিত।

ব্রিটিশ এগ ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মার্ক উইলিয়ামস বলেন, “আমাদের কৃষকদের ক্রমাগত উচ্চমানের প্রাণিকল্যাণ বজায় রাখতে বলা হচ্ছে”, অথচ সরকার এমন ডিম আমদানি করতে দিচ্ছে যা দেশে নিষিদ্ধ ব্যবস্থায় উৎপাদিত। এটি নৈতিকভাবে ভুল এবং অন্যায্য।”

ইউক্রেন যুদ্ধ ও শুল্কমুক্ত সুবিধা

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর দেশটির কৃষি ও বাণিজ্য ব্যবস্থা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউক্রেনের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করে; ফলে ডিমসহ অন্যান্য পণ্য সহজে রপ্তানি সম্ভব হয়।

সরকারি মন্ত্রীরা দাবি করেন, এটি যুদ্ধকালীন সহায়তার অংশ। তবে উইলিয়ামস বলেন, “মানবিক সহায়তা অবশ্যই জরুরি, কিন্তু তা যেন যুক্তরাজ্যের ডিম উৎপাদকদের ক্ষতির কারণ না হয়। ব্রিটিশ খুচরা বিক্রেতারা ২০২৫ সালের মধ্যে খাঁচামুক্ত ডিমে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। নিম্নমানের আমদানি সেই প্রতিশ্রুতি নষ্ট করছে।”

Shell egg imports surge 22% as Ukrainian supplies undercut market - Poultry  Network

দেশীয় উৎপাদন বনাম আমদানি

যুক্তরাজ্য বর্তমানে নিজ দেশে প্রায় ৮৮% ডিম উৎপাদন করে, বাকি ১২% আসে আমদানি থেকে। বড় সুপারমার্কেটগুলো শুধুমাত্র ‘ব্রিটিশ লায়ন’ ব্র্যান্ডের ডিম বিক্রি করে, যা রান্না না করেও নিরাপদ বলে খাদ্যমান সংস্থা (FSA) ঘোষণা করেছে। তবে রেস্তোরাঁ ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বিদেশি ডিম বেশি ব্যবহৃত হয়।

উইলিয়ামস বলেন, “খুচরা বাজার নিয়ে আমি চিন্তিত নই”, কারণ সেটি কেবল বাজারের ৬৫%। কিন্তু বাকি ৩৫%—খাদ্যসেবা (১৮%) ও প্রক্রিয়াকরণ খাত (১৭%)—মূল্য প্রতিযোগিতার কারণে ইউক্রেনের জন্য আকর্ষণীয় বাজারে পরিণত হয়েছে।

তার মতে, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাণিকল্যাণ ও পরিবেশ রক্ষায় যুক্তরাজ্যের কঠোর নিয়ম উৎপাদন খরচ বাড়ায় প্রায় ১৪% পর্যন্ত, যা ইউক্রেনের ক্ষেত্রে নেই। “এ কারণেই তারা এখন সহজে এবং কম খরচে আমাদের বাজারে ডিম পাঠাতে পারছে।” তিনি বলেন।

France raises alarm over Ukrainian egg imports | Food Business Middle East  & Africa - Africa's No.1 Food & Beverage Manufacturing Industry Magazine  and Website

ভবিষ্যৎ বাণিজ্য ও সরকারের অবস্থান

ইউক্রেন চাইছে, শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা ২০২৯ সাল পর্যন্ত বহাল থাকুক। যদিও যুক্তরাজ্য অধিকাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে সেই মেয়াদ বাড়িয়েছে, ডিম ও পোলট্রিকে “সংবেদনশীল পণ্য” হিসেবে গণ্য করে কেবল দুই বছরের জন্য ছাড় দিয়েছে।

সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা আমাদের কৃষকদের পাশে আছি এবং ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরিবেশবান্ধব বাজেট দিয়েছি। ব্রিটিশ খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে আমরা কাজ করছি এবং বাণিজ্য চুক্তিতে কৃষকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করব। সরবরাহ ব্যবস্থাকে ন্যায্য রাখতে এবং উৎপাদকদের জন্য সমান ক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে নতুন বিধিনিয়ম প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় আছি।”

ডিম_আমদানি, যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন, পোল্যান্ড, প্রাণিকল্যাণ, ব্রিটিশ_কৃষক, বাণিজ্য_নীতি

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-২৯)

যুক্তরাজ্যে ডিম আমদানিতে নতুন বিতর্ক — ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের উত্থানে ক্ষুব্ধ ব্রিটিশ কৃষকরা

০৬:২২:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

ডিম আমদানিতে নতুন ধারা

যুক্তরাজ্যে ডিম আমদানির ক্ষেত্রে ইউক্রেন ও পোল্যান্ড এখন শীর্ষ সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে পরিণত হয়েছে। এর ফলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে খাঁচাবন্দী মুরগির ডিম ‘পেছনের দরজা দিয়ে’ বাজারে প্রবেশ করছে, যা পশুকল্যাণের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

প্রাণী ও উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সংস্থার (Animal and Plant Health Agency) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে নেদারল্যান্ডস ছিল যুক্তরাজ্যের প্রধানতম ডিম সরবরাহকারী। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের অংশ বৃদ্ধি পেয়ে একত্রে ১ কোটি ৫০ লাখ কিলোগ্রামেরও বেশি হয়েছে। স্পেন, ইতালি ও পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকেও রপ্তানি বেড়েছে।

শুধু ইউক্রেন থেকেই এ বছরের জুলাই পর্যন্ত ৮ মিলিয়ন কিলোগ্রাম ডিম এসেছে, পোল্যান্ড থেকে প্রায় ৭ মিলিয়ন এবং স্পেন থেকে ৫ মিলিয়ন কিলোগ্রাম।

ছোট চালান, বড় প্রভাব

২০২৩ সালে যেখানে প্রায় ৩,৫০০ চালানে ডিম আমদানি হয়েছিল, ২০২৪ সালে তা বেড়ে ১০,০০০ ছাড়িয়ে যায়। মোট পরিমাণ কিছুটা কমলেও ছোট ছোট চালানের সংখ্যা বেড়েছে—বিশেষত সেই দেশগুলো থেকে যেখানে খাঁচাবন্দী মুরগি ব্যবস্থাই প্রচলিত।

ব্রিটিশ এগ ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মার্ক উইলিয়ামস বলেন, “আমাদের কৃষকদের ক্রমাগত উচ্চমানের প্রাণিকল্যাণ বজায় রাখতে বলা হচ্ছে”, অথচ সরকার এমন ডিম আমদানি করতে দিচ্ছে যা দেশে নিষিদ্ধ ব্যবস্থায় উৎপাদিত। এটি নৈতিকভাবে ভুল এবং অন্যায্য।”

ইউক্রেন যুদ্ধ ও শুল্কমুক্ত সুবিধা

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর দেশটির কৃষি ও বাণিজ্য ব্যবস্থা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউক্রেনের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করে; ফলে ডিমসহ অন্যান্য পণ্য সহজে রপ্তানি সম্ভব হয়।

সরকারি মন্ত্রীরা দাবি করেন, এটি যুদ্ধকালীন সহায়তার অংশ। তবে উইলিয়ামস বলেন, “মানবিক সহায়তা অবশ্যই জরুরি, কিন্তু তা যেন যুক্তরাজ্যের ডিম উৎপাদকদের ক্ষতির কারণ না হয়। ব্রিটিশ খুচরা বিক্রেতারা ২০২৫ সালের মধ্যে খাঁচামুক্ত ডিমে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। নিম্নমানের আমদানি সেই প্রতিশ্রুতি নষ্ট করছে।”

Shell egg imports surge 22% as Ukrainian supplies undercut market - Poultry  Network

দেশীয় উৎপাদন বনাম আমদানি

যুক্তরাজ্য বর্তমানে নিজ দেশে প্রায় ৮৮% ডিম উৎপাদন করে, বাকি ১২% আসে আমদানি থেকে। বড় সুপারমার্কেটগুলো শুধুমাত্র ‘ব্রিটিশ লায়ন’ ব্র্যান্ডের ডিম বিক্রি করে, যা রান্না না করেও নিরাপদ বলে খাদ্যমান সংস্থা (FSA) ঘোষণা করেছে। তবে রেস্তোরাঁ ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বিদেশি ডিম বেশি ব্যবহৃত হয়।

উইলিয়ামস বলেন, “খুচরা বাজার নিয়ে আমি চিন্তিত নই”, কারণ সেটি কেবল বাজারের ৬৫%। কিন্তু বাকি ৩৫%—খাদ্যসেবা (১৮%) ও প্রক্রিয়াকরণ খাত (১৭%)—মূল্য প্রতিযোগিতার কারণে ইউক্রেনের জন্য আকর্ষণীয় বাজারে পরিণত হয়েছে।

তার মতে, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাণিকল্যাণ ও পরিবেশ রক্ষায় যুক্তরাজ্যের কঠোর নিয়ম উৎপাদন খরচ বাড়ায় প্রায় ১৪% পর্যন্ত, যা ইউক্রেনের ক্ষেত্রে নেই। “এ কারণেই তারা এখন সহজে এবং কম খরচে আমাদের বাজারে ডিম পাঠাতে পারছে।” তিনি বলেন।

France raises alarm over Ukrainian egg imports | Food Business Middle East  & Africa - Africa's No.1 Food & Beverage Manufacturing Industry Magazine  and Website

ভবিষ্যৎ বাণিজ্য ও সরকারের অবস্থান

ইউক্রেন চাইছে, শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা ২০২৯ সাল পর্যন্ত বহাল থাকুক। যদিও যুক্তরাজ্য অধিকাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে সেই মেয়াদ বাড়িয়েছে, ডিম ও পোলট্রিকে “সংবেদনশীল পণ্য” হিসেবে গণ্য করে কেবল দুই বছরের জন্য ছাড় দিয়েছে।

সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা আমাদের কৃষকদের পাশে আছি এবং ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরিবেশবান্ধব বাজেট দিয়েছি। ব্রিটিশ খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে আমরা কাজ করছি এবং বাণিজ্য চুক্তিতে কৃষকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করব। সরবরাহ ব্যবস্থাকে ন্যায্য রাখতে এবং উৎপাদকদের জন্য সমান ক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে নতুন বিধিনিয়ম প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় আছি।”

ডিম_আমদানি, যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন, পোল্যান্ড, প্রাণিকল্যাণ, ব্রিটিশ_কৃষক, বাণিজ্য_নীতি