মালয়েশিয়ায় সরকারি অনুমোদিত এক নৈশভোজে মুসলিম অতিথিদের উপস্থিতিতে হুইস্কি পরিবেশনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। সমালোচনার মুখে পড়েছেন পর্যটনমন্ত্রী টিওং কিং সিং, যার পদত্যাগের দাবি উঠেছে—আর তাতে আবারও উস্কে উঠেছে মালয়েশিয়ার চলমান ধর্ম ও সংস্কৃতি-ভিত্তিক বিভাজন।
সরকারি নৈশভোজে বিতর্কের সূত্রপাত
মালয়েশিয়ায় সরকারি অনুমোদিত এক গালা ডিনারে মুসলিম অতিথিদের উপস্থিতিতে হুইস্কি পরিবেশনের ঘটনাকে ঘিরে দেশজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উঠেছে, যা প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের প্রশাসনে চলমান সাংস্কৃতিক বিভাজন ও ধর্মীয় উত্তেজনাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
রক্ষণশীল ধারা ও রাজনৈতিক চাপ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালয়েশিয়ার রাজনীতি ক্রমেই রক্ষণশীলতার দিকে ঝুঁকেছে। প্রায় তিন কোটি চল্লিশ লাখ জনসংখ্যার এই দেশের ৬০ শতাংশই মালয় মুসলিম, যাদের সমর্থন ধরে রাখতে আনোয়ারের সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে।
২০২২ সালের সাধারণ নির্বাচনে এই মুসলিম ভোটারদের বড় অংশ আনোয়ারের বহুসংস্কৃতিবাদী জোটকে প্রত্যাখ্যান করে, বরং জাতীয়তাবাদী বিরোধী জোটকে সমর্থন জানায়। সেই পরাজয়ের পর থেকে সমালোচকেরা দাবি করছেন, আনোয়ার ক্রমশ ডানমুখী নীতি গ্রহণে বাধ্য হচ্ছেন, যাতে রক্ষণশীল ভোটারদের সমর্থন না হারান।
কেন্দ্রবিন্দুতে পর্যটনমন্ত্রী টিওং কিং সিং
সর্বশেষ বিতর্কের মূল কেন্দ্রে রয়েছেন পর্যটনমন্ত্রী টিওং কিং সিং, যাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে সরকারি অনুষ্ঠানে হুইস্কি পরিবেশনের অনুমতি দেওয়ার জন্য। সমালোচকেরা বলছেন, তিনি মালয় মুসলিমদের ধর্মীয় সংবেদনশীলতা এবং ইসলামকে সরকারি ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি ও মর্যাদাকে অসম্মান করেছেন।
গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবাল ট্রাভেল মিট ২০২৫’-এর গালা ডিনারে এই ঘটনা ঘটে, যেখানে সরকারি প্রতিনিধি ও অতিথিদের জন্য হুইস্কি পরিবেশনের অনুমতি দেওয়া হয়।
সরকারি নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত
মালয়েশিয়ায় সরকারি নীতিমতে, কোনো সরকারি অনুষ্ঠানে অ্যালকোহল পরিবেশন নিষিদ্ধ। অথচ এই গ্লোবাল ট্রাভেল মিটের ওয়েবসাইটে আয়োজক হিসেবে উল্লেখ ছিল ‘ট্যুরিজম মালয়েশিয়া’র নাম—যা সরকার পরিচালিত পর্যটন প্রচার সংস্থা।
এ কারণে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, সরকার কি নিজেই তার নীতিকে লঙ্ঘন করছে? নাকি এটি সরকারের অভ্যন্তরীণ সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের নতুন প্রকাশ?
রাজনৈতিক পরিণতি ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনাকে ঘিরে সমাজে আবারও ‘ধর্ম বনাম আধুনিকতা’ বিতর্ক জোরদার হয়েছে। কেউ এটিকে সাংস্কৃতিক সহনশীলতার পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন এটি ইসলামিক মূল্যবোধের অবমাননা।
বিশ্লেষকদের মতে, আনোয়ারের সরকার এখন একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যের মধ্যে রয়েছে—একদিকে বহুত্ববাদ ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি রক্ষা এবং অন্যদিকে রক্ষণশীল ভোটব্যাংকের চাপ মোকাবিলা।
সরকারি অনুষ্ঠানে হুইস্কি পরিবেশনের এই বিতর্ক শুধু একটি সামাজিক ইস্যু নয়; এটি মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতির দিকনির্দেশনা নির্ধারণেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
#Malaysia #AnwarIbrahim #CultureWar #TiongKingSing #TourismMalaysia #WhiskyBan #Sarakhon_Report