চীনা খনন কোম্পানির বিরুদ্ধে ৮০ বিলিয়ন ডলারের মামলা জ্যাম্বিয়াকে ফেলেছে জটিল কূটনৈতিক সংকটে। একদিকে চীনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সম্পর্ক, অন্যদিকে স্থানীয় জনগণের ক্ষোভ—এই দুইয়ের ভারসাম্য রক্ষা এখন লুসাকা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব আর জনগণের ক্ষোভের মাঝে জ্যাম্বিয়া
চীনা খনন কোম্পানির বিরুদ্ধে জ্যাম্বিয়ার কৃষকদের দায়ের করা ৮০ বিলিয়ন ডলারের মামলাটি দক্ষিণ আফ্রিকার দেশটির জন্য বড় এক কূটনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। একদিকে চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক, অন্যদিকে স্থানীয় জনগণের ক্ষোভ—এই দুইয়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে লুসাকা সরকার।
দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের পটভূমি
গত কয়েক দশক ধরে চীন ও জ্যাম্বিয়ার মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। চীনা বিনিয়োগে দেশটিতে বিমানবন্দর, রেলপথ, বাঁধসহ বহু বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এই সহযোগিতা জ্যাম্বিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখলেও, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিষাক্ত বর্জ্য দুর্ঘটনা সেই সম্পর্কের ওপর ছায়া ফেলেছে।
বিষাক্ত অ্যাসিড ছড়িয়ে পরিবেশ বিপর্যয়
জ্যাম্বিয়ার ১৭৬ জন কৃষক স্থানীয় আদালতে দুটি চীনা খনন কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন—সিনো মেটালস লিচ জ্যাম্বিয়া ও এনএফসি আফ্রিকা মাইনিং। অভিযোগ করা হয়েছে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কিতওয়ে শহরের কাছে একটি টেইলিংস বাঁধ ধসে পড়ে এবং তাতে বিপুল পরিমাণ অ্যাসিডিক বর্জ্য নদী, খাল ও কৃষিজমিতে ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী লুসাকা থেকে প্রায় ২৮৫ কিলোমিটার উত্তরে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনাকে কৃষকরা ‘একটি পরিবেশগত বিপর্যয়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
জীবিকা ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বিপর্যস্ত কৃষক সমাজ
মামলার আবেদনে কৃষকরা উল্লেখ করেছেন, এই দুর্ঘটনা তাদের ফসল ও গবাদিপশুর ক্ষতি করেছে, জমি দূষিত করেছে এবং স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়েছে। তারা দাবি করছেন, দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ তাদের তাৎক্ষণিকভাবে সতর্ক করেনি, ফলে তারা সাত মাস ধরে দূষিত পরিবেশে বসবাস করতে বাধ্য হন।
সংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
কৃষকদের অভিযোগ, এই দুর্ঘটনা শুধু তাদের জীবিকা ধ্বংস করেনি, বরং তাদের সংবিধানিক অধিকারও লঙ্ঘন করেছে। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন।
চাপে জ্যাম্বিয়ার সরকার
চীনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় জ্যাম্বিয়া। দেশটির অবকাঠামো উন্নয়নের বড় অংশই চীনা অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু স্থানীয় জনগণের দাবি উপেক্ষা করলে সরকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়তে পারে। ফলে এখন জ্যাম্বিয়ার নেতৃত্বকে একদিকে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক, অন্যদিকে জনগণের স্বার্থ—দুইয়ের মধ্যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করতে হচ্ছে।
এই মামলাটি শুধু পরিবেশগত ক্ষতির প্রশ্ন নয়, বরং আফ্রিকায় চীনা বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিচ্ছে। জ্যাম্বিয়ার সরকার কীভাবে এই জটিল পরিস্থিতি সামাল দেয়, সেটিই এখন নজরে রাখছে পুরো আন্তর্জাতিক সমাজ।
#জ্যাম্বিয়া #চীন #খননকোম্পানি #আন্তর্জাতিক_সংকট #পরিবেশ_দূষণ #কূটনীতি #আফ্রিকা #সারাক্ষণ_রিপোর্ট