লিড
বিটকয়েনের দাম ইতিহাসের নতুন উচ্চতায় পৌঁছে ১ লাখ ২৫ হাজার ডলার অতিক্রম করেছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও ক্রিপ্টো বাজারে নতুন আশাবাদ জাগিয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্পট ETF বিনিয়োগ ও সরবরাহ সংকট এই উত্থানের প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
ঐতিহাসিক উচ্চতায় ক্রিপ্টো বাজারের উচ্ছ্বাস
রবিবার বিটকয়েনের দাম ইতিহাসের নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে—১ লাখ ২৫ হাজার ডলারেরও বেশি। সপ্তাহজুড়ে এর দাম বেড়েছে ১১ শতাংশের বেশি, যা ক্রিপ্টো বাজারে নতুন করে আশাবাদ তৈরি করেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্পট এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে (ETF) বিপুল বিনিয়োগ এই উত্থানের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বর্তমানে বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ২৪ হাজার ৮০ ডলার ঘোরাফেরা করছে, যা সপ্তাহান্তের সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৫ হাজার ৭০০ ডলারের কাছাকাছি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এক্সচেঞ্জে রাখা বিটকয়েনের পরিমাণ ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। গত দুই সপ্তাহে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার বিটকয়েন—মূল্য প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার—এক্সচেঞ্জ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যস্তর নজরে
ক্রিপ্টো বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিটকয়েনের পরবর্তী দিকনির্দেশনা নির্ধারণে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রেজিস্ট্যান্স লেভেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রথম বড় বাধা হলো ১ লাখ ২৬ হাজার ১০০ ডলার, যা জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে তৈরি হওয়া মূল দাম সীমার উপরের সীমা নির্দেশ করে। যদি বিটকয়েন এই সীমা অতিক্রম করতে না পারে, তাহলে দাম ফের কমে ১ লাখ ১৫ হাজার ডলারের কাছাকাছি নেমে আসার ঝুঁকি রয়েছে।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তর ১ লাখ ৩৫ হাজার ডলার। ডেরিবিটের অপশন ডেটা অনুযায়ী, এই স্তরে বাজারসৃষ্টিকারীরা নেট লং অবস্থানে রয়েছে। তারা সাধারণত বাজারের প্রবণতার বিপরীতে লেনদেন করে—অর্থাৎ দাম বাড়লে বিক্রি করে, কমলে কেনে—যা অস্থিরতা কমায় ও প্রতিরোধ সৃষ্টি করে।
তৃতীয় এবং সবচেয়ে মনস্তাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্তর হলো ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এই দামে ডেরিবিটে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের ওপেন ইন্টারেস্ট রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এমন উচ্চ ওপেন ইন্টারেস্ট কোনো সম্পদের দিকনির্দেশনা নির্ধারণে চুম্বকের মতো কাজ করে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান এই দামে বিকল্প বিক্রি করেছে, তারা দামকে ওই সীমার নিচে রাখার চেষ্টা করতে পারে।
ভূরাজনৈতিক অস্থিরতায় নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিটকয়েন
বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শাটডাউন সংকট বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নিরাপদ সম্পদের চাহিদা বাড়িয়েছে। অনেকেই এখন বিটকয়েনকে সরকারি অস্থিরতার বিরুদ্ধে সুরক্ষার মাধ্যম হিসেবে দেখছেন।
আরকা ইনভেস্টমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা জেফ ডরমান বলেন, “আমি কেবল তখনই বিটকয়েন কিনি, যখন মানুষ সরকার ও ব্যাংকের ওপর আস্থা হারায়।”
ক্রিপ্টো বাজার বিশ্লেষক নোয়েল অ্যাকসন মন্তব্য করেন, “সোনার জন্য যা ভালো, বিটকয়েনের জন্যও তা ভালো।” তার মতে, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি, বৈশ্বিক ঋণ সম্প্রসারণ এবং মুদ্রামূল্য হ্রাসের আশঙ্কা ক্রিপ্টোতে অর্থপ্রবাহ বাড়াচ্ছে।
সরবরাহ সংকট ও বিনিয়োগ প্রবাহে গতি
বাজারে সরবরাহ কমছে—এ এক নতুন সংকেত। এক্সচেঞ্জ থেকে ব্যাপক বিটকয়েন উত্তোলনের কারণে ওটিসি ডেস্কগুলো এখন মজুদ ঘাটতির মুখে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানিক চাহিদা খনির নতুন কয়েন উৎপাদনের চেয়ে বেশি, ফলে সরবরাহ সংকুচিত হচ্ছে। এর সঙ্গে গত সপ্তাহে রেকর্ড ৩.২৪ বিলিয়ন ডলারের ETF বিনিয়োগ যুক্ত হয়ে বাজারে নতুন গতিশীলতা আনছে।
অক্টোবর ঐতিহাসিকভাবে বিটকয়েনের জন্য “আপটোবর” নামে পরিচিত—একটি বুলিশ মাস। তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি বিটকয়েন ১ লাখ ২৬ হাজার ১০০ ডলারের সীমা ভেঙে এগিয়ে যায়, তাহলে দ্রুত ১ লাখ ৩৫ হাজার ডলার এমনকি তারও ওপরে পৌঁছানো সম্ভব।
সতর্কতা ও ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
যদিও বাজারে প্রবল গতি তৈরি হয়েছে, বিনিয়োগকারীরা এখনো সতর্ক। রেজিস্ট্যান্স স্তরগুলো দৃঢ় এবং প্রতিষ্ঠানিক হেজিং কার্যক্রম দামের উত্থানকে কিছুটা শ্লথ করতে পারে। তবু বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, বিশ্লেষকরা বলছেন, বিটকয়েন এখন নতুন এক মূল্য-আবিষ্কারের পর্যায়ে প্রবেশ করছে—যা কেবল জল্পনা নয়, বরং গভীরতর প্রতিষ্ঠানিক আস্থার প্রতিফলন।
#Bitcoin #CryptoMarket #ETF #DigitalAsset #বিটকয়েন #ক্রিপ্টোমুদ্রা #অর্থনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট