০৪:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
অস্ট্রেলিয়ার বন্ডি বিচে রক্তাক্ত উৎসব, বন্দুক সহিংসতায় ১৫ প্রাণহানি ৭৫ বছরের বন্ধন জোরদার করতে জর্ডানে মোদি, শুরু তিন দেশ সফর সিডনির বন্ডি সৈকতে বন্দুক তাণ্ডব, শোকস্তব্ধ অস্ট্রেলিয়া, অস্ত্র আইন আরও কঠোরের পথে ২ লাখ ১০ হাজার বছরের মানবপথের সাক্ষী ফায়া প্যালিওল্যান্ডস্কেপ রিলস আর ভিউয়ের বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সঠিকভাবে হাইকিং করার উপায় বিশ্বের দীর্ঘতম ফ্লাইট উড্ডয়ন মেক্সিকোতে জরুরি অবতরণের চেষ্টায় ছোট ব্যক্তিগত জেট বিধ্বস্ত, নিহত অন্তত সাত জাপানের পরবর্তী শিল্প অধ্যায়ে পথ দেখাচ্ছে উদ্ভাবনী দক্ষতা নির্ভুল স্টিল সমাধানে আগামীর রূপ নির্মাণ ট্রাম্পের ছায়ায়, জেডি ভ্যান্স নীরবে ২০২৮ ও তার পরবর্তী সময়ে ম্যাগা আন্দোলনের উত্তরাধিকার গ্রহণের পরিকল্পনা গড়ে তুলছেন।

‘সোনার বাংলায়’ মৃত্যু

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহু বছর আগে লিখেছিলেন, ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, আমার সোনার বাংলা… ও মা, বসন্তকালে তোমার আম্রকাননের সুবাস আমার হৃদয়কে আনন্দে উন্মত্ত করে তোলে…।’ কিন্তু এ বসন্তে পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলার আম্রকাননে আর কোনো সুবাস নেই, আছে শুধু মৃত্যুর দুর্গন্ধ। গণহত্যার ফলে অসংখ্য হৃদয় আজ শোকে উন্মত্ত।

পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত গণহত্যার সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন। কেউ বলেন হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, কেউ বলেন দুই লাখ। সম্ভবত পঞ্চাশ হাজার একটি সংযত হিসাব। তবে শরণার্থীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে স্পষ্ট—১ মে পর্যন্ত ভারতের চারটি রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ছয় লাখ পঞ্চাশ হাজার মানুষ।

পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের দাবি, যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা ছিলেন বাঙালি—পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসকারী মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান। ২৫ মার্চ স্বায়ত্তশাসন নিয়ে আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পরপরই পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে তাদের নির্মূল করতে শুরু করে। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের বক্তব্য, ‘পূর্বাঞ্চলে’ যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা ছিলেন বিহারি—ভারত বিভাগের পর বিহার ও ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা মুসলমান, যারা তখনো বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পুরোপুরি একীভূত হয়নি।

করাচি সফরে দেখা যায়, পাকিস্তানের অর্থনীতি নিম্নমুখী, পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশেই সামরিক আইন জারি রয়েছে, আর সরকার মরিয়া হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সাত কোটি মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে—এমন একটি ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করছে। করাচির মানুষ বিহারিদের হত্যাকাণ্ডে গভীরভাবে ক্ষুব্ধ। তবে তাদের মতে, এসব হত্যাকাণ্ড সেনাবাহিনী নয়, বরং স্বায়ত্তশাসন ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আওয়ামী লীগের কিছু সদস্য করেছে। প্রায় সবাই সেনাবাহিনীর হাতে বাঙালি হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

পশ্চিম পাকিস্তানিদের ধারণা, পুরো পরিস্থিতি ভারতের ষড়যন্ত্র। ভারতীয় ‘অনুপ্রবেশকারী’—ইউনিফর্মবিহীন সৈন্য, ভারতীয় গোলাবারুদ, এমনকি ভারতীয় শরণার্থী—সবই নাকি কিছু ‘রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান’-এর সহায়তায় ঘটছে।

দিল্লিতে গেলে দেখা যায়, সাম্প্রতিক ইতিহাসে খুব কমই এমন জাতীয় ঐক্য দেখা গেছে। জনগণ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ওপর চাপ দিচ্ছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে এবং ‘মুক্তিযোদ্ধাদের’ অস্ত্র সরবরাহ করতে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বাঙালিদের ওপর চালানো গণহত্যার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরছে। ভারত রাজনৈতিক ও মানসিক দিক থেকে পরিস্থিতির পূর্ণ সুবিধা নিচ্ছে, তবে এখনো পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংযম দেখাচ্ছে।

কলকাতা এবং বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে আসা হাজার হাজার শরণার্থীকে দেখা যায়—যাদের মাত্র এক-চতুর্থাংশ শিবিরে রয়েছে। বাংলাদেশের সরকারের আশাবাদী মন্ত্রীরা স্বীকৃতি ও অস্ত্রের জন্য আবেদন জানাচ্ছেন। শরণার্থীরা তুলে ধরছেন, গত ২৫ বছর ধরে পশ্চিম পাকিস্তান কীভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে একটি অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ হিসেবে ব্যবহার করেছে। ২৫ মার্চের ঘটনার পর তাদের বিশ্বাস, দুই অংশে বিভক্ত পাকিস্তানের অংশ হিসেবে আর তাদের দেশ থাকা সম্ভব নয়।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ৯৮ শতাংশ আসন জিতে নেয়। শেখ মুজিব ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলেন, বিচ্ছিন্নতার নয়। কিন্তু শক্তিশালী আমলাতন্ত্র ও কিছু শিল্পপতির সহায়তায় পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা এই ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি হয়নি। ২৫ মার্চ তারা সামরিক আইন জারি করে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে, শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে এবং সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এই সামরিক অভিযানের আগে ও পরে, সাধারণত অহিংস হিসেবে পরিচিত এই উপমহাদেশে, পূর্ব পাকিস্তানের কিছু গোষ্ঠীও নিজেদের মতো করে হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও বিশ্ব কেন পূর্ব পাকিস্তানের বিষয়ে এত উদাসীন? আমেরিকানরা কি কেবল এজন্যই উদাসীন যে এখানে মুসলমান মুসলমানকে হত্যা করছে এবং এতে কোনো শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান জড়িত নয়? নাকি এবার কোনো আদর্শিক বিষয়—বিশেষ করে সাম্যবাদ—জড়িত নয় বলেই? অথবা তারা কি আশঙ্কা করছে যে পূর্ব পাকিস্তান সহজেই দ্বিতীয় ভিয়েতনামে পরিণত হতে পারে?

জাতিসংঘ কেন নীরব? গণহত্যাবিরোধী আন্তর্জাতিক নীতির যুগে, পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাগুলো কি কেবল ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’, নাকি মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন? ভারত ও পাকিস্তানের সশস্ত্র অনুপ্রবেশে যদি বিশ্বশান্তি হুমকির মুখে পড়ে, তবে কি একে এখনো ‘ঘরোয়া’ বলা যায়?

নিরপেক্ষ দেশগুলোও কেন নীরব? প্রতিটি দেশের ভেতরেই কি একটি করে ‘বাংলাদেশ’ লুকিয়ে আছে? ১৯৭০-এর দশকে জনগণের ‘স্বায়ত্তশাসন প্লাস’ দাবির মুখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি এমন কোনো কার্যকর প্রক্রিয়া তৈরি করতে পারে না, যাতে ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইল দূরত্বে বিভক্ত কোনো জনগোষ্ঠী—যেমন পূর্ব বাংলার মানুষ—সত্যিকারের স্বাধীন ইচ্ছায় মুক্তির পথ বেছে নিতে পারে?

বাংলাদেশ জন্ম নেওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে। সবুজ-লাল পতাকা, যার মাঝখানে সোনালি রঙে দেশের মানচিত্র আঁকা, কলকাতায় পাকিস্তানের সাবেক উপ-হাইকমিশনারের দপ্তরের ওপর উড়ছে। আর ‘মুক্তিযোদ্ধারা’ জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করেছে রবীন্দ্রনাথের গান—‘আমি তোমায় ভালোবাসি, আমার সোনার বাংলা…।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও বিশ্ব কি কিছুই করবে না?

জনপ্রিয় সংবাদ

অস্ট্রেলিয়ার বন্ডি বিচে রক্তাক্ত উৎসব, বন্দুক সহিংসতায় ১৫ প্রাণহানি

‘সোনার বাংলায়’ মৃত্যু

১১:২৬:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহু বছর আগে লিখেছিলেন, ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, আমার সোনার বাংলা… ও মা, বসন্তকালে তোমার আম্রকাননের সুবাস আমার হৃদয়কে আনন্দে উন্মত্ত করে তোলে…।’ কিন্তু এ বসন্তে পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলার আম্রকাননে আর কোনো সুবাস নেই, আছে শুধু মৃত্যুর দুর্গন্ধ। গণহত্যার ফলে অসংখ্য হৃদয় আজ শোকে উন্মত্ত।

পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত গণহত্যার সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন। কেউ বলেন হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, কেউ বলেন দুই লাখ। সম্ভবত পঞ্চাশ হাজার একটি সংযত হিসাব। তবে শরণার্থীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে স্পষ্ট—১ মে পর্যন্ত ভারতের চারটি রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ছয় লাখ পঞ্চাশ হাজার মানুষ।

পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের দাবি, যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা ছিলেন বাঙালি—পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসকারী মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান। ২৫ মার্চ স্বায়ত্তশাসন নিয়ে আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পরপরই পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে তাদের নির্মূল করতে শুরু করে। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের বক্তব্য, ‘পূর্বাঞ্চলে’ যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা ছিলেন বিহারি—ভারত বিভাগের পর বিহার ও ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা মুসলমান, যারা তখনো বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পুরোপুরি একীভূত হয়নি।

করাচি সফরে দেখা যায়, পাকিস্তানের অর্থনীতি নিম্নমুখী, পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশেই সামরিক আইন জারি রয়েছে, আর সরকার মরিয়া হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সাত কোটি মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে—এমন একটি ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করছে। করাচির মানুষ বিহারিদের হত্যাকাণ্ডে গভীরভাবে ক্ষুব্ধ। তবে তাদের মতে, এসব হত্যাকাণ্ড সেনাবাহিনী নয়, বরং স্বায়ত্তশাসন ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আওয়ামী লীগের কিছু সদস্য করেছে। প্রায় সবাই সেনাবাহিনীর হাতে বাঙালি হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

পশ্চিম পাকিস্তানিদের ধারণা, পুরো পরিস্থিতি ভারতের ষড়যন্ত্র। ভারতীয় ‘অনুপ্রবেশকারী’—ইউনিফর্মবিহীন সৈন্য, ভারতীয় গোলাবারুদ, এমনকি ভারতীয় শরণার্থী—সবই নাকি কিছু ‘রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান’-এর সহায়তায় ঘটছে।

দিল্লিতে গেলে দেখা যায়, সাম্প্রতিক ইতিহাসে খুব কমই এমন জাতীয় ঐক্য দেখা গেছে। জনগণ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ওপর চাপ দিচ্ছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে এবং ‘মুক্তিযোদ্ধাদের’ অস্ত্র সরবরাহ করতে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বাঙালিদের ওপর চালানো গণহত্যার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরছে। ভারত রাজনৈতিক ও মানসিক দিক থেকে পরিস্থিতির পূর্ণ সুবিধা নিচ্ছে, তবে এখনো পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংযম দেখাচ্ছে।

কলকাতা এবং বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে আসা হাজার হাজার শরণার্থীকে দেখা যায়—যাদের মাত্র এক-চতুর্থাংশ শিবিরে রয়েছে। বাংলাদেশের সরকারের আশাবাদী মন্ত্রীরা স্বীকৃতি ও অস্ত্রের জন্য আবেদন জানাচ্ছেন। শরণার্থীরা তুলে ধরছেন, গত ২৫ বছর ধরে পশ্চিম পাকিস্তান কীভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে একটি অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ হিসেবে ব্যবহার করেছে। ২৫ মার্চের ঘটনার পর তাদের বিশ্বাস, দুই অংশে বিভক্ত পাকিস্তানের অংশ হিসেবে আর তাদের দেশ থাকা সম্ভব নয়।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ৯৮ শতাংশ আসন জিতে নেয়। শেখ মুজিব ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলেন, বিচ্ছিন্নতার নয়। কিন্তু শক্তিশালী আমলাতন্ত্র ও কিছু শিল্পপতির সহায়তায় পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা এই ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি হয়নি। ২৫ মার্চ তারা সামরিক আইন জারি করে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে, শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে এবং সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এই সামরিক অভিযানের আগে ও পরে, সাধারণত অহিংস হিসেবে পরিচিত এই উপমহাদেশে, পূর্ব পাকিস্তানের কিছু গোষ্ঠীও নিজেদের মতো করে হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও বিশ্ব কেন পূর্ব পাকিস্তানের বিষয়ে এত উদাসীন? আমেরিকানরা কি কেবল এজন্যই উদাসীন যে এখানে মুসলমান মুসলমানকে হত্যা করছে এবং এতে কোনো শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান জড়িত নয়? নাকি এবার কোনো আদর্শিক বিষয়—বিশেষ করে সাম্যবাদ—জড়িত নয় বলেই? অথবা তারা কি আশঙ্কা করছে যে পূর্ব পাকিস্তান সহজেই দ্বিতীয় ভিয়েতনামে পরিণত হতে পারে?

জাতিসংঘ কেন নীরব? গণহত্যাবিরোধী আন্তর্জাতিক নীতির যুগে, পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাগুলো কি কেবল ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’, নাকি মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন? ভারত ও পাকিস্তানের সশস্ত্র অনুপ্রবেশে যদি বিশ্বশান্তি হুমকির মুখে পড়ে, তবে কি একে এখনো ‘ঘরোয়া’ বলা যায়?

নিরপেক্ষ দেশগুলোও কেন নীরব? প্রতিটি দেশের ভেতরেই কি একটি করে ‘বাংলাদেশ’ লুকিয়ে আছে? ১৯৭০-এর দশকে জনগণের ‘স্বায়ত্তশাসন প্লাস’ দাবির মুখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি এমন কোনো কার্যকর প্রক্রিয়া তৈরি করতে পারে না, যাতে ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইল দূরত্বে বিভক্ত কোনো জনগোষ্ঠী—যেমন পূর্ব বাংলার মানুষ—সত্যিকারের স্বাধীন ইচ্ছায় মুক্তির পথ বেছে নিতে পারে?

বাংলাদেশ জন্ম নেওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে। সবুজ-লাল পতাকা, যার মাঝখানে সোনালি রঙে দেশের মানচিত্র আঁকা, কলকাতায় পাকিস্তানের সাবেক উপ-হাইকমিশনারের দপ্তরের ওপর উড়ছে। আর ‘মুক্তিযোদ্ধারা’ জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করেছে রবীন্দ্রনাথের গান—‘আমি তোমায় ভালোবাসি, আমার সোনার বাংলা…।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও বিশ্ব কি কিছুই করবে না?