২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৩৬ শতাংশে, যা আগস্টের ৮.২৯ শতাংশের তুলনায় সামান্য বেশি। খাদ্য ও অখাদ্য—উভয় খাতেই দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনযাত্রার ব্যয় এখন ক্রয়ক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি গতিতে বাড়ছে।
মূল্যস্ফীতির সাম্প্রতিক প্রবণতা
বাংলা ট্রিবিউনের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯২ শতাংশ। অর্থাৎ বছরওভার-বছর ভিত্তিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা গেলেও, মাসওভার-মাস হারে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
খাদ্যখাতে মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বর মাসে বেড়ে হয়েছে ৭.৬৪ শতাংশ (আগস্টে ৭.৬০ শতাংশ), আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে ছিল ৮.৯৮ শতাংশ (আগস্টে ৮.৯০ শতাংশ)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেও দেখা গেছে, আগস্টে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.২৯ শতাংশ, যা সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে কম ছিল। সেপ্টেম্বরে তা আবার বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতিবিদরা একে “প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত” হিসেবে দেখছেন।
মূল কারণ ও বাজারের বাস্তবতা
অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে একাধিক কারণ—
- • ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি
- • আমদানি ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতি
- • বাসাভাড়া, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে খরচ বৃদ্ধি
- • পরিবহন ও সরবরাহ চেইনের ব্যয় বৃদ্ধি
- • আর্থিক খাতে শিথিল মুদ্রানীতি
এই সব মিলিয়ে বাজারে পণ্যমূল্যের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আমদানি নির্ভর পণ্য ও পরিষেবায় এ প্রভাব বেশি অনুভূত হচ্ছে।
জনজীবনে প্রভাব
মূল্যস্ফীতি বাড়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় বেড়েছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াত খরচ এখন পরিবারের বাজেটে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করছে।
মজুরি বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির গতির সঙ্গে তাল রাখতে না পারায় বাস্তব আয় (রিয়েল ওয়েজ) কমছে। এর ফলে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে এবং ভোক্তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও নীতিনির্ধারকদের চ্যালেঞ্জ
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এখন প্রয়োজন কঠোর মুদ্রানীতি ও সুদের হার পুনর্বিবেচনা।
সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, ট্যাক্স ও শুল্ক কাঠামো পুনর্মূল্যায়ন, এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা জরুরি।
একইসঙ্গে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভবিষ্যৎ চিত্র
বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাংলাদেশে আমদানি খরচ আরও বাড়াতে পারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, গুদাম ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন, এবং কার্যকর মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন—এই তিনটি দিকেই সরকারকে এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার আগের মাসের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেলেও, এটি এখনো উচ্চমাত্রায় রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়ন্ত্রিত মুদ্রানীতি, খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি, ও সুশাসনের মাধ্যমেই অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব।
#মূল্যস্ফীতি #বাংলাদেশ_অর্থনীতি #খাদ্যদ্রব্যের_দাম #বাংলাদেশ_ব্যাংক #অর্থনীতি_২০২৫ #সারাক্ষণ_রিপোর্ট #BanglaTribune #মুদ্রাস্ফীতি #Inflation_2025