চীনের সমুদ্র শক্তি বিপ্লবের নতুন অধ্যায়
বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক ইউনিট ফ্লোটিং অফশোর উইন্ড টারবাইন সফলভাবে তৈরি করেছে চীন। সমুদ্র অর্থনীতি ও পরিচ্ছন্ন শক্তি খাতে নেতৃত্ব ধরে রাখার এই উদ্যোগ দেশটির কার্বন নিরপেক্ষতার যাত্রায় এক বিশাল মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রকল্প ও প্রযুক্তিগত বিশদ
সমাবেশ ও উৎপাদন
দক্ষিণ চীনের গুয়াংসি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বেইহাই এলাকায় ১৬-মেগাওয়াট ক্ষমতার এই সিস্টেমের সমাবেশ সম্পন্ন হয়েছে। এতে ব্যবহৃত সব মূল উপাদান—মুরিং ক্যাবল (লাঙ্গর তার), টারবাইনের গিয়ারবক্স ও ব্যালাস্ট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা—সবই দেশীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে।
রোটর ও উৎপাদন সম্ভাবনা
টারবাইনের রোটরের ব্যাস ২৫২ মিটার, যা প্রায় সাতটি ফুটবল মাঠের সমান। এটি পূর্ণ সক্ষমতায় বছরে প্রায় ৪৪.৭ মিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘন্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে—যা প্রায় ৪,০০০টিরও বেশি গড় মানের আমেরিকান গৃহ চালানোর মতো শক্তি সরবরাহ করবে।
স্থাপন ও পরীক্ষণ
পরবর্তী ধাপে টারবাইনটি ৫০ মিটার গভীর সমুদ্রে স্থাপন করা হবে। ইনস্টলেশন ও পরীক্ষণ শেষে এটি গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করবে।
অর্ধ-ডুবান প্ল্যাটফর্ম ও ডায়নামিক ব্যালাস্ট
এই টারবাইনটি চীনের প্রথম ডায়নামিক ব্যালাস্ট সিস্টেমসহ একটি অর্ধ-ডুবান (semi-submersible) প্ল্যাটফর্মে বসানো হয়েছে। প্ল্যাটফর্মের তিনটি কলামে থাকা ট্যাঙ্কে পানি প্রবেশ বা নির্গমনের মাধ্যমে এটি নিজে থেকেই ঝড়, তরঙ্গ ও বাতাসের চাপ মোকাবিলা করতে পারে। ফলে স্থিতিশীলতা ও কর্মদক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
নেতৃত্ব ও নীতি প্রসঙ্গ
প্রকল্পটির নেতৃত্বে রয়েছে চায়না থ্রি গর্জেস কর্পোরেশন—বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থ্রি গর্জেস বাঁধের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তারা বৈশ্বিক হাইড্রোপাওয়ার খাতে অন্যতম প্রধান ডেভেলপার ও অপারেটর হিসেবে পরিচিত।
এর আগে স্কটল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব উপকূলে বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লোটিং উইন্ডফার্ম স্থাপন করা হয়েছিল, যার সক্ষমতা ছিল ৩০ মেগাওয়াট।
চীনের সরকার সমুদ্রবাতাস শক্তিকে (offshore wind) শক্তি রূপান্তর কৌশলের একটি প্রধান স্তম্ভ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত এক অর্থনৈতিক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একে “উচ্চ-গুণগত অর্থবর্ধক” সমুদ্র অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে অভিহিত করেন।
এই উদ্যোগ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ ও গুরুত্ব
- ফ্লোটিং টারবাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রযুক্তিগতভাবে জটিল; বিশেষ করে গভীর সমুদ্রে স্থায়িত্ব ও নির্ভরযোগ্যতা বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
- ডায়নামিক ব্যালাস্ট সিস্টেমের সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অতিরিক্ত দোলায় বা ব্যালান্স নষ্ট হয়ে সিস্টেম বিকল না হয়।
- বাণিজ্যিক সাফল্যের জন্য সাশ্রয়ী উৎপাদন খরচ ও দীর্ঘমেয়াদী রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চীনকে নিজস্ব প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন আরও শক্তিশালী করতে হবে।
চীনের এই ফ্লোটিং উইন্ড টারবাইন শুধু একটি প্রযুক্তিগত অর্জন নয়, এটি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গীকারের প্রতীক—যা ভবিষ্যতের স্বল্প কার্বন অর্থনীতির পথে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।
#সমুদ্রশক্তি #চীন #উইন্ডটারবাইন #পরিচ্ছন্নশক্তি #চীনেরউদ্ভাবন #সারাক্ষণরিপোর্ট