বাংলাদেশের ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে; সারা দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু তীব্রভাবে বেড়ে চলেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের সতর্কবার্তা, জরুরি ও সমন্বিতভাবে মশা নিয়ন্ত্রণে অভিযান শুরু না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) তথ্যানুসারে, চলতি বছরের ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০,৬৮৯ এবং মৃতের সংখ্যা ২১৫ জন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কাবিরুল বাশার বলেন, সেপ্টেম্বরেই মশাবাহিত এ রোগের প্রকোপ তীব্র ছিল; জলবায়ু পরিবর্তন ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি দীর্ঘ ছুটি এবং স্থানীয় সরকার পর্যায়ের দুর্বল উদ্যোগে মশা নিধন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় চলতি মাসে পরিস্থিতি আরও “উদ্বেগজনক” পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। তিনি বলেন, “এখনই পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।”
তার ভাষ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মশার প্রজনন মৌসুম দীর্ঘ হয়েছে; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ফগিং কার্যক্রমে বিলম্ব সমস্যা বাড়িয়েছে। আগে মূলত শহরকেন্দ্রিক থাকলেও এখন ডেঙ্গু ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ছে, ফলে দেশজুড়ে রোগটি স্থায়ীভাবে (এনডেমিক) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় এবং সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন—আগামী কয়েক সপ্তাহে সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে।
পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে চিকুনগুনিয়ার বাড়তি সংক্রমণ—এটিও মশাবাহিত রোগ। যদিও সাধারণত প্রাণঘাতী নয়, তবু শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের দীর্ঘস্থায়ী জয়েন্ট-ব্যথা ও দুর্বলতা রেখে যায়।
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর সবচেয়ে ভয়াবহ বছর ছিল ২০২৩; সে বছর ১,৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজারেরও বেশি মানুষ। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—শক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে দেশ আবারও এক ধ্বংসাত্মক চক্রের মুখোমুখি হতে পারে।