তিন্নি ,বা তার পূর্ণ নাম শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি , বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা অভিনেত্রী, মডেল এবং টেলিভিশন তারকা। তিনি ২০০২ সালে “আনন্দধারা ফোটোজেনিক ২০০২” প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তার অভিনয় ক্যারিয়ারের সূচনা করেন। এই প্রতিযোগিতায় তিনি পঞ্চম রানার আপ হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তার এই বিজয় তাকে মিডিয়া ও মডেলিং জগতে পরিচিতি এনে দেয়। তার অভিনয় যাত্রা টেলিভিশন ধারাবাহিক ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সফলভাবে প্রসারিত হয়েছে।
শৈশব ও শুরুর দিন
শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি ১৯৮৩ সালের ১৭ মে ঢাকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে ঢাকায়, যেখানে তার পরিবার তাকে সাহসী ও স্বাধীনচেতা হতে শেখায়। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, যা তার অভিনয় জগতে প্রবেশের পথ সুগম করে।
ক্যারিয়ারের শুরু
তিন্নির ক্যারিয়ার শুরু হয় “আনন্দধারা ফোটোজেনিক ২০০২” প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে। তার সৌন্দর্য এবং মডেলিং দক্ষতা তাকে সেলিব্রিটি বানিয়ে তোলে। এরপর, ২০০৪ সালে তিনি প্রথম অভিনয় শুরু করেন টেলিভিশন নাটক “৬৯” দ্বারা, যেখানে তার চরিত্র “দীপা” বেশ জনপ্রিয় হয়। তার অভিনয়ের প্রাকৃতিকতা এবং চরিত্রের গভীরতা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং তাকে বাংলাদেশ টেলিভিশন নাটকের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠে।
খ্যাতির দিকে অগ্রগতি
তার পরবর্তী বছরগুলোতে তিন্নি বেশ কিছু জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেন। এর মধ্যে “চোখের বাইরে”, “স্বপ্নের নীল পাখি”, “রোমজিয়ের আয়না”, এবং “অপেক্ষা” নাটকগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যা তার অভিনয়ের বৈচিত্র্য ও দক্ষতার প্রমাণ। তার চরিত্রগুলোতে যে বাস্তবতা ও মানবিকতা ছিল, তা দর্শকদের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেছিল।
বিজ্ঞাপন জগতে প্রবেশ
তিন্নির জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র টেলিভিশনে সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি মডেল হিসেবেও বেশ খ্যাতি অর্জন করেন। বিশেষত, “সুন্দরিতমা” বডি সাবান বিজ্ঞাপনটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। এই বিজ্ঞাপনটি তাকে দেশের অন্যতম শীর্ষ মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
চলচ্চিত্রে অভিষেক
তিন্নি তার অভিনয় ক্যারিয়ার শুধু টেলিভিশন নাটকেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। ২০০৭ সালে, তিনি চলচ্চিত্রে পা রাখেন “মেড ইন বাংলাদেশ” নামক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এই চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের প্রশংসা পায় এবং তিন্নি তার চরিত্রে যথাযথভাবে অভিনয় করেন। এরপর ২০১২ সালে “সে আমার মন কেড়ে চে” নামক চলচ্চিত্রে শাকিব খানের সাথে অভিনয় করেন, যা তার জনপ্রিয়তাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
ব্যক্তিগত জীবন
তিন্নি তার ব্যক্তিগত জীবনে একাধিক সম্পর্কের মধ্যে ছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি অভিনেতা আদনান ফারুক হিলোলকে বিয়ে করেন, কিন্তু কিছু বছর পর তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। ২০১৪ সালে তিনি আদনান হুদা সাদকে বিয়ে করেন, কিন্তু এই সম্পর্কও ২০১৭ সালে বিচ্ছেদের মাধ্যমে শেষ হয়।
অতিরিক্ত সংগ্রাম ও পুনর্বাসন
২০১৭ সালে, তিন্নি তার জীবনের কঠিন সময়গুলোর কথা প্রকাশ্যে আলোচনা করেন। তিনি ড্রাগ অ্যাডিকশন এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে খোলামেলা বক্তব্য দেন। তার এই অভিজ্ঞতা তাকে জীবনের আরও কঠিন বাস্তবতা বুঝতে সাহায্য করেছে এবং তিনি এখন তার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন। বর্তমানে তিনি কানাডার মন্ট্রিয়ালে তার মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন এবং একটি ডে কেয়ার সেন্টারে কাজ করছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
তিন্নি তার অভিনয় জীবনে বিশ্রাম নেওয়ার পর, তিনি তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করছেন। তিনি কানাডার নাগরিকত্ব লাভের পর বাংলাদেশে ফিরে আসার পরিকল্পনা করেছেন এবং পুনরায় অভিনয়ে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
তিন্নির জীবন এক কথায় সাহসিকতার গল্প। তার কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায় তাকে বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের শীর্ষে নিয়ে এসেছে। তিনি নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যা তার অভিনয় দক্ষতার প্রমাণ। তার জীবন ও ক্যারিয়ারের এই যাত্রা শুধুমাত্র বাংলাদেশের শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির জন্য নয়, বরং প্রতিটি সংগ্রামী মানুষের জন্য একটি প্রেরণা।