০১:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
চীনে এনবিএর প্রত্যাবর্তন: ম্যাকাওতে প্রাক-মৌসুমে নেটস–সানস, সম্পর্কের নতুন অধ্যায় আদানি গ্রুপের নতুন উদ্যোগ: নবি মুম্বাই বিমানবন্দরের দ্বিতীয় টার্মিনাল নির্মাণ ইংল্যান্ডের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় ‘ভুলে যাওয়া রাজা অ্যাথেলস্টানকে শ্রদ্ধা জানাতে শত মাইলের নতুন ভ্রমণ পথ ‘ দেশের হারিয়ে যাওয়া লাল ডাকবাক্স: ডিজিটাল যুগে বিলুপ্ত চিঠির স্মৃতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৩) শরৎ বাধা পেল, বসন্ত কি আসতে পারবে? মোদী-ট্রাম্প বৈঠক: ভারতের জন্য নতুন সম্ভাবনা ইসরাইল ও হামাস কী কী ছাড় দিয়েছে গাজায় বন্দি–যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে? সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের খ্যাতি ছিল একাধারে শিক্ষক, লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সরেজমিন খাগড়াছড়ি: একদিকে ক্ষোভ-আতঙ্ক, আরেকদিকে নজরদারি

সরেজমিন খাগড়াছড়ি: একদিকে ক্ষোভ-আতঙ্ক, আরেকদিকে নজরদারি

  • Sarakhon Report
  • ০৭:২১:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • 7

একদিকে পাহাড়ি জনগোষ্টীর মধ্যে ক্ষোভ, গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকে বাড়িছাড়া; আবার অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি। এক মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ-অবরোধ এবং সহিংসতায় তিন জনের মৃত্যুর ঘটনার দুই সপ্তাহ পর খাগড়াছড়ির গুইমারায় এরকম পরিবেশই দেখা গেছে।

গত ২৩ শে সেপ্টেম্বর পাহাড়ি স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা উপজেলায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যা কয়েকদিন ধরে চলে।

খাগড়াছড়িতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও গুইমারা এলাকায় অবরোধকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় বাঙালিদের মুখোমুখি অবস্থার সৃষ্টি হয়। ২৭শে সেপ্টেম্বর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় এবং ২৮ শে সেপ্টেম্বর গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনজন মারমা যুবক। এছাড়া গুলিতে ও হামলায় আহত হন অনেকেই।

সরেজমিনে খাগড়াছড়ি ও গুইমারা উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়িদের অবরোধ এবং প্রশাসনের ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করার পর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। যদিও গুইমারা রামসু বাজারে হামলা অগ্নিসংযোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মারমা সম্প্রদায় এবং স্থানীয় পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ আছে।

গুইমারায় উপজেলায় দেখা যায়, সহিংসতার ১০ দিন পরেও সেখানে কড়া পাহারায় যৌথ বাহিনী।

অবরোধ এবং ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হলেও স্থানীয়দের মধ্যে ভয় আতঙ্ক কাজ করছে। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেও অনেকের মধ্যে অস্বস্তি দেখা যায়।

২৮ শে সেপ্টেম্বর গুলিতে নিহত থোইচিং মারমার বাবা হোলাচাই মারমার বক্তব্যেও আতঙ্কের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। গুলিতে ছেলের মৃত্যুর বিচার নিয়ে তিনি বলেন, কোনো মামলা তিনি করবেন না।

তার ভাষায়, মামলা করলে আরো হয়রানির শিকার হতে হবে। তিনি চান পাহাড়ে আর যেন কোনো পিতা সন্তান হারা না হয়।

ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশের পর ভুক্তভোগীর পরিবার এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ হতাশা, গুলিবর্ষণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান, ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত মিলিয়ে খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক ঘটনা জটিল সমীকরণ তৈরি হয়েছে।

ধর্ষণের অভিযোগ এবং হতাশা

২৩শে সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে পাহাড়ি একজন স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ সামনে আসে। শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে বাঙালি তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে সদর থানায় মামলা করে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই জেলায় ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’র ব্যানারে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। পরে ঘটনাপ্রবাহ সংঘাতে মোড় নেয়।

এরই মধ্যে ওই স্কুলছাত্রীর শারীরিক পরীক্ষায় ‘ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই ‘ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি’ বলে ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন।

এই মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী এবং পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।

ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশের পর হতাশ ভুক্তভোগীর পরিবার
ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশের পর হতাশ ভুক্তভোগীর পরিবার

ওই স্কুল ছাত্রীর বাড়িতে গেলে তার বাবা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিরক্ত লাগে, কাজেও যাইতে পারি নাই।”

তিনি জানান, মেয়ের কোচিং ও স্কুলে যাওয়া আপাতত বন্ধ। ওই দিনের কথা কেউ বললে সে কান্নাকাটি করে।

মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার যে খবর জানা যাচ্ছে, সে প্রসঙ্গে মেয়েটির বাবা বলেন, “রিপোর্টটা এখন নেগেটিভ যখন পাইছে আমাদের আর করার কিছু নাই। বিচার তো সবই প্রশাসনের উপরে। আমরা তো বিচার চাইছিলাম, না দিলে আমার করার কিছু নাই।”

মেয়েকে উদ্ধারের পর গোসল করিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে ভুক্তভোগীর পিতা বলেন, “এটা ভুল হইছে আরকি। আমরা জানি না তো এইগুলো।”

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নারী উন্নয়নকর্মী শেফালিকা ত্রিপুরা বিবিসি বাংলাকে পাহাড়ে ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত, বিচার এবং নারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “কখনো আমরা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে ন্যায়বিচার পাচ্ছি না। ইভটিজিংয়ের কমিটি বা কোর্টে আমরা ন্যায়বিচার পাচ্ছি না। সবসময় পজিটিভ (ডাক্তারি পরীক্ষা) খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। এইটাও সন্ধ্যায় হয়েছে। সকালে মেয়েটাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কোর্টেও হাজির করা হয়েছে। তারপরও নেগেটিভ।”

এবারের ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষার আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন বলেও জানান শেফালিকা ত্রিপুরা।

“তারা যখন বলছে গোসল করানো হইছে, আমি বললাম যে আপনারা তো গোসল করাইয়া ভুল করছেন। গোসল না করাইয়া থাকতেন, তাহলে এটা আলামতের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারতো।”

“আমি বলছিলাম যে যেহেতু গোছল করিয়েছেন কাপড়-চোপড় কোথায় এখন। বলে যে থানায়, তাও ভিজা। আমি বললাম যে আমাদের মধ্যে যদি একটু সন্দিহান থাকে তাহলে আপনারা আবেদন করতে পারেন বাদীর পক্ষ থেকে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে নিয়ে যাবার জন্য চিটাগং মেডিকেলে। ওইখানে ১৬ দিন পরেও তাদের টেস্টে আলামত পাওয়া যায়।”

“আরএমওকে (সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক) বললাম যে আপনারা ওকে করে দিলে তারা নিয়ে যেতে পারে। তারা নিয়ে যায় নাই,” বলেন শেফালিকা ত্রিপুরা।

শেফালিকা ত্রিপুরা
শেফালিকা ত্রিপুরা

খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বিবিসি বাংলাকে বলেন, গত এক বছরে খাগড়ছড়িতে ৩৫টি ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ২৮টি বাঙালিদের মধ্যে। আর চারটি পাহাড়িদের বিরুদ্ধে পাহাড়িদের এবং চারটি বাঙালিদের বিরুদ্ধে পাহাড়িদের অভিযোগ।

“অন্যগুলো নিয়ে কিন্তু কথা হচ্ছে না, এটা একটা বিষয়,” বলেন তিনি। তদন্তে সময় লাগে বলেও উল্লেখ করেন পুলিশ সুপার।

সবশেষ ঘটনার তদন্তের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, “মেডিকেল রিপোর্টের বাইরে আমরা ডিএনএ স্যাম্পল নেওয়া আছে। সেটা আমরা ঢাকা সিআইডিতে অলরেডি প্রেরণ করেছি। এর বাইরে যেটা হতে পারে যে অভিযুক্ত তারও আমরা ডিএনএ স্যাম্পল কালেকশন করে বিজ্ঞ আদালতের অনুমতি নিয়ে পরীক্ষা করবো। পাশাপাশি সারকামস্টেনশিয়াল এভিডেন্স যেগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের তদন্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমরা চেষ্টা করছি ফাইন্ড আউট করার।”

তিনজনের মধ্যে অজ্ঞাত বাকি দুজন অভিযুক্তকে আটকের ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রমাণ নেই, তবে চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে দাবি করেন খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল।

গুইমারায় গুলিবর্ষণ নিয়ে কে কী বলছে?

ধর্ষণের অভিযোগে একজনকে আটকের পর অন্যান্য অভিযুক্তদের আটক এবং শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে ২৭শে সেপ্টেম্বরের খাগড়াছড়ি শহরে এক পর্যায়ে পাহাড়ি-বাঙালি মুখোমুখী অবস্থার সৃষ্টি হয়।

ওইদিন স্বনির্ভর বাজারে বাঙালি বেশকটি দোকানে ভাঙচুর হয়। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ২৮শে সেপ্টেম্বর গুইমারা উপজেলায়। সেখানে ১৪৪ ধারা ভেঙে পাহাড়িদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ প্রাণঘাতী সংঘাতে রূপ নেয়। সেনাবাহিনী ও পাহাড়িদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

একপর্যায়ে গুইমারায় মারমা অধ্যুষিত রামসু বাজারে হামলা-অগ্নিসংযোগে পুড়ে ছাই হয়ে যায় অর্ধশতাধিক দোকানপাট ও ৩০টির মতো বসতঘর। হলুদ গুদামসহ, সরকারি অফিসেও হামলার শিকার হয়।

সেদিন গুইমারায় গুলিতে তিনজন মারমা যুবক নিহত হন এবং গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় প্রায় ২০ জন। একই দিনে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ১৫জনের মতো সদস্য আহত হন।

গুইমারায় গুলিবর্ষণ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান এবং ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য আসছে। ওই ঘটনার পর পাহাড়ি সংগঠনগুলোর বিবৃতি, পুলিশ সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের বক্তব্যে একটি সশস্ত্র গ্রুপের গুলিবর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পাহাড়িদের অভিযোগ, সেনাবাহিনীর দিক থেকেই বিক্ষুব্ধ পাহাড়িদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। ইউপিডিএফএ’র একটি বিবৃতিতে দাবি করা হয়, “সেনাসৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের একটি সশস্ত্র দলকে সেখানে আনা হয়। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী ও ঠেঙাড়েরা বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালায়।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জেএসএস খাগড়াছড়ির ঘটনায় পার্বত্য সংগঠন ইউপিডিএফ এর উসকানি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।

একই সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৮শে সেপ্টেম্বর গুইমারায় “উভয়পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় দুপুর প্রায় ১টার দিকে সেনাবাহিনী ও মুখোশপরা দুস্কৃতকারীরা একসঙ্গে অবরোধ পালনকারী জুম্ম ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়”।

তবে খাগড়াছড়ির গুইমারায় গুলির ঘটনায় আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর যে বিবৃতি প্রকাশ করে, সেখানে দাবি করা হয় যে, “সংঘর্ষ চলাকালীন আনুমানিক ১১:৩০ ঘটিকার দিকে রামসু বাজারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত উচুঁ পাহাড় থেকে ইউপিডিএফ (মূল) সশস্ত্র দলের সদস্যরা ৪/৫ বার অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত পাহাড়ি বাঙালি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে আনুমানিক ১০০-১৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলে সংঘর্ষে লিপ্ত এলাকাবাসীর মধ্যে অনেক গুলিবিদ্ধ হয়।”

গুইমারায় কাদের ছোড়া গুলিতে তিনজন পাহাড়ি নিহত হলেন- এ প্রশ্নে খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা সংঘর্ষের সময় গুলিবর্ষণ করেননি।

“আমাদের পক্ষ থেকে আমরা যখন মুখোমুখী হয়েছি, তখন আমরা সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছি এবং আমরা কিন্তু সাউন্ড গ্রেনেড ওখানে ব্যবহার করেছি। গুলির বিষয়টা আসলে আমরা এখানে পাহাড়ি বাঙালি যখন লেগে গেছে আমাদের মনে হয়েছে যে দূর পাহাড় থেকে কোথাও থেকে হতে পারে। আসলে তদন্তে এ বিষয়গুলো আসবে।”

“পাহাড়ের পেছন থেকে অনেক গোলাগুলি হয়েছে। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে যে সশস্ত্র সংগঠন থেকে অনেক লোকজন এসেছিল বিশৃঙ্খলা করেছে। এটা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে আসলে তদন্ত শেষে আমরা বলতে পারবো তারা কীভাবে মারা গেল এবং কাদের গুলিতে।”

গুলির বিষয়টি নিয়ে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার বিবিসিকে বলেছেন, খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে চারটি মামলা হয়েছে; গুইমারা থানায় হত্যা মামলা তদন্তের মাধ্যমেই গুলিতে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

যদিও এ তদন্ত কতটা নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পাহাড়িদের।

রামসু বাজারে পুড়ে যাওয়া টিনের ওপর বসে আছেন মুইখ্রাইপ্রু মারমা
ছবির ক্যাপশান,রামসু বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত মুইখ্রাইপ্রু মারমা

এদিকে স্কুলছাত্রীর ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে এ দফায় যেভাবে অবরোধ ও সহিংসতা হয়েছে সেটিকে ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

এবার ঘটনায় উল্লেখযোগ্য হলো দুটি দিকের একটি হলো স্বনির্ভর বাজার এবং গুইমারাতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের ওপর হামলার এলাকাগুলোয় এর আগে কখনও সংঘাতের নজির নেই।

আরেকটি হলো এবার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালিদের অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের।

এছাড়া আন্দোলন যেভাবে সংগঠিত হয়েছে এবং সহিংস হয়েছে, সেটি নিয়েও সন্দেহ অনেকের।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং পাহাড়ি বাঙালি সম্প্রীতি বজায় রাখার বিষয়ে তারা তৎপর রয়েছেন।

বিবিসি বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনে এনবিএর প্রত্যাবর্তন: ম্যাকাওতে প্রাক-মৌসুমে নেটস–সানস, সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

সরেজমিন খাগড়াছড়ি: একদিকে ক্ষোভ-আতঙ্ক, আরেকদিকে নজরদারি

০৭:২১:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

একদিকে পাহাড়ি জনগোষ্টীর মধ্যে ক্ষোভ, গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকে বাড়িছাড়া; আবার অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি। এক মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ-অবরোধ এবং সহিংসতায় তিন জনের মৃত্যুর ঘটনার দুই সপ্তাহ পর খাগড়াছড়ির গুইমারায় এরকম পরিবেশই দেখা গেছে।

গত ২৩ শে সেপ্টেম্বর পাহাড়ি স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা উপজেলায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যা কয়েকদিন ধরে চলে।

খাগড়াছড়িতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও গুইমারা এলাকায় অবরোধকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় বাঙালিদের মুখোমুখি অবস্থার সৃষ্টি হয়। ২৭শে সেপ্টেম্বর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় এবং ২৮ শে সেপ্টেম্বর গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনজন মারমা যুবক। এছাড়া গুলিতে ও হামলায় আহত হন অনেকেই।

সরেজমিনে খাগড়াছড়ি ও গুইমারা উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়িদের অবরোধ এবং প্রশাসনের ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করার পর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। যদিও গুইমারা রামসু বাজারে হামলা অগ্নিসংযোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মারমা সম্প্রদায় এবং স্থানীয় পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ আছে।

গুইমারায় উপজেলায় দেখা যায়, সহিংসতার ১০ দিন পরেও সেখানে কড়া পাহারায় যৌথ বাহিনী।

অবরোধ এবং ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হলেও স্থানীয়দের মধ্যে ভয় আতঙ্ক কাজ করছে। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেও অনেকের মধ্যে অস্বস্তি দেখা যায়।

২৮ শে সেপ্টেম্বর গুলিতে নিহত থোইচিং মারমার বাবা হোলাচাই মারমার বক্তব্যেও আতঙ্কের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। গুলিতে ছেলের মৃত্যুর বিচার নিয়ে তিনি বলেন, কোনো মামলা তিনি করবেন না।

তার ভাষায়, মামলা করলে আরো হয়রানির শিকার হতে হবে। তিনি চান পাহাড়ে আর যেন কোনো পিতা সন্তান হারা না হয়।

ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশের পর ভুক্তভোগীর পরিবার এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ হতাশা, গুলিবর্ষণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান, ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত মিলিয়ে খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক ঘটনা জটিল সমীকরণ তৈরি হয়েছে।

ধর্ষণের অভিযোগ এবং হতাশা

২৩শে সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে পাহাড়ি একজন স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ সামনে আসে। শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে বাঙালি তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে সদর থানায় মামলা করে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই জেলায় ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’র ব্যানারে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। পরে ঘটনাপ্রবাহ সংঘাতে মোড় নেয়।

এরই মধ্যে ওই স্কুলছাত্রীর শারীরিক পরীক্ষায় ‘ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই ‘ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি’ বলে ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন।

এই মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী এবং পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।

ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশের পর হতাশ ভুক্তভোগীর পরিবার
ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশের পর হতাশ ভুক্তভোগীর পরিবার

ওই স্কুল ছাত্রীর বাড়িতে গেলে তার বাবা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিরক্ত লাগে, কাজেও যাইতে পারি নাই।”

তিনি জানান, মেয়ের কোচিং ও স্কুলে যাওয়া আপাতত বন্ধ। ওই দিনের কথা কেউ বললে সে কান্নাকাটি করে।

মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার যে খবর জানা যাচ্ছে, সে প্রসঙ্গে মেয়েটির বাবা বলেন, “রিপোর্টটা এখন নেগেটিভ যখন পাইছে আমাদের আর করার কিছু নাই। বিচার তো সবই প্রশাসনের উপরে। আমরা তো বিচার চাইছিলাম, না দিলে আমার করার কিছু নাই।”

মেয়েকে উদ্ধারের পর গোসল করিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে ভুক্তভোগীর পিতা বলেন, “এটা ভুল হইছে আরকি। আমরা জানি না তো এইগুলো।”

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নারী উন্নয়নকর্মী শেফালিকা ত্রিপুরা বিবিসি বাংলাকে পাহাড়ে ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত, বিচার এবং নারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “কখনো আমরা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে ন্যায়বিচার পাচ্ছি না। ইভটিজিংয়ের কমিটি বা কোর্টে আমরা ন্যায়বিচার পাচ্ছি না। সবসময় পজিটিভ (ডাক্তারি পরীক্ষা) খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। এইটাও সন্ধ্যায় হয়েছে। সকালে মেয়েটাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কোর্টেও হাজির করা হয়েছে। তারপরও নেগেটিভ।”

এবারের ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষার আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন বলেও জানান শেফালিকা ত্রিপুরা।

“তারা যখন বলছে গোসল করানো হইছে, আমি বললাম যে আপনারা তো গোসল করাইয়া ভুল করছেন। গোসল না করাইয়া থাকতেন, তাহলে এটা আলামতের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারতো।”

“আমি বলছিলাম যে যেহেতু গোছল করিয়েছেন কাপড়-চোপড় কোথায় এখন। বলে যে থানায়, তাও ভিজা। আমি বললাম যে আমাদের মধ্যে যদি একটু সন্দিহান থাকে তাহলে আপনারা আবেদন করতে পারেন বাদীর পক্ষ থেকে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে নিয়ে যাবার জন্য চিটাগং মেডিকেলে। ওইখানে ১৬ দিন পরেও তাদের টেস্টে আলামত পাওয়া যায়।”

“আরএমওকে (সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক) বললাম যে আপনারা ওকে করে দিলে তারা নিয়ে যেতে পারে। তারা নিয়ে যায় নাই,” বলেন শেফালিকা ত্রিপুরা।

শেফালিকা ত্রিপুরা
শেফালিকা ত্রিপুরা

খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বিবিসি বাংলাকে বলেন, গত এক বছরে খাগড়ছড়িতে ৩৫টি ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ২৮টি বাঙালিদের মধ্যে। আর চারটি পাহাড়িদের বিরুদ্ধে পাহাড়িদের এবং চারটি বাঙালিদের বিরুদ্ধে পাহাড়িদের অভিযোগ।

“অন্যগুলো নিয়ে কিন্তু কথা হচ্ছে না, এটা একটা বিষয়,” বলেন তিনি। তদন্তে সময় লাগে বলেও উল্লেখ করেন পুলিশ সুপার।

সবশেষ ঘটনার তদন্তের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, “মেডিকেল রিপোর্টের বাইরে আমরা ডিএনএ স্যাম্পল নেওয়া আছে। সেটা আমরা ঢাকা সিআইডিতে অলরেডি প্রেরণ করেছি। এর বাইরে যেটা হতে পারে যে অভিযুক্ত তারও আমরা ডিএনএ স্যাম্পল কালেকশন করে বিজ্ঞ আদালতের অনুমতি নিয়ে পরীক্ষা করবো। পাশাপাশি সারকামস্টেনশিয়াল এভিডেন্স যেগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের তদন্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমরা চেষ্টা করছি ফাইন্ড আউট করার।”

তিনজনের মধ্যে অজ্ঞাত বাকি দুজন অভিযুক্তকে আটকের ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রমাণ নেই, তবে চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে দাবি করেন খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল।

গুইমারায় গুলিবর্ষণ নিয়ে কে কী বলছে?

ধর্ষণের অভিযোগে একজনকে আটকের পর অন্যান্য অভিযুক্তদের আটক এবং শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে ২৭শে সেপ্টেম্বরের খাগড়াছড়ি শহরে এক পর্যায়ে পাহাড়ি-বাঙালি মুখোমুখী অবস্থার সৃষ্টি হয়।

ওইদিন স্বনির্ভর বাজারে বাঙালি বেশকটি দোকানে ভাঙচুর হয়। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ২৮শে সেপ্টেম্বর গুইমারা উপজেলায়। সেখানে ১৪৪ ধারা ভেঙে পাহাড়িদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ প্রাণঘাতী সংঘাতে রূপ নেয়। সেনাবাহিনী ও পাহাড়িদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

একপর্যায়ে গুইমারায় মারমা অধ্যুষিত রামসু বাজারে হামলা-অগ্নিসংযোগে পুড়ে ছাই হয়ে যায় অর্ধশতাধিক দোকানপাট ও ৩০টির মতো বসতঘর। হলুদ গুদামসহ, সরকারি অফিসেও হামলার শিকার হয়।

সেদিন গুইমারায় গুলিতে তিনজন মারমা যুবক নিহত হন এবং গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় প্রায় ২০ জন। একই দিনে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ১৫জনের মতো সদস্য আহত হন।

গুইমারায় গুলিবর্ষণ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান এবং ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য আসছে। ওই ঘটনার পর পাহাড়ি সংগঠনগুলোর বিবৃতি, পুলিশ সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের বক্তব্যে একটি সশস্ত্র গ্রুপের গুলিবর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পাহাড়িদের অভিযোগ, সেনাবাহিনীর দিক থেকেই বিক্ষুব্ধ পাহাড়িদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। ইউপিডিএফএ’র একটি বিবৃতিতে দাবি করা হয়, “সেনাসৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের একটি সশস্ত্র দলকে সেখানে আনা হয়। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী ও ঠেঙাড়েরা বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালায়।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জেএসএস খাগড়াছড়ির ঘটনায় পার্বত্য সংগঠন ইউপিডিএফ এর উসকানি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।

একই সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৮শে সেপ্টেম্বর গুইমারায় “উভয়পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় দুপুর প্রায় ১টার দিকে সেনাবাহিনী ও মুখোশপরা দুস্কৃতকারীরা একসঙ্গে অবরোধ পালনকারী জুম্ম ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়”।

তবে খাগড়াছড়ির গুইমারায় গুলির ঘটনায় আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর যে বিবৃতি প্রকাশ করে, সেখানে দাবি করা হয় যে, “সংঘর্ষ চলাকালীন আনুমানিক ১১:৩০ ঘটিকার দিকে রামসু বাজারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত উচুঁ পাহাড় থেকে ইউপিডিএফ (মূল) সশস্ত্র দলের সদস্যরা ৪/৫ বার অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত পাহাড়ি বাঙালি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে আনুমানিক ১০০-১৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলে সংঘর্ষে লিপ্ত এলাকাবাসীর মধ্যে অনেক গুলিবিদ্ধ হয়।”

গুইমারায় কাদের ছোড়া গুলিতে তিনজন পাহাড়ি নিহত হলেন- এ প্রশ্নে খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা সংঘর্ষের সময় গুলিবর্ষণ করেননি।

“আমাদের পক্ষ থেকে আমরা যখন মুখোমুখী হয়েছি, তখন আমরা সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছি এবং আমরা কিন্তু সাউন্ড গ্রেনেড ওখানে ব্যবহার করেছি। গুলির বিষয়টা আসলে আমরা এখানে পাহাড়ি বাঙালি যখন লেগে গেছে আমাদের মনে হয়েছে যে দূর পাহাড় থেকে কোথাও থেকে হতে পারে। আসলে তদন্তে এ বিষয়গুলো আসবে।”

“পাহাড়ের পেছন থেকে অনেক গোলাগুলি হয়েছে। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে যে সশস্ত্র সংগঠন থেকে অনেক লোকজন এসেছিল বিশৃঙ্খলা করেছে। এটা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে আসলে তদন্ত শেষে আমরা বলতে পারবো তারা কীভাবে মারা গেল এবং কাদের গুলিতে।”

গুলির বিষয়টি নিয়ে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার বিবিসিকে বলেছেন, খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে চারটি মামলা হয়েছে; গুইমারা থানায় হত্যা মামলা তদন্তের মাধ্যমেই গুলিতে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

যদিও এ তদন্ত কতটা নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পাহাড়িদের।

রামসু বাজারে পুড়ে যাওয়া টিনের ওপর বসে আছেন মুইখ্রাইপ্রু মারমা
ছবির ক্যাপশান,রামসু বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত মুইখ্রাইপ্রু মারমা

এদিকে স্কুলছাত্রীর ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে এ দফায় যেভাবে অবরোধ ও সহিংসতা হয়েছে সেটিকে ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

এবার ঘটনায় উল্লেখযোগ্য হলো দুটি দিকের একটি হলো স্বনির্ভর বাজার এবং গুইমারাতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের ওপর হামলার এলাকাগুলোয় এর আগে কখনও সংঘাতের নজির নেই।

আরেকটি হলো এবার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালিদের অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের।

এছাড়া আন্দোলন যেভাবে সংগঠিত হয়েছে এবং সহিংস হয়েছে, সেটি নিয়েও সন্দেহ অনেকের।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং পাহাড়ি বাঙালি সম্প্রীতি বজায় রাখার বিষয়ে তারা তৎপর রয়েছেন।

বিবিসি বাংলা