ইতিহাসের পুনরুজ্জীবন
ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ার অঞ্চলে শুরু হয়েছে “অ্যাথেলস্টান পিলগ্রিম ওয়ে” নামের এক নতুন ভ্রমণপথ। প্রায় ১০০ মাইল দীর্ঘ এই হাঁটা ও সাইকেল পথটি তৈরি করা হয়েছে ইংল্যান্ডের প্রথম রাজা অ্যাথেলস্টানের রাজ্যাভিষেকের ১১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে। মালমসবেরি অ্যাবি থেকে শুরু হওয়া এই রুটটি যুক্ত করেছে উত্তর উইল্টশায়ারের ৩৬টি গির্জাকে, যা একসঙ্গে ইতিহাস ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধারের প্রতীক।
এই উদ্যোগটি “অ্যাথেলস্টান ১১০০” উদযাপনের অংশ, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, ইতিহাসবিষয়ক বক্তৃতা ও কিংস্টন-আপন-থেমস পর্যন্ত ১১ দিনের এক তীর্থযাত্রা—যেখানে ৯২৫ সালে অ্যাথেলস্টানের আনুষ্ঠানিক রাজ্যাভিষেক হয়।
ভুলে যাওয়া রাজা অ্যাথেলস্টান
আজকের ইংল্যান্ডের রাজাদের তালিকায় রিচার্ড দ্য লায়নহার্ট, হেনরি অষ্টম কিংবা রানি এলিজাবেথ দ্বিতীয়ের নামই বেশি উচ্চারিত হয়। অথচ অ্যাথেলস্টান—আলফ্রেড দ্য গ্রেটের নাতি—ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রথম একীভূত রাজা।
তিনি ৮৯৪ সালের দিকে জন্মগ্রহণ করেন, যখন ইংল্যান্ড ছিল ভাঙা ও বিভক্ত। তাঁর শাসনামলে (৯২৪–৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ) তিনি ভাইকিংদের নিয়ন্ত্রিত ইয়র্কের রাজ্য জয় করেন এবং প্রথমবারের মতো সমস্ত ইংরেজদের এক শাসনের অধীনে আনেন।
স্থানীয় ইতিহাসবিদ টনি ম্যাকঅ্যালিভি বলেন, “৯২৭ সালে উত্তর জয় করার পর অ্যাথেলস্টান দাবি করতে পারেন—তিনি ছিলেন সমস্ত অ্যাংলো-স্যাক্সন বংশোদ্ভূত জনগণের রাজা, অর্থাৎ প্রথম ‘ইংলিশ’ শাসক।”
মালমসবেরির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক
অ্যাথেলস্টান ছিলেন গভীরভাবে ধর্মপ্রাণ। তিনি অষ্টম শতকের সেন্ট অ্যাল্ডহেলমকে শ্রদ্ধা করতেন এবং মৃত্যুর পর মালমসবেরিতেই সমাধিস্থ হতে চেয়েছিলেন। মালমসবেরি অ্যাবি এখনো তাঁর খালি সমাধিসৌধ সংরক্ষণ করে রেখেছে, যদিও তাঁর প্রকৃত দেহাবশেষের অবস্থান অজানা।
ইতিহাসবিদদের ধারণা, রাজাকে পরবর্তীতে স্থানান্তর করা হয়, কিন্তু হেনরি অষ্টমের ধর্মীয় সংস্কার বা ইংরেজ গৃহযুদ্ধের সময় তাঁর অস্থি বিলুপ্ত হয়। তবু স্থানীয়রা এখনো আশা রাখেন—হয়তো, একদিন অ্যাথেলস্টানের দেহাবশেষ রিচার্ড তৃতীয়ের মতোই কোনো পার্কিংয়ের নিচে পুনরায় আবিষ্কৃত হবে।
নতুন পথে ইতিহাস ও তীর্থের মেলবন্ধন
ডেভিড পোপ নামের এক স্থানীয় পরিকল্পনাকারী এই রুটের নকশা তৈরি করেন। তিনি বলেন, “কারও কাছে এটি ইতিহাসের অনুসন্ধান, কারও কাছে আধ্যাত্মিক যাত্রা, আবার কারও কাছে শহুরে জীবনের এক বিরতি।”
এই পথ ছয়টি বৃত্তাকার হাঁটার ট্রেল ও দুটি সাইকেল লুপে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি গির্জায় যাত্রীরা “পিলগ্রিম পাসপোর্ট”-এ সিল সংগ্রহ করতে পারেন।
পোপের মতে, এই উদ্যোগ ধর্মপ্রচার নয়, বরং স্বতঃস্ফূর্ত অনুসন্ধান—মানুষ এতে নিজেদের মতো করে অর্থ খুঁজে নেয়।
প্রতীকী ঐক্যের বার্তা
অ্যাথেলস্টান তাঁর পূর্বপুরুষদের মতো উইনচেস্টারে না গিয়ে মালমসবেরিতেই সমাধি চেয়েছিলেন—কারণ এটি ছিল প্রাচীন দুই শত্রু রাজ্য, ওয়েসেক্স ও মার্সিয়ার সীমান্তে। এ যেন মৃত্যুতেও ঐক্যের প্রতীক।
পোপের ভাষায়, “অ্যাথেলস্টান হয়তো নিজেও এই পথকে পছন্দ করতেন। তবে আমি ওয়েলশ বলে হয়তো দশম শতকে তাঁকে খুব একটা সমর্থন করতাম না,”—হাসতে হাসতে বলেছিলেন তিনি।
পথের বৈশিষ্ট্য
- দৈর্ঘ্যঃ প্রায় ১০০ মাইল
- রুটঃ ছয়টি বৃত্তাকার হাঁটার পথ ও দুটি সাইকেল লুপ
- শুরুঃ মালমসবেরি অ্যাবি, উইল্টশায়ার
- গাইডঃ বিস্তারিত বুকলেট পাওয়া যায় অ্যাবি বা মিউজিয়ামে
- সর্বোত্তম সময়ঃ বসন্তের শেষ থেকে শরতের শুরু পর্যন্ত
ইতিহাস ও প্রকৃতির সংমিশ্রণ
ভ্রমণের পথে ব্রোকেনবরো গ্রামের ১৩ শতকের সেন্ট জন দ্য ব্যাপটিস্ট গির্জায় থামেন লেখক, যেখানে পোপ স্মরণ করিয়ে দেন—অ্যাথেলস্টানের ঐক্য যেমন ইংরেজদের গৌরব, তেমনি ওয়েলস ও স্কটদের কাছে তা ছিল ত্যাগের প্রতীক।
পরবর্তীতে শিল্পী শিওনা বোমন্ট “আর্টিস্ট ইন রেসিডেন্স” হিসেবে এই পথে যুক্ত হন। তিনি বলেন, “তীর্থযাত্রা এখন আবার জনপ্রিয় হচ্ছে। এই পথের প্রতিটি গির্জা ও প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাদের ইতিহাসের জীবন্ত অংশ।”
ইতিহাসের মায়ায় ভরা শেষ দৃশ্য
লেখক যাত্রা শেষ করেন মালমসবেরিতে ফিরে। তাঁর চোখে, এই পথে স্থানীয় ইতিহাস, গির্জা, প্রকৃতি আর গ্রামীণ জীবনের মিশ্রণই একে অনন্য করেছে।
মালমসবেরির সর্বত্রই দেখা মেলে অ্যাথেলস্টানের নাম—অ্যাথেলস্টান কেয়ার হোম, অ্যাথেলস্টান কোর্ট, এমনকি স্থানীয় এক সময়কার জাদুকরের নামও ছিল “দ্য গ্রেট অ্যাথেলস্টানিও।”
অ্যাথেলস্টান এখানে কখনো হারিয়ে যাননি, কারণ তাঁকে কখনো ভুলে যাওয়া হয়নি। তবে যারা তাঁকে চিনতেন না, তাদের জন্য “অ্যাথেলস্টান পিলগ্রিম ওয়ে” নিঃসন্দেহে ইংল্যান্ডের প্রথম সত্যিকারের রাজাকে জানার এক সুন্দর সূচনা।